আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-২৭৩: কুরবানির সময় ব্যতিত অন্য সময়ে একটি গরু দিয়ে একাধিক নামে আকিকা করা যাবে কি না

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-২৭৩:

কুরবানির সময় ব্যতিত অন্য সময়ে একটি গরু দিয়ে একাধিক নামে আকিকা করা যাবে কি না দলিল সহ জানতে চাই। তারিখ-২২/০৯/২২ ইংরেজি 

মাওলানা শমছুল আলম ঢাকা থেকে---


জবাব: نحمده ونصلي على رسوله الكريم اما بعد


হামদ-সানা ও দরুদের পর কথা হলো, এটি একটি কিয়াসি মাসয়ালা। 


 *প্রশ্ন : কোরবানি ও আকিকা কি একই জিনিস?* 

 উত্তর:  হ্যা, কুরবানি ও আকিকা  একই জিনিস। আকীকাও এক ধরনের কুরবানী। দলিল:  


হাদীস শরীফে আকীকার উপরও ‘নুসুক’ শব্দের প্রয়োগ  হয়েছে। আর এখানে ‘নুসুক’ অর্থ কুরবানী। হাদীসের আরবী পাঠ এই-

حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، حَدَّثَنَا دَاوُدُ بْنُ قَيْسٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم ح وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ الأَنْبَارِيُّ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ - يَعْنِي ابْنَ عَمْرٍو - عَنْ دَاوُدَ عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ أُرَاهُ عَنْ جَدِّهِ قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْعَقِيقَةِ فَقَالَ " لاَ يُحِبُّ اللَّهُ الْعُقُوقَ " . كَأَنَّهُ كَرِهَ الاِسْمَ وَقَالَ " مَنْ وُلِدَ لَهُ وَلَدٌ فَأَحَبَّ أَنْ يَنْسُكَ عَنْهُ فَلْيَنْسُكْ عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ " . وَسُئِلَ عَنِ الْفَرَعِ قَالَ " وَالْفَرَعُ حَقٌّ وَأَنْ تَتْرُكُوهُ حَتَّى يَكُونَ بَكْرًا شُغْزُبًّا ابْنَ مَخَاضٍ أَوِ ابْنَ لَبُونٍ فَتُعْطِيَهُ أَرْمَلَةً أَوْ تَحْمِلَ عَلَيْهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذْبَحَهُ فَيَلْزَقَ لَحْمُهُ بِوَبَرِهِ وَتُكْفِئَ إِنَاءَكَ وَتُوَلِّهَ نَاقَتَكَ " .

২৮৩৩. কা‘নবী (রাহঃ) ..... আমর ইবনে শুআয়ব (রাহঃ) তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ উকূক (মাতাপিতার নাফরমানী করা)-কে পছন্দ করেন না। কেননা তিনি উকুক শব্দটিকে পছন্দ করেননি।


রাবী বলেন, যার কোন শিশু সন্তান জন্ম নেয়, আর সে তার পক্ষ হতে কুরবানী করতে চায়, তবে তার উচিত হবে পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি একই ধরনের বকরী এবং কন্যা সন্তানের পক্ষে একটি বকরী কুরবানী করা।


অতঃপর তাঁকে ফারাআ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেনঃ ফারাআ তো জায়েয এবং বৈধ (যদি তা আল্লাহর নামের উপর করা হয়)। কিন্তু ঐ শিশু সন্তানকে এতদিন ছেড়ে রাখা, যাতে ঐ উটটি এক বা দু‘বছরের হয়ে যায়। অতঃপর তোমরা সেটিকে নিঃস্ব, সম্বলহীন ব্যক্তিদের দিয়ে দেবে অথবা মুজাহিদদের বাহনের উদ্দেশ্যে আল্লাহর ওয়াস্তে দিয়ে দেবে। এটা তা থেকে উত্তম যে, তোমরা সেটিকে এমন অবস্থায় কুরবানী করবে যে, এর পশমগুলি তার চামড়ার সাথে লেপ্টে থাকবে। এভাবে তোমাদের পাত্রগুলি উপুড় করে দেবে এবং নিজেদের উটদের পাগল বানিয়ে দেবে; (কেননা, ছোট্ট বাচ্চা যবেহের ফলে মায়ের কষ্ট হয় এবং সে পাগলপারা হয়ে ওঠে।)

তাখরিজ:  আলমুসান্নাফ, আব্দুর রাযযাক : ৭৯৬১; আলমুসনাদ, আহমদ : ৬৭১৩, ৬৭২২; আসসুনান, আবু দাউদ (আকীকা অধ্যায়) ২৮৪২; আসসুনান, নাসায়ী : ৭/১৬২, ১৬৩; আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২৪-২৪৭২৭; আলমুসতাদরাক, হাকিম, ৫/৩৩৭-৭৬৬৬ 


سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن العقيقة، فقال : لا يحب الله العقوق، من ولد له منكم ولد فأحب أن ينسك عنه فليفعل.

 তাখরিজ:আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২১, হাদীস : ২৪৭২২; আলমুয়াত্তা, ইমাম মালিক, আকীকা অধ্যায়, হাদীস : ৬৫৮


আকীকাও যখন এক প্রকারের কোরবানী তখন একটি গরু বা উট দ্বারা একাধিক ব্যক্তির (সাত জন  পর্যন্ত)


আলাদা-আলাদা কুরবানী আদায় হওয়ার হাদীসগুলো থেকে কুরবানী


আকীকা একত্রে আদায়ের অবকাশও প্রমাণিত হয় এটা শরীয়তের পক্ষ হতে প্রশস্ততা যে,গরু বা উটের ক্ষেত্রে একটি ‘জবাই’ সাত জনের সাতটি জবাইয়ের স্থালাভিষিক্ত গণ্য হয়।একারণে একটি উট বা গরু সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট হয়।


সহীহ মুসলিমে সাহাবী জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে,‘আমরা হজ্বের ইহরাম বেঁধে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)এর সাথে বের হলাম। তিনি আমাদেরকে আদেশ করলেন যেন প্রত্যেক উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হয়ে কুরবানী করি।’-সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্ব, হাদীস : ১৩১৮/৩৫১


خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم مهلين بالحج، فأمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نشترك في الإبل والبقر، كل سبعة منا في بدنة.

অন্য বর্ণনায় আছে, নবী (ﷺ)বলেছেন,(একটি) গরু সাতজনের পক্ষ হতে এবং (একটি) উট সাতজনের পক্ষ হতে (কুরবানী করা যাবে)।’


البقرة عن سبعة والجزور عن سبعة.  

-আস-সুনান, আবু দাউদ, হাদীস : ২৮০১, কিতাবুল আযাহী


সারকথা, ‘নুসুক’ বা কুরবানীর ক্ষেত্রে শরীয়তের প্রতিষ্ঠিত মূলনীতি এই যে, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে একটি ‘জবাই’((اراقة الدم         দ্বারা একটি কুরবানী আদায় হলেও উট ও গরুর ক্ষেত্রে একটি ‘জবাই’ দ্বারা সাতটি কুরবানী আদায় হতে পারে। অর্থাৎ এখানে ‘জবাইয়ে শরীক হওয়া’ও (সর্বোচ্চ সাত জনের) কুরবানী আদায়ের পক্ষে যথেষ্ট। আকীকাও যেহেতু ‘নুসুক’ বা কুরবানী তাই এ মূলনীতিতে আকীকাও শামিল থাকবে। সুতরাং ‘একটি পশু জবাই’ করা দ্বারা  যেমন তা আদায় হবে, তেমনি নির্ধারিত নিয়মে ‘জবাইয়ে শরীক হওয়ার’ (شركة في دم) দ্বারাও তা আদায় হবে।



সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণিত আলোকে, একটি গরুতে একাধিক আকিকা দেওয়া যাবে; কোন সমস্যা নেই।  অর্থাৎ ছেলের জন্য দুই ভাগ মেয়ের জন্য একভাগ। দলিল:


হযরত উম্মে কুরয রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,

عَنِ الغُلَامِ شَاتَانِ، وَعَنِ الأُنْثَى وَاحِدَةٌ

পুত্রসন্তানের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল আর কন্যাসন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল যবাই করবে। জামে তিরমিযী ১/১৮৩


এটাই ফিকহি হানাফির সিদ্ধান্ত। তবে ছাগল  দ্বারা পৃথকভাবে দেওয়াই উত্তম।  সূত্র: ইলাউস সুনান ১৭/১১৭; ফাতহুল বারী ৯/৫০৭; আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৮/৪৩১


والله اعلم بالصواب