জিজ্ঞাসা-১৩০৭০:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। একটি বিষয় জানার ছিলো।
শুধুমাত্র বাংলা উচ্চারণ আরবি ছাড়া এমন কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে কি?
যারা আরবি পড়তে পারেনা এই ভয়ে কুরআন তেলাওয়াত করেনা তাদের সুবিধার জন্য শুধু মাত্র বাংলা উচ্চারণ ছাপা কুরআন তেলাওয়াত করার বিধান কি?
তারিখ:০৯/০৯/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মো: কামরুল হাসান যশোর থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আরবি ছাড়া অন্য ভাষায় কোরআনের সঠিক উচ্চারণ অসম্ভব। তাই কোরআন শরিফকে অন্য ভাষায় লেখা বা পড়া উলামায়ে কেরামের ঐকমত্যে নাজায়েজ। এতে কোরআনের শব্দ ও অর্থ বিকৃত হয়ে যায়, যা সম্পূর্ণ হারাম। উদাহরণ:
আরবি দ্বাদ-এর উচ্চারণ পৃথিবীর কোনো ভাষায় সম্ভব নয়। আরবি ‘কাফ’ হরফের উচ্চারণ দুই জায়গা থেকে হয়। ‘হা’ উচ্চারণও দুভাবে হয়। আরবি প্রতিটি হরফের জন্যই আলাদা মাখরাজ বা উচ্চারণের বিশেষ স্থান আছে। এর সামান্য বেশকম হলে কোরআনের শব্দের অর্থের বিরাট ব্যবধান হয়ে যাবে। তখন সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহও হয়ে যেতে পারে। যেমন—‘আউজু’। এখানে ‘আলিফ’, ‘আইন’, ‘ওয়াও’ ও ‘জাল’—এই চারটি অক্ষর আছে। এখানে আইন অক্ষরটি সঠিক স্থান থেকে উচ্চারিত না হলে তা হবে হামজার উচ্চারণে। ফলে হামজা অক্ষর দিয়ে উচ্চারিত হয়ে যে ‘আউজু’ শব্দ গঠিত হবে তার অর্থ হবে, আমি কষ্ট চাই। অথচ ‘আউজু বিল্লাহি’...এর সঠিক উচ্চারিত শব্দটির অর্থ হলো, আমি আশ্রয় চাই আল্লাহর কাছে।
দলিল-
وقد دلت نصوص الشريعة وأجمع علماء الإسلام على وجوب صيانة كلام الله تعالى من التحريف والتغيير ، ولا شك أن كتابته بغير اللغة العربية هي من أقرب الطرق إلى تحريف لفظه ومعناه ، وذلك للتباين الواضح بين طبيعة اللسان العربي ، في حروفه ، وكلماته ، وأساليبه ، وطريقة كتابته ، وطريقة نطقه ، وأساليبه وتصرفات أهله فيه ، وبين غيره من اللغات .
جاء في كتاب تحريم كتابة القرآن الكريم بحروف غير عربية (1/36):
অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহ'র বিধিবদ্ধ আইন ও ইলমে শরীয়াহ'র বিদগ্ধ প্রাজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের সম্মিলিত সিদ্ধান্তগুলো একথারই প্রমাণ বহন করে যে, যেকোনো উপায়েই আল্লাহর বাণীকে বিকৃতি ও অর্থচ্যুতি থেকে রক্ষা করতে হবে। আর একথা সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণিত যে, অনারবী ভাষায় কুরআন লিখতে গেলে সুনিশ্চিতভাবে তাতে উচ্চারণগত বিকৃতি ও মর্মগত বিচ্যুতির সমূহ সম্ভাবনা দেখা দেয়। কারণ অন্যান্য ভাষা থেকে আরবী ভাষার রয়েছে- বর্ণগত ভিন্নতা, শব্দগত স্বতন্ত্রতা, প্রায়োগিক অনন্যতা, লিখনীগত পৃথকতা, সর্বোপরি উচ্চারণগত বৈসাদৃশ্যতা। সুতরাং এতশত পার্থক্যকে সামনে নিয়ে কুরআনকে অবিকৃতভাবে অন্যভাষায় লিপিবদ্ধ করা একপ্রকার অসম্ভব কর্মই বটে।
সূত্র: কিতাবু তাহরিমিল কুরআনিল কারিমি বিহুরুফি গয়রি আরাবিয়্যা-১/৩৬
সারকথা হলো, বাংলা উচ্চারণ কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না।
যারা আরবি পড়তে পারেনা এই ভয়ে কুরআন তেলাওয়াত করেনা তাদের সুবিধার জন্য শুধু মাত্র বাংলা উচ্চারণ ছাপা কুরআন তেলাওয়াত করা জায়েয হবে না।
কেননা এতে অর্থের বিকৃতি ঘটে। তার চেয়ে না পড়াই ভালো। তবে অবশ্যই সহি শুদ্ধভাবে শিখে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
والله اعلم بالصواب