জিজ্ঞাসা-১৩০৮৩:
আসসালামু আলাইকুম। সালামের জবাব কি আওয়াজ করে দিতে হবে নাকি মনে মনে দিলেই চলবে?
তারিখ:২৯/০৯/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আলী আকবর বি. বাড়িয়া থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সালামের জওয়াব সালামদাতাকে শুনিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। শুধু মনে মনে উত্তর দেওয়া বা নিম্নস্বরে দেওয়া যথেষ্ট নয়।
অবশ্য সালামদাতা যদি এতটা দূরে থাকে যে, তাকে উত্তর শুনিয়ে দেওয়া কষ্টসাধ্য হয় সেক্ষেত্রে শুনিয়ে দেওয়া জরুরি নয়। এক্ষেত্রে মৌখিক উত্তরের পাশাপাশি সম্ভব হলে হাত দ্বারা ইশারাও করবে। যেন সালামদাতা বুঝতে পারে যে, তার সালামের উত্তর নেওয়া হয়েছে। দলিল-
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ بْنِ مَيْسَرَةَ، وَأَحْمَدُ بْنُ سَعِيدٍ السَّرْخَسِيُّ، أَنَّ أَبَا عَامِرٍ، أَخْبَرَهُمْ قَالَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ هِلاَلٍ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لاَ يَحِلُّ لِمُؤْمِنٍ أَنْ يَهْجُرَ مُؤْمِنًا فَوْقَ ثَلاَثٍ فَإِنْ مَرَّتْ بِهِ ثَلاَثٌ فَلْيَلْقَهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ فَإِنْ رَدَّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ فَقَدِ اشْتَرَكَا فِي الأَجْرِ وَإِنْ لَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ فَقَدْ بَاءَ بِالإِثْمِ " . زَادَ أَحْمَدُ " وَخَرَجَ الْمُسَلِّمُ مِنَ الْهِجْرَةِ " .
৪৮৩২. উবাইদুল্লাহ ইবনে উমর (রাহঃ) .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ কোন মু’মিন ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় যে, সে তিন দিনের অধিক সময় তার ভাইকে পরিত্যাগ করে। এমতাবস্থায় যদি তিন দিন অতিবাহিত হয়ে যায়, তবে তার সাথে দেখা করে সালাম করা উচিত। আর সে ব্যক্তি যদি সালামের জবাব দেয়, তখন উভয়ই সাওয়াবের অংশীদার হবে। আর যদি সে সালামের জবাব না দেয়, তবে সে ব্যক্তি সমস্ত গুনাহের ভাগী হবে।
মুসলিম (রাহঃ) বর্ণিত রাবী আহমদ (রাহঃ)-এর বর্ণনায় এরূপ অতিরিক্ত আছেঃ সালাম দানকারী ব্যক্তি সালাম না দেয়ার গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে।
Narrated AbuHurayrah:
The Prophet (ﷺ) said: It is not allowable for a believer to keep from a believer for more than three days. If three days pass, he should meet him and give him a salutation, and if he replies to it they will both have shared in the reward; but if he does not reply he will bear his sin (according to Ahmad’s version) and the one who gives the salutation will have come forth from the sin of keeping apart.
—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৮৩২ (আন্তর্জাতিক নং ৪৯১২)
ورد السلام بصوت غير مسموع لا يتأدى به الفرض، فقد جاء في عمدة القاري شرح صحيح البخاري: ولا يصح الرد حتى يسمعه المسلم إلا أن يكون أصم فينبغي أن يرد عليه بتحريك شفتيه.
অর্থাৎ, কারো সালামের জওয়াবে অনুচ্চস্বরে উত্তর দিলে এতে করে ফরজ ( ওয়াজিব) আদায় হবে না। সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ঊমদাতুল কারীতে এসেছে, "সালাম প্রদানকারীকে না শুনিয়ে সালামের জবাব দিলে তা স্বীকৃত জওয়াব হিসাবে বিবেচিত হবে না। তবে যদি সালাম প্রদানকারী বধির হয়ে থাকে, তখন সেক্ষেত্রে তার অনুধাবনের সুবিধার্থে ঠোঁট নাড়িয়ে সালামের জওয়াব দেওয়া লাগবে ।
সারকথা হলো, সালামের জবাব কি আওয়াজ/শুনিয়ে দিতে হবে, মনে মনে দিলেই চলবে না।
কেননা নীরবে জবাব প্রদান করার দ্বারা কিছু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তা এমন- যেমন অনেকেই সালামের উত্তর মনে মনে (নীরবে) দিয়ে থাকে। এমনভাবে সালামের উত্তর দেয় যে, এর মাধ্যমে ভালোবাসা সৃষ্টির পরিবর্তে মনের মধ্যে বিদ্বেষ জন্ম নেয়ার অবস্থা তৈরি হয়।
কেউ কাউকে আগ্রহ নিয়ে সালাম দিল, কিন্তু আগ্রহের সঙ্গে উত্তর না পেলে কিংবা খুব নিম্ন স্বরে বা নীরবে উত্তর এলে তাতে সালাম দেয়া ব্যক্তির মনে সন্দেহ বা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, মনোক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কিংবা ওই ব্যক্তির মাঝে হীনমন্যতা সৃষ্টি হয়।
والله اعلم بالصواب