ভারতের প্রসিদ্ধ কবি হাফীয জৌনপুরীর জযবের (আল্লাহর দিকে আকর্ষণের) ঘটনা
━━━━━━ • ✿ • ━━━━━━
হযরত ডাক্তার আবদুল হাই সাহেব (রহ.) তখন জৌনপুরে ছিলেন। এক মদ্য-পানকারী ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হল এবং বলল, ডাক্তার সাহেব! আমি আপনাকে চিনি, জানি। আপনি আলীগড় ইউনিভার্সিটি থেকে বি, এ এবং এল, এল, বি ডিগ্রী লাভ করেছেন। তা সত্ত্বেও আপনি গোল টুপি, লম্বা কোর্তা পরিধান করেন। আপনার নিকট বড় বড় আলেমগণ আগমন করেন। আর আমার অবস্থা হল আমি মদপানে অভ্যস্ত। আমিও কি আপনার মত ওলীআল্লাহ হতে পারবো? আমার জন্যও কি আল্লাহর ওলী হওয়ার রাস্তা খোলা আছে?
হযরত ডাক্তার সাহেব (রহ.) বললেন, আমার মাঝে যে অভাবনীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন তার পেছনে একজন সুদক্ষ কারিগরের সুনিপুণ হাতের ছোঁয়া রয়েছে। যাঁর সান্নিধ্যের বরকতে আল্লাহপাক আমাকে এ পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। অতএব, যিনি আমার এ জীবন গড়েছেন, আপনিও তাঁর কাছে চলে যান। আর তিনি হলেন থানাভবনের বিখ্যাত বুযুর্গ হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী সাহেব থানবী।
একথা শুনে ঐ লোকটি বিলম্ব না করে থানাভবনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল। সেখানে গিয়ে হযরত থানবী (রহ.)-এর খেদমতে উপস্থিত হলো। কিন্তু বায়আত হওয়ার পূর্বেই চেহারায় যে ছোট ছোট দাড়ি গজিয়ে ছিল তা মুণ্ডিয়ে সাফ করে ফেলল।
হযরত থানবী জিজ্ঞাসা করলেন, যখন তুমি তওবাই করতে এসেছ, তাহলে দাড়ি কেন মুণ্ডিয়েছ? লোকটি বলল, হযরত! আপনি উম্মতের শ্রেষ্ঠতম চিকিৎসক, আর আমি এই উম্মতের এক জঘন্যতম রোগী। আপনার সম্মুখে আমার সম্পূর্ণ রোগ প্রকাশ করে দিলাম। তবে ইনশাআল্লাহ, এখন হতে আর কখনো দাড়িতে ক্ষুর লাগাবো না। বায়আত হওয়ার পর ফিরে আসল। অতঃপর দাড়ি রাখল, মদ্যপান ত্যাগ করল।
পরে সে এত বড় ওলীআল্লাহ হলো যে, আমার মোর্শেদ হযরত মাওলানা শাহ আবদুল গনী ফুলপুরী (রহ.) বলেন, ইন্তেকালের তিন দিন পূর্বে তার মধ্যে কান্নাকাটির জোয়ার শুরু হল। নিজের ঘরের আঙ্গিনায় এক দেওয়াল হতে অন্য দেওয়াল পর্যন্ত মর্মযাতনায় অস্থির হয়ে বারবার গড়াগড়ি করছিল আর শুধু কাঁদছিল। এভাবে কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহর জন্য প্রাণোৎসর্গ করে অবশেষে এই জগৎ-সংসার হতে চির বিদায় গ্রহণ করলো। তার অন্তরে আল্লাহ তাআলার ভয় এতটা প্রবল হয়েছিল যে, অন্তর ফেটে শহীদ হয়ে গেল। এটাকে শাহাদতের মৃত্যু বলে। আল্লাহর ভয়ে যার কলিজা ফেটে যায়, সে 'শহীদ' রূপে বিবেচিত হয়।
এক সময়ের মদখোর লোকটি আল্লাহ তাআলার জব্বের (দয়াপূর্ণ আকর্ষণের) কারণে ওলীআল্লাহ হয়ে গেল। আল্লাহই তাকে তওফীক দিয়েছেন, নিজের পথে চালিত করেছেন। জীবনের শেষ ভাগে তিনি তার কাব্যগ্রন্থে তিনটি ছন্দ বর্ধিত করে গেলেন। যার এক-একটি শব্দ মাওলা প্রেমের ব্যথায় ডুবন্ত।
مری کھل کر سیہ کاری تو دیکھو اور انکی شان ستاری تو دیکھو گڑا جاتا ہوں جیتے جی زمیں میں گناہوں کی گرانباری تو دیکھو ہوا بیعت حفیظ اشرف علی سے باتیں غفلت یہ ہشیاری تو دیکھو
০১। হায়, আমার মত পাপিষ্ঠের এমন নির্লজ্জ ও জঘন্যতম পাপের জীবন! এতদসত্ত্বেও ঐ দয়াবান মাওলা তার 'ছাত্তার' (গোপনকারী) নামের নূরানী পর্দা দিয়ে আমার পাপরাশিকে কী ভাবে গোপন করে রেখেছেন।
০২। কেবলই আমার সীমাহীন পাপের কথা মনে হয়। হায়, এমন দয়াময়ের এত-এত নাফরমানী কিভাবে করতে পারলাম? লজ্জায় মাথা নুয়ে যায়, শরমে মাটির মধ্যে জল-জ্যান্ত গেঁড়ে যেতে ইচ্ছা করে।
০৩। অধিকন্তু, এত বড় পাপিষ্ঠের প্রতি অসীম দয়াবানের কত বড় মেহেরবানী যে, আমার মত অধমের সৌভাগ্য হয়েছে হযরত থানবীর মত মহান বুযুর্গের হাতে বায়আত হওয়ার।
এত বড় গাফেল-নাফরমান হয়েও বুদ্ধিমানের মত এই পদক্ষেপ গ্রহণও আমার কাছে আশ্চর্যকর মনে হয়। এ সবই অদৃশ্য কুদরতের লীলাখেলা। এক ওলীর উসিলায় এক পাপিষ্ঠের প্রতি অসীম দয়ালুর দয়ামাত্র। বন্ধুগণ! পাপিষ্ঠ হাফীযের শুরু আর শেষ দেখে যদি কিছু বোঝার থাকে তবে বোঝার চেষ্টা কর।
কিতাবঃ আসমানী আকর্ষণ
পৃষ্ঠাঃ ১৭৭