🔲 অজু করার পূর্বে মনে মনে নিয়ত করা এবং বিসমিল্লাহ্ অথবা বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম বলে অজু শুরু করা,
🔹 এরপর উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধোয়া,
🔸 তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে তিনবার কুলি করা,
🔹 অতঃপর ডান হাত দিয়ে তিনবার নাকে পানি দেওয়া এবং বাম হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা আঙ্গুলি দিয়ে সেই পানি ঝেড়ে ফেলে দেওয়া,
🔸 এরপর সমস্ত মুখমন্ডল তিনবার করে ধোয়া। (কপাল থেকে থুতনি পর্যন্ত সম্পূর্ণ অংশই মুখমন্ডলের অন্তর্ভূক্ত)
🔹 তারপর দুই হাতের কনুই পর্যন্ত তিনবার ধোয়া,
🔸 অতঃপর উভয় হাত দ্বারা সম্পূর্ণ মাথা একবার মাসেহ করা। এক্ষেত্রে উভয় হাতকে ভিজিয়ে আঙ্গুল গুলিকে মুখোমুখি করে মাথার সামনের দিক (যেখান থেকে চুল গজানো শুরু হয়েছে সেখান) থেকে পিছন দিক (গর্দানের যেখানে চুল শেষ হয়েছে সেখান) পর্যন্ত স্পর্শ করে পুনরায় সামনের দিকে নিয়ে এসে শুরুর জায়গা পর্যন্ত পূর্ণ মাথা মাসেহ্ করা।
🔹 তারপর উভয় হাতের শাহাদাত আঙ্গুলি দিয়ে কানের ভিতরের অংশ এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কানের পিছনের অংশ একবার মাসেহ করা।
🔸 ঘাড় মাসেহ করার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য কোনো হাদীস পাওয়া যায় না বিধায় ঘাড় মাসেহ করার প্রয়োজন নেই। ঘাড় মাসেহ করা সুন্নত আমল নয়।
🔹 অতঃপর উভয় পা ভালোভাবে তিনবার করে ধোয়া (এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে পায়ের আঙ্গুলসমূহের ফাঁকা অংশে যাতে পানি পৌঁছে যায়)
⭕ অজু করা শেষ করে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করাঃ-
أَشْهَدُ أَنْ لّآ اِلهَ اِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه، وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدً اعَبْدُهوَرَسُولُه
উচ্চারণঃ- “আশহাদু আল লা~ ইলাহা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহ্দাহু লা~ শারিকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান 'আবদুহু ওয়া রসুলুহু”
🔸 রাসূল সল্লল্লহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করার পর কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে চাইলে যেকোনো দরজা দিয়েই তাতে প্রবেশ করতে পারবে। [তিরমিজি, হাদিস নং ৫৫]
🔲 অজুর ফরজ হচ্ছে ৪ টিঃ-
১) সম্পূর্ণ মুখমন্ডল একবার করে ধোয়া,
২) উভয় হাতের কনুই পর্যন্ত একবার ধোয়া,
৩) মাথা চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা,
৪) উভয় পায়ের টাখনু পর্যন্ত একবার করে ধোয়া।
🔹 শুধুমাত্র উপরের ৪ টি ফরজ আদায় করেও অজু করা হলে অজু সহীহ হয়ে যাবে এবং সেই অজু দিয়ে নামাজ আদায় করা যাবে। তবে অজু করার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করে যথাযথভাবে সুন্নত আদায় করে অজু করা হচ্ছে রাসূল সা. এর সুন্নত। তাই আমাদের সকলের জন্য উচিত হচ্ছে পরিপূর্ণভাবে সুন্নত অনুসরণ করে অজু করা।
⭕ মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সবাইকে উত্তমরূপে অজু করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্ব ও এহতেমামের সহিত আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমিন 💞✅
🔲 অজু ভঙ্গ হওয়ার প্রধান কারন সমূহঃ-
১) প্রস্রাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া-
🔸 পায়খানা ও প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, প্রস্রাব, পায়খানা ইত্যাদি। [হেদায়া ১/৭]
🔹 কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, তোমাদের কেউ প্রস্রাব পায়খানা সেরে আসলে নামাজ পড়তে চাইলে [অজুর মাধ্যমে] পবিত্রতা অর্জন করে নাও। [সূরা মায়িদা ৬]
🔸 হযরত আব্বাস (র.) থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল (স.) ইরশাদ করেছেন, শরীর থেকে যা কিছু বের হয়, তার কারণে অজু ভেঙে যায়। [বায়হাকি, হাদিস নং ৫৬৮]
২) রক্ত, পূঁজ বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া-
🔹 হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (র.) এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অজু করে নিতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক ১১০]
৩) মুখ ভর্তি করে বমি করা-
🔸 রাসূল (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির বমি হয় অথবা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে কিংবা মজি (লজ্জাস্থান থেকে পাতলা তরল পদার্থ) বের হয়, তাহলে সে ফিরে গিয়ে অজু করে নিবে। [ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১২২১]
৪) থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া-
🔹 হাসান বসরি (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার উপর অজু করা আবশ্যক হবে না। [মুসান্নাফে আবি শাইবা ১৩৩০]
৫) চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া-
🔸 রাসূল (স.) ইরশাদ করেছেন, চিৎ বা কাত হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লে অজু ভেঙ্গে যাবে। কেননা চিৎ বা কাত হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়। ফলে তখন বাতকর্ম (বায়ু নির্গত) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। [আহমাদ ২৩১৫]
৬) পাগল, মাতাল কিংবা অচেতন হলে-
🔹 হাম্মাদ (রহ.) বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ হয়, তখন নামাজের জন্য তার অজু করতে হবে। [মুসান্নাফ আ. ৪৯৩]
৭) নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে-
🔸 রাসূল (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চ স্বরে হাসে, সে ব্যক্তি পুনরায় অজু এবং নামাজ আদায় করে নিবে। হাসান বিন কুতাইবা (রহ.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি নামাজে উচ্চ স্বরে হাসি দেয়, সে ব্যক্তি অজু এবং নামাজ পুনরায় আদায় করে নিবে [দারা কুতনি ৬১২]
🔲 অজু করার পর আয়না দেখা হলে, হাটুর উপর কাপড় উঠে গেলে কিংবা গায়রে মাহরাম (যাদের সাথে দেখা দেওয়া জায়েজ নেই) এমন কাউকে দেখে ফেললে অথবা গায়রে মাহরাম কেউ দেখে ফেললে অজু ভঙ্গ হয় না।