জিজ্ঞাসা-১৩০৭৩:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
সম্মানিত মুফতি সাহেব,
আমার জানার বিষয় হলো-
মসজিদে ইমামের পিছনে ডানে অথবা বামে প্রতি ওয়াক্তের জন্যই কোন জায়নামাজ নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির জন্য বিছিয়ে রাখা/ খালি রাখা এবং একই জায়গায় উক্ত ব্যক্তি নিয়মিত নামাজ আদায় করার বিধান কুরআন ও হাদিসের আলোকে জানালে উপকৃত হব ।
জাযাকাল্লাহু খাইরান।
তারিখ:১৪/০৯/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা সাজ্জাদ হোসেন চট্টগ্রাম থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, মসজিদ যেহেতু আল্লাহর ঘর, এখানে ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা সবাই সমান। সবাই আল্লাহর গোলাম। এখানে কারো জন্য মুসল্লা বিছিয়ে জায়গা দখল করা, অন্য কেউ সেখানে বসতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া মারাত্মক অন্যায়। মসজিদে যে যত আগে আসতে পারবে, সে তত সামনে বসার অধিকার রাখবে। দলিল-
حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ الطَّيَالِسِيُّ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ الْحَكَمِ، ح وَحَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيِّ، عَنْ تَمِيمِ بْنِ مَحْمُودٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ شِبْلٍ، قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ نَقْرَةِ الْغُرَابِ وَافْتِرَاشِ السَّبُعِ وَأَنْ يُوَطِّنَ الرَّجُلُ الْمَكَانَ فِي الْمَسْجِدِ كَمَا يُوَطِّنُ الْبَعِيرُ . هَذَا لَفْظُ قُتَيْبَةَ .
৮৬২. আবুল-ওয়ালীদ আত-তায়ালিসী ..... আব্দুর রহমান ইবনে শিবল (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কাকের ঠোকরের ন্যায় (অর্থাৎ তাড়াতাড়ি) সিজদা করতে এবং চতুষ্পদ জন্তুর মত বাহু বিছাতে এবং মসজিদের মধ্যে উটের মত নির্দিষ্ট স্থান বেছে নিতে নিষেধ করেছেন। হাদীসের মতন (মূল পাঠ্য) রাবী কুতায়বার বর্ণিত।
Narrated AbdurRahman ibn Shibl:
The Messenger of Allah (ﷺ) prohibited to peck like a crow, and to spread (the forearms) like a wild beast, and to fix a place in the mosque like a camel which fixes its place. These are the wordings of Qutaybah.
—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৬২ (আন্তর্জাতিক নং ৮৬২)
وقال شيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله " مجموع الفتاوى " (22/195) :
" ليس لأحد من الناس أن يختص بشيء من المسجد بحيث يمنع غيره منه دائما ، بل قد نهى النبي صلى الله عليه وسلم عن إيطان كإيطان البعير ، قال العلماء : معناه أن يتخذ الرجل مكانا من المسجد لا يصلى إلا فيه" انتهى .
فيكره للرجل أن يتخذ مكانا في المسجد لا يصلي فيه .
وقد ذكر العلماء عدة حكم لهذا الحكم ، وبعض المفاسد المترتبة عليه .
অর্থাৎ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া( রাহি.) মাজমুউল ফাতওয়াতে (২২/১৯৫) বলেন, কোন মানুষের এই অধিকার নেই যে, মসজিদের একটি অংশে অন্য কাউকে সালাত আদায়ের সুযোগ না দিয়ে শুধুমাত্র নিজের জন্যই সেই অংশটি সংরক্ষিত করে রাখা। কারণ এ ব্যাপারে স্বয়ং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেই কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তিনি সালাতের জায়গাগুলোতে উটের মতো স্থান গেঁড়ে বসতে নিষেধ করেছেন।
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় সুপ্রসিদ্ধ ইলমবেত্তাগণের ভাষ্য হল, আলোচ্য হাদিসের মাধ্যমে, মসজিদের সুনির্দিষ্ট কোন একটি স্থানকে নিজের জন্য অবধারিত করে নেওয়ার মানসিকতা পরিহার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া এই বিধান সংক্রান্ত নানাবিধ বিষয় নিয়েও তাঁরা ব্যাপক আলোচনা করেছেন। সেইসাথে, নিজের সালাতের জন্য স্বতন্ত্র স্থান বরাদ্দকরণের এই প্রবণতা থেকে যে সকল নেতিবাচক বিষয়গুলো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে, সেগুলোকেও সবিস্তারে তুলে ধরেছেন। সূত্র: মাজমুউল ফাতওয়াত-২২/১৯৫
দ্বিতীয় কথা হলো, নফল নামাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট জায়গায় নামাজ আদায় করা জায়েয। দলিল-
ورد أنه لا بأس بتخصيص مكان معين في المسجد للصلاة فيه في صلاة النافلة ، فعن يزيد بن أبي عبيد قال : " كُنْتُ آتِي مَعَ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ فَيُصَلِّي عِنْدَ الْأُسْطُوَانَةِ الَّتِي عِنْدَ الْمُصْحَفِ فَقُلْتُ : يَا أَبَا مُسْلِمٍ ، أَرَاكَ تَتَحَرَّى الصَّلَاةَ عِنْدَ هَذِهِ الْأُسْطُوَانَةِ . قَالَ : فَإِنِّي رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى الصَّلَاةَ عِنْدَهَا " رواه البخاري (502) ، ومسلم (509).
قال ابن رجب في " فتح الباري " (2/644-648) :
" وفي الحديث دليل على أنه لا بأس أن يلزم المصلي مكانا معينا من المسجد يصلي فيه تطوعا . وقد ورد في رواية التصريح بأن هذه الصلاة كانت تطوعا
৪৭৮। মক্কী ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ..... ইয়াযিদ ইবনে আবু উবাইদা (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি সালামা ইবনুল আকওয়া (রাযিঃ) এর কাছে আসতাম। তিনি সর্বদা মসজিদে নববীর সেই স্তম্ভের কাছে নামায আদায় করতেন যা ছিল মাসহাফের নিকটবর্তী। আমি তাঁকে বললামঃ হে আবু মুসলিম! আমি আপনাকে সর্বদা এই স্তম্ভ খুজে বের করে সামনে রেখে নামায আদায় করতে দেখি (এর কারণ কি?) তিনি বললেনঃ আমি নবী (ﷺ)কে এটি খুঁজে বের করে এর কাছে নামায আদায় করতে দেখেছি।
Narrated Yazid bin Al `Ubaid: I used to accompany Salama bin Al-Akwa` and he used to pray behind the pillar which was near the place where the Qur’ans were kept. I said, "O Abu Muslim! I see you always seeking to pray behind this pillar." He replied, "I saw Allah’s Messenger (sallallahu ’alaihi wa sallam) always seeking to pray near that pillar."
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৭৮ (আন্তর্জাতিক নং ৫০২)
ব্যাখ্যা:
হাদীসে এ কথার প্রমাণ রয়েছে যে, মসজিদে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে নফল নামায পড়ায় কোন ক্ষতি নেই বলে বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্র: ফাতহুল বারী-২/৬৪৪-৬৪৮
সারকথা হলো, মসজিদে ইমামের পিছনে ডানে অথবা বামে প্রতি ওয়াক্তের জন্যই কোন জায়নামাজ নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির জন্য বিছিয়ে রাখা/ খালি রাখা এবং একই জায়গায় উক্ত ব্যক্তি নিয়মিত নামাজ আদায় করার মাকরুহ। এটা জামাআতে ফরজ নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে তবে নফল নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে অসুবিধা নেই।
والله اعلم بالصواب