আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-২৮৮: কবরে ফুল দেয়ার বিধান কি

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-২৮৮:

আসসালামু আলাইকুম। কবরে ফুল দেয়া এবং সেলুটিং করার ব্যাপরে কোরআন হাদীসের আলোকে বিস্তারিত জানতে চাই।

হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া মাহমুদ রামু কক্সবাজার থেকে----



জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

نحمده ونصلي على رسوله الكريم اما بعد 

 তাসলিমবাদ প্রথম কথা হলো, কবরে ফুল দেওয়া, আগরবাতি জ্বালানো, কবরের সামনে নীরবতা পালন করা, সেলুট দেওয়া এগুলো ইসলামী শরীয়ত সম্মত নয়, বেদআত। 


বেদআত বলা হয়, যার অস্তিত্ব কোরআন হাদিসে নেই এবং খয়রুল কুরুনে যুগে নেই। দলিল:


হাদিস নং-০১

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ


‘যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টি করল যা মূলত তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা অগ্রাহ্য। বুখারি- ২৫০১


হাদিস নং-০২

وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلالَةٌ

“দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্ট বিষয়াদি থেকে সাবধান! কারণ প্রতিটি নতুন আবিষ্কৃত বিষয়ই গোমরাহি। আবু দাউদ-৪০৬৭; মুসতাদরাক


হাদিস নং -০৩

وَعَن عِمْرَانَ بنِ الحُصَيْنِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، أنّه قَالَ : «خَيْرُكُمْ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ». قَالَ عِمْرَانُ: فَمَا أدْري قَالَ النَّبِيُّ ﷺ مَرَّتَيْنِ أَو ثَلاَثاً« ثُمَّ يَكُونُ بَعْدَهُمْ قَوْمٌ يَشْهَدُونَ وَلاَ يُسْتَشْهَدُونَ، وَيَخُونُونَ وَلاَ يُؤْتَمَنُونَ، وَيَنْذِرُونَ وَلاَ يُوفُونَ، وَيَظْهَرُ فِيهمُ السَّمَنُ ». متفقٌ عَلَيْهِ 


অর্থ: ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি (ﷺ) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম যুগ হল আমার সাহাবিদের যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবেয়িদের) যুগ।’’ ইমরান বলেন, নবি (ﷺ) তাঁর যুগের পর উত্তম যুগ হিসাবে দুই যুগ উল্লেখ করেছেন, না তিন যুগ তা আমার জানা (স্মরণ) নেই।’ অতঃপর তোমাদের পর এমন এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সাক্ষ্য দেবে অথচ তাদেরকে সাক্ষী মানা হবে না। তারা খেয়ানত করবে এবং তাদের নিকট আমানত রাখা যাবে না। তারা আল্লাহর নামে মানত করবে কিন্তু তা পুরা করবে না। আর তাদের দেহে স্থূলত্ব প্রকাশ পাবে।’’ তাখরিজ: বুখারি ২৬৫১, ৩৬৫০, ৬৪২৮, ৬৬৯৫, মুসলিম ২৫৩৫, তিরমিযি ২২২১, ২২২২, নাসায়ি৩৮০৯


সুতরাং যে আমল কোরআন হাদিস অনুসরণীয় যুগে অস্তিত্ব পাওয়া যায় না তা পরিত্যাজ্য।


দ্বিতীয় কথা হলো, কবরে ফুল দেওয়া, নিরবতা পালন করা ইত্যাদি মুসলিমদের সংস্কৃতি নয়, বিজাতীয় সংস্কৃতি সুতরাং তা পরিত্যাগ করা কর্তব্য। দলিল:

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ


‘হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।’ তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-৪০৩১


যেমন,আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটির ফতওয়াসমগ্রতে এসেছে,


وضع الزهور على قبور الشهداء أو قبور غيرهم- من البدع التي أحدثها بعض المسلمين في الدول التي اشتدت صلتها بالدول الكافرة، استحسانا لما لدى الكفار من صنيعهم مع موتاهم، وهذا ممنوع شرعا لما فيه من التشبه بالكفار،


শহিদদের কবরে কিংবা অন্যদের কবরে ফুল দেয়া এমন এক বেদআত যা আবিস্কার করেছে এমন কিছু মুসলিম রাষ্ট্র যেগুলোর বন্ধন অমুসলিম রাষ্ট্রেগুলোর সঙ্গে দৃঢ়। কাফেররা তাদের মৃতদের সঙ্গে যা করে এরাও তাদের অনুকরণে তা করে। এটি শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। কেননা, এতে কাফেরদের সাদৃশ্যতা গ্রহণ বিদ্যমান। সূত্র: ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা, ফতওয়া নং ৪০২৩


তৃতীয় কথা হলো, কবরের উপর ফুল দেওয়া, মোমবাতি জ্বালানো নিরবতা পালন করা, চুমু খাওয়া, সেলুট দেওয়া ইত্যাদি অর্থাৎ কবরকে কেন্দ্র করে এই জাতীয় তাজিম/সম্মান ধীরে ধীরে মুসলমানদেরকে কুফুর শিরকের দিকে ধাবিত করে, তাই ইসলাম দূর দূর থেকে সাবধানতা অবলম্বন শিক্ষা দেয়। দলিল: 


হাদিস নং-০১

لَعْنَةُ اللهِ عَلَى اليَهُودِ وَالنصَارَى، اتخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ


‘ইহুদী ও নাসারাদের উপর আল্লাহর লা‘নত, কারণ তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে সিজদার স্থান বানিয়েছে। তাখরিজ: বুখারি-৪৩৫


হাদিস নং-০২

لَا تَجْعَلُوا قَبْرِي عِيدًا


‘আমার কবরকে তোমরা উৎসবের স্থান বানিও না।’ তাখরিজ: আবু দাউদ-২০৪২



সারকথা হলো, কবরে ফুল দেওয়া কবরকে সম্মান করা নীরবতা পালন করা এগুলো মুসলমানদের সংস্কৃতি নয়, সুতরাং তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তবে কোন মুসলিম চাকরি ক্ষেত্রে করতে বাধ্য হলে তার জন্য আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার পাঠ করবেন।


কবর-যিয়ারতের পদ্ধতি:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতের এই তরীকা বলেছেন যে, কেউ যখন কবরস্থানে যায়, তো কবরবাসীদের যেন এ বলে সালাম দেয়-

السلام عليكم دار قوم مؤمنين، أنتم لنا فرط ونحن لكم تبع، وإنا إن شاء الله بكم لاحقون، نسأل الله لنا ولكم العافية.

অর্থ : হে মুমিনদের বসতি! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা আমাদের পূর্বসূরী আর আমরা তোমাদের উত্তরসূরী। আর ইনশাআল্লাহ আমরা তোমাদের সাথে যুক্ত হব। আমরা আল্লাহর কাছে আফিয়াত চাই। আমাদেরও জন্য এবং তোমাদেরও জন্য। তাখরিজ: মুসলিম ১/৩১৩,৩১৪; সুনানে নাসায়ী ১/২২২; মুসনাদে আহমাদ- ২২৯৮৫



والله اعلم بالصواب