জিজ্ঞাসা-২৯৬: যদি কোন সরকারি চাকুরিজীবি ব্যক্তি টিফিন ভাতা না পেয়ে থাকেন (প্রাধিকার না থাকে); তাহলে যারা নিচ্ছেন তাদের এই কাজটি শরীয়তের দৃষ্টিতে কি হবে? বিস্তারিত জানতে চাই। তারিখ-০৮/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা হারুনুর রশিদ রামু, কক্সবাজার থেকে----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সরকারি কর্মচারিগণ বিভিন্ন খাতে বেতন নির্ধারণ হয়, যেমন মূল বেসিক, বাড়ি ভাড়া, শিক্ষা সহায়ক ভাতা, যাতয়াত ভাতা ইত্যাদি। তবে সবাই সব খাতের অংশ পান না। সুতরাং আপনার প্রশ্নের আলোকে উক্ত ব্যক্তি যদি টিফিন ভাতা না পেয়ে থাকে, তাহলে বেতনের সাথে এ অতিরিক্ত টাকাটা নেওয়া জায়েজ হবে না। কেননা কে কোন খাতের টাকা পাবে তা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত। দলিল:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأْكُلُوٓاْ أَمْوَٰلَكُم بَيْنَكُم بِٱلْبَٰطِلِ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। সূরা নিসা-২৯
لَا تَأْكُلُو আয়াতে বলা হয়েছে। যার অর্থ ‘খেয়ো না’। পরিভাষার বিচারে ‘খেয়ো না’ বলতে যে কোনভাবে ভোগদখল বা হস্তক্ষেপ করো না বোঝানো হয়েছে। সেটা খেয়ে, পরিধান করে কিংবা অন্য অন্য যে কোন পন্থায় ব্যবহার করেই হোক না কেন! কেননা, সাধরণ পরিভাষায় সম্পদ যে কোন হস্তক্ষেপকেই খেয়ে ফেলা বলা হয়।
উক্ত আয়াতে بِٱلْبَٰطِلِ ‘বাতিল’ শব্দটির তরজমা করা হয়েছে ‘অন্যায় পন্থায়’, । এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এবং অন্যান্য সাহাবিগণ বলেন, শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ এবং না জায়েজ সবগুলো পন্থাকেই বাতিল বলা হয়। যেমন চুরি, ডাকাতি, আত্মসাৎ, বিশ্বাসঘাতকতা, ঘুষ, সুদ, জুয়া ইত্যাদি। সব প্রকার অন্যায় পন্থা এ বাতিল শব্দের অন্তর্ভুক্ত। সুত্র: বাহরে মুহিত; তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন-২৪৩ পৃ. সংক্ষিপ্ত মাওলানা মহিউদ্দিন খান রহ. অনূদিত
দ্বিতীয় কথা হলো, যেহেতু অতিরিক্ত টিফিন ভাতাটা তার নেওয়া হারাম। তাই যে পরিমান নিয়েছে, সেই পরিমান টাকা সরকারকে ফেরত দিতে হবে। দলিল:
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا
নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। সূরা নিসা-৫৮
ব্যাখ্যা: কারও নিকট অপর কারও কোন বস্তু বা সম্পদ গচ্ছিত রাখাটাই শুধুমাত্র আমানত নয়, যাকে সাধারণত আমানাত বলে সব কিছুই আমানতের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তাআলা আদেশ দিচ্ছেন যে, “তোমরা আমানতসমূহ তার অধিকারীর নিকট অর্পণ করে দাও”। এ হুকুমের লক্ষ্য সাধারণ মুসলমানও হতে পারে কিংবা বিশেষ ক্ষমতাসীন শাসকবর্গ হতে পারে। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন-২৫৮পৃ. সংক্ষিপ্ত, মাওলানা মহিউদ্দিন খান রহ. অনূদিত
সারকথা কথা হলো, উক্ত সরকারি কর্মচারি/কর্মকর্তা ব্যক্তি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেভাবেই অতিরিক্ত টিফিন ভাতা নিয়েছে, তা সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। টিয়ারের মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়া যায়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যারা বেতন-ভাতা বাবদ অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করে, অবসর যাওয়ার সময়, অর্থ বিভাগ সুদে-আসলে কেটে নিবে। যা আমি বড়দের কাছে শুনেছি। তাই এ বিষয়েও আমাদের খেয়ার রাখতে হবে।
والله اعلم بالصواب