জিজ্ঞাসা -২৮৭:
আসসালামু আলাইকুম। মাহরাম ব্যক্তি অমুসলিম হলে তার সাথে পর্দা করতে হবে কিনা? যেমন বোন যদি মুসলিম হয় আর ভাই যদি কাফের থাকে তাহলে তার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবে কিনা? এ ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কি? দয়া করে জানাবেন ধন্যবাদ। তারিখ-২৯/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আনোয়ার হোসেন যশোর থেকে---
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তাসলিমবাদ কথা হলো, প্রথমত তিন ধরনের মাহরাম হয়ে থাকে। যথা : (১) বংশীয়/ঔরসজাত সম্পর্ক। (২) দুধ সম্পর্ক ও (৩) বৈবাহিক সম্পর্ক।
দ্বিতীয় কথা হলো, ইসলামী শরীয়ত মাহরুম নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম ও অমুসলিমের মধ্যে পার্থক্য করেননি। দলিল:
ولا يبدين زينتهن الا لبعولتهن او ابآئهن او ابآء بعولتهن او ابنآئهن او ابنآء بعولتهن او اخوانهن او بنى اخوانهن او بنى اخوتهن او نسائهن او ما ملكت ايمانهن او التبعين غير اولى الاربة من الرجال او الطفط الذين لم يظهروا على عورت النساء
অর্থ: তারা যেন নিজেদের আবরণ প্রকাশ না করে তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যারা যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত অন্য কারো নিকট। সূরা নূর-৩১
তৃতীয় কথা হলো, পিতা-মাতা কাফের হলেও তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলিল:
وَإِن جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ [٣١:١٥]
অর্থ: পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। সূরা লুকমান-১৫
চতুর্থ কথা হলো, সাহাবায়ে কেরাম তাদের অমুসলিম মাহরাম এর সাথে দেখা করেছেন। দলিল:
قدم أبو سفيان إلى المدينة لأجل بعض الشؤون السياسية بين قريش وبين رسول الله -صلّى الله عليه وسلّم-، وقد كان أبو سفيان ما زال مشركًا، فدخل بيت ابنته أم حبيبة قبل دخوله إلى رسول الله، فقامت أم حبيبة بطيّ الفراش عنه حتّى لا يجلس عليه. فقال لها: "
فقال لها: "يا بنية! ما أدري أرغبت بي عن هذا الفراش؟ أم رغبت به عني؟ قالت: بل هو فراش رسول الله -صلّى الله عليه وسلّم-، قال: والله لقد أصابك يا بنية بعدي شر"،[١] وورد في روايات أخرى أنّها قالت له: "بل هو فراش رسول الله -صلّى الله عليه وسلّم-، وأنت امرؤ نجس مشرك"، فوضّحت له سبب عدم رغبتها بجلوسه على الفراش
অর্থাৎ আবু সুফিয়ান রা মদিনায় আসলেন।কুরাইশ এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর মধ্যে সন্ধি নবায়নের জন্য। অবশ্য তখন আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন মুশরিক ছিলেন।
এবং কন্যা উম্মে হাবিবা (রা.)-এর সাথে দেখা করতে যান। সে সময় হজরত উম্মে হাবিবা (রা.) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট অবস্থান করছিলেন এবং তিনি পিতা আবু সুফিয়ানকে রসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র বিছানায় মোশরেক হওয়ার কারণে বসতে দেননি। আবু সুফিয়ান বললেন: ‘বেটি! বিছানা উঠিয়ে দিলে কেন, আমার বসার উপযোগী মনে করলে না?’ তিনি বললেন: ‘এটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিছানা এবং আপনি মোশরেক ও অপবিত্র। এ জন্য আমি ভালো মনে করিনি আপনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিছানায় বসুন।’ এ কথা শুনে আবু সুফিয়ান সেখান হতে চলে যান। সূত্র: কিতাবুল ইসাবাতি ফি তাময়িজিল সাহাবাতি-১৪২পৃ. ইবনে হাজার আসকালানি রহ.,যাদুল মাআদ-৩/৩০০-৩০৯পৃ.
প্রশ্ন: ক। অমুসলিম মেয়ে ও বেপর্দা/দুষ্ট মুসলিম নারীদের সাথে মুসলিম মেয়েদের পর্দা করার বিধান?
উত্তর: ক। অমুসলিম/বেপর্দা মেয়েদের সামনে মুসলিম নারীদের পর্দা করতে হবে কিনা, সেই ব্যপারে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ পাওয়া যায়।
কেহ কেহ বলেছেন যে যদিও তাদের সামনে মুসলিম নারীদের পর্দা করা ফরজ নয়,তবে কম আয কম মুসতাহাব অবশ্যই। তাই তাদের সামনে পর্দা করাই উচিত। সূত্র: কিতাবুন নাওয়াজেল ৬/৩৫
তবে ফাতওয়ায়ে সামিতে অমুসলিম নারীদের থেকে মুসলিম নারীদেরকে পর্দা করা জরুরী/ফরজ বলেছেন।
প্রশ্ন: খ। মাহরমের সামনেও কি মাথা ঢাকা বা ওড়না পড়তে হবে?
উত্তর: খ। স্বাভাবিক অবস্থায় মাহরুমের হাত-পা, চুল, গলা, মাথা দেখা জায়েজ আছে। তবে শাহওয়াতের সাথে দৃষ্টি হারাম।
তবে স্বাভাবিক অবস্থা জায়েজ হলেও পূর্বসূরীরা এটা অপছন্দ করেছেন। নিচে কয়েকটি মতামত উল্লেখ্ করা হলো,
ইমাম শা’বি রহ. ও ইকরিমা রহ. বলেন,
لا تضع خمارها عند العم والخال.
“নারী তার চাচা বা মামার সামনে ওড়না ছাড়া থাকবে না।” -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১৭৫৮০
ভাইয়ের সামনে ওড়না ছাড়া থাকা যাবে কি না, এ প্রসঙ্গে হাসান বসরী রহ. বলেন,
والله ما لها ذاك.
“আল্লাহর কসম, তার জন্য এই সুযোগ নেই।” -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১৭৫৬৮
ইমাম যুহরি রহ. বলেন,
أما أن تسلخ الخمار فلا.
“মাহরামের সামনে ওড়না খুলে রাখার সুযোগ নেই।” -মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ১২৮৩০
তাঊস রহ. থেকেও এমন বর্ণনা রয়েছে। -মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ১২৮৩১
শা’বি রহ. থেকে আরো বর্ণিত আছে,
أنه كره أن ينظر إلى شعر كل ذي محرم.
“যেকোনো মাহরাম মহিলার চুলের দিকে তাকানো তিনি অপছন্দ করতেন।” -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১৭৫৬৮
যাইহোক সারকথা হল, অমুসলিম মাহরামের সাথে দেখা করা জায়েয আছে। তবে যতটুকু অংশ মাহরামের সামনে খোলা জায়েজ আছে এর বেশি যেন না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
و الله اعلم بالصواب