জিজ্ঞাসা-২৮৪ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ, বিজ্ঞজনদের নিকট জানার বিষয় হলো, মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মাতৃভূমি মক্কায় অবস্থান না করে মদীনাতে কেন অবস্থান করলেন?? তারিখ-২৭/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ শফিউল ইসলাম সিলেট থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, এ রহস্যে সম্পর্কে সরাসরি কোন নস আমার জানা নেই। তবে চারটি কারণ/ রহস্যে উল্লেখ করছি।
ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين
(০১) নবিজি (ﷺ) জীবন ওহি দ্বারা পরিচালিত হয়েছে; বিশেষ করে নবুওয়াতের পর মৃত্যু পর্যন্ত। দলিল:
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰإِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىٰ
অর্থ: এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়। সূরা আন-নজম-৩,৪
(০২) আমার জানামতে কোন নবি হিজরত করার পর আর স্বদেশে ফিরে আসেননি, অর্থাৎ স্থায়ীভাবে বসবাস করেননি। উদাহরণ স্বরূপ, হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ইরাকের বাবেল শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। হিজরত করেন সিরিয়া এবং তার করব হলো হিব্রোণ সিরিয়া , হজরত মুসা আলাইহিস সালাম মিশরে জন্ম গ্রহণ করেন। হিজরত করেন সিরিয়া এবং তার সমাধি/কবর হলো নবো পর্বত সিরিয়া। সুত্র: বিএন. এম. উইকিপিডিয়া
মদিনায় হিজরত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের বর্ণনা,
وَاِذۡ یَمۡکُرُ بِکَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لِیُثۡبِتُوۡکَ اَوۡ یَقۡتُلُوۡکَ اَوۡ یُخۡرِجُوۡکَ ؕ وَیَمۡکُرُوۡنَ وَیَمۡکُرُ اللّٰہُ ؕ وَاللّٰہُ خَیۡرُ الۡمٰکِرِیۡنَ ‘(হে নবী!) আপনি ঐ সময়টি স্মরণ করুন, যখন কাফিররা চক্রান্ত আঁটছিল যে, তারা আপনাকে বন্দী করবে, অথবা হত্যা করবে কিংবা করবে দেশান্তর। তারা তাদের ষড়যন্ত্র করছিল আর আল্লাহ আপন কৌশল করছিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোত্তম কৌশলী। সূরা আনফাল : ৩০
আল্লাহ নবীজীকে নির্দেশ দিলেন, রাতে স্বীয় গৃহে শয়ন না করে তাঁর স্থানে হযরত আলী রা.কে রাখতে। এভাবে নবীজীর অপেক্ষার প্রহর শেষ হল, জিবরীল আ. হিজরতের নির্দেশ সম্বলিত আসমানী বার্তা নিয়ে এলেন। আয়াত নাযিল হল,
وَقُلۡ رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّاَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّاجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا ‘আর (হে নবী) আপনি বলুন, হে আমার রব! আমাকে প্রবেশ করান কল্যাণের সাথে এবং আমাকে বের করান কল্যাণের সাথে। আর আমাকে আপনার পক্ষ হতে দান করুন সাহায্যকারী শক্তি।’সূরা বনী ইসরাইল : ৮০
(০৩) আমাদের রসূল (ﷺ) –এর রওজা মুবারক যে মদিনায় হবে, তা আল্লাহ তাআলার পূর্ব সিদ্ধান্ত ছিল। যা পূর্বে আসমানি কিতাবেও উল্লেখ ছিল। নবিজি (ﷺ) -এর জন্মের প্রায় ৬০০ বছর আগে বাদশাহ তুব্বা কর্তৃক রসূল (ﷺ)-এর জন্য অট্রালিকা বানানো তারই প্রমাণ বহন করে। সূত্র: তাফরিহুল আজকিয়া আহওয়ালিল আম্বিয়া- ২য় খণ্ড, ১১০ পৃষ্ঠা
(০৪) রাসুল (ﷺ)- এর রওজা মক্কায় না হয়ে মদিনা হলো কেন? এর রহস্যে সম্পর্কে আমি একটি ব্যাখ্যা শুনেছি যা আমার ভাল লেগেছে ও সত্য মনে হয়েছে।
ব্যাখ্যাটি করেছেন, পাকিস্তানের বিখ্যাত বুজুর্গ আরিফ বিল্লাহ শাহ হাকিম মুহাম্মাদ আখতার রহ. যা আমি শুনেছি তারই শিষ্য জামেআ হাকিমুল উম্মতের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন দা.বা. কাছ থেকে---
(ব্যাখ্যাটি এই) এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রতিটি মুসলমানের অন্তরে পবিত্র কাবা ঘর ও প্রিয়তম রাসূল (ﷺ) প্রতি রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ-অদম্য ভালবাসা। যদি রসূল (ﷺ) –এর রওজা মুবারক মক্কায় হতো; তাহলে আশেক মুসলমান একনিষ্ঠভাবে কাবার জিয়ারত ও রসূল (ﷺ) রওজা জিয়ারত করতে বাঁধা সৃষ্টি করতো। যেমন, যখন কেউ কাবা তাওয়াফ করত, তখনই আবার রসূল (ﷺ)-এর কথা মনে হয়ে , দিল সেদিকে ধাবিত হত। আবার যখন রওজা মুবারক জিয়ারত করতো, তখন একই সাথে কাবার কথা মনে পড়লে, মন সেদিকে ধাবিত হতো। অর্থাৎ একজনের ভালবাসার মধ্যে অন্য ভালবাসা ঢুকে যেত। ( বিষয়টি এ রকম, ধরুন! একই সাথে আপনার দুজন শ্রদ্ধাভাজন ওস্তাদ ডেকেছে, এখন কার কাছে আগে যাবেন। কারণ দুজনই সম্মানিত। একজনের কাছে গেলেও আরেকজনের ভালবাসা টানতে থাকে। বিষয়টি যেমন জটিল, তেমনি কাবার পাশে রওজা হলে একই সমস্যা হতো। এটি আমার নিজস্ব উদাহরণ/মন্তব্য)
শাহ হাকিম আখতার রহ. বলেন, এজন্যই আল্লাহ তাআলা মক্কা থেকে রসূল (ﷺ)-এর রওজা মদিনা রেখেছেন। যাতে করে প্রেমিকগণ যখন যেখানে থাকবে প্রাণ উজার মনের জমানো মহব্বত নিবেদন করতে পারে। কোন রকম বাঁধা ছাড়া।
তিনি আরও বলেন, মক্কায় আল্লাহ তাআলা কোন/তেমন গাছ-পালা পয়দা করেননি, শুধু পাহাড় আর পাহাড়। এর রহস্যে হলো, আল্লাহর প্রেমিকগণ যেন প্রাণ জুড়ে-চোখ জুড়ে শুধু কাবার সৌন্দর্যই অবলোকন করে। মক্কায় যদি সেরকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকতো মানুষ সেদিকেই তাকাতো, এতে কাবার ভালবাসায় কিছুটা ভাটা পড়তো। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কাবার চতুর্পাশে পাহাড় রেখেছেন। যাতে কাবার নূর/জ্যোতির প্রতি চোখ চাতক পাখির ন্যায় নিবিষ্ট থাকে।
والله اعلم بالصواب