আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩০৮১: ৫ ওয়াক্ত নামাযের ৩ ওয়াক্ত নামাযে উচ্চস্বরে এবং ২ ওয়াক্তে নিম্নস্বরে ক্বেরাত পাঠ করা হয় কেন?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩০৮১: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

আমার প্রশ্ন হলো- ৫ ওয়াক্ত নামাযের ৩ ওয়াক্ত নামাযে উচ্চস্বরে এবং ২ ওয়াক্তে নিম্নস্বরে ক্বেরাত পাঠ করা হয় কেন? দলীলসহ জানতে চাই।

তারিখ:২৫/০৯/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা আব্দুস সালাম পটুয়াখালী থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, ইসলামের প্রতিটি হুকুমের মধ্যে অবশ্যই হিকমাহ রয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

মহান আল্লাহ রাসূলের আদর্শকে আমাদেরকে আঁকড়ে ধরতে  আদেশ দিয়েছে। আর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: 


والنبي صلى الله عليه وسلم قال : ( صلوا كما رأيتموني أصلي) ،

"তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখ সেভাবে নামায পড়"। তাখরিজ: বুখারি-৮১৮


 নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাযে, মাগরিব ও এশার নামাযের প্রথম দুই রাকাতে শব্দ করে তেলাওয়াত করতেন। আর বাকী নামাযে চুপে চুপে তেলাওয়াত করতেন।


ইমাম নববি রহ. বলেন,

قال النووي رحمه الله :

" فَالسُّنَّةُ الْجَهْرُ فِي رَكْعَتِي الصُّبْحِ وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ وَفِي صَلَاةِ الْجُمُعَةِ ، وَالْإِسْرَارُ فِي الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ ، وَثَالِثَةِ المغرب ، والثالثة وَالرَّابِعَةِ مِنْ الْعِشَاءِ ، وَهَذَا كُلُّهُ بِإِجْمَاعِ الْمُسْلِمِينَ مَعَ الْأَحَادِيثِ الصَّحِيحَةِ الْمُتَظَاهِرَةِ عَلَى ذَلِكَ " انتهى من " المجموع شرح المهذب " (3/389) .

: “সুন্নাহ্‌ হচ্ছে—ফজর, মাগরিব ও এশার দুই রাকাতে এবং জুমার নামাযে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করা। আর যোহর ও আসরের নামাযে এবং মাগরিবের তৃতীয় রাকাতে এবং এশার তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে চুপেচুপে তেলাওয়াত করা। সুস্পষ্ট সহিহ হাদিসের সাথে মুসলিম উম্মাহর ইজমার ভিত্তিতে এসব বিধান সাব্যস্ত।”[আল-মাজমু (৩/৩৮৯)


ফজর, মাগরিব ও ইশারা নামাজ উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করার দলিল -


হাদিস নং-০১ 

وما رواه البخاري (739) ، ومسلم (449) من حديث ابن عباس رضي الله عنه في حضور الجن واستماعهم القرآن من النبي صلى الله عليه وسلم ، وفيه : ( وهو يُصَلَي بأصحابه صلاة الفجر ، فلما سَمعُوا القرآنَ استَمَعُوا لهُ ) .

জ্বিনদের উপস্থিত হওয়া ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কুরআন শুনা প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস। সে হাদিসে রয়েছে: "তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করছিলেন। যখন তাদের কানে কুরআন পৌঁছল তখন তারা মনোযোগ দিয়ে কুরআন শুনল।"[সহিহ বুখারী (৭৩৯) ও সহিহ মুসলিম (৪৪৯)]


হাদিস নং-০২

- ما رواه البخاري (735) ، ومسلم (463) عن جبير بن مطعم رضي الله عنه قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم قرأ في المَغْرِب بِالطّورِ .

জুবাইর বিন মুতয়িম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাগরিবের নামাযে (সূরা) "তূর" তেলাওয়াত করতে শুনেছি।"[সহিহ বুখারী (৭৩৫) ও সহিহ মুসলিম (৪৬৩)]


হাদিস নং-০৩

وما رواه البخاري (733) ، ومسلم (464) عن البراء رضي الله عنه قال : سمعتُ النبي صلى الله عليه وسلم يقرأ " والتينِ وَالزيتُون " في العشاء ، وما سمعت أحداً أحسنَ صوتاً منه .

আল-বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এশার নামাযে "ওয়াত ত্বীনি ওয়ায যাইতূন" পড়তে শুনেছি। আমি তাঁর চেয়ে সুন্দর কণ্ঠের তেলাওয়াত শুনিনি।"[সহিহ বুখারী (৭৩৩) ও সহিহ মুসলিম (৪৬৪)]


যোহর ও আসর সালাতে নিম্নস্বরে তেলাওয়াত করার দলিল।


- ما رواه البخاري (713) عن خباب رضي الله عنه ، وقد سأله سائل : أكان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقرأ في الظهر والعصر ؟ قال : نعم . قلنا : بمَ كنتم تعرفون ذلك ؟ قال : " باضطِرَاب لحيتَهَ " .

খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক লোক তাকে জিজ্ঞেস করল: “রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি যোহর ও আসরের নামাযে ক্বিরাত পড়তেন? তিনি বলেন: হ্যাঁ। আমরা বললাম: আপনারা সেটা কিভাবে জানতেন? তিনি বললেন: তাঁর দাঁড়ির নড়াচড়া দেখে।"[সহিহ বুখারী (৭১৩)]


সারকথা হলো,  ফজর মাগরিব ও এশার নামাজে উচ্চস্বরে এবং যোহর ও আসর সালাতে নিম্নস্বরে তেলাওয়াত করা উম্মাহর ধারাবাহিক আমল। যেমন 


আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: "তিনি প্রত্যেক নামাযে তেলাওয়াত করতেন। তিনি যে নামাযগুলোতে আমাদেরকে শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন সে সব নামাযে আমরাও তোমাদেরকে শুনিয়ে তেলাওয়াত করি। আর তিনি যে সব নামাযে আমাদেরকে না শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন সে সব নামাযে আমরাও তোমাদেরকে না শুনিয়ে তেলাওয়াত করি।"[সহিহ বুখারী (৭৩৮) ও সহিহ মুসলিম (৩৯৬)]


قال القدوري في مختصره مع الجوهرة النيرة (1/ 151) (ويجهر بالقراءة في الفجر وفي الركعتين الأوليين من المغرب والعشاء إن كان إماماً)... (وإن كان منفرداً فهو مخير إن شاء جهر وأسمع نفسه

ইমাম কুদুরি রহ. বলেন, এবং ফজরের সময় এবং মাগরিব ও এশার প্রথম দুই রাকাতে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করবেন যদি তিনি ইমাম হন। এবং যদি তিনি একা থাকেন, তবে তার ইচ্ছাধীন যদি তিনি জোরে করতে চান এবং নিজেকে শোনাতে চান (চুপে চুপে)। সূত্র: মুখতাসার-১/১৫১


  والله اعلم بالصواب