জিজ্ঞাসা -১২৩০৩
আসসালামুয়ালাইকুম। একজন জানতে চেয়েছেন, জুম্মার দিন বাংলা আলোচনার সময়, অথবা যে কোন বক্তব্যের মাঝে কোরানের আয়াত উল্লেখ করলে প্রতিবারেই কি بسم الله বলতে হবে?
فَإِذَا قَرَأْتَ ٱلْقُرْءَانَ فَٱسْتَعِذْ بِٱللَّهِ مِنَ ٱلشَّيْطَٰنِ ٱلرَّجِيمِ
এই আয়াতের আলোকে প্রতিবারেই কি تعوذ পাঠ করতে হবে❓
উল্লেখ্য আন্তর্জাতিক ক্বারীদেরকে দেখা যায় প্রথম তেলাওয়াতের সময়, تعوذ، تسمية দুইটাই পড়ে, মাঝে কথা বলার পরে আবার শুরু করলে শুধু تعوذ পাঠ করেন! ২/১০/২০২২
মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান বগুড়া থেকে ----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্ন জবাবের আগে একটি বিষয় আগে পরিস্কার হতে হবে, সেটা হলো তেলাওয়াত ও বক্তব্যর মাঝে আয়াতের উদ্ধৃতি এক নয়। সুতরাং হুকুমও ভিন্ন ভিন্ন।
আপনি যে আয়াতটি উল্লেখ করেছেন,
لمن أراد أن يقرأ، لقوله تعالى: (فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ) [النحل:98]. وأما عن حكم
البسملة، فقد تقدم برقم: 5566্র
অর্থ: সুতরাং আপনি যখন কুরআন পড়বে, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করবেন। সূরা নাহল-৫৪
ব্যাখ্যা:
هذا أمر من الله تعالى لعباده على لسان نبيه - صلى الله عليه وسلم - : إذا أرادوا قراءة القرآن أن يستعيذوا بالله من الشيطان الرجيم .
অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তার নবীর জবানে বান্দাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যখন তোমরা কোরআন তেলাওয়াতের ইচ্ছা করো তখন বিতাড়িত শয়তানকে আশ্রয় প্রার্থনা করো। সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসির
অর্থাৎ অধিকাংশ তাফসীরকারকগণ! বলেছেন যখন কোরআন পাঠ করার ইচ্ছা করো (অর্থাৎ তেলাওয়াতের সময়), তখন শয়তান হইতে পানাহ চাও।
আপনি যে প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন, আন্তর্জাতিক ক্বারীদেরকে দেখা যায় প্রথম তেলাওয়াতের সময়, تعوذ، تسمية দুইটাই পড়ে, মাঝে কথা বলার পরে আবার শুরু করলে শুধু تعوذ পাঠ করেন! এটাই সঠিক পদ্ধতি।
প্রশ্ন: ক। জুম্মার দিন বাংলা আলোচনার সময়, অথবা যে কোন বক্তব্যের মাঝে কোরানের আয়াত উল্লেখ করলে প্রতিবারেই কি بسم الله বলতে হবে?
উত্তর: ক। না, বক্তব্যর মধ্যে (যে ভাষায় হোক না কেন) আয়াত উদ্ধৃতি দিলে বা দলিল পেশ করলে, শুরুতে তাউস বা তাসমিয়া কোনটাই পড়া জরুরি নয়। হাদিস ও আসারে তার প্রমাণ বহন করে। দলিল:
হাদিস নং-০১
مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا، فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ -يَعْنِي بِشِدْقَيْهِ- ثُمَّ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ، ثُمَّ تَلاَ : "لَا يَحْسِبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ... " الآيَةَ.
অর্থ: রাসূল (ﷺ) বলেন, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, সে তার যাকাত আদায় করল না, তার সম্পদকে তার জন্যে বিষধর সাপে রূপান্তরিত করা হবে। সাপটার চোখের উপর থাকবে দুটি কালো বিন্দু। কেয়ামত দিবসে সাপটি তার গলা পেঁচিয়ে ধরবে। তারপর দুই চোয়ালে তাকে চেপে ধরে বলতে থাকবে- আমি তোমার সম্পদ। আমি তোমার সঞ্চিত ধনভান্ডার। অতপর হযরত রাসূলে কারীম (ﷺ) এই আয়াত তিলাওয়াত করেন-
وَ لَا یَحْسَبَنَّ الَّذِیْنَ یَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتٰىهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَیْرًا لَّهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ سَیُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ ؕ وَ لِلهِ مِیْرَاثُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ ؕ وَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِیْرٌ۠
আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদের দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তা তাদের জন্য মঙ্গল এ যেন কিছুতেই মনে না করে। না এ তাদের জন্য অমঙ্গল। যাতে তারা কৃপণতা করেছে কিয়ামতের দিন তা-ই তাদের গলার বেড়ি হবে। আসমান ও যমীনের স্বত্ত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। তোমরা যা কর আল্লাহ তা বিশেষভাবে অবহিত। (সূরা আলে ইমরান-১৮০) তাখরিজ: বুখারি-১৪০৩
হাদিস নং-০২
عن بُريدةَ ، قالَ : خطبَنا رسولُ اللَّهِ صلَّى اللهُ عليْهِ وسلَّمَ ، فأقبلَ الحسنُ ، والحسينُ رضيَ اللَّهُ عنْهما ، عليْهما قَميصانِ أحمرانِ يعثُرانِ ويقومانِ ، فنزلَ فأخذَهما ، فصعِدَ بِهما المنبرَ ، ثمَّ قالَ : صدقَ اللَّهُ : أَنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ ، رأيتُ هذينِ فلم أصبِرْ ، ثمَّ أخذَ في الخطبةِ
الراوي : بريدة بن الحصيب الأسلمي | المحدث : الألباني | المصدر : صحيح أبي داود
الصفحة أو الرقم: 1109 | خلاصة حكم المحدث : صحيح
অর্থ: একদিন মহানবী (ﷺ) খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় হযরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ) পড়ে-উঠে তাঁর সামনে আসতে লাগলে তিনি মিম্বর থেকে নিচে নেমে তাঁদেরকে উপরে তুলে নিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, “আল্লাহ তাআলা সত্যই বলেছেন,
(إنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلاَدُكُمْ فِتْنَةٌ)
(অর্থাৎ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য ফিতনাই তো।) আমি এদেরকে পড়ে-উঠে চলে আসতে দেখে ধৈর্য রাখতে পারলাম না। বরং খুতবা বন্ধ করে এদেরকে তুলে নিলাম। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-১১০৯
আসার নং-০১
روى الطبري في "التفسير" (8 / 467)، قال: حَدَّثَنِي يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: حدثنا هُشَيْمٌ، قَالَ: أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ أَبِي سُلَيْمٍ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنْ عَلْقَمَةَ وَمَسْرُوقٍ: أَنَّهُمَا سَأَلَا ابْنَ مَسْعُودٍ عَنِ الرِّشْوَةِ، فَقَالَ: مِنَ السُّحْتِ. قَالَ: فَقَالَا: أَفِي الْحُكْمِ؟ قَالَ: ذَاكَ الْكُفْرُ. ثُمَّ تَلَا هَذِهِ الْآيَةَ: وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ ".
وهذا إسناد رواته ثقات، وصححه الشيخ سعد الحميد في تحقيق "سنن سعيد بن منصور" (4 / 1472).
অর্থাৎ তিনি বললেনঃ এটা কুফরী। তারপর তিনি তিলাওয়াত করলেন এবং যে না করে। আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দ্বারা বিচার করুন, তারাই অবিশ্বাসী। তাখরিজ: সুনানে সাদ ইব মানছুর-৪/১৪৭২; তাফসিরে তাবারি-৮/৪৬৭
প্রিয় পাঠক আমি উপরে দুটি হাদিস একটি আসার উল্লেখ করলাম দেখুন সাধারণ নছিহত ও খুতবাকালে আয়াত পাঠকালে তাউস-তাসমিয়া পড়া হয়নি।
সারকথা হলো, তেলাওয়াত ও উদ্ধৃতি এক নয়। সুতরাং বক্তব্যের মাঝে বা কখনও দলিল হিসেবে আয়াত পেশ করলে তাউস-তাসমিয়া (আউজু-বিসমিল্লাহ) পড়া লাগবে না, সুন্নাহ নয়। তবে আমার জানামতে জুমুআ/ঈদের প্রথম খুতবার শেষে যে আয়াত পাঠ করা হয়, তখন শুধু তাউস (আউজুবিল্লাহ) পড়তে হবে, কেননা এটা তেলাওয়াত হিসেবে পাঠ করা হয়।
والله اعلم بالصواب