আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩০৭৮: প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করে, আবার দ্বিতীয় স্বামীক ডিভোর্স দিয়ে প্রথম স্বামীর ফিরে আসা যাবে কি

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩০৭৮: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।  সম্মানিত মুফতি সাহেব এবং গবেষকদের কাছে একটি প্রশ্ন করছি। একজন নির্মাণ শ্রমিক তার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি দুঃখজনক ঘটনা বর্ণনা করেছেন এবং এ ব্যাপারে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, তার স্ত্রীর সাথে একটা বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হয়েছিল এবং দুই সপ্তাহ মতো সে বাড়ির বাইরে তার পেশার কাজে নিয়োজিত ছিল। এ সময়ের মধ্যে তার স্ত্রী একজনের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে এবং তাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে ১১ জুলাই ২০২২ তারিখ তার স্বামীকে কোর্টের মাধ্যমে ডিভোর্স লেটার পাঠায়। ডিভোর্স লেটার পাঠানোর দুই তিন দিনের মধ্যেই সে তার পরকীয়া প্রেমিক কে বিবাহ করে। বিয়ের কিছুদিন পরেই সেই মহিলা গর্ভবতী হয়েছে এটা সে বুঝতে পারে এবং সবমিলিয়ে তার পরকীয়া প্রেমিক স্বামীর সাথে চার মাসের মত সংসার করে। যখন তার গর্ভ প্রকাশিত হয়ে পড়ে তখন সে তার দ্বিতীয় স্বামীকে আবার ডিভোর্স দেয় এবং ২৬শে ডিসেম্বর ২০২২ সালে সে একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু প্রসব করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে এটি মহিলার তৃতীয় সন্তান। বিজ্ঞ মুফতি এবং গবেষকদের কাছে প্রশ্ন:

১/ ঐ মহিলা তার প্রথম স্বামীকে যে ডিভোর্স দিয়েছিল তা বৈধ ছিল কিনা? 

২/এই মহিলা যে সন্তান প্রসব করেছে সে সন্তানের বাবা কে হবেন? 

৩/ স্বামী তার সন্তানদের দিকে তাকিয়ে এ মহিলাকে আবার ফিরিয়ে নিতে আগ্রহী হলে এক্ষেত্রে তার পদ্ধতি কি হবে?

মা'আসসালাম

তারিখ:২৩/০৯/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  ইহসানুল করিম রাজশাহী থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক উত্তর তিনটি ভাগে দেওয়া হচ্ছে:


প্রশ্ন: ০১। ঐ মহিলা তার প্রথম স্বামীকে যে ডিভোর্স দিয়েছিল তা বৈধ ছিল কিনা? 

উত্তর: ০১। সাধারণত শরীয়তে তালাক দেয়ার অধিকার একমাত্র স্বামীকে দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীর জন্যে স্বামীকে তালাক দেয়ার কোন অনুমতি নেই। দলিল- 

عن ابن المسيب رض قال: الطلاق بالرجال والعدة بالنساء (مصنف عبد الرزاق-7/236، رقم-12951)

অর্থ: ইবনে মুসায়্যিব রা বর্ণিত, তিনি বলেন, তালাক হলো পুরুষের জন্য তালাক এবং মহিলাদের জন্য ইদ্দত। তাখরিজ: মুসান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক -১২৯৫১


দ্বিতীয় কথা হলো, 

 বাংলাদেশ প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইন-১৯৬১ নিকাহ ও তালাক নামার ১৮ নং কলামে  একটি ধারা রয়েছে। অর্থাৎ স্ত্রীকে নিজের নফসের তালাক দেওয়ার অধিকার। এখানে যদি স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক পতিত করার অধিকার প্রদান করে থাকে,  তাহলে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকারপ্রাপ্তা হয়। 


যদি শর্ত না পাওয়া যায় কিংবা স্বামী স্ত্রীকে তালাকের অধিকার প্রদান না করে থাকে, তাহলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকার পায় না।


প্রশ্ন: ০২। এই মহিলা যে সন্তান প্রসব করেছে সে সন্তানের বাবা কে হবেন? 

উত্তর: ০২‌। আপনার প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ১১ জুলাই ২০২২ তারিখ তার স্বামীকে কোর্টের মাধ্যমে ডিভোর্স লেটার পাঠায় এবং ২৬শে ডিসেম্বর ২০২২ সালে সে একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু প্রসব করে। এর মাঝে ৬ মাসেরও কম সময়। দ্বিতীয় স্বামীর কাছে ৪ মাস ছিল। ৬ মাসের কম সময়ে পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা সম্ভব নয়। সে হিসেবে বাচ্চাটি প্রথম স্বামীর অর্থাৎ ১১ জুলাই এর আগ পর্যন্ত প্রথম স্বামীর অধীনে ছিল।


আর যদি পরকিয়া মাধ্যমে বাচ্চাটি গর্ভধারণ করে সেটি উক্ত মহিলাটি ভালো বলতে পারবে।


আর সন্দেহ পোষণ করলে আধুনিক যুগে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বাচ্চার পিতা নির্ধারণ করা সম্ভব।


প্রশ্ন: ০৩।  স্বামী তার সন্তানদের দিকে তাকিয়ে এ মহিলাকে আবার ফিরিয়ে নিতে আগ্রহী হলে এক্ষেত্রে তার পদ্ধতি কি হবে?

উত্তর: ০৩। এক নম্বর প্রশ্ন শুরুতে বলেছি ইসলামে নারীদের তালাক দেওয়ার অধিকার নেই। তাই কাবিল নামায় ১৮ নম্বর কালামে শর্তসাপেক্ষে তালাকের অধিকার দেওয়া থাকলে সে নিজে নফসের উপর তালাক দিতে পারবে। এমতাবস্থায় যে কয় তালাকের কথা উল্লেখ থাকবে, সেটা পতিত হবে।

আর অধিকার দেওয়া না থাকলে, তালাক হয়নি।


তাই উপরোক্ত দুঅবস্থায়   মহিলাটি প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে আসতে পারবে। তবে তিন তালাক উল্লেখ থাকলে আর ফিরে আসতে পারবে না।



সারকথা হলো,  ইসলামি শরিয়তে, ইদ্দত পালন না করেই কোনো নারী যদি দ্বিতীয় বিয়ে করে, ওই বিয়ে শুদ্ধ হবে না। যেহেতু তিনি ডিভোর্স দিয়েই দ্বিতীয় বিবাহ করেছে তাই বিবাহ শুদ্ধ হয়নি। দলিল- 

Surah Al-Baqara, Verse 228:

وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ وَلَا يَحِلُّ لَهُنَّ أَن يَكْتُمْنَ مَا خَلَقَ اللَّهُ 

আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। সূরা বাকারা-২২৮


উক্ত স্ত্রীকে যদি প্রথম স্বামী তালাকের ক্ষমতা দেওয়া থাকে ; তাহলে সেই আলোকে নিজের নফসের উপর তালাক দিলে  তালাক পতিত হবে। তালাকের পর স্বামী-স্ত্রী যদি পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চান এবং তালাকনামায় যদি তিন তালাকের উল্লেখ না থাকে; বরং এক তালাক কিংবা দুই তালাকের উল্লেখ থাকে তাহলে নতুন মোহরের সঙ্গে নতুন করে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন।

আর যদি তালাকের ক্ষমতা অর্পণ না করে থাকে; তাহলে তাদের পূর্বের বিবাহ এখনো অটুট রয়েছে। তাই নতুন করে বিবাহ করা প্রয়োজন নেই। 


তবে পূর্বের জীবনের জন্য খাঁটি দিলে তওবা করে এবং স্বামীর কাছে মাফ চেয়ে সুখবর দাম্পত্য জীবন গড়ে তুলতে হবে।



  والله اعلم بالصواب