জিজ্ঞাসা-১২৮৬৭:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সম্মানিত মুফতি সাহেবের নিকট জানার আরজ হলো, শুকুরের চামরা দিয়ে বেল্ট বানালে তা পরিধান করা যাবে কিনা? আমার অফিসার জানতে চেয়েছেন।
তারিখ: ১৪/১২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আবদুল হালিম, কুমিল্লা থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, হালাল প্রাণীর চামড়া দাবাগত বা প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করা সর্বসম্মত জায়েজ কিন্তু হারাম প্রাণীর চামড়া ব্যবহার করার ব্যাপারে ইমামদের মতে চামড়া ব্যবহার করা হারাম। ইমাম মালেক রহ. ব্যতিত অন্য তিন ইমামদের মতে শুকরের চামড়া ব্যবহার করা জায়েয নেই।
প্রশ্ন: ক। আইম্মায়ে সালাসার দলিল কি?
উত্তর: ক। ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফি এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর দলিল হলো:
Surah Al-Anaam, Verse 145:
قُل لَّا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَىٰ طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا أَن يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَّسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ أَوْ فِسْقًا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَإِنَّ رَبَّكَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
আপনি বলে দিনঃ যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ; যবেহ করা জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়। অতপর যে ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে এমতাবস্থায় যে অবাধ্যতা করে না এবং সীমালঙ্গন করে না, নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা ক্ষমাশীল দয়ালু। সূরা আনআম-১৪৫
ব্যাখ্যা:
আর আল্লাহর বাণী (فَإِنَّهُ رِجْسٌ )-এর মধ্যে 'ه' সর্বণামটি ফিরছে খিনযিরের দিকে। 'রিজস' অর্থ নাপাক বা অপবিত্র। সুতরাং খিনযির তথা শূকর সম্পূর্ণ নাপাক।যেমন হানাফী ও অন্যান্য ফকীহগণ বলেছেন। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রহঃ) বলেছেন–"কারণ এটি নাজাসুল আইন। এর অর্থ শূকর তার সম্পূর্ণ অংশসহ জীবিত ও মৃত সর্বাবস্থায় নাপাক। এর অপবিত্রতা শুধু তার রক্তের কারণে নয় যেমন অন্যান্য প্রাণী নাপার হওয়ার ক্ষেত্র তার রক্তের নাপাক হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। এই জন্য এটি তাত্বহীর তথা কখনোই পবিত্র করণ গ্রহণ করে না। (শামী-১/২০৪)
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ عَامَ الْفَتْحِ، وَهُوَ بِمَكَّةَ " إِنَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ حَرَّمَ بَيْعَ الْخَمْرِ وَالْمَيْتَةِ وَالْخِنْزِيرِ وَالأَصْنَامِ ". فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَرَأَيْتَ شُحُومَ الْمَيْتَةِ فَإِنَّهَا يُطْلَى بِهَا السُّفُنُ، وَيُدْهَنُ بِهَا الْجُلُودُ، وَيَسْتَصْبِحُ بِهَا النَّاسُ. فَقَالَ " لاَ، هُوَ حَرَامٌ ". ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عِنْدَ ذَلِكَ " قَاتَلَ اللَّهُ الْيَهُودَ، إِنَّ اللَّهَ لَمَّا حَرَّمَ شُحُومَهَا جَمَلُوهُ ثُمَّ بَاعُوهُ فَأَكَلُوا ثَمَنَهُ ". قَالَ أَبُو عَاصِمٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ، كَتَبَ إِلَىَّ عَطَاءٌ سَمِعْتُ جَابِرًا ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم.
হযরত কুতায়বা (রঃ) ........ হযরত জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্নিত, তিনি রাসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে মক্কা বিজয়ের বছর মক্কায় অবস্থানকালে বলতে শুনেছেন: মহান আল্লাহ্ তা’আলা ও তাঁর রাসূল শরাব, মৃত জন্তু, শুকর ও মূর্তি কেনা-বেচা হারাম করে দিয়েছেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসূলূল্লাহ্ (সাঃ), মৃত জন্তুর চর্বি সম্পর্কে আপনি কি বলেন? তা দিয়ে তো নৌকায় প্রলেপ দেওয়া হয় এং চামড়া তৈলাক্ত করা হয়, আর লোকে তা দ্বারা চেরাগ জ্বালিয়ে থাকে। তিনি বললেন, না, তাও হারাম। তারপর রাসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মহান আল্লাহ্ তা’আলা ইহুদীদের বিনাশ করুন। মহান আল্লাহ্ তা’আলা যখন তাদের জন্য মৃতের চর্বি হারাম করে দেন, তখন তারা তা গলিয়ে বিক্রি করে মূল্য ভোগ করে। তাখরিজ: বুখারি -২২৩৬
قال النووي في المجموع: ((قال الشافعي رضي الله عنه في الأم والأصحاب رحمهم الله: لا يصح المسح على خف من جلد كلب أو خنزير أو جلد ميتة لم يدبغ وهذا لا خلاف فيه)المجموع" للنووي (1/271) ، و" المغني"(1/53).
ইমাম নববী (রহঃ) মজমুউল ফাতওয়ায় বলেছেন–'ইমাম শাফেঈ (রহঃ) তার কিতাবুল উমে এরং তার অনুসারীগণ বলেছেন, 'কুকুর অথবা শূকরের চামড়ার মোজার উপর এবং মৃত প্রাণীর চামড়া দাবাগাত না করলে তার উপর মাছাহ সহীহ হবে না। আর কারো দ্বিমত নাই। সূত্র: আলমাজমু -১/২৭১
হানাফি মাযহাবের প্রশিদ্ধ কিতাব "কুদূরী" গ্রন্থে উল্লেখ আছে
وكل إهاب دبغ فقد ظهر وجازت الصلاة فيه والوضوء منه إلا جلد الخنزير والآدمي
অর্থঃ প্রত্যেক প্রক্রিয়াজাতকৃত চামড়া পবিত্র যার উপর নামাজ জায়েয, উহার পাত্র দ্বারা উযু করা বৈধ, তবে শুকর ও মানুষের চামড়া ব্যতিত। সূত্র: সূত্র: মুখতাসারুল কুদুরি-১৩ পৃষ্ঠা
সারকথা হলো, জমহুর এর মতই শক্তিশালী এবং এর উপর আমল করাই নিরাপদ। অর্থাৎ শুকুরের চামড়া দিয়ে বেল্ট বানালে তা পরিধান করা যাবে না।
والله اعلم بالصواب