আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

আল্লাহর মহব্বত চাষ করার পদ্ধতি : পর্ব ১*

No Comments

 



*আল্লাহর মহব্বত চাষ করার পদ্ধতি : পর্ব ১*

 

الحمد لله كفا وسلام على عباده الذى نسطفى  

اما بعد فاعوذ بالله من الشيطان الرجيم ، بسم الله الرحمن الرحيم 

وما خلقت الجن والانسان الا ليعبدون 

صدق الله المولانا العظيم 

আল্লাহ পাক‌ বলেন, "আমি জিন এবং ইনসানকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার এবাদত করার জন্য।” 

আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠাননোর মূল উদ্দেশ্যই হলো বান্দা আল্লাহ পাকের বন্দেগি করবে । বান্দার জিন্দেগি হবে বন্দেগিওয়ালা। এটা হলো মানুষকে দুনিয়াতে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য, আল্লাহপাক যেটা একেবারে স্পষ্টভাবে বলেছেন। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ পাক বলেন-

وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰہِ 

“যারা ঈমান আনে ( তাদের রয়েছে ) সবচেয়ে দৃঢ় ভালোবাসা আল্লাহর জন্যে।”


তো যারা মুমিন তারা আল্লাহকে প্রচণ্ড ভালোবাসে সিরায়াস ভালোবাসে । সবকিছুর চাইতে বেশি ভালোবাসে আল্লাহকে। নিজের ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা, স্ত্রী-সন্তান, পিতা-মাতা, দুনিয়ার সবকিছু থেকে বেশি মহব্বত করে আল্লাহকে এবং তার নিজের জীবনের চেয়েও লক্ষ-কোটি গুণ বেশি মহব্বত করে সে আল্লাহকে। আল্লাহ পাক নিজে এইটা‌ বলতেছেন, 

وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰہِ 

আর আগের আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, আল্লাহ পাক মানুষকে বানিয়েছেন আল্লাহ পাকের বন্দেগী করার জন্য। তো দুই আয়াত মিলালে যেটা দাঁড়ায় সেটা হলো আল্লাহ পাক আমাদের কাছে চান “মহব্বত ওয়ালা বন্দেগী”। অর্থাৎ শুকনো বন্দেগী না, মহব্বতওয়ালা বন্দেগী। 


একটা হলো শুকনো শুকনো বন্দেগী। আমার শায়েখ মাওলানা আব্দুল মতীন বিন হুসাইন সাব দা. বা. বলেন, এক আমল হলো শুকনো শুকনো আমল; সেখানে কোনো মহব্বত নেই। বান্দা সিজদা করে শুকনো সেজদা, সেজদাহর মধ্যে মহব্বত নেই। জিকির করে শুকনো জিকির, সেখানে মহব্বত নেই।


বান্দা আল্লাহ পাকের মহব্বতে সেজদা যখন করে তো সেজদার হালতে বান্দার এমন হালত হয় এমন কাইফিয়ত হয় যে, তার মাথা সেজদা থেকে উঠাতে মন চায় না। সিজদাকে দীর্ঘায়িত করতে মন চায়। তার হৃদয়ের চাহিদা তখন থাকে যে, এই এক সেজদাতেই যদি হাজার বছর কেটে যেত তাহলে আল্লাহপাক কতোই না সন্তুষ্ট হতেন। তো তার হৃদয়ে তখন সে নূর অনুভব করতে থাকে। এইটা হলো মহব্বতওয়ালা সেজদা।


তো বান্দা যখন জিকির করতে বসে জিকির করতে থাকে তখন আল্লাহপাকের মহব্বতের নেশা তার ভেতরে এতোটা চাপে যে, জিকিরের নির্দিষ্ট সময় (১৫/২০ মিনিট বা যাইহোক) পার হয়ে গেলেও তার কোনো‌ খবর থাকে না। আল্লাহপাকের মহব্বতের নেশা তাকে এতোটা বিভোর করে রাখে। তো এটা হলো মহব্বতওয়ালা আমল, মহব্বতওয়ালা ইবাদাত।


তো মহব্বতওয়ালা ইবাদাত হচ্ছে রসওয়ালা ইবাদাত। আর যে ইবাদতের মধ্যে মহব্বতের ঘাটতি, মহব্বত নেই ; সেটা হলো শুকনো ইবাদাত। তো আল্লাহপাক চান রসওয়ালা ইবাদাত অর্থাৎ মহব্বতওয়ালা ইবাদাত। আল্লাহপাক জাল্লা জালালুহু আমাদেরকে বানিয়েছেনই এ উদ্দেশ্যে। আর মহব্বত এমন এক জিনিস যার চাষ হয় বান্দার ক্বলবে। প্রত্যেক জিনিস চাষ করার একটা নির্দিষ্ট জায়গা আছে নির্দিষ্ট জমি আছে। যেমন- একেক ফসল একেক জমিনের মধ্যে ভালো চাষ হয়। যেমন আপেল। আপেল গাছের চাষ সব জায়গাতে হয় না। আমাদের এলাকায় যদি আপেল গাছ রোপণ‌ করা হয়, যদি কমলা লেবুর গাছ রোপণ করা হয় তো দেখা যাবে যে, ফলন ঠিকমতো হবে না। আপেল হয়তো বা গাছে ধরবে কিন্তু সুন্দর ফলন হবে না। কারণ আমাদের এলাকার জমি আপেল চাষের জন্য কমলা চাষের জন্য উপযুক্ত না।


ছোটসময় দেখেছি, গাঁও-গেরামে(গ্ৰামে) বিলে এক ধরনের ধানের চাষ হতো। আমাদের এলাকায় এটাকে বলতো লাইড্ডা ধান। অনেক বড় মোটা মোটা ধান। তো এই ধানের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে যেখানে প্রচুর পানি থাকে সেখানে এই ধানের ফলনটা ভালো হয় সুন্দর হয়। তো এই লাইড্ডা ধান যদি কোনো শুকনো জমিতে লাগানো হয় তাহলে ফলন মোটেও ভালো হবে না। তো একেক জিনিস একেক জমিনের মধ্যে ভালো ফলন হয় সুন্দর ফসল হয়। অনুরূপভাবে মহব্বতের একটা নির্দিষ্ট জমি আছে সেটা হলো ক্বলব। মহব্বতের চাষ হয় বান্দার ক্বলবের মধ্যে। আল্লাহপাক বান্দার ক্বলবকে বানিয়েছেন মহব্বত করার জন্য। ক্বলব এর মূল কাজ প্রধান কাজই হলো আল্লাহকে মহব্বত করা।


ক্বলব অর্থাৎ হার্ট। ইংরেজিতে বলে হার্ট (Heart) বাংলায় বলে হৃৎপিণ্ড। তো এই ক্বলব এর প্রধান কাজ হলো আল্লাহপাককে মহব্বত করা, আল্লাহ পাককে বহুত মহব্বত করা। এই ক্বলবের ভেতরে দুনিয়াকে জায়গা দেওয়া, দুনিয়ার মহব্বতকে স্থান দেওয়া আল্লাহপাক মোটেও পছন্দ করেন না। আল্লাহপাকের মহব্বত বহুত গায়রতওয়ালা।


যে ক্বলব এর ভেতরে গান্দা দুনিয়ার মহব্বত আছে অথবা গায়রুল্লাহর মহব্বত আছে, কোনো ভীন নারীর প্রতি মহব্বত আছে, তো সেই ক্বলব এ আল্লাহপাকের মহব্বত আসে না। মহব্বত প্রচণ্ড গায়রতওয়ালা। মুফতি শফি রহ. বলেন, টাকা পয়সাকে সিন্দুকে রাখা জায়েজ, পকেটে রাখা জায়েজ কিন্তু ক্বলবে টাকা পয়সার মহব্বত রাখা হারাম।


আল্লাহপাক এই ক্বলবকে বানিয়েছেনই আল্লাহকে মহব্বত করার জন্য। এটা কষ্মিনকালেও সম্ভব না যে, একই সঙ্গে দুনিয়ার প্রতিও খুব মহব্বত রাখবে আবার আল্লাহপাকের মহব্বতও খুব রাখবে। এই দুই মহব্বত ক্বলব এর ভেতরে একত্রিত হতেই পারে না। এজন্য যারা আমরা আল্লাহকে প্রচণ্ডভাবে মহব্বত করতে চাই তাদের প্রথম করণীয় কাজই হলো হৃদয়কে আগে দুনিয়ার মহব্বত থেকে খালি করা। হৃদয়ের ভেতরে দুনিয়ার কোনো মহব্বত রাখা যাবে না‌। দুনিয়া থাকবে হাতে, দুনিয়া থাখবে পকেটে, দুনিয়া থাকবে সিন্দুকে, দুনিয়া থাকবে ব্যাংকে। 


দুনিয়ার মহব্বতকে ক্বলবে কখনো স্থান দেওয়া যাবে না। গাইরুল্লাহকে ক্বলবের ভেতরে স্থান দেওয়া যাবে না। ক্বলব হলো শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। আল্লাহপাকের মহব্বতের জন্যই ক্বলবকে আল্লাহপাক বানাইছেন। এই বিষয়টা আমাদের বুঝা দরকার যে, দুনিয়ার মহব্বত গাইরুল্লাহর মহব্বত ক্বলব এর ভেতরে রাখা যাবে না। আল্লাহপাক আমাদেরকে বুঝার তাউফিক দান করেন। তো এই বিষয়ে কিছু কথা রয়ে গেল। ইনশাআল্লাহ তা'য়ালা পরবর্তী পোষ্টে তা বলার জন্য চেষ্টা করব।


আল্লাহপাক আমাদের প্রত্যেককে বহুত কবুল করেন। দুনিয়ার হায়াতের প্রত্যেকটা মুহূর্তের সর্বোচ্চ কদর করার তাওফীক দান করেন। আল্লাহ পাকের নিকট বেশি করে চাওয়া যে, হে আল্লাহ আমার হায়াতের যে কয়টা দিন বাকি আছে আপনি নিজ দয়ায় আমাকে এর প্রত্যেকটা মুহূর্তের সর্বোচ্চ কদর করার তাওফীক দান করেন। আল্লাহপাক জাল্লা জালালুহু নিজ দয়ায় আমাদের তাওফীক দান করেন‌। আমীন

30.5.2020


- মুহাম্মাদ রবিউল আকরাম


সহযোগীতায়ঃ মুহাম্মাদ যায়িদ আল রাফি