জিজ্ঞাসা-১২৩৫১:
আমার জানার বিষয় হলোঃ ১। বিতর নামাজে দোয়ায়ে ক্বুনুত পড়ার আগে তাকবীর দেয়া
২। দোয়া ক্বুনুত পড়ার আগে রফউল ইয়াদাইন করা না করা ব্যাপারে।
মুহতারাম মুফতী সাহেব দলীলসহ উত্তর দিলে উপকৃত হবো।
তারিখ: ২২/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আনোয়ারুল আম্বিয়া যশোর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নানুসারে বিষয়টি দুভাগে ভাগ করছি।
ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين
প্রশ্ন: ক। বিতর নামাজে দোয়ায়ে ক্বুনুত পড়ার আগে তাকবীর দেয়া এর দলিল কি?
উত্তর: ক। দলিল নিম্নে পেশ করা হলো-
হাদিস/আসার নং-০১
وفي الإستيعاب لابن عبد البر : أم عبد أم عبد الله بن مسعود روى عنها ابنها عبد الله بن مسعود أنها قالت : رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت في الوتر قبل الركوع. ويعرف أيضا بها حديث أم بن مسعود يرويه حفص بن سليمان عن أبان بن عياش عن إبراهيم النخعي عن علقمة عن عبد الله قال أرسلت أمي ليلة لتبيت عند النبي صلى الله عليه وسلم فتنظر كيف يوتر فباتت عند النبي صلى الله عليه وسلم فصلى ما شاء الله أن يصلي حتى إذا كان آخر الليل وأراد الوتر قرأ بسح اسم ربك الأعلى في الركعة الأولى وقرأ في الثانية قل يا أيها الكافرون ثم قعد ثم قام ولم يفصل بينهما بالسلام ثم قرأ بقل هو الله أحد حتى إذا فرغ كبر ثم قنت فدعا بما شاء الله أن يدعوه ثم ركع فكبر.
অর্থাৎ হাফেয ইবনে আবদিল বার ‘আলইসতীআব ফী মা’রিফাতিল আসহাব’ কিতাবে লেখেন, ‘উম্মে আবদ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর মহিয়সী জননী। তাঁর থেকে পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বর্ণনা করেন যে, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে রুকুর আগে কুনূত পড়তে দেখেছি।’ তাঁর সম্পর্কেই ঐ হাদীসটি প্রসিদ্ধ, যা হাফ্স ইবনে আবু সুলায়মান বর্ণনা করেন আবান ইবনে আবী আইয়াশ থেকে, তিনি ইবরাহীম নাখায়ী থেকে, তিনি আলকামা থেকে বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘আমি আমার আম্মাকে বললাম তিনি যেন নবী (ﷺ)-এর গৃহে রাত্রিযাপন করেন এবং তাঁর বিতর পড়া দেখেন। আম্মা তা করলেন (এবং জানালেন যে,) নবী (ﷺ) রাতে নামায পড়লেন যে পরিমাণ আল্লাহর ইচ্ছা, রাতের শেষ অংশে। এরপর বিতর নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন পড়লেন। এরপর বৈঠক করলেন এবং সালাম না ফিরিয়ে (তৃতীয় রাকাতে) দাঁড়ালেন। এই রাকাতে সূরা ইখলাস পড়লেন। এরপর তাকবীর দিয়ে দুআয়ে কুনূত পাঠ করলেন এবং যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা দুআ করলেন। এরপর তাকবীর দিয়ে রুকু করলেন।’ তাখরিজ: আলইসতীআব ৪/৪৫০; (ইসাবার টীকায়)
হাদিস/আসার নং-০২
عن مسروق والأسود وأصحاب عبد الله قالوا كان عبد الله لا يقنت إلا في الوتر وكان يقنت قبل الركوع يكبر إذا فرغ من قراءته حين يقنت
অর্থাৎ আবু ইসহাক থেকে বর্ণিত, মাসরূক রাহ., আসওয়াদ রাহ. ও ইবনে মাসউদ রা.-এর অন্য শাগরিদগণ বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু বিতর নামাযে কুনূত পড়তেন আর তিনি কুনূত পড়তেন রুকুর আগে এবং কিরাআত সমাপ্ত হওয়ার পর কুনূত পড়ার সময় তাকবীর দিতেন। তাখরিজ: শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪ ;মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০৭
এই রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করার পর ইমাম তহাবী রাহ. বলেন, ‘এ ধরনের বিষয় যুক্তি ও ইস্তিম্বাতের ভিত্তিতে বলা (বা করা) যায় না। তা একমাত্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট শিক্ষা থেকেই গৃহীত হতে পারে।
হাদিস/আসার নং-০৩
إذ كان مثله لا يقال بالاستنباط ولا بالاستخراج وإنما يقال بالتوقيف الذي وقف رسول الله صلى الله عليه وسلم الناس عليه.
শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪-৩৭৫
ইমাম তহাবী রাহ. আরো বলেন, হযরত ওমর ফারূক রা.-এর আমলও এ পদ্ধতি সমর্থন করে। কারণ তিনি ফজরের নামাযে রুকুর আগে যখন কুনূত পড়তেন তখন কুনূতের জন্য তাকবীর দিতেন। তাকরিখশরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৫-৩৭৬
প্রশ্ন: খ। দোয়া ক্বুনুত পড়ার আগে রফউল ইয়াদাইন করার দলিল কি?
উত্তর: খ। ফিকহি হানাফির দলিল পেশ করা হলো,
হাদিস/আসার নং-০১
عن الأسود قال عن عبد الله مسعود رضي الله عنه كان يرفع يديه إذا قنت في الوتر
আসওয়াদ রাহ. বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতরের কুনূতের জন্য রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন। তাখরিজ: মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/২৭-২৮
হাদিস/আসার নং-০২
ইমাম বুখারীর ‘রিসালা রাফয়িল ইয়াদাইনে’ (পৃ. ২৪) আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতরের শেষ রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন, এরপর রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন।’
أنه كان يقرأ في آخر ركعة من الوتر قل هو الله احد ثم رفع يديه فيقنت قبل الركعة
হাদিস/আসার নং-০৩
عن أبي عثمان كان عمر رضي الله عنه يرفع يديه في القنوت
رواه ابن أبي شيبة (2/313)- وفيه زيادة أنَّ ذلك كان في صَلاةِ الصُّبْحِ- والبخاري في ((قرة العين برفع اليدين)) (94)، والطبري في ((تهذيب الآثار- مسند ابن عباس)) (1/ 351)، والبيهقيُّ في ((السنن الكبرى)) (2/212). وصحَّحه البيهقيُّ، وقال أحمد شاكر في تحقيق ((المحلى)) 4/141: من أصحِّ الأسانيدِ على الإطلاق.
অর্থাৎ আবু উছমান বলেন, ‘উমর রা. কুনূতে রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন।’ তাখরিজ: মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বা-২/৩১৩; বাইহাকি সুনানিল কুবরা-২/২১২
নোট: সনদ সহিহ
হাদিস/আসার নং-০৪
عن أبي رافعٍ مولى رسولِ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم، قال: (صلَّيتُ خَلفَ عمرَ بنِ الخطَّابِ رَضِيَ اللهُ عنهُ، فقَنَتَ بعدَ الرُّكوعِ، ورفعَ يديهِ
বিখ্যাত তাবে-তাবায়ি ও ফকিহ ইব্রাহিম নাখায়ী রহ এর আমল:
محمد قال : أخبرنا أبو حنيفة عن حماد عن إبراهيم أن ألقنوت في الوتر واجد في شهر رمضان وغيره وإذا أردت أن تقنت فكبر وإذا أردت أن تركع فكبر أيضا
ইমাম মুহাম্মাদ বলেন, ইমাম আবু হানিফা বর্ণনা করেছেন। ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেছেন, ‘বিতর নামাযে কুনূত ওয়াজিব, রমযানে ও রমযানের বাইরে। যখন তুমি কুনূত পড়ার ইচ্ছা করবে তখন তাকবীর দিবে, এরপর (কুনূতের পর) যখন রুকু করার ইচ্ছা করবে তখন পুনরায় তাকবীর দিবে। তাখরিজ: কিতাবুল আছার ১/৫৭৯; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২০০
ইমাম তহাবী রাহ. বলেন,
وأما التكبير في القنوت في الوتر فإنها تكبيرة زائدة في تلك الصلاة وقد أجمع الذين يقنتون قبل الركوع على الرفع معها.
অর্থাৎ বিতর নামাযে কুনূতের তাকবীর হল এই নামাযে একটি অতিরিক্ত তাকবীর। যারা রুকুর পূর্বে কুনূত পড়ার কথা বলেন তাদের ইজমা রয়েছে যে, এই তাকবীরের সাথে রাফয়ে ইয়াদাইনও করতে হবে। তাখরিজ: তহাবী ১/৩৩২
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক