জিজ্ঞাসা-১২৮৭০:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
প্রশ্ন: একজন লোক মা বাবার অনুমতি ব্যতীত দ্বিতীয় বিবাহ করে, যে বিবাহ বাবা মেনে নেয়নি এবং বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এখন সে দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে অন্যত্র বসবাস করে। এখন বাবা চাচ্ছেন ছেলের প্রথম স্ত্রী এবং তার সন্তানকে কিছু জমি লিখে দেওয়ার জন্য এবং সেই হারে বাবার অন্যান্য সন্তানদেরও জমি লিখে দিবেন। এভাবে জমি লিখে দেওয়া যাবে কিনা?(দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান বঞ্চিত হচ্ছে)। দলিল সহ জানতে চাই।
তারিখ: ২১/১২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোহাম্মদ শহিদুর রহমান জামালপুর থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,জীবিত অবস্থায় ওয়ারিসদের মাঝে সম্পদ বণ্টন করলে তাকে মিরাস বণ্টন বলা হয় না। বরং তা হয় হিবা। জীবিত অবস্থায় সম্পদ বণ্টন করলে সবাইকে সমান দিবে। কাউকে কম দিয়ে ক্ষতি করা যেন উদ্দেশ্য না হয়। এমনটা হলে তা জুলুম এবং পাপ বলে গণ্য হবে। দলিল -
عَنْ عَامِرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، وَهُوَ عَلَى المِنْبَرِ يَقُولُ: أَعْطَانِي أَبِي عَطِيَّةً، فَقَالَتْ عَمْرَةُ بِنْتُ رَوَاحَةَ: لاَ أَرْضَى حَتَّى تُشْهِدَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: إِنِّي أَعْطَيْتُ ابْنِي مِنْ عَمْرَةَ بِنْتِ رَوَاحَةَ عَطِيَّةً، فَأَمَرَتْنِي أَنْ أُشْهِدَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «أَعْطَيْتَ سَائِرَ وَلَدِكَ مِثْلَ هَذَا؟»، قَالَ: لاَ، قَالَ: «فَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْدِلُوا بَيْنَ أَوْلاَدِكُمْ»، قَالَ: فَرَجَعَ فَرَدَّ عَطِيَّتَهُ
আমির (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-কে মিম্বরের উপর বলতে শুনেছি যে, আমার পিতা আমাকে কিছু দান করেছিলেন। তখন (আমার মাতা) আমরা বিনতে রাওয়াহা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সাক্ষী রাখা ব্যতীত সম্মত নই। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আসলেন এবং বললেন, আমরা বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত আমার পুত্রকে কিছু দান করেছি। হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে সাক্ষী রাখার জন্য সে আমাকে বলেছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সব ছেলেকেই কি এ রকম করেছ? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে আল্লাহকে ভয় কর এবং আপন সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর। [নু‘মান (রাঃ)] বলেন, অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং তার দান ফিরিয়ে নিলেন। [সহীহ বুখারী-১/৩৫২, হাদীস নং-২৫৮৭, ই’লাউস সুনান-১৬/১১৬, হাদীস নং-৫২৭৭]
দ্বিতীয় কথা হলো,জীবিত অবস্থায় সন্তানদের মধ্য মিরাস বণ্টন করার ব্যাপারে ওলামা কেরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন সমভাবে বণ্টন করতে হবে, আবার কেউ কেউ বলেছেন মিরাস অনুসারে বণ্টন করতে হবে।
তবে কোন অবস্থাতেই কাউকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্য সমুদয় সম্পদ মৃত্যুর আগেই বন্টন করা জায়েজ নেই। দলিল -
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ فَرَّ مِنْ مِيرَاثِ وَارِثِهِ، قَطَعَ اللَّهُ مِيرَاثَهُ مِنَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
অর্থ- হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ওয়ারিসকে মিরাস থেকে বঞ্চিত করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের মিরাস থেকে বঞ্চিত করবেন। {ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ২৭০৩, সুনানে সাঈদ বিন মানসূর, হাদীস নং-২৮৫
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্ন অনুসারে বোঝা যাচ্ছে দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তানদেরকে বঞ্চিত করার জন্যই দাদা পদক্ষেপটি নিয়েছে যা শরীয়ত সম্মত নয়। তবে ভরণপোষণ, অধিক অসহায়, দ্বীনদারীর কোন সন্তানকে সম্পদ বেশি দিতে পারেন। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা -১২৮৫৩ শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে।
والله اعلم بالصواب