জিজ্ঞাসা-২৪০: মুহতারাম আসসালামু আলাইকুম। স্বামী স্ত্রী কে যদি না ছাড়ে স্ত্রী কোন উপায়ে স্বামী কে ছাড়তে পারবে? তারিখ-৩০/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রফিক সাভার, ঢাকা থেকে--
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
সালাম ও তাসলিমবাদ, প্রথম কথা হলো স্ত্রীকে আমভাবে স্বামীকে তালাক দেওয়ার অধিকার নেই। বরং স্ত্রী বিনাকারণে তালাক চায়লে কঠিক ধমক এসেছে-যেমন,
عَنْ ثَوْبَانَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلاَقًا مِنْ غَيْرِ بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الجَنَّةِ
হযরত সাওবান রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যদি কোন মহিলা তার উপর কোন কষ্ট না হবার পরও স্বামীর কাছে তালাক চায়, তাহলে তার জন্য জান্নাতের ঘ্রাণও হারাম। তাখরিজ: জামে তিরমিজী-১১৮৭
প্রশ্ন: ক। স্বামীকে তালাক দেওয়ার কোন পদ্ধতি/উপায় আছে কি?
উত্তর: ক। আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি যে, নারীর স্বামীকে তালাক দেওয়া ক্ষমতা নেই, তবে স্ত্রী যদি স্বামী থেকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়, তাহলে সে নিজের নফসের উপর তালাক দিতে পারবে। ইসলামি পরিভাষায় থাকে খোলা তালাক বলে। যাইহোক কয়েকটি পদ্ধতি নিম্নে আলোচনা করা হলো,
প্রথম পদ্ধতি:
খোলা তালাক: খোলা শব্দটি আরবি বাংলা অর্থ হলো, বিচ্ছিন্ন হওয়া, বিচ্ছিন্ন করা, সম্পর্ক ছেদ করা ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায় খোলা তালাক বলা হয়, কোন কিছুর বিনিময়ে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে স্বামী সে বিনিময়টি গ্রহণ করে স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে; এ বিনিময়টি স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত মোহরানা হোক কিংবা এর চেয়ে বেশি সম্পদ হোক কিংবা এর চেয়ে কম হোক। দলিল:কুরআনের বাণী-
فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٢:٢٢٩
অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে,তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না,তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়,তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম। [সূরা বাকারা-২২৯]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ امْرَأَةَ ثَابِتِ بْنِ قَيْسٍ أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثَابِتُ بْنُ قَيْسٍ، مَا أَعْتِبُ عَلَيْهِ فِي خُلُقٍ وَلاَ دِينٍ، وَلَكِنِّي أَكْرَهُ الكُفْرَ فِي الإِسْلاَمِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَرُدِّينَ عَلَيْهِ حَدِيقَتَهُ؟» قَالَتْ: نَعَمْ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اقْبَلِ الحَدِيقَةَ وَطَلِّقْهَا تَطْلِيقَةً
ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, সাবিত ইবনু কায়স এর স্ত্রী নাবী (ﷺ) -এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) চরিত্রগত বা দ্বীনী বিষয়ে সাবিত ইবনু কায়সের উপর আমি দোষারোপ করছি না। তবে আমি ইসলামের ভিতরে থেকে কুফরী করা অর্থাৎ স্বামীর সঙ্গে অমিল) পছন্দ করছি না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? সে বললঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তুমি বাগানটি গ্রহণ কর এবং মহিলাকে এক তালাক দিয়ে দাও। বুখারী-৫২৭৩ফুকাহয়ে কেরামের মতামত:
وأما ركنه فهو كما فى البدائع: إذا كان بعوض الإيجاب والقبول، لأنه عقد على الطلاق بعوض، فلا تقع الفرقة ولا يستحق العوض بدون القبول (رد المحتار-3/441، دار الفكر)
وقد اعتبر الحنفية ركن الخلع هو الإيجاب والقبول، لأنه عقد الطلاق بعوض، فلا تقع الفرقة ولا يستحق العوض بدون القبول (الفقه الاسلامى وادلته-9/7015، دار الفكر)
الخلع جائز عند السلطان وغيره، لأنه عقد يعتمد التراضى كسائر العقود، وهو بمنزلة الطلاق بعوض، وللزوج ولاية إيقاع الطلاق، ولها ولاية التزام العوض، فلا معنى لاشتراط حضرة السلطان فى هذا العقد (المبسوط للسرخسى-6/173، دار المعرفة
সারকথা হলো, এ ক্ষেত্রেও স্বামীর অনুমতি লাগবে। সূত্র: রদদুল মুখতার-৩/৪৪১ পৃষ্ঠা, আল-মাসবুত লিল সারাখসি-৬/১৭৩ পৃষ্ঠা
দ্বিতীয় পদ্ধতি:
প্রচলিত বাংলাদেশ প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইন-১৯৬১ নিকাহ ও তালাক নামার ১৮ নং কলামে একটি ধারা রয়েছে। অর্থাৎ স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অধিকার।
স্বামী যদি তার স্ত্রীকে নিজের উপর তালাক গ্রহণ করার অধিকার দিয়ে থাকে, শরীয়তের ভাষায় এ অধিকার প্রদানকে বলে ‘তাফওয়ীয’। সে ক্ষেত্রে স্বামীর দেওয়া শর্ত অনুযায়ী স্ত্রী নিজের উপর তালাক গ্রহণ করতে পারবে। স্বামীকে তালাক দিতে পারবে না।
যদি শর্ত না পাওয়া যায় কিংবা স্বামী স্ত্রীকে তালাকের অধিকার প্রদান না করে থাকে, তাহলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকার পায় না।
এখানে তিনটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। এক. স্বামী স্ত্রীকে শরীয়ত সমর্থিত নিয়মে তালাকের ক্ষমতা অর্পণ করা; দুই. স্ত্রী তালাকের ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে শরীয়ত সমর্থিত নিয়মে তালাক গ্রহণ করা; তিন. কাজী সাহেব বর ও কনেকে অবহিত করে সুস্পষ্ট ও সুচিন্তিত শর্তগুলো উল্লেখ করে ১৮নং কলামটি পূরণ করা।
তৃতীয় পদ্ধতি:
উপরে দুটি পদ্ধতি না হলে, পারিবারিকভাবে গ্রাম্য সালিশ বা গ্রহণযোগ্য উলামা সমন্বিত পঞ্চায়েতের মাধ্যমে উক্ত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ أَهْلِهَا إِن يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا
অর্থ: দি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত। সূরা নিসা-৩৫
চতুর্থ পদ্ধতি:
উপরে সব পদ্ধতি যদি ফেল হয় আর স্বামী যদি জালেম/অযোগ্য হয়, তার সাথে সংসার করা সম্ভব ককনা হয়, তাহলে স্ত্রীর উচিত তার স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা। আদালতের মাধ্যমে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করানো বা কাজী উভয়ের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিবেন।
والله اعلم بالصوا
উত্তর দিচ্ছেন