আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

আমল ও দুআ-১৩২: ইয়া আল্লাহ! আমাকে ঐ বান্দাদের শামিল করুন, যারা ভালো কাজ করতে আনন্দিত হয় আর মন্দ কাজ করে ইসতিগফার করে।

No Comments

 



দু‘আ-১৩৬

اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ الَّذِيْنَ إِذَاۤ أَحْسَنُوْا اسْتَبْشَرُوْا، وَإِذَا ۤ أَسَآءُوْا اسْتَغْفَرُوْا.

ইয়া আল্লাহ! আমাকে ঐ বান্দাদের মাঝে শামিল করুন, যারা ভালো কাজ করলে আনন্দিত হয় আর মন্দ কাজ করলে ইসতিগফার করে। সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ৩৮২০ (আন্তর্জাতিক নং ৩৮২০)


সনদসহ হাদিস: 

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، عَنْ حَمَّادِ بْنِ سَلَمَةَ، عَنْ عَلَىِّ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ كَانَ يَقُولُ ‏ "‏ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ الَّذِينَ إِذَا أَحْسَنُوا اسْتَبْشَرُوا وَإِذَا أَسَاءُوا اسْتَغْفَرُوا ‏"‏ ‏.‏

৩৮২০। আবু বাকর ইব্‌ন আবু শায়বা (রাহঃ).....আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী(ﷺ) বলতেন, হে আল্লাহ! আমাকে ঐ দলের অন্তর্ভুক্ত কর, যারা উত্তম কাজ করলে সন্তোষ লাভ করে, আর যখন তারা মন্দ কাজ করে, তখন তারা ইস্তিগফার করে।


It was narrated from ’Aishah that :

the Prophet (saas) used to say: "Allahum-maj’alni minal-ladhina idha ahsanu istabsharu, wa idha asa’u istaghfaru (O Allah, make me one of those who, if they do good deeds, they rejoice, and if they do bad deeds, they seek forgiveness)."


সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ৩৮২০ (আন্তর্জাতিক নং ৩৮২০)



হাদীসের ব্যাখ্যা:

প্রকৃতপক্ষে এ হাদীছ দ্বারা উম্মতকে তাওবা ও ইস্তিগফারের প্রতি উৎসাহ দান করা উদ্দেশ্য। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো মাসূম ছিলেন। তিনি নবী ও রাসূলগণেরও শ্রেষ্ঠতম। তাঁর দ্বারা কোনও রকমের গুনাহ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তা সত্ত্বেও তিনি যখন এতবেশি পরিমাণে তাওবা করতেন, তখন তাঁর উম্মতের প্রত্যেকের তো আরও বেশি পরিমাণে তাওবা করা উচিত। প্রশ্ন হতে পারে, তাঁর যখন কোনও গুনাহ ছিল না, তখন তিনি কিসের থেকে তাওবা করতেন? উত্তর, আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য ও বন্দেগীর সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত থাকার কারণে তাঁর বিনয়ভাব অতি প্রবল ছিল। সেই সঙ্গে আল্লাহ তা'আলা সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান ও মা'রিফাত সর্বাপেক্ষা বেশি থাকার কারণে তাঁর অন্তরে আল্লাহর ভয়ও ছিল সবচে' বেশি। তো ওই বিনয় ও ভীতির অবস্থান থেকে তাঁর বিশ্বাস ছিল, মহিয়ান-গরিয়ান আল্লাহর ইবাদত-আনুগত্য যে পর্যায়ে হওয়া উচিত, তাঁর দ্বারা ঠিক সেইরকম হচ্ছে না। আল্লাহ তা'আলার ইবাদতের হক তাঁর দ্বারা যেন ঠিক আদায় হচ্ছে না। বস্তুত কারও পক্ষে তা আদায় করা সম্ভবও নয়। তিনি এটাকে নিজের একরকম কমতি ও ত্রুটি মনে করতেন। তার এত অধিক সংখ্যক তাওবা ছিল সেই অনুভূতি থেকেই।

প্রশ্ন হতে পারে, অন্য হাদীছে তো তাঁর তাওবার সংখ্যা বলা হয়েছে সত্তর, অথচ এ হাদীছে তিনি রোজ একশ' বার তাওবা করতেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে? এ দুই বর্ণনার মধ্যে কোনটা সঠিক?

উত্তর, উভয়টিই সঠিক। এর মানে তিনি কোনওদিন সত্তরবার তাওবা করতেন এবং কোনওদিন একশ'বার। এমনও হতে পারে যে, এর দ্বারা সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বোঝানো উদ্দেশ্য নয়, বরং বোঝানো উদ্দেশ্য যে, তিনি খুব বেশি বেশি তাওবা করতেন। যেমন, আমরা বলে থাকি, আমি তোমাকে এ কথা একশ'বার বলেছি। তার মানে বহুবার বলেছি। একশ' দ্বারা আমরা সুনির্দিষ্ট একশ' সংখ্যা বোঝাই না।


হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. বিনয় ছিল নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। আমাদেরও এ গুণ অর্জন করা উচিত।

খ. আল্লাহ সম্পর্কে জানা থেকে আল্লাহ্ভীতির জন্ম হয়। তাই অন্তরে আল্লাহ্ভীতি জন্মানোর লক্ষ্যে আল্লাহ্ সম্পর্কে যতবেশি সম্ভব জ্ঞান লাভ করা উচিত। সেই সঙ্গে বাস্তবিকপক্ষে যাতে অন্তরে আল্লাহ্ভীতি জন্মায়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত ।

গ. বেশি বেশি তাওবা করার পেছনে আল্লাহ্ভীতির যথেষ্ট ভূমিকা আছে। তার অন্তরে আল্লাহ্ভীতি জন্মানোর সম্ভাব্য সকল উপায় অবলম্বন করা একান্ত কর্তব্য।

ঘ. নিয়মিত বেশি বেশি তাওবা ও ইস্তিগফারে রত থাকা প্রত্যেক মু'মিনের অবশ্যকর্তব্য।




ফায়দা. সৌভাগ্যবানদের পরিচয় এই যে, ভালো কাজ করতে পারলে তাদের মনে আনন্দ জাগে আর ভুল-ভ্রান্তি হয়ে গেলে অনুশোচনার সাথে তার প্রায়শ্চিত্তের চিন্তা করে। পক্ষান্তরে দুর্ভাগা লোকেরা তো পাপাচার-অনাচারেই আনন্দ পায় আর চক্ষুলজ্জার কারণে কখনো কোনো বন্দেগী ও ভালো কাজ করলেও আমলের মিষ্টতা কিছুমাত্রও পায় না।

أَحْيِنِيْ مِسْكِيْنًا 

(ইয়া আল্লাহ! জীবনে আমাকে ‘মিসকীন’...) খুব লক্ষ্য করার বিষয়, মানবতার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন দলে শামিল থাকার আকুতি প্রকাশ করেছেন! রাজা-বাদশা, আমীর-ওমরা, জমিদার-পুঁজিপতি কোনো দলে নয়, তাঁর আকাঙ্ক্ষা মিসকীন থাকার ও মিসকীনের দলে শামিল থাকার। প্রকৃত ‘সমাজতন্ত্র’ তো এরই নাম। এ নয় যে, ধনীর সম্পদ লুটে নিজে মালিক হওয়া; ধনী নিঃস্ব হোক আর আমি ধনী হই!