জিজ্ঞাসা-১২৮৬২:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ, মুহতারাম, রাসূলুল্লাহ(সা:)ফরজ ও সুন্নাহ নামাজে যে সকল সূরা তেলাওয়াত করতেন তা জানতে চাই।
তারিখ: ০৮/১২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা ওবায়দুর রহমান ফরিদপুর থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, নামাজে সূরা ফাতিহা ব্যতিত কোনো সূরা নির্দিষ্ট করা আবশ্যক নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে কোরআন শরীফ এর বিভিন্ন অংশ থেকে তেলাওয়াত করেছেন, তবে তিনি অধিকাংশ সময় আয়াতে মুফাসসাল তেলাওয়াত করেছেন। দলিল -
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয নামাযের জামাতে মুফাসসালের সূরাগুলো থেকে বেশি তিলাওয়াত করতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৮১৪; ফাতহুল বারী, ইবনে রজব, খ. ৪ পৃ. ৪৩৩)
মূল কথা হলো, আয়াতে মুফাসসাল তেলাওয়াত করা সুন্নত বা মুস্তাহাব আর বাকি কোরআন শরীফ থেকে যে কোন আয়াত সূরা তেলাওয়াত করা জায়েয।
প্রশ্ন: ক। মুফাসসাল কাকে বলে?
উত্তর: ক। কুরআন মাজীদের শেষ অংশ, অর্থাৎ সূরা হুজুরাত থেকে সূরা নাস পর্যন্ত সূরাসমূহকে ‘মুফাসসাল’ বলা হয়। -তাফসীরে সাম‘আনী খ. ৫ পৃ. ২১২; জামালুল কুররা ওয়া কামালুল ইক্বরা, আলামুদ্দীন সাখাভী খ. ১ পৃ. ৩৫; বাসাইরু যাওয়িত তাময়ীয, ফায়রুযাবাদী খ. ৪ পৃ. ১৯৪; হাশিয়া ইবনে আবিদীন খ. ৩ পৃ. ৪৫৮
প্রশ্ন: খ। মুফাসসাল কত প্রকার?
উত্তর: খ। মুফাসসাল তিন প্রকার- তিওয়ালে মুফাসসাল, আওসাতে মুফাসসাল ও কিসারে মুফাসসাল। সূরা হুজুরাত থেকে সূরা اِذَا السَّمَآءُ انْشَقَّت পর্যন্ত সূরাগুলি হচ্ছে ‘তিওয়ালে মুফাসসাল’। সূরা বুরূজ থেকে সূরা ক্বাদ্র পর্যন্ত সূরাগুলি হচ্ছে ‘আওসাতে মুফাসসাল’ এবং সূরা বায়্যিনাহ থেকে সূরা নাস পর্যন্ত সূরাগুলি হচ্ছে ‘কিসারে মুফাসসাল’। -মানাহিলুল ইরফান ফী উলূমিল কুরআন খ. ১ পৃ. ২৮৭; আলবাহরুর রায়েক খ. ১ পৃ. ৫৯৪
প্রশ্ন: গ। কোন নামাজে কোন সূরা তেলাওয়াত সুন্নাত?
উত্তর: গ। মুতাআখখিরীন ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, মুস্তাহাব হল, ফজর ও যোহরে তিওয়ালে মুফাসসাল থেকে পড়া, আছর ও ইশাতে আওসাতে মুফাসসাল থেকে পড়া এবং মাগরিবে কিসারে মুফাসসাল থেকে পড়া। তবে ইমাম কুদূরী রাহ.-সহ অন্যান্য ফুকাহায়ে কেরাম এও বলেছেন যে, যোহরেও আছর ও ইশার মতো আওসাতে মুফাসসালই পড়বে। দলিল -
হাসান বসরী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَتَبَ عُمَرُ إِلَى أَبِي مُوسَى: أَنِ اقْرَأْ فِي الْمَغْرِبِ بِقِصَارِ الْمُفَصّلِ، وَفِي الْعِشَاءِ بِوَسَطِ الْمُفَصّلِ، وَفِي الصّبْحِ بِطِوَالِ الْمُفَصّلِ.
হযরত উমর রা. হযরত আবু মূসা আশআরী রা.-কে লিখে পাঠিয়েছেন যে, মাগরিবের নামাযে ‘কিসারে মুফাসসাল’ পড়বে, ইশার নামাযে ‘আওসাতে মুফাসসাল’ পড়বে এবং ফজরের নামাযে ‘তিওয়ালে মুফাসসাল’ পড়বে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ২৬৭২
১। ফজর নামাজের কিরাআত:
হাদিস নং -০১
كَانَ يَقْرَأُ فِي الْفَجْرِ الْوَاقِعَةَ وَنَحْوَهَا مِنَ السّورَةِ.
হযরত জাবের ইবনে সামুরাহ রা. বলেন-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযে সূরা ‘ওয়াক্বিআহ’ এবং এজাতীয় সূরা তিলাওয়াত করতেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ২৭২০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০৯৯৫
হাদিস নং -০২
إِنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ يَقْرَأُ فِي الْفَجْرِ بـ:ق والقرآن المجيد، وزاد في رواية: ونحوها.
হযরত জাবের ইবনে সামুরাহ রা. বলেন-নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাযে ق وَالْقُرْآنِ الْمَجِيدِ (সূরা ‘ক্বাফ’) এবং এর কাছাকাছি পরিমাণের সূরা তিলাওয়াত করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৫৮
২। যোহর নামাজের কিরাআত:
كُنّا نَحْزِرُ قِيَامَ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي الظّهْرِ وَالْعَصْرِ، فَحَزَرْنَا قِيَامَهُ فِي الرّكْعَتَيْنِ الْأُولَيَيْنِ مِنَ الظّهْرِ قَدْرَ قِرَاءَةِ الم تَنْزِيلُ السّجْدَةِ.
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন- আমরা যোহর ও আসরের নামাযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিয়াম (দাঁড়িয়ে থাকা) পরিমাপ করতাম। যোহরের প্রথম দুই রাকাতে তাঁর কিয়াম الم تنزيل السجدة (সূরা সাজদাহ) সূরাটি তিলাওয়াত পরিমাণ দীর্ঘ হত। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৫২
৩। আসর নামাজের কিরাআত:
أنّ رسولَ الله صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ يَقْرَأُ فِيْ الظُهْرِ وَالعَصْرِ بِـ والسَمَاءِ ذَاتِ البُرُوْجِ وَ السَمَاءِ وَالطَارِق وَشِبْهِهِمَا.
হযরত জাবের ইবনে সামুরাহ রা. বলেন-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর এবং আসরে والسماء ذات البروج (সূরা বুরূজ) এবং والسماء و الطارق (সূরা ত্বারিক্ব) এবং এ দুয়ের সমপরিমাণ সূরাসমূহ তিলাওয়াত করতেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩০৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৮০৫
৪। মাগরিব নামাজের কিরাআত:
মাগরিবের স্বাভাবিক সুন্নত হল ‘কিসারে মুফাসসাল’। তবে দীর্ঘ কেরাত পড়াও জায়েয আছে।
হাদিস নং -০১
1277 - حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ أَبُو زَكَرِيَّا الْبَغْدَادِيُّ، قَالَ: ثنا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، قَالَ: ثنا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ، قَالَ: ثنا الضَّحَّاكُ بْنُ عُثْمَانَ، قَالَ: حَدَّثَنِي بُكَيْرُ بْنُ الْأَشَجِّ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الْمَغْرِبِ بِقِصَارِ الْمُفَصَّلِ»
১২৭৭। ইয়াহইয়া ইবন ইসমাঈল আবু যাকারিয়া বাগদাদী (রাহঃ) …… আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মাগরিবের সালাতে 'কিসার মুফাসসাল' থেকে তিলাওয়াত করতেন। —ত্বহাবী শরীফ, হাদীস নং ১২৭৭
হাদীসের ব্যখ্যা:
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, মাগরিবের নামাযে কিসারে মুফাছ্ছাল (ঝিলঝাল থেকে নাছ পর্যনত্ম), ইশার নামাযে আওয়াছতে মুফাছ্ছাল (ছূরা ত্বরিক থেকে বায়্যিনাহ পর্যনত্ম) এবং ফজরে নামাযে তিওয়ালে মুফাছ্ছাল (হুজুরাত থেকে বুরম্নজ পর্যনত্ম) পড়তেন। আর পূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূল স. যোহরের নামাযে তিওয়ালে মুফাছ্ছাল আর আসরের নামাযে আওসাতে মুফাছ্ছাল (ছূরা ত্বরিক থেকে বায়্যিনাহ পর্যনত্ম) পড়তেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে উপরিউক্ত নিয়মে কুরআন পাঠ করা উত্তম, তবে আবশ্যকীয় নয়। এ নিয়মের বিপরীতে রসূলুলস্নাহ স. এবং সাহাবায়ে কিরাম কুরআনের বিভিন্ন অংশ থেকে পাঠ করতেন মর্মে অনেক সহীহ হাদীসের বর্ণনা রয়েছে। ইমামের তিলাওয়াতের প্রতি মুসলিস্নদের আগ্রহ ও একাগ্রতা দেখা গেলে এবং দুর্বল, অসুস্থ্য বা ব্যসত্ম মানুষ না থাকলে ইমাম সাহেব কিরাত লম্বা করতে পারেন। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় উপরিউক্ত নিয়ম বা তার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করা উত্তম হবে।
1276 - حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ دَاوُدَ، قَالَ: ثنا يَعْقُوبُ بْنُ حُمَيْدٍ، قَالَ: ثنا وَكِيعٌ، عَنْ إِسْرَائِيلَ، عَنْ جَابِرٍ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , عَنْ عَامِرٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا «أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ فِي الْمَغْرِبِ بِالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ»
১২৭৬। আহমদ ইবন দাউদ (রাহঃ) আব্দুল্লাহ্ ইবন উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মাগরিবের সালাতে 'ওয়াত্-তীনি ওয়ায্-যায়তুন' সূরা তিলাওয়াত করেছেন।
—ত্বহাবী শরীফ, হাদীস নং ১২৭৬
৫। । ঈশার নামাজের কিরাআত:
ইশার নামাযে ‘আওসাতে মুফাসসাল’ পড়া মাসনূন। অবশ্য অবস্থা ভেদে বেশ-কম করাতেও কোনো ক্ষতি নেই। এক্ষেত্রে হাদীস শরীফে কখনো কখনো ‘তিওয়ালে মুফাসসাল’ এবং ‘কিসারে মুফাসসাল’ পড়ার বর্ণনাও রয়েছে।
كَانَ رَسُوْلُ الله صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَقْرَأُ فِيْ العِشَاءِ الآخِرَةِ بِـ الشَمْسِ وَضُحَهَا وَنَحْوِهَا مِنْ السُوَرِ.
হযরত বুরাইদা রা. বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার নামাযে وَالشَّمْسِ وَضُحهَا (সূরা শাম্স) এবং তার অনুরূপ সূরা পড়তেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩০৯; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৯৯৯
৬। বিতর নামাজের কিরাআত:
أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ يَقْرَأُ فِي الْوِتْرِ بِـ سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى، وَ قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ، وَ قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ.
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবযা রা. বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের নামাযে سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى (সূরা আ‘লা), قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ (সূরা কাফিরূন) এবং قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ (সূরা ইখলাছ) তিলাওয়াত করতেন। -সুনানে নাসাঈ, হাদীস ১৭৩১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৩৫৪
৭। জুমুআর ও দুই ঈদের নামাজের কিরাআত:
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَقْرَأُ فِي الْعِيدَيْنِ وَفِي الْجُمُعَةِ بِـ سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى، وَ هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ، قَالَ: وَإِذَا اجْتَمَعَ الْعِيدُ وَالْجُمُعَةُ فِي يَوْمٍ وَاحِدٍ، يَقْرَأُ بِهِمَا أَيْضًا فِي الصّلَاتَيْنِ.
হযরত নুমান বিন বাশীর রা. থেকে বর্ণিত-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ঈদের নামাযে এবং জুমার নামাযে سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى (সূরা আ‘লা) এবং هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ (সূরা গাশিয়াহ) পড়তেন। তিনি এও বর্ণনা করেন যে, একই দিনে ঈদ ও জুমা হলে উভয় নামাযেই এই দুই সূরা তিলাওয়াত করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৭৮
أَنّ عُمَرَ بْنَ الْخَطّابِ سَأَلَ أَبَا وَاقِدٍ اللّيْثِيّ: مَا كَانَ يَقْرَأُ بِهِ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي الْأَضْحَى وَالْفِطْرِ؟ فَقَالَ: كَانَ يَقْرَأُ فِيهِمَا بِـ ق وَالْقُرْآنِ الْمَجِيدِ، وَ اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ.
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. হযরত আবু ওয়াক্বিদ লাইসী রা.-কে জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযহা ও ফিতরের ঈদের নামাযে কী কিরাত পড়তেন? তিনি জবাব দিলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ঈদের নামাযে সূরা ক্বাফ ও সূরা ক্বামার পড়তেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৯১
৮। জুমার দিন ফজর নামাযে মাসনূন কেরাত:
জুমার নামাযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কেরাত প্রসঙ্গে বুখারী ও মুসলিমে নিম্নলিখিত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّهُ عَنْهُ، قَالَ: كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَقْرَأُ فِي الجُمُعَةِ فِي صَلاَةِ الفَجْرِ الم تَنْزِيلُ السّجْدَةَ، وَ هَلْ أَتَى عَلَى الإِنْسَانِ حِينٌ مِنَ الدّهْرِ.
হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিন ফজরের নামাযে প্রথম রাকাতে الم تَنْزِيلُ السَّجْدَةَ (সূরা আলিফ লাম মীম সাজদাহ) এবং দ্বিতীয় রাকাতে هَلْ أَتَى عَلَى الإِنْسَانِ (সূরা দাহর) পড়তেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৯১, ১০৬৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৭৯
৯। সুন্নাত নামাযের কিরাআত:
ক। ফজর ও মাগরিবের সুন্নাতের কিরাআত:
سَمِعْتُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَكْثَرَ مِنْ عِشْرِينَ مَرّةً يَقْرَأُ فِي الرّكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْفَجْرِ، وَالرّكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ: قُلْ يَا أَيّهَا الْكَافِرُونَ، وَ قُلْ هُوَ اللهُ أَحَد.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশের অধিক বার ফজরের পূর্বের দুই রাকাত (সুন্নত) ও মাগরিবের পরের দুই রাকাত (সুন্নত) নামাযে সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাছ পড়তে শুনেছি। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৩৯৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৪৭৬৩
খ। অন্যান্য সুন্নাত নামাযে সূরা ফাতিহার পর পছন্দ মত তেলাওয়াত করতেন।
১০। বিশেষ কারণে ফজরের তিওয়ালে মুফাস্সাল বা ছোট সূরা পাঠ করা। দলিল -
أَنّ عُمَرَ بْنَ الْخَطّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ لَمّا طُعِنَ، قَدّمُوا عَبْدَ الرّحْمَنِ بْنَ عَوْفٍ، صَلّى بِهمُ الْفَجْرَ، فَقَرَأَ: إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ، وَ إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ.
আমর ইবনে মাইমূন রাহ. বলেন- হযরত উমর রা. যখন আহত হলেন, তখন তারা হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. কে আগে বাড়িয়ে দিলেন। তিনি ফজরের নামায পড়ালেন। নামাযে তিনি إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ (সূরা নাছ্র) এবং إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ (সূরা কাউসার) তিলাওয়াত করলেন। -সুনানে বাইহাকী খ. ২ পৃ. ৩৯০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ২৭৪০
এখানে বিশেষ পরিস্থিতির কারণেহযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. ফজরের কেরাত সংক্ষিপ্ত করেছেন।
এসব বর্ণনা থেকে একথা প্রমাণিত হল যে, বিশেষ কোনো অবস্থার প্রেক্ষাপটে ফজর ও অন্য যেকোনো নামাযে ছোট ছোট সূরা পড়া হলে কোনো সমস্যা নেই।
সারকথা হলো, পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজে কিরাত পড়ার ক্ষেত্রে নবী (সা.)-এর সাধারণ অভ্যাস ছিল ফজর ও জোহরের নামাজে সুরা হুজুরাত (৪৯ নম্বর সুরা) থেকে সুরা বুরুজ (৮৫ নম্বর সুরা) পর্যন্ত সুরাগুলো থেকে তিলাওয়াত করা। আসর ও এশার নামাজে সুরা তারিক (৮৬ নম্বর সুরা) থেকে সুরা বায়্যিনাহ (৯৮ নম্বর সুরা) পর্যন্ত সুরাগুলো থেকে তিলাওয়াত করা। মাগরিবের নামাজে সুরা জিলজাল (৯৯ নম্বর সুরা) থেকে সুরা নাস (সর্বশেষ সুরা) পর্যন্ত সুরাগুলো থেকে তিলাওয়াত করা। এটি স্বাভাবিক সময়ের জন্য সুন্নত। সফরে থাকলে এটি অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই।
والله اعلم بالصواب