*তাকলীদ ও আহলে হাদীসদের স্ববিরোধিতা-*
- মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.
প্রধান মুফতী ও শাইখুল হাদীস,
জামিয়া রহমানিয়া,মুহাম্মাদপুর,ঢাকা।
আহলে হাদীস ফেরকা তাকলীদকে শিরক বলে। অথচ তারা তাদের দাবী প্রমাণে বুখারী মুসলিম এ ধরনের যেসব হাদীসের কিতাব থেকে দলীল দেয় সেসব কিতাবের কোথাও তাকলীদকে শিরক বলা হয়নি; বরং এগুলোর লেখক সবাই কোন না কোন মুজতাহিদ ইমামের তাকলীদ করতেন। যেমন, ইমাম বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। (তাবাকাতুশ শাফিইয়্যাহ, ১/৪২৫-৪২৬)। ইমাম আবূ দাঊদ ও ইমাম নাসায়ী হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। (মা‘আরিফুস সুনান, ১/৮২-৮৩)। প্রশ্ন হল, তাকলীদ করার কারণে কেউ যদি মুশরিক হয়ে যায় তাহলে তাদের বক্তব্য অনুযায়ী কুতুবে সিত্তার ছয় জন লেখকই মুশরিক সাব্যস্ত হবেন (নাউযুবিল্লাহ)। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা তাঁদের কিতাব দিয়ে দলীল দেয় কেন? মুশরিকদের(?) লেখা কিতাব দিয়ে শরঈ বিষয়ে দলীল দেয়া জায়েয হবে কি?
আহলে হাদীস ভাইয়েরা হাদীসের ক্ষেত্রে সহীহ, যঈফ ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার করে থাকেন। এগুলোও তারা তাকলীদকারীদের কিতাব থেকেই শিখেছেন। কারণ উসূলে হাদীসের পুরনো সব কিতাব তাকলীদকারী আলেমগণেরই লেখা। এর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা লক্ষ্য করুন,
১. নুখবাতুল ফিকার (ইবনে হাজার আসকালানী শাফেয়ী)
২. মুকাদ্দামাতু ইবনিস সালাহ (ইবনুস সালাহ শাফেয়ী)
৩. মুকাদ্দামাতুশ শাইখ (আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী হানাফী)
৪. আত্ তাসবিয়াতু বাইনা হাদ্দাসানা ওয়া আখবারানা (ইমাম ত্বহাবী হানাফী)
৫. তাওজীহুন নযর (তাহের ইবনে সালাহ জাযায়েরী হানাফী)
৬. তাওযীহুল আফকার (আমীরে সান‘আনী হানাফী)
৭. শরহু শরহি নুখবাতিল ফিকার (মুল্লা আলী ক্বারী হানাফী)
৮. ক্বাফুল আসার ফী সাফ্ফি উলূমিল আসার (রযীউদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম হানাফী)
৯. ইম্‘আনুন নযর (শাইখ আকরাম সিন্ধী হানাফী)
১০. আর রাফ্ঊ ওয়াত তাকমীল (আব্দুল হাই লাখনুবী হানাফী)
১১.আল ইলমা (কাযী ইয়ায মালেকী)
১২.আত্ তাক্বয়ীদ ওয়াল ঈযাহ (ইবনে রজব হাম্বলী)।
এভাবে উসূলে হাদীসের উপর যত কিতাব আছে সবই কোন না কোন মুকাল্লিদ ও মাযহাবের অনুসারী লিখেছেন। প্রশ্ন হল, তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এসব মুশরিকদের(?) কিতাব থেকে নেয়া হাদীস শাস্ত্রের এ সকল পরিভাষা তাদের জন্য ব্যবহার করা কিভাবে বৈধ হবে?
কথায় বলে, ‘আমার ছাও আমারেই খাও?’ এতো নিকৃষ্টমানের স্ববিরোধিতা শিক্ষিত লোকেরা বুঝবেনা, তা কী করে হয়?