আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

মনীষীদের বাণী- হযরত মাওলানা শাহ সৈয়দ আবরারুল হক রহ. এর মালফুযাতঃ* - মুফতী মনসূরুল হক দা.

No Comments

 



.হযরত মাওলানা শাহ সৈয়দ আবরারুল হক রহ. এর মালফুযাতঃ*


- মুফতী মনসূরুল হক দা.

প্রধান মুফতী ও শাইখুল হাদীস,

জামিয়া রহমানিয়া,মুহাম্মাদপুর,ঢাকা।


১. ইরশাদ করেনঃ

হযরতওয়ালা হারদুঈ রহ. এর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য আমরা যখন হারদুঈ গেলাম তখন হযরতওয়ালার খেদমতে হাজির হয়ে সালাম করলে সালামের শুরুর হামযা পরিষ্কার না হওয়ায় এবং মীমের পেশ মাজহুল (উ-কার না হয়ে ও-কার) হওয়ায় সালামের মধ্যে এবং বাম দিকে মু‘আনাকা করার কারণে হযরত আমাদেরকে সতর্ক করলেন। যাতে উভয় ভুলের সংশোধন হয়ে যায়। মু‘আনাকা করার সহীহ তরীকা হল, উভয়ের ডান গর্দান একবার একত্র করতে হবে।


২. ইরশাদ করেনঃ

হযরতওয়ালা রহ. এর মসজিদে ফজরের নামাযের আগে নীরবে কুরআন তিলাওয়াত হচ্ছিল, কিন্তু মানুষের পিঠের দিকে মুখ করে কুরআন পড়ার ব্যাপারে সংশয় সৃষ্টি হওয়ায় আমি তিলাওয়াত থেকে বিরত রইলাম এবং যিকির করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পরে হযরতওয়ালা মসজিদে তাশরীফ আনলেন এবং এ ব্যাপারে নিজের পক্ষ থেকে বলতে শুরু করলেন যে, নামায শুরুর পূর্ব মূহুর্তে এভাবে অন্যের পিছনে বসে তিলাওয়াত করার মধ্যে কোন বেয়াদবী নেই। হারামাইন শরীফাইন তথা মক্কা-মদীনায়ও এই নিয়ম জারী আছে। তবে হ্যাঁ, অন্য সময়ে মুখোমুখি বসে তিলাওয়াত করবে। হযরতওয়ালার কথা শ্রবণের পর আমার সংশয় দূর হয়ে গেল।


৩. ইরশাদ করেনঃ 

আমরা যখন হারদুঈ পৌঁছি তখন আমাদের সাথে কলিকাতা ফেরার টিকিট ছিল না। তাই হযরতওয়ালা রহ. তার দফতরের জনৈক কর্মচারীকে আমাদের একজনের সাথে ফিরতি টিকিট করার জন্য লক্ষ্ণৌ পাঠিয়ে দেন এবং ইরশাদ করেন, কোথাও প্রবেশের আগে সেখান থেকে বের হওয়ার চিন্তা করা চাই। হযরতের উক্ত কথায় সকলের মধ্যে এই প্রতিক্রিয়া হয় যে, দুনিয়াতে আসার পর আখিরাতে সুন্দরভাবে যাওয়ার চিন্তা করা জরুরী।


আরেকটি কথা এই বললেন যে, উক্ত কর্মচারীর ঐ দিনের বেতন যেন আমরা সকলে মিলে দিয়ে দেই। কেননা আমাদের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে ঐদিন তিনি মাদরাসার কোন কাজ করতে সময় পাবেন না। ফলে মাদরাসা হতে তিনি বেতনও পাবেন না। আল্লাহু আকবার! সকল দিকে দৃষ্টি রেখে সিদ্ধান্ত দেয়ার কী অপূর্ব দৃষ্টান্ত।


৪. ইরশাদ করেনঃ 

এক মজলিসে হযরতওয়ালা রহ. মাদরাসার যিম্মাদার ও দায়িত্বশীলদের ব্যাপারে ইরশাদ করেন যে, তারা হচ্ছেন ইসলামী রাষ্ট্রের বিচারকের মত। সুতরাং তাদের জন্য ছাত্রদের বা ছাত্র অভিভাবকদের কাছ থেকে হাদিয়া গ্রহণ করা অনুচিত। কেননা এটা ঘুষের মধ্যে গণ্য হবে। তবে যদি কোন ছাত্র-অভিভাবকের আগে থেকেই কোন দায়িত্বশীলের সাথে হাদিয়ার লেনদেনে অভ্যস্ত থাকে তাহলে ছেলে ভর্তির পর ঠিক ঐ পরিমাণই জারী রাখতে পারবে, তার চেয়ে বেশী নয়।


৫. ইরশাদ করেনঃ

একবার হযরতের মাদরাসা সংলগ্ন ময়দানে ইট বিছানো হচ্ছিল, যাতে বর্ষা মৌসুমে কাদা না হয়। একটি ইট ছিল খুবই বাঁকা। বাহ্যত সেটাকে কোন কাজের মনে হচ্ছিল না। যাই হোক এটা দেখার পর আমরা হযরতওয়ালার সাথে নামাযের জামা‘আতে হাজির হলাম। মসজিদ থেকে ফেরার পথে দেখি মিস্ত্রি সেটাকে সাইজ করে এমন এক জায়গায় লাগিয়ে দিয়েছে যেখানে সোজা ইট দ্বারা খালি স্থান ভরাট করা সম্ভব ছিল না। এই প্রসঙ্গে হযরতওয়ালা মন্তব্য করেন যে, কোন মানুষ যতই অসম্পূর্ণহোক না কেন; নিজেকে যদি সে কোন কামেল মানুষের নিকট সোপর্দ করে তাহলে উক্ত কামেল ব্যক্তি তাকে ঘষে-মেজে পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত করে তাকে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগিয়ে দিবেন এবং তার দ্বারা এমন কাজ আঞ্জাম পায় যা অন্যের দ্বারা সম্ভব হয় না।


৬. ইরশাদ করেনঃ

একবার হযরতওয়ালা রহ. মাদরাসার ব্যাপারে আলোচনা প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন যে, দায়িত্বশীলদের অবহেলার কারণে একটি বাচ্চাও যদি মশার কামড়ে ঘুমাতে কষ্ট পায় তাহলে দায়িত্বশীলদেরকে আল্লাহ পাকের নিকট জবাবদিহী করতে হবে। সুতরাং যতটুকু সামর্থ্য আছে ঠিক সেই পরিমাণ ছাত্রই ভর্তি করা চাই। যাতে সকলের জন্য আসানী হয়। এই প্রসঙ্গে হযরত রেলগাড়ির বাথরুমের উদাহরণ দিয়ে বললেন, দেখুন একটি বগিতে ৭৫ জন মানুষের জন্য ৪টি হাম্মাম থাকে। তাই এ ব্যাপারে আমাদেরও চিন্তা-ভাবনা করা উচিৎ যাতে ছাত্র সংখ্যা অনুপাতে প্রত্যেক মাদরাসায় পর্যাপ্ত হাম্মাম ও অন্যান্য জরুরী জিনিসের ব্যবস্থা থাকে।


৭. ইরশাদ করেনঃ  

হযরতওয়ালার ওখানে অর্থাৎ হারদুঈতে হাম্মামের ব্যবস্থাপনা খুবই চমৎকার। সেগুলো থেকে কখনো দুর্গন্ধ আসে না। প্রতিদিন নিয়মিত পরিস্কার করা হয়। আর পানির ব্যবস্থাও এমনভাবে করা আছে যে, পরিমিত পানি প্রবাহিত হতে থাকে। তাই দুর্গন্ধ হওয়ার কোন সুযোগ হয় না। এই জন্য হযরতওয়ালা রহ. কোথাও গেলে প্রথমে সেখানকার হাম্মামের ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করতেন এবং তাদের আযান-ইকামত শুনতেন যে, সুন্নাতের উপর তাদের কি পরিমাণ আমল আছে তা এ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।

 

৮. ইরশাদ করেনঃ 

হযরতওয়ালা রহ. একবার বয়ান করছিলেন যে, ইদানিং ওয়াজ করে টাকা -পয়সা নেয়া হয়ে থাকে। এতে ওয়াজের তাসীর তথা প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং আম্বিয়ায়ে কেরাম (আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম)-এর তরীকায় ওয়াজ করা চাই। যাতে করে শ্রোতাদের পরিপূর্ণ ফায়দা হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি হযরত হাকীমুল উম্মত রহ. এর নসীহত শোনাতেন যে, তিনি তাঁর সমস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী এবং তাঁর সাথে সম্পর্ক রাখে এমন ব্যক্তিদেরকে ওয়াজ করে বিনিময় গ্রহণ করতে নিষেধ করতেন।


৯. ইরশাদ করেনঃ 

নাবালেগ ছাত্রদেরকে শাস্তি দেয়ার সময় বেত্রাঘাত করা থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করতেন এবং নাজায়িয বলতেন। এমনকি কোন শিক্ষক এর বিপরীত আচরণ করলে তাকে অব্যাহতি দিয়ে দিতেন। (স্বয়ং পিতার জন্যও বেত্রাঘাতের অনুমতি নেই। অনেক অভিভাবক উস্তাদকে বলে থাকেন যে, গোশত আপনার আর হাড্ডি আমার। এরকম বলা অনুচিত। সংকলক)

 

১০. ইরশাদ করেনঃ 

যদি কোন ছাত্র দাড়ি মুণ্ডন করে বা পর্দা না করে অথবা টাখনুর নিচে কাপড় পরে কিংবা পরীক্ষায় নকল করে, মোটকথা কানুনের খেলাফ কোন কাজ করে এবং জান্নাতের রাস্তায় চলতে এসে গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়ে জাহান্নামের পথে চলে- তাহলে তাকে বহিস্কার করে দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, হারদুঈতে শরাহ-শুরুহাত (ব্যাখ্যা-টিকা) ও কিতাবসহ ছাত্রদের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।