জিজ্ঞাসা-১২৩৫৩:
আসসালামু আলাইকুম। হাত উঠিয়ে তাকবীর বলার হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয় বরং আপনি উল্টা বুঝেছেন, সেটা হল হাদিসে হাত উঠিয়ে মোনাজাত করার বিষয়টি প্রমাণিত কিন্তু তাকবির বলার সময় হাত উঠানো যেটা আমাদের দেশে উল্টা তাকবীর বলে সেটা আপনি প্রমাণিত করতে পারেননি প্রমাণিত করার জন্য স্পষ্ট নছ দরকার। তারিখ: ২৫/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আবু তাহের নেত্রকনা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই! গত ২২/১১/২২ তারিখে আল-বুরহানে জিজ্ঞাসা-১২৩৫১ শিরোনামে প্রকাশিত মাসয়ালাটি বিষয়ে আপনি আপত্তি তুলেছেন। বিষয়টি হলো, আমি দুআ কুনুতে পড়ার আগে তাকবিরে সময় হাত তোলা সম্পর্কে দলিল হিসেবে কয়েকটি হাদিস শরিফ উল্লেখ করেছিলাম, তার মধ্যে একটি নিম্নরূপ:
عن الأسود قال عن عبد الله مسعود رضي الله عنه كان يرفع يديه إذا قنت في الوتر
আসওয়াদ রাহ. বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতরের কুনূতের জন্য রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন। তাখরিজ: মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/২৭-২৮
আপনি বলেছেন যে, আপনি উল্টা বুঝেছেন, সেটা হল হাদিসে হাত উঠিয়ে মোনাজাত করার বিষয়টি প্রমাণিত। অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের রা. হাদীসটার ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﻳَﺪَﻳْﻪِ দ্বারা মুনাজাত বুঝানো হয়েছে। আপনার কাছে প্রশ্ন হলো ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﻳَﺪَﻳْﻪِ দ্বারা যদি মুনাজাত অর্থ হয়, তাহলে নিচের হাদিস দ্বারা কি অর্থ বুঝিয়েছে- সম্মানিত ইমাম বা ফকিহ বা আলেমদের ব্যাখ্যা ছাড়া।
হাদিস নং-০১
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ - صلى الله عليه وسلم - كَانَ ★يَرْفَعُ يَدَيْهِ★ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ، وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوعِ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
বুখারী ৭৩৫, ৭৩৬, ৭৩৮, ৭৩৯, মুসলিম ৩৯০, তিরমিযী ২৫৫, নাসায়ী ৮৭৭, ৮৭৮, ১০২৫, ১১৪৪, আৰু দাউদ ৭২১, ৭২২, ইবনু মাজাহ ৮৫৮,৮৬৬, আহমাদ ৪৫২৬, ৪৬৬০, মালেক ১৬৫, দারেমী ১৩০৮, বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ২৭৫
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَهِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ صَالِحِ بْنِ كَيْسَانَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ★يَرْفَعُ يَدَيْهِ★ فِي الصَّلاَةِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ حِينَ يَفْتَتِحُ الصَّلاَةَ وَحِينَ يَرْكَعُ وَحِينَ يَسْجُدُ .
বুখারী ৭৮৫, ৭৮৯, ৮০৩; মুসলিম ৩৯১-২, তিরমিযী ২৫৪, নাসায়ী ১০২৩, আবূ দাঊদ ৮৩৬, আহমাদ ৭১৭৯, ৭১৬০১, ১০১৪১, ১০৪৪০; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৬৮, দারিমী ১২৩৮, সহীহ আবী দাউদ ৭২৪, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৮৬০
হাদিস নং-০৩
حَدَّثَنَا أَيُّوبُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْهَاشِمِيُّ، حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ رِيَاحٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ كَان★ يَرْفَعُ يَدَيْهِ★ عِنْدَ كُلِّ تَكْبِيرَةٍ .
অর্থ: ইবনু আব্বাস(রা.) থেকে বর্ণিতঃ। রসূলুল্লাহ (ﷺ)প্রতি তাকবীরের সময় রফউল ইয়াদাইন করতেন। তাখরীজ আলবানী: সহীহ আবী দাউদ ৭২৪; ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৮৬৫
হাদিস নং-০৪
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الأَسْوَدِ، عَنْ عَلْقَمَةَ، قَالَ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ أَلاَ أُصَلِّي بِكُمْ صَلاَةَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَصَلَّى فَلَمْ ★يَرْفَعْ يَدَيْهِ★ إِلاَّ فِي أَوَّلِ مَرَّةٍ .
অর্থ: ‘আলকামা (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা.) বললেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর (নিয়মে) নামায আদায় করে দেখাব না? তিনি (‘আবদুল্লাহ) নামায আদায় করলেন, কিন্তু প্রথম বার (তাকবীরে তাহরীমার সময়) ছাড়া আর কোথাও রফউল ইয়াদাইন করেননি। তাখরিজ: সিফাতুস সালাত, মূল-মিশকাত-(৮০৯) জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৫৭
হাদিস নং-০৫
أَخْبَرَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلَانَ الْمَرْوَزِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّهُ قَالَ: «أَلَا أُصَلِّي بِكُمْ صَلَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَصَلَّى فَلَمْ ★يَرْفَعْ يَدَيْهِ★ إِلَّا مَرَّةً وَاحِدَةً»
আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)–এর সালাতের ন্যায় সালাত আদায় করবো না? এরপর তিনি সালাত আদায় করলেন, তখন তিনি একবারের অধিক হাত উঠান নি। তাখরিজ: সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১০৫৮
হাদিস নং-০৬
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْوَكِيلُ , ثنا الْحَسَنُ بْنُ عَرَفَةَ , ثنا هُشَيْمٌ , عَنْ حُصَيْنٍ , وَحَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ , وَعُثْمَانُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ جَعْفَرٍ , قَالَا: نا يُوسُفُ بْنُ مُوسَى , نا جَرِيرٌ , عَنْ حُصَيْنِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ , قَالَ: دَخَلْنَا عَلَى إِبْرَاهِيمَ فَحَدَّثَهُ عَمْرُو بْنُ مُرَّةَ , قَالَ: صَلَّيْنَا فِي مَسْجِدِ الْحَضْرَمِيِّينَ , فَحَدَّثَنِي عَلْقَمَةُ بْنُ وَائِلٍ , عَنْ أَبِيهِ , أَنَّهُ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ★«يَرْفَعُ يَدَيْهِ★حِينَ يَفْتَتِحُ الصَّلَاةَ وَإِذَا رَكَعَ وَإِذَا سَجَدَ». فَقَالَ إِبْرَاهِيمُ: مَا أَرَى أَبَاكَ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا ذَلِكَ الْيَوْمَ الْوَاحِدَ فَحَفِظَ ذَلِكَ , وَعَبْدُ اللَّهِ لَمْ يَحْفَظْ ذَلِكَ مِنْهُ , ثُمَّ قَالَ إِبْرَاهِيمُ: إِنَّمَا رَفْعُ الْيَدَيْنِ عِنْدَ افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ
হযরত হুসাইন বিন আব্দুর রহমান বলেন: আমি হযরত ইবরাহীম নাখঈ রহ.-এর নিকটে গেলাম। তখন হযরত আমর বিন মুররাহ তাঁকে হাদীস শুনালেন যে, আমরা হাযরামীদের মসজিদে নামায পড়লাম। অতঃপর আলকামা বিন ওয়ায়েল আমাদেরকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করলেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ স.কে হাত উঠাতে দেখেছেন নামাযের শুরুতে এবং রুকু-সিজদার সময়ে। এ কথা শুনে হযরত ইবরাহীম নাখঈ রহ. বললেন, তোমার পিতা রসূলুল্লাহ (ﷺ).কে ওই একদিন দেখে স্মরণ রাখলেন আর ইবনে মাসউদ রা. তা স্মরণ রাখতে পালেন না? অতঃপর তিনি বললেন: রফউল ইয়াদাইন শুধু নামাযের শুরুতে হবে। (দারাকুতনী: ১১২১)
নোট: সহীহ। ইমাম দারাকুতনী এ হাদীসটিকে দু’টি সনদে বর্ণনা করেছেন। প্রথম সনদে হাসান বিন আরাফা এবং আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ ব্যতীত সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর হাসান বিন আরাফার ثقة “নির্ভরযোগ্য”। (আল কাশেফ: ১০৪২) আহমাদ বিন আব্দুল্লাহও ثقة “নির্ভরযোগ্য”। (তারীখে বাগদাদ: ২২০৬) সুতরাং এ সনদটি সহীহ।
হাদিস নং-০৭
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ، - يَعْنِي ابْنَ زُرَيْعٍ - حَدَّثَنَا الْمَسْعُودِيُّ، حَدَّثَنِي عَبْدُ الْجَبَّارِ بْنُ وَائِلٍ، حَدَّثَنِي أَهْلُ، بَيْتِي عَنْ أَبِي أَنَّهُ، حَدَّثَهُمْ أَنَّهُ، رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم★ يَرْفَعُ يَدَيْهِ★مَعَ التَّكْبِيرَةِ .
‘আবদুল জাব্বার ইবনু ওয়ায়িল থেকে বর্ণিতঃ:আমার পরিবারের লোকজন আমার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (আমার পিতা) রসূলুল্লাহ (ﷺ)কে তাকবীর বলার সময় দু’হাত উঠাতে দেখেছেন। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৭২৫
হাদিস নং-০৮
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ، عَنْ حَسَنِ بْنِ عَيَّاشٍ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبْجَرَ، عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، قَالَ: «صَلَّيْتُ مَعَ عُمَرَ، فَلَمْ ★يَرْفَعْ يَدَيْهِ★ فِي شَيْءٍ مِنْ صَلَاتِهِ إِلَّا حِينَ افْتَتَحَ الصَّلَاةَ» قَالَ عَبْدُ الْمَلِكِ : وَرَأَيْت الشَّعْبِيَّ ، وَإِبْرَاهِيمَ ، وَأَبَا إِسْحَاقَ ، لاَ يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ إِلاَّ حِينَ يَفْتَتِحُونَ الصَّلاَةَ.
হযরত আসওয়াদ রহ. বলেন: আমি হযরত উমার রা.-এর সাথে নামায পড়েছি। তিনি নামায শুরু করার সময় ব্যতীত নামাযে আর কোথাও হাত উঠাননি। আব্দুল মালেক বলেন: আমি শা’বী, ইবরাহীম ও আবু ইসহাককে দেখেছি; তাঁদের কেউ নামাযের শুরু ব্যতীত হাত উঠাননি। তাখরিজ: ইবনে আবী শাইবা: ২৪৬৯, ত্বহাবী: ১৩৬৪
হাদীসটির মান : সহীহ। এ হাদীসটির রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের ثقة “নির্ভরযোগ্য” রাবী। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: وَهَذَا رِجَاله ثِقَات “এ হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য”। (আদ দিরায়াহ: ১৮১ নম্বর হাদীসের আলোচনায়) আল্লামা যাইলাঈ রহ. বলেন: وَالْحَدِيثُ صَحِيحٌ، “হাদীসটি সহীহ”। (নাসবুর রায়াহ: সিফাতুস সলাত অধ্যায়, ৩৯ নম্বর হাদীস-এর আলোচনায়)
হাদিস নং-০৯
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قِطَافٍ النَّهْشَلِيِّ،عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ«أَنَّ عَلِيًّا كَانَ ★يَرْفَعُ يَدَيْهِ★ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ ثُمَّ لَا يَعُودُ» قَالَ عَبْدُ الْمَلِكِ: «وَرَأَيْتُ الشَّعْبِيَّ، وَإِبْرَاهِيمَ، وَأَبَا إِسْحَاقَ، لَا يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ إِلَّا حِينَ يَفْتَتِحُونَ الصَّلَاةَ»
হযরত আছেম বিন কুলাইব তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন: হযরত আলী রা. শুধু নামাযের শুরুতে হাত উঠাতেন পরবর্তীতে আর উঠাতেন না। (ইবনে আবী শাইবা: ২৪৫৭, ত্বহাবী: ১৩৫৩ ও ১৩৫৪)
হাদীসটির মান: সহীহ। হযরত আছেমের পিতা কুলাইব ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। আর কুলাইব ثقة “নির্ভরযোগ্য”। (আল কাশেফ: ৪৬৭১) হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: وَرِجَاله ثِقَات وَهُوَ مَوْقُوف “এ হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য আর হাদীসটি মাউকুফ”। (আদ দিরায়াহ: ১৮১ নম্বর হাদীসের আলোচনায়) আল্লামা যাইলাঈ রহ. বলেন: وَهُوَ أَثَرٌ صَحِيحٌ، “এ হাদীসটি সহীহ”। (নাসবুর রায়াহ: সিফাতুস সলাত অধ্যায়, ৩৯ নম্বর হাদীস-এর আলোচনায়)
হাদিস নং-১০
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ حُصَيْنٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، قَالَ: «مَا رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ، ★يَرْفَعُ يَدَيْهِ★ إِلَّا فِي أَوَّلِ مَا يَفْتَتِحُ»
হযরত মুজাহিদ রহ. বলেন: আমি ইবনে উমর রা.কে(শেষ জীবনে) তাকবীরে তাহরিমা ব্যতীত রফউল ইয়াদাইন করতে দেখিনি। তাখরিজ: ইবনে আবী শাইবা: ২৪৬৭, ত্বহাবী: ১৩৫৭
হাদীসটির মান : সহীহ, মাউকুফ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য” রাবী।
উপরোক্ত ১০টি হাদিসে يَرْفَعُ يَدَيْه শব্দগুলোর দিকে খেয়াল করুন !!! একই শব্দ !! পৃথিবীর কোন আলেম-ফকিহ এটা দ্বারা মুনাজাত অর্থ করেননি। সুতরাং ওটার অর্থ মুনাজাত নয়,,বরং রফউল ইয়াদাইন ই হবে অর্থাৎ কান পর্যন্ত হাত উঠানো ৷ এটাই ফুকাহায়ে আহনাফ গ্রহণ করেছেন।
দ্বিতীয় প্রশ্ন يَرْفَعُ يَدَيْه যদি মুনাজাত হয়, তাহলে রুকুতে যেতে আসতে রফউল ইয়াদাইন يَرْفَعُ يَدَيْه না করে মুনাজাত করেন না কেনো?
তৃতীয় প্রশ্ন: দ্বিতীয় প্রশ্ন يَرْفَعُ يَدَيْه যদি মুনাজাত হয়, তাহলে তাকবিরে তাহরিমার সময় মুনাজাত করেন নাকেন?
কেননা, ঐ হাদীস দ্বারা যদি(কিবলার দিকে হাতের তালু করে) রফউল ইয়াদাইন না বুঝিয়ে (আসমানের দিকে হাতের তালু করে) মুনাজাত ধরা বুঝানো হয়,,তবে, রুকুতে যেতে আসতে রফউল ইয়াদাইনের হাদীসগুলো দ্বারা কী মুনাজাত বুঝানো হবে???
সারকথা হলো, রুকুতে যেতে আসতে রফউল ইয়াদাইন করা বা শুধু তাকবীর তাহরিমায় রফউল ইয়াদাইন করার প্রায় সকল হাদীসেই রফউল ইয়াদাইন বুঝাতে ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﻳَﺪَﻳْﻪِ শব্দগুলো ব্যবহ্নত হয়েছে ৷ বিতরে কুনুতে ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﻳَﺪَﻳْﻪِ শব্দ ব্যবহার হয়েছে, তাহলে সব জায়গায় মুনাজাত অর্থ হবে?
প্রশ্ন: ক। বিতরের কুনুতের সময় মুনাজাত করা কি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত?
উত্তর: ক। না, হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। দেখুন স্বয়ং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল ও তার মাজহাবের অনুসারি ইবনে বায রহ. বলেছেন,
ﺳﺌﻞ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺣﻤﺪ – ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ - ﻋﻦ ﺍﻟﻘﻨﻮﺕ ﻓﻲ ﺍﻟﻮﺗﺮ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﺃﻡ ﺑﻌﺪﻩ ، ﻭﻫﻞ ﺗﺮﻓﻊ ﺍﻷﻳﺪﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻓﻲ ﺍﻟﻮﺗﺮ ؟
ﻓﻘﺎﻝ : ﺍﻟﻘﻨﻮﺕ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ، ﻭﻳﺮﻓﻊ ﻳﺪﻳﻪ ، ﻭﺫﻟﻚ ﻋﻠﻰ ﻗﻴﺎﺱ ﻓﻌﻞ ﺍﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓﻲ ﺍﻟﻘﻨﻮﺕ ﻓﻲ ﺍﻟﻐﺪﺍﺓ ﻣﺨﺘﺼﺮ ﻗﻴﺎﻡ ﺍﻟﻠﻴﻞ ( ﺹ 318 ) .
ﻳﺸﺮﻉ ﺭﻓﻊ ﺍﻟﻴﺪﻳﻦ ﻓﻲ ﻗﻨﻮﺕ ﺍﻟﻮﺗﺮ؛ ﻷﻧﻪ ﻣﻦ ﺟﻨﺲ ﺍﻟﻘﻨﻮﺕ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﻮﺍﺯﻝ، ﻭﻗﺪ ﺛﺒﺖ ﻋﻨﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﺃﻧﻪ ﺭﻓﻊ ﻳﺪﻳﻪ ﺣﻴﻦ ﺩﻋﺎﺋﻪ ﻓﻲ ﻗﻨﻮﺕ ﺍﻟﻨﻮﺍﺯﻝ
ﺣﻴﻦ ﺩﻋﺎﺋﻪ ﻓﻲ ﻗﻨﻮﺕ ﺍﻟﻨﻮﺍﺯﻝ . ﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ - ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ - ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﺻﺤﻴﺢ .
ﻓﺘﺎﻭﻯ ﺇﺳﻼﻣﻴﺔ ، ﺟﻤﻊ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﻟﻤﺴﻨﺪ ( 1/349 )
অর্থাৎ “'ফজরের কুনুতে নাযেলায়’” যেহেতু রাসুল সা. হাত তুলে দোয়া/মুনাজাত করেছেন, তাই ফজরের কুনুতের উপর কিয়াস করে বেতের কুনুতেও হাত তুলে দোয়া করা যায়। সূত্র: মুখতাসার কিয়ামুল লাইল-৩১৮, ফাতাওয়া ইসলামিয়া ইবনে বায-১/৩৪৯
.
প্রশ্ন: খ। মুসলমানদের শত্রুদের বিরুদ্ধে বদদুআ ছাড়া ফজরের নামাজে কুনুত/নাজেলায় মুনাজাত করা কি বিদআত?
উত্তর: খ । হ্যাঁ, মুসলমানদের শত্রুদের বিরুদ্ধে বদদুআ ছাড়া ফজরের নামাজে কুনুত/নাজেলায় মুনাজাত করা বিদআত। দলিল:
হাদিস নং-০১
ﻭَﻋَﻦْ ﺳَﻌْﺪِ ( 1 ) ﺑْﻦِ ﻃَﺎﺭِﻕٍ ﺍﻟْﺄَﺷْﺠَﻌِﻲِّ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﺖُ ﻟِﺄَﺑِﻲ : ﻳَﺎ ﺃَﺑَﺖِ ! ﺇِﻧَّﻚَ ﻗَﺪْ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﺧَﻠْﻒَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻭَﺃَﺑِﻲ ﺑَﻜْﺮٍ، ﻭَﻋُﻤَﺮَ، ﻭَﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ، ﻭَﻋَﻠَﻲٍّ، ﺃَﻓَﻜَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻘْﻨُﺘُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﻱْ ﺑُﻨَﻲَّ، ﻣُﺤْﺪَﺙٌ . ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﻟْﺨَﻤْﺴَﺔُ، ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﺑَﺎ ﺩَﺍﻭُﺩَ
সা'দ ইবনু তারেক আল-আশজাঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, হে পিতা ! আপনি অবশ্যই রসূলুল্লাহ (ﷺ) আবু বাকর, ‘উমার, উসমান ও ‘আলী (রা.) -এর পিছনে সলাত আদায় করেছেন। তারা কি ফজরের সলাতে দু'আ কুনৃত পড়তেন? তিনি বলেন, হে বৎস! এটা তো বিদআত। তাখরিজ: তিরমিযী ৪০২, ইবনু মাজাহ ১২৪১, নাসায়ী ১০৮০, আহমাদ ১৫৪৪৯, ২৬৬৬৮, বুলুগুল মারাম ৩০৭, হাদিসের মানঃ হাসান-সহিহ
হাদিস নং-০২
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﻤﺜﻨﻲ ﻗﺎﻟﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻗﺎﻟﻨﺎ ﻫﺸﺎﻡ ﻋﻦ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﻗﻦ ﺍﻧﺲ ﺭﺿـ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻـ ﻗﻨﺖ ﺷﻬﺮﺍً ﻳﺪﻋﻮ ﻋﻠﻲ ﺣﻲ ﻣﻦ ﺍﺣﻴﺎﺀ ﺍﻟﻌﺮﺏ ﺛﻢ ﺗﺮﻛﻪ – ( ﻣﺴﻠﻢ – ১/২৩৭)
ﺍﻧﺲ ﺭﺿـ ﻗﺎﻝ ﻗﻨﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻـ ﺷﻬﺮﺍً ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻳﺪﻋﻮ ﻋﻠﻲ ﺣﻲ ﻣﻦ ﺍﺣﻴﺎﺀ ﺍﻟﻌﺮﺏ ﺛﻢ ﺗﺮﻛﻪ – ( ﺷﺮﺡ ﻣﻌﺎﻧﻲ ﺍﻻﺛﺎﺭ - ১/১৭৪)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) (ফজরের সালাতে) একমাস কুনুত পড়েছিলেন, তিনি আরবের গোত্র সমূহের একটি গোত্রকে বদদোয়া করেছেন। অতঃপর কুনুত পড়া #ছেড়ে দেন। তাখরিজ: সহিহ মুসলিম-১/২৩৭, শরহে মা'আনিল আছার ত্বহাভী-১/১৭৪
হাদিস নং-০৩
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻳَﻘْﻨُﺖُ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﺪْﻋُﻮَ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﻮْﻡٍ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺃَﻥْ ﻳَﺪْﻋُﻮَ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﻮْﻡٍ ﺃَﻭْ ﻳَﺪْﻋُﻮَ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ، ﻗَﻨَﺖَ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﺭَﺃْﺳَﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮَّﻛْﻌَﺔِ ﺍﻟﺜَّﺎﻧِﻴَﺔِ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺓِ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ফজরের নামাযের সময় সর্বদা কুনুত [নাজেলাহ] পড়তেন না। শুধু পড়তেন কোন জাতির জন্য দুআ করতে বা বদদুআ করার প্রয়োজন হলে।তিনি কুনুত পড়তেন যখন ফজরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতের রুকু থেকে মাথা উঠাতেন। তাখরিজ: সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১০৯৭, নসবুর রায়াহ, আলমুসনাদুল জামে, আসারুস সুনান-২/২০
নোট: আল্লামা নিমাভী রহঃ বলেন, এ হাদীসের সনদ সহীহ।
হাদিস নং-০৪
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ : « ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟَﻢْ ﻳَﻘْﻨُﺖْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ ﺇِﻟَّﺎ ﺷَﻬْﺮًﺍ ﻭَﺍﺣِﺪًﺍ، ﻟَﻢْ ﻳُﺮَ ﻗَﺒْﻞَ ﺫَﻟِﻚَ، ﻭَﻟَﺎ ﺑَﻌْﺪَﻩُ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻧَﺎﺱٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ »
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রা. থেকে বর্ণিতঃ নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) ফজরের নামাযের সময় কুনুত পড়তেন না, শুধুই একমাস পড়েছিলেন। এর আগে বা পড়ে আর এমনটি করতে দেখা যায়নি। সে সময় তিনি কিছু মুশরিকদের উপর বদদুআ করতে পড়েছিলেন। তাখরিজ: মুসনাদে আবী হানীফা বিরিওয়াতে হিসকাফী, হাদীস নং-৩৪
প্রশ্ন: গ। তাকবির বলার সময় হাত উঠানো যেটা আমাদের দেশে উল্টা তাকবীর বলে সেটা আপনি প্রমাণিত করতে পারেননি?
উত্তর: গ। প্রিয় পাঠক! খ নং উত্তরের ১নং হাদিস দেখুন। ফজরের নামাজে কুনুতে মুনাজাত বিদআত বলেছেন। এই যদি হয় ফজরের কুনুতে মুনাজাত আর এটার উপর কিয়াস করে বিতরে সময় কুনুতে মুনাজাত কত দুর্বল তা সহজেই অনুমেয়। বিখ্যাত সাহাবি, খাদেমুর রসূল হজরত আনাস লা. বলেন,
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻧَﺼْﺮُ ﺑْﻦُ ﻋَﻠِﻲٍّ ﺍﻟْﺠَﻬْﻀَﻤِﻲُّ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻳَﺰِﻳﺪُ ﺑْﻦُ ﺯُﺭَﻳْﻊٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺳَﻌِﻴﺪُ ﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﺮُﻭﺑَﺔَ، ﻋَﻦْ ﻗَﺘَﺎﺩَﺓَ، ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲِ ﺑْﻦِ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﺃَﻥَّ ﻧَﺒِﻲَّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ـ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ـ ﻛَﺎﻥَ ﻻَ ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻓِﻲ ﺷَﻰْﺀٍ ﻣِﻦْ ﺩُﻋَﺎﺋِﻪِ ﺇِﻻَّ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻻِﺳْﺘِﺴْﻘَﺎﺀِ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﺮَﻯ ﺑَﻴَﺎﺽُ ﺇِﺑْﻄَﻴْﻪِ .
আনাস বিন মালিক (রাঃ)
নবী (ﷺ) ইস্তিসকার সালাত ব্যতিত তাঁর অন্য কোন দুআয় তাঁর দু’হাত উঠাতেন না (হাত তুলে মোনাজাত করতেন না)। তিনি ইস্তিসকার সলাতে এতটা উপরে হাত উঠাতেন যে, তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা দৃষ্টিগোচর হতো। তাখরিজ: বুখারী ১০৩১,৩৫৬৫, মুসলিম ৮৯৫/১-২, নাসাঈ ১৫১৩, আহমাদ ১১৭০, দারিমী ১৫৩৫। সহীহ আবী দাউদ ১০৬২, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১১৮০, হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
অর্থাৎ,রাসুলুল্লাহ (ﷺ) 'শুধুমাত্র ইস্তিসকার ‘সালাতের মধ্যেই’ মুনাজাত করেছিলেন, বেতেরের স্বালাতে কখনি মুনাজাত করেননি ।
সুতরাং আমাদের দেশে ফিকহি হানাফির অনুসারিগণ যে বিতরে সময় মুনাজাত করে না, শুধু কান পর্যন্ত হাত উঠায়, এটাই সুন্নাহ। বিতরে কুনুতে মুনাজাত কিয়াস ভিত্তিক যা খুবই দুর্বল।
শেষ কথা হলো, হাদিসের বাস্তব অর্থ, কোন হাদিস আম, কোন হাদিস খাস আর কোন হাদিস মুতলাক এ ক্ষেত্রে ফুকাহায়ে উম্মত হাদিসের মর্ম উদ্ধারে অগ্রগামী। যেমন বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেন, الفقهاء و هم اعلم يعني الحديث অর্থাৎ ফুকাহায়ে কেরাম হাদিসের অর্থ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত। সূত্রঃ জামে তিরমিজি-৩/৩১৫পৃ.
বিখ্যাত ফকিহ ইমাম তহাবী রাহ. বলেন,
وأما التكبير في القنوت في الوتر فإنها تكبيرة زائدة في تلك الصلاة وقد أجمع الذين يقنتون قبل الركوع على الرفع معها.
অর্থাৎ বিতর নামাযে কুনূতের তাকবীর হল এই নামাযে একটি অতিরিক্ত তাকবীর। যারা রুকুর পূর্বে কুনূত পড়ার কথা বলেন তাদের ইজমা রয়েছে যে, এই তাকবীরের সাথে রাফয়ে ইয়াদাইনও (কাধ পর্যন্ত হাত উত্তোলন) করতে হবে। তাখরিজ: তহাবী ১/৩৩২
কোন মাজহাবের ফকিহগণকে আমরা প্রত্যাখ্যান/তাচ্ছিল্য করি না। কিন্তু ফিকহি হানফির উপর আস্তা বেশি রাখি দলিলের ভিত্তিতে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক