আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৮৬৬:রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরজ নামাজের পর মোনাজাত করেছেন, এরকম একটা হাদিসে আছে কী?

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১২৮৬৬


জিজ্ঞাসা-১২৮৬৬

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরজ নামাজের পর মোনাজাত করেছেন, এরকম একটা হাদিসে আছে কী?

তারিখ:  ১৪/১২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা সাইফুল ইসলাম, সিলেট থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, হ্যাঁ, এ বিষয়ে সরাসরি একটি হাদিস পাওয়া যায় তিনি করেছেন আর দুটি হাদিস তিনি করতে বলেছেন। দলিল -

হাদিস নং -০১

اخرج ابن ابي شيبة في مصنفه عن الاسود العامري عن ابيه قال صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فلما سلم انحرف ورفع يديه دعا.

অর্থাৎ, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনু আবী শাইবা ( রাহি.) স্বীয় সংকলিত গ্রন্থ "মুসান্নাফ " কিতাবে আসওয়াদ আল আমেরীর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, 'আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ফজরের সালাত আদায় করলাম। যখন তিনি সালাম ফেরালেন, তখন তিনি ফিরে বসলেন এবং দুই হাত তুলে দুআ করলেন। তাখরিজ: মুসান্নেফে ইবনে আবি শাইবা -১ম খণ্ড; ৩০২ পৃষ্ঠা


নোট:

 قال العلامة المباركفوري (٢): الحديث رواه ابن أبي شيبة (تحفة الأحوذي شرح الجامع للترمذي)) (١/ ٢٤٦)في مصنفه، فالله تعالى أعلم. أهو صحيح أو ضعيف؟

অর্থাৎ হাদিসটির সনদ সহিহ হতে পারে আবার যয়িফ হতে পারে। সূত্র: তুহফাতুল আহওয়াজি শারহুল জামিউ তিততিরমিজি-১/২৪৬


হাদিস নং -০২

عن أنس عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال : ( ما من عبد بسط كفيه في دبر كل صلاة ثم يقول : اللهم إلهي وإله إبراهيم وإسحاق ويعقوب وإله جبريل وميكائيل وإسرافيل أسألك أن تستجيب دعوتي فإني مضطر ، وتعصمني في ديني فإني مبتلى ، وتنالني برحمتك فإني مذنب ، وتنفي عني الفقر فإني متمسكن ، إلا كان حقاً على الله عز وجل أن لا يرد يديه خائبتين ) ذكره بن السني في " عمل اليوم والليلة " صفحة/38.

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: এমন কোনো বান্দা নেই যে প্রত্যেক সালাতের শেষে হাতের তালু ছড়িয়ে দেয় এবং বলে: "হে আল্লাহ, আমার খোদা। , এবং ইব্রাহীম, ইসহাক এবং ইয়াকুবের ইলাহ, এবং জিব্রাঈল, মীকাঈল এবং ইস্রাফিলের ইলাহ! 

আমি আপনার কাছে আশা পোষণ করছি আপনি আমার প্রার্থনার সাড়া দিবেন, কারণ আমি অভাবী, আমার দীনের ক্ষেত্রে আমাকে রক্ষা করবেন , কারণ আমি নানা ফিতনার সম্মুখীন, আমাকে আপনার রহমত দান করুন, কারণ আমি অপরাধী, আমাকে দারিদ্র্য থেকে দূরে রাখুন, কারণ আমি আপনার একান্ত অনুসারী ।"

তখন সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর কর্তব্য হয়ে যায় যে তার হাত শূন্য / হতাশ করে ফিরিয়ে না দেওয়া।" তাখরিজ : কানযুল উম্মাল -৩৪৭৬; তাবারানি-১৪/২৬৬; সহিহ ইবনে হিব্বান -৫৪১৯


নোট: হাদিসটির সনদ জয়িফ।


হাদিস নং -০৩

قال الإمام الطبراني رحمه الله في معجمه الكبير :

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْحَسَنِ الْعَطَّارُ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو كَامِلٍ الْجَحْدَرِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا الْفُضَيْلُ بْنُ سُلَيْمَانَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي يَحْيَى ، قَالَ : رَأَيْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الزُّبَيْرِ ، وَرَأَى رَجُلًا رَافِعًا يَدَيْهِ يَدْعُو قَبْلَ أَنْ يَفْرَغَ مِنْ صَلاتِهِ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهَا، قَالَ : " إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ لَمْ يَكُنْ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يَفْرَغَ مِنْ صَلاتِهِ .

وعزاه الهيثمي في المجمع إلى الطبراني وقال رجاله ثقات (10/ 169)]

وقال الحافظ ابن حجر في نتائج الأفكار:2/ 310:هذا حديث حسن.

وقال السيوطي في فض الوعاء:رجاله ثقات.

  আবদুল্লাহ ইবনে আল-যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার নামায শেষ করার পূর্বে দু'হাত তুলে দোয়া করলেন। যখন তিনি সালাত শেষ করলেন, তখন আবদুল্লাহ রা. তাঁকে বললেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নামায শেষ না হওয়া পর্যন্ত দু'হাত তুলতেন না। তাখরিজ: তাবারানি-১০/১৬৯


নোট: ইমাম হায়ছামি রহ. বলেন- এর রাবি সিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য।

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন হাদীসটির সনদ হাসান। 


ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি রহ. বলেন হাদীসের রাবি/বর্ণনাকারী সিকাহ। সূত্র: নাতায়িজুল আফকার -২/৩১০


প্রশ্ন: ক।  যয়িফ বা দুর্বল হাদিসের হুকুম কী?

উত্তর: ক। প্রিয় পাঠক! আমরা উপরোক্ত বর্ণনায়   হাসান ও জয়িফ হাদিস পেলাম।


নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস সর্বজন স্বীকৃত। নিচে কয়েকটি মুহাদ্দিসে কিরামের মতামত তুলে ধরা হলো।

০১.ইমাম আহমাদ (رحمة الله عليه) সহ অন্যান্য মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন-

إذا روينا في الحلال والحرام شددنا وإذا روينا في الفضائل ونحوها تساهلنا

“যখন আমরা হালাল – হারামে রেওয়ায়েত করি (সনদে খুব) কড়াকড়ি করি। আর যখন ফযীলাত ইত্যাদির ক্ষেত্রে রেওয়ায়েত করি শিথিলতা করি”।(হাফেয সুয়ূতী, তাদরীবুর রাবী ১/২৯৮)


০২. ইমাম মোল্লা আলী কারী (رحمة الله عليه) বলেন, যঈফ হাদীস ফাযায়েলে আমালে গ্রহণযোগ্য সমস্ত বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের নিকট।


তিনি অন্যত্র বলেন, ফাযায়েলে আমালে যঈফ হাদীসের উপর সর্বসম্মতিক্রমে আমল করা হবে। এজন্যই আমাদের আয়িম্মায়ে কেরাম বলেছে, মাথা মাসেহ করা সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব। (আলমাউজূআত, মোল্লা আলী কারী,পৃঃ ৭৩)


০৩. আল্লামা নববী (رحمة الله عليه) বলেন-

ويجوز عند أهل الحديث وغيرهم التساهل في الأسانيد ورواية ما سوى الموضوع من الضعيف والعمل به من غير بيان ضعفه في غير صفات الله تعالى والأحكام

“হাদীস বিশারদকারীদের নিকট যঈফ সনদ সমূহে শিথিলতা করা এবং জাল ছাড়া দুর্বল হাদীসের দুর্বলতা উল্লেখ করা ব্যতীত বর্ণনা করা জায়েয। আর তার উপর আমল করা বৈধ। যখন তা আহকাম এবং আল্লাহ তা’য়ালার ছিফাতের ব্যাপারে না হয়”। (তাক্বরীবে নববী, পৃষ্ঠা ১৯৬)


সারকথা হলো,  ফরজ নামাজের পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম মোনাজাত করেছেন যা নস দ্বারা প্রমাণিত। দুর্বল হাদিস এর উপর আমল করা যাবে না, এ বিষয়ে কোরআন হাদিসে কোন নির্দেশনা নেই। 



  والله اعلم بالصواب