আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৮৬৩: জান্নাতে হযরত মুসা (আঃ) এর সাথী একজন কসাই হবে, এ সংক্রান্ত হাদিসটি/ বর্ণনাটি কতটুকু নির্ভরযোগ্য?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৮৬৩: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

প্রশ্ন: জান্নাতে নবী হযরত মুসা (আঃ) এর সাথী একজন কসাই হবে, এ সংক্রান্ত হাদিসটি/ বর্ণনাটি কতটুকু নির্ভরযোগ্য?

তারিখ:  ১০/১২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল নোমান, কুয়েত থেকে


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম এবং কসাইয়ের ঘটনার কোন সনদ খুঁজে পাওয়া যায়নি, তাই মুহাদ্দিসে কেরাম এ বর্ণনাকে জাল তথা বানোয়াট-মিথ্যা বলেছেন। তবে ঘটনাটির শিক্ষা/সারমর্ম অন্য নস দ্বারা প্রমাণিত।


ঘটনাটি হলো এই -

طلب موسى عليه السلام يومًا من الباري تعالى أثناء مناجاته أن يُريَه جليسه بالجنة في هذه الدنيا، فأتاه جبرائيل على الحال وقال: يا موسى، جليسك هو القصَّاب الفلاني الساكن في المحلة الفلانية، ذهب موسى عليه السلام إلى دكَّان القصاب، فرآه شابًّا يشبه الحارس الليلي، وهو مشغول ببيع اللحم، بقي موسى عليه السلام مراقبًا لأعماله من قريب؛ ليرى عمله لعله يشخِّص ما يفعله ذلك القصاب، لكنه لم يشاهدْ شيئًا غريبًا، لما جن الليل أخذ القصاب مقدارًا من اللحم وذهب إلى منزله. ذهب موسى عليه السلام خلفه، وطلب موسى عليه السلام ضيافته الليلة بدون أن يعرِّف بنفسه، فاستقبله بصدر رحب، وأدخله البيت بأدب كامل، وبقي موسى يراقبه، فرأى عليه السلام أنَّ هذا الشاب قام بتهيئة الطعام، وأنزل زنبيلًا كان معلقًا في السقف، وأخرج منه عجوزًا كهلة، غسلها، وأبدل ملابسها، وأطعمها بيديه، وبعد أن أكمل إطعامها أعادها إلى مكانها الأول. فشاهد موسى أنَّ الأم تلفظ كلمات غير مفهومة، ثم أدَّى الشاب أصول الضيافة، وحضر الطعام، وبدؤوا بتناول الطعام معًا، سأل موسى عليه السلام مَن هذه العجوز؟ أجاب: هي أمي، أنا أقوم بخِدمتها، سأل عليه السلام: وماذا قالت أمك بلغتها؟ أجاب: كل وقت أخدمها تقول: غفَر الله لك، وجعلك جليسَ موسى يوم القيامة في قُبَّته ودرجته، فقال عليه السلام: يا شابُّ، أبشِّرك أن الله تعالى قد استجاب دعوة أمك، رجوتُه أن يريني جليسي في الجنة فكنتَ أنت المعرَّف، وراقبت أعمالك ولم أرَ منك سوى تجليلَك لأمك، واحترامك وإحسانك إليها، وهذا جزاء الإحسان واحترام الوالدين)).

الدرجة: ليس لها أصل، وهي من قصص الوُعَّاظ

অর্থাৎ একদা মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলার কাছে মুনাজাত করে বললেন, হে আল্লাহ! জান্নাতে আমার সঙ্গী কে হবে? দুনিয়াতেই তার সাথে আমার সাক্ষাৎ করিয়ে দিন।

তখন জিবরাঈল আসলেন। এসে বললেন, হে মুসা! ওমুক কসাই হবে তোমার জান্নাতের সঙ্গী। যে ওমুক এলাকায় বসবাস করে। একথা শুনে মুসা আলাইহিস সালাম উক্ত কসাইয়ের দোকানে গেলেন।

এক যুবক কসাইকে দেখলেন গোস্ত বিক্রিতে মগ্ন। মুসা আলাইহিস সালাম গভীর মনযোগ দিয়ে লোকটির কাজকর্ম লক্ষ্য করতে লাগলেন। কিন্তু এমন কোন বিশেষ আমল নজরে আসল না, যার বদৌলতে কসাইটি নবীর সাথে জান্নাতে প্রবেশের মর্যাদা লাভ করতে পারে।


যখন সন্ধ্যা নেমে এল। তখন কসাইটি গোস্তের একটি থলে নিয়ে বাড়ীর দিকে রওনা হল। মুসা আলাইহিস সালাম উক্ত কসাইয়ের পিছু নিলেন। নিজের পরিচয় গোপন করে তার বাড়ীর মেহমান হবার আবেদন করলেন। কসাই রাজী হল।


কসাই বাড়ীতে আসার পর খাবার তৈরী করল। তারপর ঝুলন্ত একটি ঝুড়ি নামাল। যাতে একটি বৃদ্ধা ছিল। বৃদ্ধাকে ভাল করে গোসল করাল। তারপর তাকে নিজ হাতে খানা খাওয়াল। খানা শেষ হলে বৃদ্ধাকে আবার আগের স্থানে রেখে দিল। মুসা আলাইহিস সালাম লক্ষ্য করলেন উক্ত বৃদ্ধা বিড় বিড় করে কি যেন বলছে। যা পরিস্কার বুঝা যাচ্ছিল না।


তারপর কসাই মুসা আলাইহিস সালামকে মেহমানদারী হিসেবে খানা পেশ করলেন। খানা শুরু করার আগেই মুসা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ বৃদ্ধা কে? কসাই জবাব দিল, আমার মা। আমি তার খিদমাত করি।

মুসা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার মা নিজের ভাষায় বিড় বিড় করে কী বলছে?

কসাই জবাব দিল, আমি যখনি মায়ের খিদমাত করি। তখন তিনি বলেন, “আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন, এবং তোমাকে জান্নাতে মুসা নবীর সঙ্গী বানান”।

মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, হে যুবক! আমি তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছি, আল্লাহ তাআলা তোমার মায়ের দুআ কবুল করেছেন। আমি আল্লাহর কাছে জান্নাতে আমার সঙ্গী কে হবে তা জানতে চেয়েছিলাম। তখন আল্লাহ তাআলা তোমার কথা বলেছেন। আমি তোমার পরিচয়ের জন্য তোমার পিছু নিয়েছিলাম। কিন্তু আমি তোমার মাঝে মায়ের খিদমাত ছাড়া কোন বিশেষ আমল খুঁজে পাইনি। এর মানে হল, মায়ের খিদমাতের পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ তাআলা তোমাকে জান্নাতে আমি মুসার সঙ্গী হবার নিয়ামত দান করেছেন।

নোট: এই হাদিসটির কোনো ভিত্তি নেই। বক্তাদের বানানো কিসসা। সূত্র : আরশিফু মুলতাকো আহলিল হাদিস -৪৮/৪


সারকথা হলো,  জান্নাতে হযরত মুসা (আঃ) এর সাথী একজন কসাই হবে, এ সংক্রান্ত হাদিসটি/ বর্ণনাটি বানোয়াট-মিথ্যা। তবে এর শিক্ষা (মায়ের দুআ কবুল হয়) অন্য নস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لاَ شَكَّ فِيهِنَّ: دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ الوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ.

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তিন প্রকারের দুআ সন্দেহাতীতভাবে কবুল হয়। মজলুমের দুআ। মুসাফিরের দুআ এবং সন্তানের জন্য জন্মদাতার দুআ। তাখরিজ: সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৯০৫, সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-১৫৩৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৬৯৯



  والله اعلم بالصواب