জিজ্ঞাসা-১২৮৭২:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম মুফতি সাহেব আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। মহান আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করুন এবং জাতির খেদমতে বিশেষ ভূমিকা পালন করার তৌফিক দান করুন। অতঃপর আপনার খেদমতে আরজ করছি والله بالله
ব্যতীত অন্য কারো নামে অথবা বস্তুর নামে অথবা কোরআন শরীফের নাম নিয়ে শপথ করা জায়েজ আছে কিনা? আর কেহ আল্লাহর নাম ব্যতীত অন্য ব্যক্তি বা বস্তু নামে শপথ করলে সেটা শিরিক হবে কিনা বা তার ঈমান থাকবে কিনা? দয়া করে জানাবেন ধন্যবাদ জাযাকাল্লাহ খায়ের ।
তারিখ: ২৩/১২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আনোয়ার হোসেন সিলেট থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, কসম বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো, ‘আল্লাহ’ নাম নিয়ে বা তাঁর গুণবাচক নাম নিয়ে কসম করা।
কসম একমাত্র আল্লাহ তাআলার নামেই করা যায়। আল্লাহ তাআলার নাম ব্যতীত অন্য কোনো জিনিসের কসম করা নাজায়েয। এমনকি কোরআন শরীফের কসম করাও জায়েয নয়। তবে নাজায়েয হলেও কোরআন মজীদের কসম করলে কসম সংঘটিত হয়ে যায়।
হাদিস নং -০১
عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَيْدَةَ قَالَ : سَمِعَ ابْنُ عُمَرَ رَجُلًا يَحْلِفُ : لَا وَالْكَعْبَةِ. فَقَالَ لَهُ ابْنُ عُمَرَ : إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ : مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ أَشْرَكَ
সা'দ ইবনু আবূ উবাইদাহ রহ. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাযি. এক ব্যক্তিকে এভাবে শপথ করতে শুনলেন, 'না! এ কা’বার শপথ।' তখন ইবন ওমর রাযি. তাকে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে শপথ করে সে শিরক করলো। তাখরিজ: আবু দাউদ ৩২৫১; তিরমিজি-১৩৫৩
হাদিস নং -০২
مَنْ حَلَفَ بِسُورَةٍ مِنَ الْقُرْآنِ لَقِيَ اللَّهَ بِعَدَدِ آيِهَا خَطَايَا
সাহাল ইবনে মিনজাব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,যে ব্যক্তি কোরআন শরিফের কোন একটি সূরার কসম করবে সে ঐ সূরার প্রত্যেকটি আয়াতের বদলায় একটি করে গুনাহ নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে। তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাদীস ১২৩৬০
প্রশ্ন: ক। এর হাদিসটির ব্যাখ্যা কী?
«مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ أَشْرَكَ»
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করল, সে শির্ক করল”।
উত্তর: ক।
وهذا للزَّجرِ والتَّغليظِ في النَّهيِ والامتِناع عنْ مثلِ هذا الحلِفِ، وليسَ هذا شِركًا محضًا؛ فالحلفُ بغيرِ اللهِ من الشِّركِ الأصغرِ كما هو مَذهبُ أهلِ السُّنة والجَماعةِ، وقدْ نَهَى عَنه الشرعُ؛ لأنَّه ذَريعةٌ إلى الشِّركِ الأكبرِ ووَسِيلةٌ للوُقوعِ فيهِ، بخلافِ مَن تعمَّد الحلفَ بغيرِ ذاتِ اللهِ، وكان حالفًا بما يُشرك به مِثلَ الحلفِ بالنَّصرانيةِ وغيرِها، فهذا كُفرٌ مَحضٌ.
অর্থাৎ, এই নির্দেশনাটি ভীতিপ্রদর্শনমূলক কঠোরতাজ্ঞাপক বিধান। এই ভীতিকর আবহ তৈরী করার উদ্দেশ্য হলো, যাতেকরে কেউ এহেন গর্হিত কাজের দিকে পা না বাড়ায়। তবে এটি পরিপূর্ণ মাত্রার শিরক নয়। সুতরাং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'তের মতানুসারে গাইরুল্লাহ বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করাটা হলো ক্ষুদ্রতম বা পরোক্ষ শিরকের অন্তর্ভুক্ত। তবে ইসলামী শরীয়াহ এজাতীয় কর্মে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কারণ এটা মানুষকে ক্রমেক্রমে বৃহত্তম বা প্রত্যক্ষ শিরকের দিকে নিয়ে যায়। এবং এক পর্যায়ে ব্যক্তিকে তাতে লিপ্ত করিয়েই ছাড়ে। তবে কেউ যদি স্বপ্রণোদিত হয়ে স্বজ্ঞানে বুঝে শুনে আল্লাহ ছাড়া অন্য এমন কোন বিষয়ের নামে শপথ করে, যে বিষয়টি আল্লাহর সাথে অংশিদারীত্বকে অপরিহার্য করে তোলে, উদাহরণস্বরূপ, যেমন কেউ নাসরানিয়্যাত বা খৃষ্টবাদের দোহাই দিয়ে কসম করলো, তাহলে সেটি সন্দেহাতীতভাবে কুফরি হবে। এহেন কর্ম সাধনে সুনিশ্চিতভাবে সে ঈমানহারা হয়ে পড়বে।
والشِّركُ الأصغرُ لا يُخرجُ مَن وقعَ فيهِ مِن مِلَّةِ الإسلام، ولكنَّه مِن أكبرُ الكبائرِ بَعدَ الشِّركِ الأكبرِ؛ ولذا قالَ عبدُ اللهِ بنُ مَسعودٍ رضيَ اللهُ عنه: (لأن أحلِفَ باللهِ كاذِبًا أحبُّ إليَّ مِن أن أحلِفَ بغيرِه صادِقًا)، وعلى هذا فمِن أحكامِ مَن وقعَ في الشِّركِ الأصغَرِ أن يُعاملَ معاملةَ المسلمينَ، ولا يُخلَّدَ في النارِ إنْ دخلَها كسائرِ مُرتكبي الكبائرِ عندَ أهل السنةِ والجماعةِ، خِلافًا للخوارجِ والمعتزلةِ.
অর্থাৎ লঘু বা পরোক্ষ শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি ইসলামের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যাবেনা। তবে তা বিলক্ষণ জঘন্যতম কবীরা গুনাহ।গুরুতরতা বিবেচনায় তার অবস্থান হলো, প্রত্যক্ষ শিরকের একবারেই সন্নিকটে, একদম তার পরবর্তী স্তরেই । এজন্যই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাযি.) বলেন, অন্যকারো নামে সত্য শপথ করার চাইতে আল্লাহর নামে মিথ্যা কসম খাওয়া আমার কাছে অধিকতর পছন্দনীয়। ( কারণ আল্লাহর নামে মিথ্যা কসম খেলে, তা নিছক কবীরা গুনাহ হবে। কিন্তু গাইরুল্লাহর নামে কসম খাওয়া তো সাক্ষাত শিরকের নামান্তর।) এই নীতিমালা অনুসারে, যে ব্যক্তি লঘু বা পরোক্ষ শিরকে লিপ্ত রয়েছে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে, তার সাথে মুসলমানদের ন্যায় আচরণ করা হবে। এবং অন্যান্য কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তিদের মতো তাকেও জাহান্নামের সাজা ভোগ করতে হবে। কিন্তু সে তাতে চিরস্থায়ী হবেনা। তবে মু'তাযিলা ও খাওয়ারেজ সম্প্রদায়ের এবিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে।তারা মনে করেন, কবীরা গুনাহে লিপ্ত অন্যান্য ব্যক্তিদের মতো তাকেও চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের সাজা ভোগ করে যেতে হবে। সূত্র: ফিকহুল আকিদাতুল ইসলামিয়া -২৯৬৭৯৭ (ফতোয়া নং)
সারকথা হলো, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করা জায়েয নেই। তবে কেউ যদি কখনও করে বসে, এ দ্বারা সে কাফের হয় না। গুনাহ হবে বটে।
والله اعلم بالصواب