জিজ্ঞাসা-১৩১১২: নামাজ না পড়ার কারণে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যাবে কি
জিজ্ঞাসা-১৩১১২:
আসসালামু আলাইকুম। কোন স্ত্রী যদি নামাজ না পড়ে, কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত না করে এ বিষয়ে ইসলামের বিধান কি।
তারিখ:৩১/১০/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা কামরুল ইসলাম কুমিল্লা থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, নামাজের গুরুত্ব সর্বাধিক। নামাজ স্বীকার করলে সর্বসম্মতিক্রমে সে কাফের আর অলসতাবসত ত্যাগ করলে সে ফাসেক। যেমন-
فتارك الصلاة إن كان قد تركها جحودا لفرضيتها فهو كافر بإجماع المسلمين، وفي هذه الحالة لا يجوز لزوجته البقاء معه لردته، فإن رجع إلى الإسلام وهي في عدتها منه عادت إليه بالنكاح الأول كما بينا بالفتوى رقم: 25611.
যে ব্যক্তি নামায পরিত্যাগ করে সে যদি এর ফরয অস্বীকার করে তা পরিত্যাগ করে, তবে সে মুসলিম ঐক্যমত অনুযায়ী কাফের এবং সেক্ষেত্রে তার স্ত্রীর ধর্মত্যাগের কারণে তার সাথে থাকা বৈধ নয়। যদি সে ইসলামের দিকে ফিরে আসে। ইদ্দত শেষে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।
وإن تركها تهاونا فقد اختلف الفقهاء في حكمه، فجمهورهم على أنه لا يخرج بذلك عن ملة الإسلام، وعلى قولهم لا حرج في بقاء زوجته معه، ولا تعتبر مطلقة بمجرد كونه تاركا للصلاة أو مرتكبا لمعصية أخرى غير مكفرة.
যদি তিনি সালাত অবহেলার কারণে ছেড়ে দেন, তবে ফকীহগণ তার রায় সম্পর্কে মতভেদ করেছেন যে, তিনি ইসলাম ধর্ম থেকে সরে যাবেন না, এবং তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, তার স্ত্রীর সাথে থাকাতে কোন দোষ নেই এবং সে হল। তাকে তালাক বলে গণ্য করা হয় না কারণ সে নামাজে অবহেলা করে বা অন্য কোন পাপ করে যা কুফরি নয়। সূত্র: ফিকহুল উসরাতুল মুসলিমা,আলহুকুকুল যাওজা-১৬৭৪৮৪ (ফতোয়া নং)
দ্বিতীয় কথা হলো, স্ত্রী অবাধ্য হলে মীমাংসার জন্য আসমানী ফর্মুলা হলো। দলিল-
ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا كَبِيرٗا ٣٤ [النساء: ٣٤]
আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, বিছানায় তাদেরকে ত্যাগ কর এবং তাদেরকে (মৃদু) প্রহার কর। এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান। [সূরা আন-নিসা: ৩৪]
তৃতীয় কথা হলো, উপরোক্ত পদ্ধতি ব্যর্থ হলে বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করা যাবে অর্থাৎ তালাক দেওয়া যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে নামাজের কারণে যদি স্বামী স্ত্রী পরস্পরে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেটা তারা সুন্নত মোতাবেক বিজ্ঞ মুফতি/আলেমদের পরামর্শে করতে পারে। তবে এটি সংশোধনের নিয়তে হতে হবে। নামাজের বাহানায় সংসার ভাঙ্গার ইচ্ছায় নয়।
সারকথা হলো, কোন স্ত্রী যদি নামাজ না পড়ে, এর বিধান উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। আর কোরআন তেলাওয়াত অনেক ফজিলতের কাজ। নামাজের প্রয়োজন মাফিক সূরা-কেরাত শুদ্ধ করা ফরজ। তবে তেলাওয়াত করা নফল। তাই কোন স্ত্রী যদি কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত না করে, এ কারণে তাকে তালাক দেওয়া যাবে না। অবশ্যই তেলাওয়াতের জন্য উৎসহ-প্রেষণা দিতে হবে।
والله اعلم بالصواب
দ্বীনি সচেতনতা-৪৬: গুনাহে পতিত হওয়ার কারণসমূহ*
*গুনাহে পতিত হওয়ার কারণসমূহ*
━━━━━━ • পর্ব - ০১ • ━━━━━━
গুনাহে নিপতিত করে এমন অনেক কারণ রয়েছে। যেগুলো সালাফ আলেমগণ তাদের রচনায় লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। উম্মাহকে সেগুলোর ব্যাপারে সচেতন করেছেন। এবং সেগুলো থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দিয়েছেন। নিচে পয়েন্ট আকারে প্রধান প্রধান কারণগুলো উল্লেখ করা হলো। যা পূর্ববর্তী আলেম ও দাঈদের বই পুস্তক ও রচনাবলী থেকে সংকলন করা হয়েছে।
০১। *প্রবৃত্তির অনুসরণ*
প্রবৃত্তির অনুসরণ বান্দাকে গুনাহ ও অবাধ্যতায় লিপ্ত করার সবচেয়ে বড় কারণের অন্যতম। নিজের খেয়ালখুশি মাফিক চলাকে প্রবৃত্তির অনুসরণ বলে।
*প্রবৃত্তির অনুসরণ নিষেধের ক্ষেত্রে আল্লাহর বাণী সমূহ...*
আল্লাহ তাআলার বাণী-
وَاصْبِرْ نَـفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدٰوةِ وَالْعَشِىِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهٗ وَلَا تَعْدُ عَيْنٰكَ عَنْهُمْ ۚ تُرِيْدُ زِيْنَةَ الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا ۚ وَ لَا تُطِعْ مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَهٗ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوٰٮهُ وَكَانَ اَمْرُهٗ فُرُطًا
আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না। (সূরা কাহফ, আয়াত ২৮)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
اَرَءَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰهَهٗ هَوٰٮهُ ؕ اَفَاَنْتَ تَكُوْنُ عَلَيْهِ وَكِيْلًا
আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তারা প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার জিম্মাদার-দায়িত্বশীল হবেন? (সূরা ফুরকান, আয়াত ৪৪)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরও বলেন-
فَاِنْ لَّمْ يَسْتَجِيْبُوْا لَكَ فَاعْلَمْ اَنَّمَا يَـتَّبِعُوْنَ اَهْوَآءَهُمْ ؕ وَمَنْ اَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوٰٮهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظّٰلِمِيْنَ
অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হিদায়াতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে? নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা জালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না। (সূরা কাসাস, আয়াত ৫০)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরও বলেন-
يٰدَاوٗدُ اِنَّا جَعَلْنٰكَ خَلِيْفَةً فِى الْاَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوٰى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌۢ بِمَا نَسُوْا يَوْمَ الْحِسَابِ
হে দাউদ, আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি। অতএব তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব করো এবং খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। কেননা, তারা হিসাব-দিবসকে ভুলে যায়। (সূরা ছোয়াদ, আয়াত ২৬)
এ প্রসঙ্গে কুরআনের অনেক আয়াত রয়েছে। বান্দার উচিত ও অবশ্য কর্তব্য হলো, এই সকল আয়াতগুলোকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা। যাতে করে নিজেদের খেয়াল খুশি তথা কু-প্রবৃত্তির অনুসরণের ভয়াবহতার ব্যাপারে এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করলে যেসব ধ্বংস, পথভ্রষ্টতা ও বিচ্যুতি হয়ে থাকে তা জানা যায়।
হাদীসের মাঝে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কু-প্রবৃত্তি হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন।
যেমন: হাদীসে এসেছে, যিয়াদ ইবনু ইলাক্বাহ (রহঃ) তাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআয় বলতেন-
اللهم إني أعوذ بك من منكرات الأخلاق والأعمال والأهواء والأدواء
হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে গর্হিত চরিত্র, গর্হিত কাজ ও কু-প্রবৃত্তি হতে আশ্রয় চাই।
এ ব্যাপারে আরও বিভিন্ন আছার বর্ণিত হয়েছে। আল্লামা ইবনুল জাওযী রহিমাহুল্লাহ যাম্মুল হাওয়া কিতাবে উল্লেখ করেছেন-
☞ মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: বাহাদুরি হলো শাহওয়াত পরিত্যাগ করা ও কু-প্রবৃত্তির অবাধ্য হওয়া।
☞ হযরত আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: কোন মানুষ যখন সকালে উপনীত হয় তখন তার প্রবৃত্তি ও আমল একত্রিত হয়। সুতরাং যদি তার আমল তার নফসের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তাহলে সেই দিন তার খারাপ, কিন্তু যদি অন্তরের কামনা-বাসনা তার আমলের অনুগামী হয় তাহলে সেই দিনটি হয় তার উত্তম দিন।
✦চলবে ইনশাআল্লাহ
জিজ্ঞাসা-১৩১১১: জানাযা নামাজের পর কবরস্থ করার আগে খাটিয়াকে তিন মঞ্জিল বা থামা হয় (এবং চল্লিশ কদম গণনা), এর কোন শরীর ভিত্তি আছে
জিজ্ঞাসা-১৩১১১:
আসসালামু আলাইকুম। হযরত মানুষ ইন্তেকালের পর কবরে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনটি মঞ্জিল দেওয়াটা কোরআন হাদীসের গ্রহণ যোগ্য একটু জানাবেন আমি ইন্ডিয়া থেকে বলসি শুকরিয়া
তারিখ:০২/১০/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনাব আফতাব উদ্দিন গাজী চব্বিশ পরগনা থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, জানাজা নামাজের পরে মৃত ব্যক্তির খাটিয়া বহন করার সময় তিন মঞ্জিল দেরি করার শরয়ি কোন ভিত্তি নেই। তবে করবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য মরদেহের খাট বহন করার সুন্নাহ/মুস্তাহাব পদ্ধতি হলো, চার ব্যক্তি খাটের চারটি পা ধরে খাট বহন করবে এবং খাট বহনে অংশগ্রহণকারীরা প্রত্যেকে কাঁধ পরিবর্তন করে খাটের চারটি পা কিছুক্ষণ কাঁধে নেবে।
দ্বিতীয় কথা হলো, জানাযা পর মাইয়াতের খাটকে বহনের সময় ৪০ কদম গণনা করা সরাসরি হাদিস বা নস দ্বারা প্রমাণিত নয়। এটি একটি কিয়াসি মাসআলা। কতক ফোকাহায়ে কেরাম কিছু হাদিস ও আসারে ওপর ভিত্তি করে এটি মুস্তাহাব বলেছেন।
দলিল-
হাদিস/আসার নং-০১
عن ثوبان عن النبى صلى الله عليه وسلم قال من تبع جنازة فاخذ بجوانب السرير الاربع غفرله اربعون ذنبا كلها كبيرةٌ
অর্থাৎ হযরত সাওবান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, প্রিয়নবী এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জানাযা অনুসরণ করবে ও ৪টি খাটিয়া বহন করবে, তার ৪০টি এমন গোনাহ্ মাফ করা হবে যা প্রত্যেকটি কবিরা গুনাহ্। অর্থাৎ ৪০টি কবিরা গুনাহ্ মাফ করে দেয়া হবে।
হাদিস/আসার নং-০২
قال عبد الله بن مسعود:
إذَا كَانَ أَحَدُكُمْ فِي جِنَازَةٍ فَلْيَحْمِلْ بِجَوَانِبِ السَّرِيرِ كُلِّهِ، فَإِنَّهُ مِنَ السُّنَّةِ، ثم لِيَتَطَوَّعَ، أَو لِيَدَعَ.
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- তোমাদের মধ্যে কেউ যখন জানাযার সাথে থাকে, সে যেন (ধারাবাহিকভাবে) খাটিয়ার চার দিক ধরে তা বহন করে। কারণ এটা সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত। তাখরিজ:মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা- ১১৩৯৭
হাদিস/আসার নং-০৩
ابن أبي شيبة وعبد الرزاق من طريق علي الأزدي قال :
رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ فِي جِنَازَةٍ حَمَلَ بِجَوَانِبِ السَّرِيرِ الْأَرْبَعِ.
অর্থাৎ তাবেয়ী আলী আলআযদী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে জানাযার খাটিয়া (ধারাবাহিকভাবে) চার দিক ধরে বহন করতে দেখেছি। তাখরিজ: মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক-৬৫২০
সারকথা হলো, মৃত ব্যক্তিকে গোরস্থানে নিয়ে যাওয়ার পথে এভাবে কাঁধ পরিবর্তন করার প্রয়োজনে যে কয়বার থামতে হয় থামবে। পৃথকভাবে তিনবার থামা সুন্নাহ বা সওয়াবের কাজ নয় এবং সুন্নত বা মুস্তাহাব মনে করাও যাবে না।
والله اعلم بالصواب
জিজ্ঞাসা-১৩১১০: জনৈক সাহাবী সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা দিয়ে পশু হাদিয়া নেওয়ার হাদিস শরিফের রেফারেন্স
জিজ্ঞাসা-১৩১১০:
আসসালামু আলাইকুম। হযরত আমার জানার বিষয় হলো, জনৈক সাহাবী সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা দিয়ে পশু হাদিয়া (অবশেষে) নিয়ে ছিলেন,পরে রাসুল সা কে জানিয়েছিলেন।এই হাদীস টির ইবারত সহ বাংলা অর্থ দরকার।
তারিখ:৩০/১০/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ আমিনুল ইসলাম, বগুড়া থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক হাদিসটি নিম্নরূপ:
5749 - حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ أَبِي بِشْرٍ، عَنْ أَبِي المُتَوَكِّلِ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، أَنَّ رَهْطًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انْطَلَقُوا فِي سَفْرَةٍ سَافَرُوهَا، حَتَّى نَزَلُوا بِحَيٍّ مِنْ أَحْيَاءِ العَرَبِ، فَاسْتَضَافُوهُمْ فَأَبَوْا أَنْ يُضَيِّفُوهُمْ، فَلُدِغَ سَيِّدُ ذَلِكَ الحَيِّ، فَسَعَوْا لَهُ بِكُلِّ شَيْءٍ لاَ يَنْفَعُهُ شَيْءٌ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: لَوْ أَتَيْتُمْ هَؤُلاَءِ الرَّهْطَ الَّذِينَ قَدْ نَزَلُوا بِكُمْ، لَعَلَّهُ أَنْ يَكُونَ عِنْدَ بَعْضِهِمْ شَيْءٌ، فَأَتَوْهُمْ فَقَالُوا: يَا أَيُّهَا الرَّهْطُ، إِنَّ سَيِّدَنَا لُدِغَ، فَسَعَيْنَا لَهُ بِكُلِّ شَيْءٍ لاَ يَنْفَعُهُ شَيْءٌ، فَهَلْ عِنْدَ أَحَدٍ [ص:134] مِنْكُمْ شَيْءٌ؟ فَقَالَ بَعْضُهُمْ: نَعَمْ، وَاللَّهِ إِنِّي لَرَاقٍ، وَلَكِنْ وَاللَّهِ لَقَدِ اسْتَضَفْنَاكُمْ فَلَمْ تُضَيِّفُونَا، فَمَا أَنَا بِرَاقٍ لَكُمْ حَتَّى تَجْعَلُوا لَنَا جُعْلًا، فَصَالَحُوهُمْ عَلَى قَطِيعٍ مِنَ الغَنَمِ، فَانْطَلَقَ فَجَعَلَ يَتْفُلُ وَيَقْرَأُ: الحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ العَالَمِينَ حَتَّى لَكَأَنَّمَا نُشِطَ مِنْ عِقَالٍ، فَانْطَلَقَ يَمْشِي مَا بِهِ قَلَبَةٌ، قَالَ: فَأَوْفَوْهُمْ جُعْلَهُمُ الَّذِي صَالَحُوهُمْ عَلَيْهِ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: اقْسِمُوا، فَقَالَ الَّذِي رَقَى: لاَ تَفْعَلُوا حَتَّى نَأْتِيَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَذْكُرَ لَهُ الَّذِي كَانَ، فَنَنْظُرَ مَا يَأْمُرُنَا، فَقَدِمُوا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرُوا لَهُ، فَقَالَ: «وَمَا يُدْرِيكَ أَنَّهَا رُقْيَةٌ؟ أَصَبْتُمْ، اقْسِمُوا وَاضْرِبُوا لِي مَعَكُمْ بِسَهْمٍ»
৫৩৩৮। মুসা ইবনে ইসমা‘ঈল (রাহঃ) ......... আবু সা‘ঈদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর একদল সাহাবী একবার এক সফরে গমন করেন। অবশেষে তারা আরবের গোত্রসমূহের মধ্যে এক গোত্রের নিকট এসে গোত্রের কাছে মেহমান হতে চান। কিন্তু সে গোত্র তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করে। ঘটনাক্রমে সে গোত্রের সর্দারকে সাপে দংশন করে। তারা তাকে সুস্থ করার জন্য সবরকম চেষ্টা করে, কিন্তু কোন ফল হয় না। তখন তাদের কেউ বললোঃ তোমরা যদি ঐ দলের কাছে যেতে যারা তোমাদের মাঝে এসেছিল। হয়তো তাদের কারও কাছে কোন তদবীর থাকতে পারে।
তখন তারা সে দলের কাছে এসে বলল হে দলের লোকেরা! আমাদের সর্দারকে সাপে দংশন করেছে। আমরা তার জন্য সবরকমের চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন ফল হয়নি। তোমাদের কারও নিকট কি কোন তদবীর আছে? একজন বললেন: হ্যাঁ। আল্লাহর কসম আমি ঝাড়ফুঁক জানি। তবে আল্লাহর কসম! আমরা তোমাদের নিকট মেহমান হতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমরা আমাদের মেহমানদারী করনি। তাই আমি ততক্ষণ পর্যন্ত ঝাড়-ফুঁক করবো না যতক্ষণ না তোমরা আমাদের জন্য মজুরী নির্ধারণ করবে।
তখন তারা তাদের একপাল বকরি দিতে সম্মত হল। তারপর সে সাহাবী সেখানে গেলেন এবং আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন (সূরা ফাতিহা) পড়ে ফুঁক দিতে থাকলেন। অবশেষে সে ব্যক্তি এমন সুস্থ হল যেন বন্ধন থেকে মুক্তি পেল। সে চলাফেরা করতে লাগলো, যেন তার কোন রোগই নেই। রাবী বলেনঃ তখন তারা যে মজুরী ঠিক করেছিল, তা পরিশোধ করল। এরপর সাহাবীদের মধ্যে একজন বললেনঃ এগুলো বন্টন করে দাও। এতে যিনি ঝাড়ফুঁক করেছিলেন তিনি বললেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকট যেয়ে যতক্ষণ না এসব ঘটনা ব্যক্ত করবো এবং তিনি আমাদের কি নির্দেশ দেন তা প্রত্যক্ষ করব, ততক্ষণ তোমরা তা বণ্টন করো না। তারপর তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকট এসে ঘটনা ব্যক্ত করলেন। তিনি বললেন: তুমি কি করে জানলে যে এর দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা যায়? তোমরা সঠিকই করেছ। তোমরা এগুলো বণ্টন করে নাও এবং সে সঙ্গে আমার জন্য এক ভাগ নির্ধারণ কর। তাখরিজ: বুখারি-৪৭৪৯
সারকথা হলো,
والله اعلم بالصواب
জিজ্ঞাসা-১৩১০৯: "আল্লাহ তাআলা প্রতিটি দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন যে, তিনি কি দায়িত্ব পালন করেছে, তিনি এটি সংরক্ষণ করেছে নাকি হারিয়েছে।" এই হাদসটির রেফারেন্স কি?
জিজ্ঞাসা-১৩১০৯:
আসসালামু আলাইকুম।
""আল্লাহ তাআলা প্রতিটি দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন যে, তিনি কি দায়িত্ব পালন করেছে, তিনি এটি সংরক্ষণ করেছে নাকি হারিয়েছে।" এই হাদসটির রেফারেন্স কি?
তারিখ:২৯/১০/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আখতার হোসেন রংপুর থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক হাদিস শরিফটি নিম্নরূপ:
قال رسول الله ﷺ:
"إنَّ اللهَ سائلٌ كلَّ راعٍ عمّا استَرعاهُ، حفِظَ أم ضيَّعَ، حتّى يسألَ الرَّجلَ عن أهلِ بيتِهِ"
[حديث صحيح]
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "আল্লাহ তাআলা প্রতিটি দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন যে, তিনি কি দায়িত্ব পালন করেছে, তিনি এটি সংরক্ষণ করেছে নাকি হারিয়েছে। এমনকি তিনি একজন পুরুষকে তার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন।" তাখরিজ: সহিহ ইবনে হিব্বান-৪৪৯৩
নোট: হাদিস শরিফটির সনদ সহিহ।
والله اعلم بالصواب
নির্বাচিত হাদিস-১৬: দাজ্জাল মারা যাওয়ার পরে পৃথিবীর অবস্থা কেমন হবে, কতদিন পরে পৃথিবী ধ্বংশ হবে!*
*দাজ্জাল মারা যাওয়ার পরে পৃথিবীর অবস্থা কেমন হবে, কতদিন পরে পৃথিবী ধ্বংশ হবে!*
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে দাজ্জালের আভির্ভাব হবে। সে চল্লিশ-আমি জানি না চল্লিশ দিবস, না মাস, না বছর-অবস্থান করবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম কে পাঠাবেন।
তাকে দেখতে উরওয়া ইবনে মাসউদের মত মনে হবে। তিনি দাজ্জাল-কে খোজ করবেন ও হত্যা করবেন। এরপর মানুষ সাত বছর এমনভাবে কাটাবে যে দুজন মানুষের মধ্যে কোন শত্রুতা থাকবে না ।
এরপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উত্তর দিক থেকে হিমেল বায়ু প্রেরণ করবেন । যাদের অন্তরে অনু পরিমাণ ঈমান রয়েছে তারা সকলে এতে মৃত্যু বরণ করবে। ঈমানদার ও ভাল মানুষের কেহ বেঁচে থাকবে না। যদি তোমাদের কেহ পাহাড়ের সুরক্ষিত গুহায় প্রবেশ করে তাকেও এ বাতাস পেয়ে বসবে ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আরো শুনেছি যে,
দুরাচারী মানুষগুলো অবশিষ্ট থাকবে পাখির মত দ্রুত আর বাঘের মত হিংস্র। তারা ভালকে ভাল হিসাবে জানবে না আর মন্দ-কে মন্দ মনে করবে না। শয়তান মানুষের আকৃতিতে তাদের কাছে এসে বলবে তোমরা ভাল কাজে সাড়া কেন দাও না? তারা বলবে তুমি আমাদের কী করতে বলো? সে তাদের মুর্তির উপাসনা করতে আদেশ করবে । তারা সুন্দর জীবনোপকরণ নিয়ে জীবন যাপন করবে। অতঃপর একদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে । (তখন সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে) এরপর একদিন প্রচন্ড বৃষ্টি বর্ষিত হবে। এ বৃষ্টির কারণে মানুষের দেহগুলো উদ্ভিদের মত উত্থিত হবে। এরপর আবার শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে তখন মানুষেরা দাড়িয়ে যাবে ও এদিক সেদিক তাকাতে থাকবে।
তারপর বলা হবে হে মানব সকল! তোমাদের প্রতিপালকের দিকে আসো। তোমরা দাড়িয়ে যাও, তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, জাহান্নামীদের বের করে আনো। জিজ্ঞাসা করা হবে কত জন থেকে কত জন বের করে আনবো? উত্তর দেয়া হবে, প্রত্যেক হাজার থেকে নয় শত নিরানব্বই জনকে বের করে নাও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেটিই এমন দিন যা শিশুদের বৃদ্ধ করে দেবে। আর এ দিনটিতে আল্লাহ তাআলা নিজ পায়ের গোছা উম্মুক্ত করবেন ।
( মুসলিম হাদীস নং ২২৫৮) ।।
জিজ্ঞাসা-১৩১০৮: নবজাতক শিশুর আকিকা করার সময় ওই বাচ্চাকে জবাইয়ের স্থানে উপস্থিত থাকা কি সুন্নত?
জিজ্ঞাসা-১৩১০৮:
আসসালামু আলাইকুম। নবজাতক শিশুর আকিকা করার সময় ওই বাচ্চাকে জবাইয়ের স্থানে উপস্থিত থাকা কি সুন্নত?
তারিখ:২৮/১০/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আকিকার হুকুম নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে ফিকহি হানাফির মতে মুস্তাহাব।
কিন্তু আকিকা পরশু জবাই করার সময় বাচ্চাকে উপস্থিত থাকতে হবে বা সুন্নাত। এরকম বিধান ইসলামের শরীয়তে নেই, কোন ইমামের মতামত নেই। বরং হাদীসে বাচ্চার পক্ষ থেকে আকিকা করার কথা বলা হয়েছে। দলিল-
হাদিস নং-০১
الْغُلاَمُ مُرْتَهَنٌ بِعَقِيقَتِهِ يُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ السَّابِعِ وَيُسَمَّى وَيُحْلَقُ رَأْسُهُ
রসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সাথে দায়বদ্ধ থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবেহ করতে হয়, তার মাথা কামাতে হয় এবং নাম রাখতে হয়। তিরমিযী ১৫২২
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ حَبِيبَةَ بِنْتِ مَيْسَرَةَ، عَنْ أُمِّ كُرْزٍ الْكَعْبِيَّةِ، قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ سَمِعْتُ أَحْمَدَ قَالَ مُكَافِئَتَانِ أَىْ مُسْتَوِيَتَانِ أَوْ مُقَارِبَتَانِ .
২৮২৫. মুসাদ্দাদ (রাহঃ) .... উম্মু কুরয্ কা‘বিয়া (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলূল্লাহ্ (ﷺ)কে এরূপ বলতে শুনেছি, ছেলের জন্য/পক্ষে দু‘টি একই ধরণের বকরী এবং মেয়ের পক্ষে/জন্য একটি বকরী দিয়ে আকীকা দেওয়া যথেষ্ট হবে।
আবু দাউদ (রাহঃ) বলেনঃ আমি ইমাম আহমদ (রাহঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘মুকাফিআতানে ’অর্থ হলোঃ দু‘টি এক ধরনের হবে অথবা সে দুটি একই বয়সের হবে।
Narrated Umm Kurz al-Ka’biyyah:
I heard the Messenger of Allah (ﷺ) say: Two resembling sheep are to be sacrificed for a boy and one for a girl.
AbuDawud said: I heard Ahmad (ibn Hanbal) say: The Arabic word mukafi’atani means equal (in age) or resembling each other.
—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮২৫ (আন্তর্জাতিক নং ২৮৩৪)
সারকথা হলো, নবজাতক শিশুর আকিকা করার সময় ওই বাচ্চাকে জবাইয়ের স্থানে উপস্থিত থাকা সুন্নত মনে করা বিদআত। সুতরাং এ ধরনের কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।
والله اعلم بالصواب
জিজ্ঞাসা-১৩১০৮: কোন বান্দাকে যদি আল্লাহ তাআলা জনগণের নেতৃত্ব প্রদান করেন, আর সে কল্যাণকামিতার সাথে তাদের তত্ত্বাবধান না করে, তাহলে সে বেহেশতের ঘ্রাণও পাবে না। এই হাদিস শরিফটির রেফারেন্স
জিজ্ঞাসা-১৩১০৮:
আসসালামু আলাইকুম। কোন বান্দাকে যদি আল্লাহ তাআলা জনগণের নেতৃত্ব প্রদান করেন, আর সে কল্যাণকামিতার সাথে তাদের তত্ত্বাবধান না করে, তাহলে সে বেহেশতের ঘ্রাণও পাবে না। এই হাদিস শরিফটির রেফারেন্স
তারিখ:২৮/১০/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আখতার হোসেন রংপুর থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক হাদিসটি নিম্নরূপ:
7150 - حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا أَبُو الأَشْهَبِ، عَنِ الحَسَنِ، أَنَّ عُبَيْدَ اللَّهِ بْنَ زِيَادٍ، عَادَ مَعْقِلَ بْنَ يَسَارٍ فِي مَرَضِهِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ، فَقَالَ لَهُ مَعْقِلٌ إِنِّي مُحَدِّثُكَ حَدِيثًا سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا مِنْ عَبْدٍ اسْتَرْعَاهُ اللَّهُ رَعِيَّةً، فَلَمْ يَحُطْهَا بِنَصِيحَةٍ، إِلَّا لَمْ يَجِدْ رَائِحَةَ الجَنَّةِ»
৬৬৬৫। আবু নুআয়ম (রাহঃ) ......... হাসান বসরী (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ (রাহঃ) মা'কিল ইবনে ইয়াসারের (রাযিঃ) মৃত্যুশয্যায় তাকে দেখতে গেলেন। তখন মাকিল (রাযিঃ) তাকে বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করছি, যা আমি নবী (ﷺ) থেকে শুনেছি। আমি নবী (ﷺ) থেকে শুনেছি যে, কোন বান্দাকে যদি আল্লাহ তাআলা জনগণের নেতৃত্ব প্রদান করেন, আর সে কল্যাণকামিতার সাথে তাদের তত্ত্বাবধান না করে, তাহলে সে বেহেশতের ঘ্রাণও পাবে না।
Narrated Ma’qil:
I heard the Prophet (ﷺ) saying, "Any man whom Allah has given the authority of ruling some people and he does not look after them in an honest manner, will never feel even the smell of Paradise."
—সহীহ বুখারী,আন্তর্জাতিক নং ৭১৫০, মুসলিম -৭১২
والله اعلم بالصواب
আমল ও দুআ-৫৫: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সারা জীবনের সব দুআ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সারা জীবনের সব দুআ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حَاتِمٍ الْمُؤَدِّبُ، حَدَّثَنَا عَمَّارُ بْنُ مُحَمَّدٍ ابْنُ أُخْتِ، سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ بْنُ أَبِي سُلَيْمٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَابِطٍ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، قَالَ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِدُعَاءٍ كَثِيرٍ لَمْ نَحْفَظْ مِنْهُ شَيْئًا قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ دَعَوْتَ بِدُعَاءٍ كَثِيرٍ لَمْ نَحْفَظْ مِنْهُ شَيْئًا . فَقَالَ " أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَجْمَعُ ذَلِكَ كُلَّهُ تَقُولُ اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا اسْتَعَاذَ بِكَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ وَأَنْتَ الْمُسْتَعَانُ وَعَلَيْكَ الْبَلاَغُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ .
. মুহাম্মাদ ইবনে হাতিম মুআদ্দিব (রাহঃ) ..... আবু উমামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এত বেশী দুআ করলেন যে, আমরা এর কিছু স্মরণ রাখতে পারলাম না। আমরা বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনিতো অনেক দুআ করেছেন কিন্তু আমরা তো তার কিছুই স্মরণ রাখতে পারলাম না। তিনি বললেনঃ এক দুআ তোমাদের বলব কি যা এই সবকিছু সমন্বিত করে নিবে? বলবেঃ
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا اسْتَعَاذَ بِكَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ وَأَنْتَ الْمُسْتَعَانُ وَعَلَيْكَ الْبَلاَغُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে সেই সব কল্যাণ প্রার্থনা করি, যে সব কল্যাণের প্রার্থনা তোমার কাছে তোমার নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) করেছেন। আর সে সব অনিষ্ঠ থেকে পানাহ চাই, যেসব অকল্যাণ থেকে তোমার নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) পানাহ চেয়েছেন। তুমিই তিনি যার কাছে সাহায্য পাওয়া যায়। তোমারই উপর নির্ভর যথেষ্ট। কোন ক্ষমতা নেই, কোন শক্তি নেই আল্লাহ ছাড়া। তাখরিজ: তিরমিজি-৩৫২১
নোট: আবু ঈসা রহ. (ইমাম তিরমিজি) বলেন হাদীসটি হাসান-গরীব।
অল্প কথায় কত ব্যাপক ও আবেদনপূর্ণ প্রার্থনা। কত কিছুই না এতে আছে। যেমন- ১. এই বিশ্বাস যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ওয়াসাল্লামের প্রার্থনা নিঃসন্দেহে কল্যাণের প্রার্থনা। অকল্যাণের প্রার্থনা তিনি কখনও করেননি। ২. সুউচ্চ মর্যাদাশালী ও সৃষ্টির মাঝে অতুলনীয় হওয়া সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ওয়াসাল্লাম ছিলেন আল্লাহর মুখাপেক্ষী। নিজ প্রয়োজনসমূহ আল্লাহর দরবারে পেশ করেছেন। ৩. দু‘আ ও প্রার্থনার ক্ষেত্রেও ইত্তেবায়ে সুন্নত কাম্য। আর এতে দু‘আর সাথে ইত্তেবায়ে সুন্নতের ছওয়াবও পাওয়া যাবে। ৪. নবীর জন্য উৎসর্গিতপ্রাণ হওয়ার এ-ই তো সত্যিকারের প্রকাশ - তাঁর চাওয়া-পাওয়াই আমার চাওয়া-পাওয়া।
জিজ্ঞাসা-১৩১০৭: সেই ব্যক্তির সালাতের দিকে আল্লাহ তায়ালা ফিরেও তাকাবেননা------। এই হাদিস শরিফটির রেফারেন্স
জিজ্ঞাসা-১৩১০৭:
আসসালামু আলাইকুম। যে ব্যক্তি সালাত আদায়কালে দেহের সাথে মনের সংযোগ ঘটিয়ে পরিপূর্ণ একাগ্রতা বজায় রেখে সালাত আদায় করেনা, সেই ব্যক্তির সালাতের দিকে আল্লাহ তায়ালা ফিরেও তাকাবেননা। এ হাদীসের রেফারেন্স ও সহি কিনা একটু জানাবেন, ভালো থাকবেন সবসময় এই দুআ অবিরত।আরসিও আখতারুজ্জামান ৩০ইবি রং পুর
তারিখ:২৭/১০/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আখতার হোসেন রংপুর থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক হাদিসটি নিম্নরূপ:
/ أ- (وقال لا ينظر الله إلى صلاة لا يحضر) بضم المثناة التحتية وكسر ثالثة (الرجل فيها قلبه مع بدنه).
قال العراقي: لم أجده بهذا اللفظ وروى محمد بن نصر في كتاب الصلاة من رواية عثمان بن أبي دهرس مرسلاً لا يقبل الله من عبده عملاً حتى يشهد قلبه مع بدنه ورواه أبو منصور الديلمي في مسند الفردوس من حديث أبي بن كعب وإسناده ضعيف.
قال ابن السبكي: (6/ 294) حديث: لا ينظر الله إلى صلاة لا يحضر الرجل فيها قلبه من بدنه لم أجد له إسناداً
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি সালাত আদায়কালে দেহের সাথে মনের সংযোগ ঘটিয়ে পরিপূর্ণ একাগ্রতা বজায় রেখে সালাত আদায় করেনা, সেই ব্যক্তির সালাতের দিকে আল্লাহ তায়ালা ফিরেও তাকাবেননা। তাখরিজ: ইয়াহউল উলূমুদ্দীন-১/৩৭৫
সনদের মান:
আল্লামা ইরাকী ( রাহি.) বলেন, হুবহু এই শব্দে আমি হাদীসের কোন বর্ণনা পাইনি। তবে মুহাম্মাদ বিন নাসর সালাত অধ্যায়ে উসমান বিন আবি দাহরাস সূত্রে মুরসাল হাদীস (সাহাবা রাবীর নাম অনুল্লখেপূর্বক বর্ণনা) আকারে বর্ণনা করেন, " বান্দা নিজ দেহের সাথে মনোসংযোগ না ঘটিয়ে কোন ইবাদত পালন করলে আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করেননা।
আবূ মানসুর দায়লামী ( রাহি.)ও 'মুসনাদুল ফিরদাউস'-এ উবাই বিন কা'ব ( রাযি.) সূত্রে এই হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে এই সনদটি দূর্বল।
আল্লামা ইবনুস সাবকী (রাহি.) বলেন, (২৯৪/৬) "যে ব্যক্তি সালাত আদায়কালে দেহের সাথে মনের সংযোগ ঘটিয়ে পরিপূর্ণ একাগ্রতা বজায় রেখে সালাত আদায় করেনা, সেই ব্যক্তির সালাতের দিকে আল্লাহ তায়ালা ফিরেও তাকাবেননা" - "এই হাদীসটির কোন সনদ (বর্ণনাকারীর ধারাপরম্পরা) আমি পাইনি।"
والله اعلم بالصواب
নসিহা-১৬: যেসব আমল দ্বীনের ওপর চলা সহজ করে -হযরত থানভি রহ._
*যেসব আমল দ্বীনের ওপর চলা সহজ করে..._*
আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.)
যত ইবাদত আছে সবই উপকারী এবং যত পাপকাজ আছে সবই ক্ষতিকর। তার পরও মৌলিক কিছু আমল আছে, যেগুলো করা বা পরিহার করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সেগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হলে অন্যান্য আমল সংরক্ষণ ও বিশুদ্ধকরণ সহজ হয়ে যায়। নিম্নে এমন কিছু আমলের আলোচনা তুলে ধরা হলো—
1. *ধর্মীয় জ্ঞানার্জন* : ইলামে দ্বিন বা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা।
হোক সেটা কিতাব পড়ে বা আলেমদের সান্নিধ্যে থেকে। বরং কিতাব পড়ে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করার পরও আলেমদের সান্নিধ্যে থাকা জরুরি।
2. *আলেমদের সান্নিধ্য* : আলেম দ্বারা এমন আলেম উদ্দেশ্য যারা জ্ঞান অনুযায়ী আমল করে। যাদের মধ্যে শরিয়ত ও হাকিকতের সমন্বয় ঘটেছে।
সুন্নতের ওপর সুদৃঢ়, মধ্যপন্থী এবং অতিরঞ্জন ও অতিশৈথিল্য থেকে দূরে থাকে। আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি স্নেহপরায়ণ। যাদের মধ্যে হঠকারিতা ও গোঁয়ার্তুমি নেই। এককথায় যাদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিম্নোক্ত বাণীর প্রতিফলন দেখা যায়—‘আমার উম্মতের একটি দল সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হবে।
যারা তাদের পরিত্যাগ করবে তারা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৩১১)
3. *নামাজ* : যেকোনো পরিস্থিতিতে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। যতদূর সম্ভব জামাআতের সঙ্গে পড়ার চেষ্টা করবে। অপারগ হলে যেভাবে সম্ভব সেভাবে নামাজ পড়ে নেবে। এতে আল্লাহর দরবারের সঙ্গে একটি সম্পর্ক ও যোগসূত্র প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
নামাজের বরকতে ইনশাআল্লাহ নামাজির দোষ-ত্রুটি সংশোধিত হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ যাবতীয় অশ্লীল ও অসত্কর্ম থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)
4. *কম কথা বলা* : মানুষের সঙ্গে কম কথা বলা ও কম মেলামেশা করা। যা কিছু বলার চিন্তা-ভাবনা করে বলা। শত-সহস্র বিপদ থেকে নিরাপদ থাকার একটি উত্তম উপায় এটি।
5. *মুরাকাবা ও মুহাসাবা* : বেশির ভাগ সময় এ খেয়াল রাখা যে আমি আমার মালিকের সামনে অবস্থান করছি। আমার সব কথা, কাজ ও অবস্থা তিনি দেখছেন। এটি হলো মুরাকাবা। আর মুহাসাবা হলো কোনো একটি সময়—যেমন ঘুমানোর আগে একাকী বসে সারা দিনের কাজের কথা স্মরণ করে এরূপ ধারণা করবে যে এখন আমার হিসাব হচ্ছে, কিন্তু আমি উত্তর দিতে পারছি না।
6. *তাওবা ও ইস্তিগফার* : যখনই কোনো ভুল হয়ে যাবে বিলম্ব না করে, কোনো জিনিসের অপেক্ষা না করে নির্জন স্থানে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে খুব মাফ চাওয়া। কান্না এলে কান্না করা। তা না হলে কান্নার ভান করা। এই সহজ বিষয়গুলোর প্রতি যত্নশীল হলে আল্লাহর দরবারে আশা করা যায় যে তিনি অন্যান্য আমল সহজ করে দেবেন।
জিজ্ঞাসা-১২৩২৮: শুধু আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা কি বিদআত?
জিজ্ঞাসা-১২৩২৮
আসসালামু আলাইকুম। মুহতারাম, আশা করি ভালো আছেন। আমার জানার বিষয় হল শুধু আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা কি বিদআত?
দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম। তারিখ: ০৩/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আখতার হোসেন লালমনিহাট থেকে-----
জবাব:
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
হামদ-সানা ও দরুদের পর প্রথম কথা হলো, শুধু আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা যাবে কিনা এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। সম্মানিত চার ইমাম এবং অধ্যাবদি তাদের অনুসারি লক্ষ লক্ষ ওলামা-ফোকাহা, ওলামায়ে মোতাকাদ্দিমিন-মুখায়াখ্খিরিন কেহই শুধু আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা বিদআত বলিনি। অপরপক্ষে ইবনে তাইমিয়া রহ., নিকটতম যুগের তার অনুসারি শায়েখ আলবানি রহ. , শায়েখ উসায়মিন রহ. এবং বর্তমানে তাদের অনুসারীরা (আহলে হাদিসরা) এটাকে বিদআত বলে।
দ্বিতীয় কথা হলো, বিদআত বলা হয়, যার অস্তিত্ব কুরআন-সুন্নাহ ও খয়রুন করুনে পাওয়া যায় না্। সুতরাং যার অস্তিত্ব কুরআনে-সুন্নাহয় পাওয়া যায়, তা কখনও বিদআত হতে পারে না। দলিল:
আয়াত নং-০১
قُلِ ادۡعُوا اللّٰہَ اَوِ ادۡعُوا الرَّحۡمٰنَ ؕ اَیًّا مَّا تَدۡعُوۡا فَلَہُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی ۚ وَلَا تَجۡہَرۡ بِصَلَاتِکَ وَلَا تُخَافِتۡ بِہَا وَابۡتَغِ بَیۡنَ ذٰلِکَ سَبِیۡلًا
অর্থঃ বলে দাও, তোমরা আল্লাহকে ডাক বা রহমানকে ডাক, যে নামেই তোমরা (আল্লাহকে) ডাক, (একই কথা। কেননা) সমস্ত সুন্দর নাম তো তাঁরই। তুমি নিজের নামায বেশি উঁচু স্বরে পড়বে না এবং অতি নিচু স্বরেও নয়; বরং উভয়ের মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বন করবে। সূরা ইসরা-১১০
তাফসির: এ আয়াত সম্পর্কে আল্লামা ইবনে কাসির রহ. বলেন,
يَقُول تَعَالَى قُلْ يَا مُحَمَّد لِهَؤُلَاءِ الْمُشْرِكِينَ الْمُنْكِرِينَ صِفَة الرَّحْمَة لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ الْمَانِعِينَ مِنْ تَسْمِيَته بِالرَّحْمَنِ " اُدْعُوا اللَّه أَوْ اُدْعُوا الرَّحْمَن أَيًّا مَا تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى " أَيْ لَا فَرْق بَيْن دُعَائِكُمْ لَهُ بِاسْمِ اللَّه أَوْ بِاسْمِ الرَّحْمَن فَإِنَّهُ ذُو الْأَسْمَاء الْحُسْنَى كَمَا قَالَ تَعَالَى " َ
তাফসীর: আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুহাম্মাদ ! আপনি ঐ সকল মুশরিকদেরকে বলে দির যারা আল্লাহর রহমান নামকে অস্বীকার করে।
তোমরা চাও আল্লাহ বলে ডাক কিংবা রহমান বরে ডাক এই দুই নামে কোন পার্থক্য নেই। অতত্রব যেই নামে ডাক ডাকিতে পার। তাফসীরে ইবনে কাসির-৬খন্ড,৩৯২ পৃষ্ঠা, অধ্যাপক মাওলানা আখতার ফারুক অনূদিত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আয়াত নং-০২
فَذَكِّرْ إِنْ نَفَعَتِ الذِّكْرَى (9) سَيَذَّكَّرُ مَنْ يَخْشَى
অনুবাদ অনুবাদ সফলকাম তারাই যারা আত্মশুদ্ধি অর্জন করবে,আল্লাহর নামে যিকির করবে,এবং নামাজ আদায় করবে। সূরা আলা-৯-১০
তাফসির: এখানে আল্লাহ তায়ালা কিন্তু وذكر ربك বলেননি,বরং বলেছেন৷ وذكر اسم ربك এর দ্বারা এই দিকে ইশারা যে এখানে আল্লাহ শব্দ বলে যিকির করাও উদ্দেশ্য। সূত্র: মাআরিফুল কুরআন ৮ খণ্ড; ৫৮৪পৃ.
আয়াত নং-০৩
وَاذْكُرْ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ إِلَيْهِ تَبْتِيلاً (8) رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ لا إِلَهَ إِلاَّ هُوَ فَاتَّخِذْهُ وَكِيلاً (9)
অর্থ: কিন্তু (দিন হোক বা রাত) সবসময়ই তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করো এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি নিবেদিত থাকো। সূরা মুযাজ্জিম্মিল-০৮
তাফসির:
واذكر -أيها النبي- اسم ربك, فادعه به, وانقطع إليه انقطاعًا تامًا في عبادتك, وتوكل عليه. هو مالك المشرق والمغرب لا معبود بحق إلا هو, فاعتمد عليه, وفوِّض أمورك إليه.
التفسير الميسر الصفحة رقم 574 من القرآن الكريم
অর্থ: হে নবি আপনার রবের নামে জিকির করুন। অর্থাৎ আল্লাহ দ্বারা/বলে ডাক। সূত্র: তাফসিরে মায়সির-৫৭৪ পৃষ্ঠা
হাদিস নং-০১
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: "لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ: اللهُ، اللهُ".
صحيح مسلم (1/ 131) (148)، إكمال المعلم (1/459)، شرح النووي على مسلم (2/178)، تحفة الأحوذي (6/ 375)، البحر المحيط الثجاج (4/163).
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামত তখনই সংঘটিত হবে, যখন জমিনের মধ্যে ’আল্লাহ’ ’আল্লাহ’ বলার মতো কেউ থাকবে না। অপর এক বর্ণনায় আছে- এমন কোন লোকের ওপরে কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যে ’আল্লাহ’ ’আল্লাহ’ বলেছে। তাখরিজ: মুসলিম-১৪৮; ইকমালুল মলিম-১/৪৫৯
ব্যাখ্যা: এ হাদিসটির দুটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, প্রথমত একদল আলেম বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, لا تقوم الساعة حتى لا يقال لا إله إلا الله অর্থাৎ কিয়ামত হবে না লা ইলাহা বলার মত কেউ থাকা পর্যন্ত অর্থাৎ একজন ঈমানদার থাকা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না।
দ্বিতীয়ত আরেকদল মুহাদ্দিসগণ বলেন, এর উদ্দেশ্য হলো লফজি জিকির। দলিল:
ব্যাখ্যা নং-০১
الله الله فيها ذكر للتاكيد و قيل في تكرره عبارة تكثير
অর্থাৎ এখানে আল্লাহ আল্লাহ দ্বারা জিকিরে তাকিদ বুঝানো হয়েছে। এবং কেহ কেহ বলেন, এখানে আল্লাহ শব্দের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে অধিক এর কারণে অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার নামের জিকিরের কারণে। মিশকাতুল মাসাবিহ-৪০ পৃ. ১০ নং হাশিয়া
ব্যাখ্যা নং-০২
أخبر الرسول صلى الله عليه وسلم أن الساعة لن تقوم حتى لا يكون في الأرض من يذكر اسم الله و يعبده،
অর্থাৎ আল্লাহর নামের জিকির ও ইবাদত করনেওয়ালা থাকা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। সূত্র: মাওসুআতুল আহাদিসুল নবুওয়া
ব্যাখ্যা নং-০৩
ومعنى الحديث –كما هو جلي- أنه لا يبقى على الأرض من يذكر الله. ويوضح ذلك ما جاء في صحيح مسلم من حديث النواس بن سمعان الطويل في ذكر الدجال وعلامات الساعة وفيه:... فبينما هم كذلك إذ بعث الله ريحا طيبة فتأخذهم تحت آباطهم فتقبض روح كل مؤمن وكل مسلم، ويبقى شرار الناس يتهارجون فيها تهارج الحمر فعليهم تقوم الساعة. رقم الفتوى: 137365
অর্থাৎ একজন আল্লাহ আল্লাহ মুখে বললেওয়ালা থাকা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। সূত্র: aluah.net ফাতওয়া নং-১৩৭৩৬৫
ব্যাখ্যা নং-০৪
الحديث فيه فضل الله تعالى على المؤمنين حيث أكرمهم بقبض أرواحهم بريح اليمن، وعدم قيام الساعة عليهم؛ لأنها تقوم على شرار الخلق الذين لا يقولون الله الله. مستلة من إبهاج المسلم بشرح صحيح مسلم (كتاب الإيمان(
অর্থাৎ খারাপ লোক/নিকৃষ্ট সৃষ্টির উপর কিয়ামত সংঘটিত হবে, যারা বলবে না আল্লাহ আল্লাহ। সূত্র: ইবহাজুল মুসলিম বিশারহি সহিহ মসলিম, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়
ব্যাখ্যা: নং-০৫
يقول النووي رحمه الله في "شرح مسلم" (2/178) :
" ( يقول الله الله ) : هو برفع اسم الله تعالى ، وقد يغلط فيه بعض الناس فلا يرفعه " انتهى
ويقول الطيبي كما في "تحفة الأحوذي" (6/375) :
" معنى ( حتى لا يقال ) حتى لا يذكر اسم الله ولا يعبد "
অর্থাৎ কেহই আল্লাহর নাম নিবে না এবং ইবাদত করবে না। সূত্র: শারহুল মুসলিম-২/১৭৮ ইমাম নববি রহ.
হাদিস নং-০২
عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ عُمَيْسٍ رضي الله عنها، قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا أُعَلِّمُكِ كَلِمَاتٍ تَقُولِينَهُنَّ عِنْدَ الْكَرْبِ أَوْ فِي الْكَرْبِ؟ أَللَّهُ أَللَّهُ رَبِّي لَا أُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا».
আসমা বিনতে উমাইসের সূত্রে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারেন, তিনি বলেন: আল্লাহর রসূল, আল্লাহর দোয়া ও সালাম, আমাকে বলেছেন: "আপনি আমার সম্পর্কে যা জানেন তা কি আমি আপনাকে শেখাব না? আল্লাহ, আল্লাহ, আমার প্রভু, আমি তার সাথে কাউকে শরীক করি না। তাকরিজ: আবু দাউদ-১৫২৫; আল-নাসাঈ আল-সুনান আল-কুবরা-১০৪০৮; ইবনে মাজাহ-৩৮৮২; আহমদ-২৭০৮২
ব্যাখ্যা: التي علَّمها النبيُّ ﷺ أن تقول: الله ربي تكررت لفظة الجلالة مرتين، الله، الله ربي، فلفظ الجلالة (الله) الأول مُبتدأ، والثاني تأكيدٌ لفظي له.
وهذا التَّكرار للفظ الجلالة فيه إشارة إلى عِظم هذا الاسم الكريم، وما تضمّنه من صفة الإلهية، وكذلك أيضًا الاستلذاذ بذكره -تبارك وتعالى-، واستحضار لعظمته، والتَّأكيد لوحدانيَّته، فهذا الاسم عرفنا في الكلام
এগুলি বলুন , এবং এগুলি এমন শব্দ যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শিখিয়েছিলেন: আল্লাহ আমার প্রভু। আল্লাহ শব্দটি দুবার পুনরাবৃত্তি হয়। আল্লাহ, আল্লাহ আমার প্রভু ।
"আল্লাহ তাআলার মহামান্বিত" শব্দটির এই পুনরাবৃত্তিটি এই মহৎ নামের মহত্ত্বের একটি ইঙ্গিত, এবং এতে যে স্বর্গীয় গুণ রয়েছে, সেইসাথে তাঁকে - ধন্য ও সর্বশক্তিমান - এবং তাঁর মহত্ত্বকে আহ্বান করা এবং তাঁর একত্বের উপর জোর দেওয়া আনন্দ। তিনি তাকে মৌখিকভাবে উল্লেখ করেন। সূত্র: -শারহুল কিতাব মাআনিল আজকার হিসনুল মুসলিম-২১৬
সারকথা হলো, শুধু আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা যাবে এমন একটি নসও নেই নিষেধাজ্ঞার কোন দলিল নেই। আর পবিত্র কুরআন সুন্নাহর সরাসরি নস থাকতে, এটাকে বিদআত বলা ঠিক হবে না। একই আয়াত/হাদিসের একাধিক ব্যাখ্যা থাকলে (যা সবই সঠিক) উম্মত যে একটি আমল করতে পারে, আমলকারীকে বিদআত বলার অবকাশ নেই।
দেখুন, একজন আল্লাহ বলনেওয়ালা থাকতে কিয়ামত হবে না-- এটা দ্বারা ঈমান মাকসাদ একমাত্র ব্যাখ্যা নয়, আমি উপরে উল্লেখ করেছি যে মুহাদ্দিসদের এক জামাত এ দ্বারা লফজি জিকির উদ্দেশ্য নিয়েছেন।
বড় আফসোসের বিষয় হলো, কিছু ভাইয়েরা যে, এ আমলের বিষয়ে খয়রুন কুরুনের উপামা দিচ্ছেন। কিন্তু নিজের মতের বিরুদ্ধে গেলে তখন বলে হাদিস থাকতে সাহাবির আমল মানা যাবে না। যেমন ২০ রাকাত তারাবির, জামাত শুরু হলে ফজরের সুন্নাত ইত্যাদি বিষয়ে পল্টি দেয়। তখন এই উসূল মনে থাকে না। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ছহিহ পথে চলার তাওফিক দান করুন।
والله اعلم بالصواب