জিজ্ঞাসা-১২৩২৪
আসসালামু আলাইকুম
একটি মাসআলা জানতে চাই,
আপন খালাতো ভাইবোন বিয়ে হওয়ার ২০ বছর হলো। তাদের চার সন্তান আছে। এখন ছেলেটি জানতে পেরেছে, তিনি তার নানির দুধ পান করেছে। মেয়েটি পান করে নি। তাদের বিয়ে কি বৈধ হয়েছে? অর্থাৎ তারা একে অপরের মাহরাম? তারিখ: ৩১/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা হাদিউজ্জামান ঢাকা থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, রিদাআতের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, দুধ পান করানো। শরয়ী পরিভাষায় ‘রিদাআত’ বলা হয়, নির্ধারিত সময়ে, মা ভিন্ন অন্য কোনো মহিলার দুধ পান করা। সূত: আত তারিফাত লিজ জুরজানী-১১১
দুধ পান করার কারণে নিজ মায়ের মত হুরমত ও বংশীয় সম্পর্ক কায়েম হয়। দলিল:
Surah An-Nisa, Verse 23:
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ
অর্থ: তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন। সূরা নিসা-২৩
হাদিস নং-০১
٢٦٤٥ -حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنْ جَابِرِ بْنِ زَيْدٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بِنْتِ حَمْزَةَ: «لاَ تَحِلُّ لِي، يَحْرُمُ مِنَ الرَّضَاعِ مَا يَحْرُمُ مِنَ النَّسَبِ، هِيَ بِنْتُ أَخِي مِنَ الرَّضَاعَةِ –
ইবনে আব্বাস (রা.) হযরত হামজা (রা.) এর কন্যাকে বিবাহের বিষয়ে রাসূল (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তাকে বিবাহ করা তোমার জন্য বৈধ না। কেননা দুধ পান করার দ্বারা যেমন বিবাহ হারাম হয়, তেমনি বংশের কারণেও হারাম হয়, আর হামজা (রা.) এর কন্যা তোমার দুধবোন। তাখরিজ: বুখারি-২৬৪৫
তবে দুধ পানের বয়স ও কতুটুকু পান করলে হুরমত সাবস্ত্য হবে এ বিয়সে ফুকাহায়ে কিরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: ক। শিশুকে কত বছর মধ্যে দুধ পান করালে হুরমত সাবস্ত্য হবে?
উত্তর: ক। এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে-
عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا رَضَاعَ بَعْدَ فِصَالٍ
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, দুধ ছাড়ানোর [সময়সীমা শেষ হবার] পর আর দুগ্ধপান [সম্পর্কিত হুরমতের বিধান] নেই। তাখরিজ: মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালিছী-১৮৭৬
وفى رد المحتار-( ولم يبح الإرضاع بعد مدته ) لأنه جزء آدمي والانتفاع به لغير ضرورة حرام على الصحيح (الدر المختار مع رد المحتار-كتاب النكاح، باب الرضاع-4/397
অর্থাৎ অর্থাৎ এ সময়ের পরে দুধ পান করলে আর দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হবে না। ফতোয়ায়ে শামী-৪/৩৯৭ বাবু রিদা
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মত হচ্ছে, শিশুর বয়স আড়াই বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত দুধ পান দ্বারা দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হবে। আড়াই বছরের উর্ধ্বে কোনো শিশু দুধ পান করলে দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হবে না।
ইমাম মালেক, শাফেয়ি ও সাহেবাইন ইমাম আবু ইউসূফ ও মুহাম্মাদ (রহ.) প্রমুখের মত হচ্ছে, দুই বছরের আগ পর্যন্ত দুধ পান দ্বারা দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হবে। এর উর্ধ্বের কোনো শিশু দুধ পান দ্বারা দুধ সম্পর্ক স্থাপন হবে না।
প্রশ্ন : খ। কতটুকু দুধ পান করালে হুরমত/দুধ সম্পর্ক সাবস্ত্য হবে?
উত্তর: খ। হানাফি মাজহবের মতে, এক ফোটা পরিমাণও দুধ যদি কোন শিশু গলধঃকরণ করে, তাহলে এর দ্বারাই দুগ্ধপান সম্পর্কিত হুরমত সাব্যস্ত হয়।
হাম্বল মাজহাব এবং প্রচলিত আহলে হাদিসের মতে, কোনও শিশু কমপক্ষে পাঁচবার কোন মহিলার দুধ পান করে, তাহলে দুধ দানকারীনী মহিলা দুধ মা, তার স্বামী পিতা এবং তার সন্তানগণ তার দুধ ভাইবোন হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
হাম্বলি মাজহাবের অনুসারি ইমাম ইবনে বাজ (রহ.) কে নানী/দাদি দুধ পান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, জবাবে তিনি বলেন,
الجواب: إذا كانت جدة السائل قد أرضعته رضاعاً تاماً خمس رضعات فأكثر حال كونه في الحولين فإنه يكون أخاً لأبيه وأعمامه، وعماً لبنات أعمامه، فلا يحل له أن ينكح منهن أحداً؛ لأنه صار عماً لهن بالرضاع، فلابد من التثبت في هذا الأمر، فإذا كانت الجدة قد در لها لبن أرضعتك منه -أيها السائل- خمس مرات يعني: خمس رضعات فأكثر حال كونك في الحولين فإنها تكون أمك من الرضاعة وتكون أنت أخاً لأبيك وأعمامك من الرضاعة، وعماً لبنات أعمامك من الرضاعة، فلا يحل لك نكاح أحد منهن، والله سبحانه وتعالى أعلم.
অর্থাৎ যদি কোন শিশু নানি/দাদি দুই বছর বয়সে তাকে সম্পূর্ণরূপে পাঁচ বা তার বেশি বার দুধ পান করান, তাহলে স্তন্যপান করানো থেকে সে মা হবে এবং স্তন্যপান করানো থেকে চাচাদের/মামাদের দুধ ভাই হবে, খালাদের/ফুফুদের দুধ বোন এবং মামা/চাচা এবং ফুফু/খালাদের কন্যাদের ব্যাপারে তাদের কাউকে বিয়ে করা জায়েয হবে না এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহই ভালো জানেন। সূত্র: ইমাম বাজ (রহ.) ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত
সারকথা হলো, উক্ত খালাতো ভাই যদি দুই/আড়াই বছরের মধ্যে এক ফুটাও দুধ পান করে থাকে, তাহলে খালাতো বোনকে বিবাহ জায়েজ হয় নাই. হারাম হয়েছে। এরকম একটি ঘটনা রাসূল (ﷺ) এর যুগেও ঘটেছিলো। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে, তিনি তাদেরকে আলাদা করে দেন। দলিল:
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ الْحَارِثِ، أَنَّهُ تَزَوَّجَ ابْنَةً لأَبِي إِهَابِ بْنِ عَزِيزٍ، فَأَتَتْهُ امْرَأَةٌ فَقَالَتْ قَدْ أَرْضَعْتُ عُقْبَةَ وَالَّتِي تَزَوَّجَ. فَقَالَ لَهَا عُقْبَةُ مَا أَعْلَمُ أَنَّكِ أَرْضَعْتِنِي وَلاَ أَخْبَرْتِنِي. فَأَرْسَلَ إِلَى آلِ أَبِي إِهَابٍ يَسْأَلُهُمْ فَقَالُوا مَا عَلِمْنَا أَرْضَعَتْ صَاحِبَتَنَا. فَرَكِبَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ فَسَأَلَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ كَيْفَ وَقَدْ قِيلَ ”. فَفَارَقَهَا، وَنَكَحَتْ زَوْجًا غَيْرَهُ.
উকবা ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আবু ইহাব ইবনে আজিজের কন্যাকে বিবাহ করলেন। পরে এক মহিলা এসে বলল, আমি তো উকবাহ এবং যাকে সে বিয়ে করেছে দু জনকেই দুধ পান করিয়েছি। উকবাহ রা. তাকে বললেন, এটা তো আমার জানা নেই যে, আপনি আমাকে দুধ পান করিয়েছেন আর আপনিও এ বিষয়ে আমাকে অবহিত করেন নি।
অতঃপর আবু ইহাব পরিবারের নিকট লোক পাঠিয়ে তিনি তাদের নিকট জানতে চাইলেন। তারা বলল, সে আমাদের মেয়েকে দুধ পান করিয়েছে বলে তো আমাদের জানা নেই। তখন তিনি মদিনার উদ্দেশে সওয়ার হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “যখন এরূপ বলা হয়েছে তখন এ (বিবাহ) কিভাবে সম্ভব?” অত:পর উকবাহ রা. তাকে ত্যাগ করলেন। আর সে অন্য জনকে বিয়ে করল। তাখরিজ: বুখারি-২৬৪০
শেষ কথা হলো, যদি অজ্ঞতাবশত বিবাহ হয়ে থাকে আশা করা যায় পাপ হবে না। দলিল:
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
অর্থ: “হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাওয়ার কারণে কিংবা অনিচ্ছাবশত: অন্যায় করে ফেলি তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না।” সূরা বাকারা-২৮৬
এ সম্পর্কে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন:
فإن المسلمين متفقون على أن كل نكاح اعتقد أنه نكاح سائغ إذا وطئ فيه فإنه يلحقه فيه ولده ويتوارثان باتفاق المسلمين، وإن كان ذلك النكاح باطلاً في نفس الأمر باتفاق المسلمين. انتهى مجموع الفتاوى" (34/13).
আর যেহেতু বিষয়টি তাঁদের অজানা বশত: হয়েছিল সেহেতু ইনশাআল্লাহ তারা গুনাহগার হবে না। সুত্র: মাজমুউল ফাতাওয়া-১৩ খণ্ড. ৩৪ পৃ.
والله اعلم بالصواب