জিজ্ঞাসা-১৩০৮৫:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসরের পর তাহিয়্যাতুল অজু বা দুখুলুল মসজিদ আদায় করার বিধান কি?
তারিখ:০১/১০/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা নোমান কুয়েত থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
ইমাম আবু হানিফা রহ, ইমাম মালেক রহ ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ., জমহুর সাহাবা, তাবেয়ি তাবা-তাবেয়ি এবং ফোকাহায়ে কেরাম এর সুবহি সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যোদয় পর্যন্ত ফজরের চার রাকাত নামাজ ব্যতীত অন্য নফল নামাজ জায়েজ নেই।
প্রশ্ন: ক। জমহুরের দলিল কী?
উত্তর: ক। জমহুরের দলিল নিম্নরূপ:
হাদিস নং-০১
581 - حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، قَالَ: حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي العَالِيَةِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: شَهِدَ عِنْدِي رِجَالٌ مَرْضِيُّونَ وَأَرْضَاهُمْ عِنْدِي عُمَرُ، «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصُّبْحِ حَتَّى تَشْرُقَ الشَّمْسُ، وَبَعْدَ العَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ» ،
৫৫৪। হাফস ইবনে উমর (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কয়েকজন আস্থাভাজন ব্যক্তি আমার কাছে — যাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন উমর (রাযিঃ) — আমাকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফজরের পর সূর্য উজ্জ্বল হয়ে না উঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
Narrated `Umar: "The Prophet (sallallahu ’alaihi wa sallam) forbade praying after the Fajr prayer till the sun rises and after the `Asr prayer till the sun sets."
হাদীসের ব্যাখ্যা:
*এ হাদীসের ভিত্তিতে ফকীহগণ বলেন, যাদের ফজরের জামাতে শরীক হতে গিয়ে ২ রাকআত সুন্নত বাদ পড়ে; তারা ওই সুন্নাত সূর্যোদয়ের পরে পড়বেন। আর আসরের নামাযের পর কোন সুন্নাত/নফল পড়া যাবে না; তবে মাকরূহ ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে কোন ফরয কাযা নামায পড়া যাবে ।
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৪ (আন্তর্জাতিক নং ৫৮১)
হাদিস নং-০২
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -ﷺ- نَهَى عَنِ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ
রাসূল ﷺ আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। (সহিহ মুসলিম ১৯৫৭)
অপর পক্ষে ইমাম শাফিয়ি রহ. , শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহ এবং বর্তমান যুগে তার অনুসারী দাবিদার আহলে হাদিসদের মতে নফল নামাজ জায়েজ আছে।
প্রশ্ন: খ। ইমাম শাফি ও আহলে হাদিসদের দলিল কী?
উত্তর: খ। এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা কোন দলিল নেই। তবে দলিল নিম্নরূপ:
হাদিস নং-০১
627 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يَزِيدَ، قَالَ: حَدَّثَنَا كَهْمَسُ بْنُ الحَسَنِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلاَةٌ، بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلاَةٌ» ، ثُمَّ قَالَ فِي الثَّالِثَةِ: «لِمَنْ شَاءَ»
আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নামায আদায় করা যায়। প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নামায আদায় করা যায়। তৃতীয়বার একথা বলার পর তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে।
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৯ (আন্তর্জাতিক নং ৬২৭)
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ بْنِ قَعْنَبٍ، وَقُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا مَالِكٌ، ح وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ عَنْ عَامِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَمْرِو بْنِ سُلَيْمٍ الزُّرَقِيِّ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يَجْلِسَ "
১৫২৭। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসলামা ইবনে কানাব, কুতায়বা ইবনে সাঈদ ও ইয়াহয়া ইবনে ইয়াহয়া (রাহঃ) ......... আবু কাতাদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, তখন বসার আগে দু'রাক’আত নামায আদায় করবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস আন্তর্জাতিক নং ৭১৪-১)
প্রশ্ন: গ। জমহুরের পক্ষে জবাব কী?
উত্তর: ঘ। জমহুরের পক্ষে জবাবে বলা হয়, উপরোক্ত হাদিসদ্বয়ের উপর আমল অবশ্যই করা হবে, তবে নিষিদ্ধ সময়ে নয়। মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ পড়া মুস্তাহাব আর কয়েকটি সময় নামাজ পড়া হারাম ও মাকরুহে তাহরিম। সুতরাং হারাম ও মাকরুহ প্রধান্য পাবে।
মুস্তাহাব হওয়ার দলিল:
২ নং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নামায বা যে কোন কাজে মাসজিদে প্রবেশ করলে বসার পূর্বে তাহিয়্যাতুল মাসজিদের দু’রাকাত নামায পড়া রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশ। অবশ্য এ নির্দেশটি ফরয-ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব। আর দৈনন্দিন ১২ রাকাত ছুন্নাতে মুআক্কাদার তালিকায়ও রসূল স. এ নামাযের নাম উল্লেখ করেননি। (তিরমিযী: ৪১৫) আর দৈনন্দিন আবশ্যকীয় নামাযের তালিকায়ও রসূল স. এ নামাযের নাম উল্লেখ করেননি। (বুখারী-৪৪) তাই এ সবকিছু সামনে রেখে ইমামগণ এটাকে মুস্তাহাব নির্দেশ হিসেবে গণ্য করেছেন। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, وَالعَمَلُ عَلَى هَذَا الحَدِيثِ عِنْدَ أَصْحَابِنَا: اسْتَحَبُّوا إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ المَسْجِدَ أَنْ لَا يَجْلِسَ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ إِلَّا أَنْ يَكُونَ لَهُ عُذْرٌ এ হাদীসের উপর আমাদের সাথীদের আমল রয়েছে। কোন ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলে বসার পূর্বে তার উপর দু’রাকাত নামায আদায় করাকে তারা মুস্তাহাব মনে করেন। তবে ওযর থাকলে ভিন্ন কথা। (তিরমিযী-৩১৬) ইমাম তিরমিযী রহ.-এর উক্তি থেকেও প্রমাণিত হয় যে, এটা মুস্তাহাব। সাথে সাথে সাহাবায়ে কিরাম এবং তাবিঈদের আমল থেকেও পরিস্কার হয়ে যায় যে, এটা আবশ্যকীয় নামায নয়। এ বিষয়ের প্রমাণ তুলে ধরতে সাহাবায়ে কিরাম এবং তাবিঈদের আমল সংক্রান্ত কিছু বর্ণনা নিম্নে পেশ করা হলো:
حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، عَنْ مُعَاوِيَةَ يَعْنِي ابْنَ صَالِحٍ، عَنْ أَبِي الزَّاهِرِيَّةِ، قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا مَعَ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُسْرٍ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فَجَاءَ رَجُلٌ يَتَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَقَالَ: اجْلِسْ فَقَدْ آذَيْتَ، وَآنَيْتَ.
অনুবাদ : হযরত আবু যাহরিয়া রহ. বলেন, জুমআর দিনে আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর রা.-এর নিকট বসা ছিলাম। তিনি বললেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম. খুৎবারত অবস্থায় এক লোক মানুষের গর্দান ডিঙ্গিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলো। তখন রসূলুল্লাহ স. তাকে বললেন: তুমি বসে পড়ো। তুমি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছো এবং বিলম্ব করে ফেলেছো। (মুসনাদে আহমাদ: ১৭৬৯৭, আবু দাউদ: ১১১৮, নাসাঈ: ১৪০২, ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৫১, হাদীস নং-২১৫৬)
হাদীসটির স্তর: সহীহ। শায়খ শুআইব আরনাউত রহ. বলেন, إسناده صحيح على شرط مسلم. “হাদীসটির সনদ মুসলিমের শর্তে সহীহ”। (মুসনাদে আহমাদ: ১৭৬৯৭ নং হাদীসের আলোচনায়) হাকেম এবং ইমাম জাহাবী রহ.ও এ হাদীসের ব্যাপারে অনুরূপ মনত্মব্য করেছেন। (মুসতাদরাকে হাকেম: ১০৬১)
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাহিয়্যাতুল মাসজিদের নামায পড়া জরুরী নয়। অন্যথায় রসূল স. আগত লোকটিকে বসতে না বলে আগে দু’রাকাত নামায পড়তে বলতেন।
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ الدَّرَاوَرْدِيُّ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، قَالَ: كَانَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُونَ الْمَسْجِدَ، ثُمَّ يَخْرُجُونَ وَلاَ يُصَلُّونَ، قَالَ: وَرَأَيْت ابْنَ عُمَرَ يَفْعَلُهُ.
অনুবাদ : হযরত যায়েদ বিন আসলাম রহ. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ মাসজিদে প্রবেশ করতেন, অতঃপর বের হয়ে আসতেন। অথচ কোন নামায আদায় করতেন না। তিনি বলেন, আমি হযরত ইবনে উমার রা.কে এমন করতে দেখেছি। (ইবনে আবী শাইবা: ৩৪৪৭)
হাদীসটির স্তর: সহীহ মাউকূফ। হাদীসটির সকল রাবীই বুখারী-মুসলিমের রাবী।
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِنْدٍ، عَنْ نَافِعٍ؛ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ يَمُرُّ فِي الْمَسْجِدِ، وَلاَ يُصَلِّي فِيهِ.
অনুবাদ : হযরত নাফে’ রহ. বলেন, হযরত ইবনে উমার রা. মাসজিদের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করতেন অথচ সেখানে নামায পড়তেন না। (ইবনে আবী শাইবা-৩৪৪৮)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাউকূফ। হাদীসটির সকল রাবীই বুখারী-মুসলিমের রাবী।
حَدَّثَنَا مَرْوَانُ بْنُ مُعَاوِيَةَ، عَنِ ابْنِ عَوْنٍ، قَالَ: مَرَرْتُ مَعَ الشَّعْبِيِّ فِي مَسْجِدِ الْكُوفَةِ، فَقُلْتُ لَهُ: أَلاَّ تُصَلِّي ؟ قَالَ: إذنْ وَرَبِّي لاَ نَزَالُ نُصَلِّي.
অনুবাদ : হযরত আব্দুলস্নাহ বিন আওন রহ. বলেন, আমি ইমাম শা’বী রহ.-এর সাথে কুফার মাসজিদের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করলাম। আমি তাঁকে বললাম, আপনি নামায পড়বেন না? তিনি বললেন, রবের কসম, তাহলে তো আমি সর্বদা নামাযই পড়তে থাকবো। (ইবনে আবী শাইবা-৩৪৪৯)
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাউকূফ। হাদীসটির সকল রাবীই বুখারী-মুসলিমের রাবী।
সাহাবায়ে কিরাম এবং তাবিঈগণের উপরিউক্ত আমল ও মনত্মব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাহিয়্যাতুল মাসজিদের নামায পড়া জরুরী নয়। অনুরূপ আমল হযরত সালেম এবং সুআইদ বিন গাফালা রহ. থেকেও বর্ণিত রয়েছে। (ইবনে আবী শাইবা-৩৪৫০ ও ৩৪৫১)
সারকথা হলো, উক্ত সময়ে দুখুলুল মসজিদ আদায় করা জায়েজ হবে না। এটাই সালাফ তথা পূর্বসূরিদের পথ।
والله اعلم بالصواب