জিজ্ঞাসা-১৩১১২:
আসসালামু আলাইকুম। কোন স্ত্রী যদি নামাজ না পড়ে, কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত না করে এ বিষয়ে ইসলামের বিধান কি।
তারিখ:৩১/১০/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা কামরুল ইসলাম কুমিল্লা থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, নামাজের গুরুত্ব সর্বাধিক। নামাজ স্বীকার করলে সর্বসম্মতিক্রমে সে কাফের আর অলসতাবসত ত্যাগ করলে সে ফাসেক। যেমন-
فتارك الصلاة إن كان قد تركها جحودا لفرضيتها فهو كافر بإجماع المسلمين، وفي هذه الحالة لا يجوز لزوجته البقاء معه لردته، فإن رجع إلى الإسلام وهي في عدتها منه عادت إليه بالنكاح الأول كما بينا بالفتوى رقم: 25611.
যে ব্যক্তি নামায পরিত্যাগ করে সে যদি এর ফরয অস্বীকার করে তা পরিত্যাগ করে, তবে সে মুসলিম ঐক্যমত অনুযায়ী কাফের এবং সেক্ষেত্রে তার স্ত্রীর ধর্মত্যাগের কারণে তার সাথে থাকা বৈধ নয়। যদি সে ইসলামের দিকে ফিরে আসে। ইদ্দত শেষে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।
وإن تركها تهاونا فقد اختلف الفقهاء في حكمه، فجمهورهم على أنه لا يخرج بذلك عن ملة الإسلام، وعلى قولهم لا حرج في بقاء زوجته معه، ولا تعتبر مطلقة بمجرد كونه تاركا للصلاة أو مرتكبا لمعصية أخرى غير مكفرة.
যদি তিনি সালাত অবহেলার কারণে ছেড়ে দেন, তবে ফকীহগণ তার রায় সম্পর্কে মতভেদ করেছেন যে, তিনি ইসলাম ধর্ম থেকে সরে যাবেন না, এবং তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, তার স্ত্রীর সাথে থাকাতে কোন দোষ নেই এবং সে হল। তাকে তালাক বলে গণ্য করা হয় না কারণ সে নামাজে অবহেলা করে বা অন্য কোন পাপ করে যা কুফরি নয়। সূত্র: ফিকহুল উসরাতুল মুসলিমা,আলহুকুকুল যাওজা-১৬৭৪৮৪ (ফতোয়া নং)
দ্বিতীয় কথা হলো, স্ত্রী অবাধ্য হলে মীমাংসার জন্য আসমানী ফর্মুলা হলো। দলিল-
ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا كَبِيرٗا ٣٤ [النساء: ٣٤]
আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, বিছানায় তাদেরকে ত্যাগ কর এবং তাদেরকে (মৃদু) প্রহার কর। এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান। [সূরা আন-নিসা: ৩৪]
তৃতীয় কথা হলো, উপরোক্ত পদ্ধতি ব্যর্থ হলে বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করা যাবে অর্থাৎ তালাক দেওয়া যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে নামাজের কারণে যদি স্বামী স্ত্রী পরস্পরে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেটা তারা সুন্নত মোতাবেক বিজ্ঞ মুফতি/আলেমদের পরামর্শে করতে পারে। তবে এটি সংশোধনের নিয়তে হতে হবে। নামাজের বাহানায় সংসার ভাঙ্গার ইচ্ছায় নয়।
সারকথা হলো, কোন স্ত্রী যদি নামাজ না পড়ে, এর বিধান উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। আর কোরআন তেলাওয়াত অনেক ফজিলতের কাজ। নামাজের প্রয়োজন মাফিক সূরা-কেরাত শুদ্ধ করা ফরজ। তবে তেলাওয়াত করা নফল। তাই কোন স্ত্রী যদি কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত না করে, এ কারণে তাকে তালাক দেওয়া যাবে না। অবশ্যই তেলাওয়াতের জন্য উৎসহ-প্রেষণা দিতে হবে।
والله اعلم بالصواب