জিজ্ঞাসা-১২৩২০
আসসালামু আলাইকুম ।
আমার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও মুসল্লির প্রশ্নঃ
পবিত্র কুরআন মাজীদে সুরাহ্ হুদের ৪১নং আয়াতে একটি মাত্র এমালাহ্ পড়তে হয় এর কারণ কি? অনুগ্রহ করে জানাবেন। তারিখ: ২৮/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ আমজাদ হোসেন সিরাজগঞ্জ থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, কুরআন কি শুধু শব্দের নাম না অর্থের নাম এ বিষয়ে মতভেদ থাকলেও চূড়ান্ত কথা হল অর্থ এবং শব্দের সমন্বয়েই হলো কুরআন। আর কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা নিজে গ্রহণ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে-
اِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَ اِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوْنَ.
অর্থ: বস্তুত এই উপদেশ বাণী (কুরআন) আমিই অবতারণ করেছি এবং আমিই এর রক্ষাকর্তা। সূরা হিজর- ৯
সুতরাং প্রমাণিত হলো, কুরআনের শব্দ অর্থ উভয়কে আল্লাহ তাআলা হিফাজত করবেন।
প্রতি রমজানে হযরতে জিবরিল আমিন সম্পূর্ণ কোরআন শরীফ (ﷺ)কে শুনাতেন আবার রাসূল (ﷺ) হজরত জিবরিল আমিন কে শুনাতেন।
কুরআন পাঠের যে পদ্ধতি সেখান থেকে আমাদের পর্যন্ত ধারাবাহিকতায় পৌঁছেছে। সুতরাং পঠন পদ্ধতিও আসমান থেকে নাযিলকৃত।
দ্বিতীয় কথা হলো, রাসূল (ﷺ)এর যুগে পবিত্র কুরআন গ্রন্থাকার ছিল না, হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুও জামানায় ১২ হিজরিতে ইয়ামামার যুদ্ধের পর গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং হাদিসও রাসুল (ﷺ)এর যুগে গ্রন্থাকারে ছিল না। হিজরি প্রথম শতাব্দীর শেষভাগে সাহাবি ও তাবেয়ীগণ প্রয়োজন অনুসারে কিছু হাদীস লিপিবদ্ধ করেন।
ঠিক তেমনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর যুগে কুরআন পাঠের নিয়মাবলী ছিল, কিন্তু গ্রন্থাকারে ছিল না।
পবিত্র কুরআনকে বিশুদ্ধ এবং সর্বোত্তম পদ্ধতিতে পাঠের শাস্ত্রীয় সম্পর্কে তৃতীয় হিজরির শেষাংশে লিপিবদ্ধ করা হয়। যেমন,
رائيّة أبي مزاحم الخاقاني 325هـ، وهو أوّل وأقدم من صنّف في علم التجويد، وهي أوّل ما نُظِّم في هذا العلم، في نهاية القرن الثالث الهجريّ. نونيّة علم الدين السخاوي 643هـ، والمسمّاة: عمدة المفيد وعدة المجيد في معرفة التجويد. الرعاية لتجويد القراءة وتحقيق لفظ التلاوة،
ص186 - كتاب مقدمات في علم القراءات - المصنفات في علم التجويد - المكتبة الشاملة الحديثةالمسماة: «عمدة المفيد وعدة المجيد في معرفة التجويد
অর্থাৎ তাজবীদের ক্ষেত্রে যে সকল গ্রন্থ ও গ্রন্থ রচিত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল: রাইয়া আবি মুজাহিম আল-খাকানি (৩২৫ হিজরি) এবং তিনিই প্রথম এবং প্রাচীনতম যিনি ইলমে তাজবিদ লিখেছেন এবং এটি তৃতীয় শতাব্দী হিজরির শেষের দিকে এ ইলমে তাজবিদের সংকলন (গ্রন্থ) হওয়া প্রথম। নোনিয়া আলম আল-দীন আল-সাখাভি (৬৪৩ হি) বলা হয়: তাজবীদের জ্ঞানে উমদাত আল-মুফিদ এবং উদ্দাহ আল-মাজিদ। সূত্র: কিতাবু মুকাদ্দামাতি ফি ইলমিল কিরায়া-১৮৬ পৃ. উমদাতুল মুফিদ ওয়া ইদ্দাতুল মাজিদ ফি মাআরিফাতিল তাজবিদ
পরবর্তী উপমহাদেশে প্রাচীন কিতাব অনুসারে জামালুল কুরআন, ইরশাদুল কুরআন, তাসহীলুত তাজবীদ ইত্যাদি কিতাব লিখিত হয়।
তৃতীয় কথা হলো, আরবিতে জের বাংলায় ‘ি’ উচ্চারণ হয়। আরবিতে ‘ে’ কার নেই। শুধু মাত্র একটি জায়গায় ে হয় (যা আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন)। যাকে খেলাপি কিয়াস বা নিয়ম বহির্ভুত নীতি বলে। পৃথিবীর প্রায় সকল ভাষায় কিছু শব্দ এমন আছে, যা নিয়মনীতির বাহিরে লিখিত বা উচ্চারিত হয়।
সারকথা হলো, মুজাব্বিদগণের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী وَقَالَ ارۡکَبُوۡا فِیۡہَا بِسۡمِ اللّٰہِ مَجۡؔرٖىہَا وَمُرۡسٰىہَا ؕ اِنَّ رَبِّیۡ لَغَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
সূরা হুদের ৪১ নং আয়াত খেলাপি কিয়াস হিসেবে শুধু মাজরেহা (ে) পড়া হয়।
والله اعلم بالصواب