জিজ্ঞাসা-১২৩১৪
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ২টি প্রশ্নের উত্তর দিবেন আশা করি
১.নবী (ﷺ) উম্মতের সালাম সরাসরি শুনেন নাকি ফেরেস্তা গণ পৌছে দেয়?
২.নবী (ﷺ) রওজা থেকে উম্মতকে সাহায্য করেতে পারেন কিনা? এবং তার রওজাতে কোন উম্মত সাহায্য চাইতে পারেন কিনা? তারিখ: ২১/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা গিয়াস উদ্দিন কুমিল্লা থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে আলোচনাটিকে দুটি ভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ১। নবী (ﷺ) উম্মতের সালাম সরাসরি শুনেন নাকি ফেরেস্তা গণ পৌছে দেয়?
উত্তর: ১। এ বিষয়ে প্রথম কথা হলো, রওজার পাশে সালাম দিলে রাসূল সরাসরি শুনেন আর দূরে থেকে সালাম দিলে তার কাছে পৌঁছানো হয়। দলিল:
مَنْ صَلَّى عَلَيَّ عِنْدَ قَبْرِي سَمِعْتُهُ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيّ َنَائِيًا مِنْهُ أُبْلِغْتُه.
অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন-
“যে আমার কবরের পাশে আমার উপর সালাত পেশ করে আমি তা শুনি। এবং যে দূরে থেকে আমার উপর দরূদ পড়ে তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়”। সূত্র: কিতাবুস সওয়াব, আবু হাইয়ান ইবনু আবিশ শায়খ ইছফাহানী, ফাতহুল বারী ৬/৬০৫, আল-কাওলুল বাদী পৃ. ১৬০
নোট: হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. (ফাতহুল বারী ৬/৬০৫), হাফেজ সাখাবী রাহ. আল-কওলুল বাদী পৃ.১৬০ ও অনেকে এ হাদীসকে শক্তিশালী বলেছেন।
এ বিষয়ে ইবনে তাইমিয়া হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন,
إِنَّ مِن ْأَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ قُبِضَ، وَفِيهِ النَّفْخَةُ، وَفِيهِ الصَّعْقَةُ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلَاةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ" قَالَ: قَالُوا: يَارَسُولَ اللَّهِ، وَكَيْف َتُعْرَضُ صَلَاتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ؟ يَقُولُونَ: بَلِيتَ، فَقَالَ: "إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ".
‘তোমাদের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর একটি হল জুমার দিন। এ দিনেই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, আর এ দিনেই সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করবে। সুতরাং এ দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে ছালাত ও সালাম পাঠাও। তোমাদের ছালাত আমার কাছে পেশ করা হবে। সাহাবাগণ বললেন, আমাদের ছালাত আপনার কাছে কীভাবে পেশ করা হবে, তখন যে আপনি (মাটির সাথে মিশে) ক্ষয়প্রাপ্ত (নিঃশেষিত) হয়ে যাবেন? নবী (ﷺ)বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মাটির জন্য নবীগণের দেহ খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছেন’। তাখরিজ: সুনানে আবি দাউদ-১০৪৭
ﻓﺄﺧﺒﺮ ﺃﻧﻪ ﻳﺴﻤﻊ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻣﻨﺎ ﻟﻘﺮﻳﺐ ﻭﺃﻧﻪ ﻳﺒﻠﻐﻪ ﺫﻟﻚ ﻣﻨﺎ ﻟﺒﻌﻴﺪ .
এ হাদীসে নবীজী (ﷺ) জানিয়েছেন,তিনি নিকটবর্তী ব্যক্তির কাছ থেকে সালাত ও সালাম শুনেন,আর দূরবর্তী ব্যক্তিদের কাছ থেকে সালাত ও সালাম তাঁর কাছে পৌঁছে। সূত্র: মাজমুউল ফাতাওয়া-২৬খণ্ড, ১৪৭ পৃ.
প্রশ্ন: ক। রওজার পাশে দরুদ পড়লে সরাসরি শুনে তার দলিল কি?
উত্তর: ক। নিচে কয়েকটি হাদিস শরিফ উল্লেখ করছি।
আয়াত নং-০১
وَلاَ تَقُولُواْ لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبيلِ اللّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاء وَلَكِن لاَّ تَشْعُرُونَ
আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। সূরা বাকারা-১৫৪
ব্যাখ্যা: আর নবীগণ যেহেতু শহীদগণ থেকে আরো উচ্চ মর্যাদার অধিকারী সেহেতু এই আয়াত দ্বারা নবীগণও জীবিত থাকা সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হয়। সূত্র: তাকমেলা শরহে মুসলিম খন্ড নং৫ পৃষ্টা: ২৮
বরং বরযখের এই জীবিত থাকার ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা শক্তি সম্পন্ন হলো নবীগণ অত:পর শহীদগণ। সূত্র: মাআরেফুল কোরআন পৃষ্ঠা-৮০ মাওলানা মহিউদ্দিন খান অনুদিত
হাদিস নং-০১
الأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّون.
অর্থ: রাসূল (ﷺ) ‘নবীগণ কবরে জীবিত, নামায আদায় করেন’। তাখরিজ: মুসনাদে আবু ইয়ালা-৩৪২৫; হায়াতুল আম্বিয়া লিল বাইহাকী, ১-৪
وقال ابنُ تَيمِيَّةَ: (الأنبياءُ أحياءٌ في قُبورِهم، وقد يُصَلُّون كما رأى مُحَمَّدٌ موسى -صَلَواتُ اللهِ وسلامُه عليهما وعلى سائِرِ الأنبياءِ- في قَبْرِه ليلةَ الإسراءِ يُنظر: ((المستدرك على مجموع الفتاوى)) (1/ 101
অর্থ: ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, সমস্ত নবিরা কবরে জীবিত। আর তারা কবরে নামাজ পড়ে যেমন মিরাজের রজনীতে মুহাম্মাদ (ﷺ) দেখেছেন। মাজমুউল ফাতাওয়া-১/১০১
وقال السخاوي: (نحن نؤمِنُ ونُصَدِّقُ بأنَّه صلَّى اللهُ عليه وسلَّم حيٌّ يُرزَقُ في قبرِه، وأنَّ جَسَدَه الشَّريفَ لا تأكُلُه الأرضُ، والإجماعُ على هذا يُنظر: ((القول البديع في الصلاة على الحبيب الشفيع)) (ص: 172
অর্থাৎ সাখাভি রহ. বলেন, আমরা ঈমান রাখি এবং সত্যায়ন করি যে, রাসূল (ﷺ) জীবিত কবরে রিজিক প্রাপ্ত। তিনি শরীরে আছেন,তবে দুনিয়ার খাবার খান না এ বিষয়ে ইজমা হয়েছে। সূত্র: আলকওলুল বাদি-১৭২ পৃ.
হাদিস নং-০২
فنبي الله حي يرزق
“সুতরাং আল্লাহর নবী জীবিত এবং রিযিক প্রাপ্ত”। তাখরিজ: সুনানে ইবনে মাজাহ-১৬৩৭
হাদিস নং-০৩
مَا مِن أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ، إِلَّا رَدَّ اللَّهُ عَلَيّ رُوحِي حَتَّى أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلَام.
হজরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেন-‘(মৃত্যুর পর) যে কেউ আমাকে সালাম করবে, সেই আমাকে এ অবস্থায় (জীবিত) পাবে যে, আল্লাহ তাআলা আমার মধ্যে (এর পূর্বেই) রূহ ফিরিয়ে দিয়েছেন। (অর্থাৎ মৃত্যুর পরই আমার রূহ আমার মধ্যে ফিরিয়ে দিয়ে জীবিত করে দেবেন) যাতে আমি তার সালামের জবাব দেই’। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-২০৪১
হাদিস নং-০৪
إِنَّ مِن ْأَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ قُبِضَ، وَفِيهِ النَّفْخَةُ، وَفِيهِ الصَّعْقَةُ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلَاةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ" قَالَ: قَالُوا: يَارَسُولَ اللَّهِ، وَكَيْف َتُعْرَضُ صَلَاتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ؟ يَقُولُونَ: بَلِيتَ، فَقَالَ: "إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ".
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- ‘তোমাদের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর একটি হল জুমার দিন। এ দিনেই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, আর এ দিনেই সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করবে। সুতরাং এ দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে ছালাত ও সালাম পাঠাও। তোমাদের ছালাত আমার কাছে পেশ করা হবে। সাহাবাগণ বললেন, আমাদের ছালাত আপনার কাছে কীভাবে পেশ করা হবে, তখন যে আপনি (মাটির সাথে মিশে) ক্ষয়প্রাপ্ত (নিঃশেষিত) হয়ে যাবেন? নবী (ﷺ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মাটির জন্য নবীগণের দেহ খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছেন’।
অর্থাৎ কবরে নবীগণের দেহ দুনিয়ায় জীবিত মানুষের মতই অক্ষত থাকে। এর সাথে রূহের গভীর সম্পর্কও থাকে। ফলে কবরে থেকেও সালাত ও সালাম পাওয়াতে কোনো অসুবিধা হবে না। তাখরিজ সুনানে আবু দাউদ-১০৪৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা-১৭৩৩; মুসতাদরাকে হাকেম-১০২৯; মুসনাদে আহমাদ-১৬১৬২
হাদিস নং-০৫
مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي، عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ، وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ.
হজরত আনাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- ‘আমি মিরাজের রাতে (বাইতুল মাকদিসের পাশে) লাল বালুর ঢিবির কাছে মূসা আ.-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছি। তখন তিনি তাঁর কবরে দাড়িয়ে নামায আদায় করছিলেন’। তাখরিজ: মুসলিম-২৩৪৭
প্রিয় পাঠক! উপরাক্ত আয়াত ও হাদিস প্রমাণিত হলো যে, নবিরা কবরে জীবিত, সুতরাং রওজার পাশে গিয়ে সালাম দিলে সরাসরি শুনতে পারেন।
হাদিস নং-০৬
وما من رجُلٍ يمرُّ بقبرِ الرَّجلِ كانَ يعرفُهُ في الدُّنيا فيسلِّمُ عليْهِ إلَّا ردَّ اللَّهُ عليْهِ روحَهُ حتَّى يردَّ عليْهِ السَّلامَ
الراوي : - | المحدث : ابن تيمية | المصدر : مجموع الفتاوى | الصفحة أو الرقم : 24/173 | خلاصة حكم المحدث : صحيح
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন “যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি দুনিয়াতে পরিচিত তার কোনো মৃত্যু ভাইয়ের কবরের পাশ দিয়ে গমন করে এবং তাকে সালাম দিলে তখন তার সালামের উত্তর দেওয়ার জন্য আল্লাহ তার রূহকে ফেরত দেন।” সূত্র: মাজমুউল ফাতওয়া-২৪/১৭৩
হাদিস নং-০৭
روی عبد اللّٰہ بن عباسص انہ ﷺ قال ان المیت اذا دفن سمع خفق نعالھم اذا ولوا منصر فیلن۔
অর্থ-হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন- রাসুলে আকরাম ﷺ এরশাদ করেছেন-”যখন লোকেরা মৃত ব্যক্তিকে কবর দিয়ে বাড়ি ফিরে যায়-তখন কবরবাসী তাদের জুতার মৃদু শব্দও শুনতে পায়। সূত্র: ফাতহুল কবীর ১ম খন্ড ১৬৯ পৃষ্ঠা
হাদিস নং-০৮
انہ ﷺ امر بقتلی بدر فالقوا فی قلیب ۔ ثم جا ء حتی وقف علیھم وناداھم باسماء ھم یا فلان بن فلان ویافلان بن فلان ھل وجدتم ما وعدکم ربکم حقا۔ فانی وجدت ما وعدنی ربی حقا ۔ فقال لہ عمر یا رسول اللہّٰ ﷺ ما تخاطبوا من اقوام قد جیفوا ۔ فقال والذی بعثنی بالحق ما انتم باسمع لما اقول منھم ولکنھم لا یستطیعون جوابا۔
অর্থ- “রাসুল করিম (ﷺ) বদরের যুদ্ধে নিহত ৭০ জন কোরাইশ নেতার লাশ একটি গর্তে ফেলার নির্দেশ দিলেন। এর কিছুদিন পর (৩ দিন) তিনি ঐ গর্তের নিকট এসে দাঁড়ালেন এবং তাদেরকে নাম ধরে ধরে সম্মোধন করে বললেন- হে অমুকের পুত্র অমুক, হে অমুকের পুত্র অমুক! আল্লাহ্পাক তোমাদের ব্যাপারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন- তোমরা কি তা সত্য পেয়েছো? আমি তো আমার সাথে আল্লাহর প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি সত্য পেয়েছি। হজরত ওমর (রাঃ) আরয করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনি কি এমন মৃত লাশের সাথে কথা বলছেন- যারা পঁচে দুর্গন্ধময় হয়ে গেছে? রাসুল করিম (ﷺ) বললেন- আমি ঐ পবিত্র যাতের (সত্বার) শপথ করে বলছি- যিনি আমাকে সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন- তোমরা আমার কথা তাদের চেয়ে বেশি শুনতে পাচ্ছোনা- কিন্তু তারা জওয়াব দিতে অক্ষম” । তাখরিজ: বুখারি- ৬৯৫৮ ই.ফা.
উপরে ৬,৭ ও ৮ নং হাদিস থেকে জানা গেল যে, মৃত্যু ব্যক্তিরা শুনতে পায়, সুতরাং প্রমাণিত হলো রাসূল (ﷺ)ও তার রওজার কাছে সালাম পেশ করলে, তিনিও শোনেন এবং জবাব দেন।
প্রশ্ন: খ। রাসূল প্রতি দরুদ তার কাছে পৌঁছানো হয় দলিল কি?
উত্তর: খ। নিম্নে হাদিস উল্লেখ করা হলো,
হাদিস নং-০১
لَاتَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قُبُورًا، وَلَاتَجْعَلُوا قَبْرِي عِيدًا، وَصَلُّوا عَلَيَّ، فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ تَبْلُغُنِي حَيْثُ كُنْتُم.
হজরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেন- “তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না। আর আমার কবরে উৎসব করো না (বার্ষিক, মাসিক সাপ্তাহিক কোনো আসরের আয়োজন করো না)।(১৭) আমার উপর সালাত পাঠাও। কেননা তোমরা যেখানেই থাক তোমাদের সালাত আমার কাছে পৌঁছবে। তাখরিজ: আবু দাউদ-২০৪২; শুআবুল ঈমান, বায়হাকি-৩৮৬৫
হাদিস নং-০২
إِنَّ لِلَّهِ مَلائِكَةً سَيَّاحِين فِي الأَرْض ِيُبَلِّغُونِي عَنْ أُمَّتِي السَّلامَ.
.
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- “আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত একদল ফেরেশতা রয়েছেন যারা দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ান এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন”। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৯১৪
হাদিস নং-০৩
ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻲَّ ﻋِﻨْﺪَ ﻗَﺒْﺮِﻱ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻪُ ، ﻭَﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻲَّ ﺑَﻌِﻴْﺪًﺍ ﺃُﻋْﻠِﻤْﺘُﻪ
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন–
“যে কেউ আমার কবরের নিকটে এসে আমার প্রতি দরূদ পড়বে, আমি তা নিজেই শুনবো এবং যে দূর থেকে আমার প্রতি দরূদ পড়বে, তা আমাকে জানানো হবে।”
সূত্র: আল-কাওলুল বাদী‘ লিল-সাখাবী, ৩য় খণ্ড, ৯২৯ পৃ্ষ্ঠা/ আল-লাআলী লিল- সুয়ূতী, ১ম খণ্ড, ২৮৩ পৃষ্ঠা
প্রশ্ন: গ। দূরে থেকে কেউ যদি দরুদ পড়ে সেটা কি রাসূল (ﷺ) সরাসরি শুনতে পারেন?
উত্তর: গ। আসলে দূরে থেকে কেউ যদি দরুদ-সালাম পড়ে সেটা রাসূল (ﷺ) সরাসরি শুনতে পারেন, এ রকম কোন নস নেই। তবে কোন কোন বুজুর্গ কাশফ-কারামতের মাধ্যমে সরাসরি সাক্ষাত/শোনার ঘটনা হতে পারে। এটা শুধু তার জন্যই খাস। এ হুকুম সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হলো, কারামাতে আওলিয়া হক। যেমন, ইমাম বুখারি হাদিস লেখার প্রক্কালে মুরাকাবায় রাসূল (ﷺ)এর সাক্ষাত এবং সৈয়দ আহমদ কবির রেফায়ি রহ. এর কারামত সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। সূত্র: সাওয়াদুল আইনাঈন-১০-১১
প্রশ্ন: ২। নবী (ﷺ) রওজা থেকে উম্মতকে সাহায্য করেতে পারেন কিনা? এবং তার রওজাতে কোন উম্মত সাহায্য চাইতে পারেন কিনা?
উত্তর: ২। সাহায্য চাইতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে। নবির কবরে কাছে সাহায্য চাওয়া জায়েজ নেই। মৃত্যুর পর কোন ব্যক্তি কাউকে সাহায্য করতে পারে, এরকম আকিদা কুফরি। যদি তাই তো উনার তিন খলিফার শাহাদত বরণ করতে হতো না এবং প্রিয়তম দৈহিত্র ইমাম হুসাইন (রা.) কারবালার প্রান্তে নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করতো না। মহান আল্লাহ বলেন,
قُل لاَّ أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلاَ ضَرًّا إِلاَّ مَا شَاء اللّهُ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لاَسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَاْ إِلاَّ نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
অর্থ: আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য। সূরা আরাফ-১৮৮
রওজা মোবারক থেকে কাউকে সাহায্য করতে হলে তো আগে সংবাদটা জানতে হবে অথচ আল্লাহ তাআলা ছাড়া কেই গায়েব জানে না। দলিল:
আয়াত নং-০১
قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِى خَزَآٮِٕنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّى مَلَكٌۖ إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّۚ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِى ٱلۡأَعۡمَىٰ وَٱلۡبَصِيرُۚ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ (٥٠)
অর্থ: বল, "আমি তোমাদের বলি নাই যে, আমার নিকট আল্লাহ্র ধনভান্ডার রয়েছে। আমি অদৃশ্য সম্বন্ধে জানি না। আমি তোমাদের এ কথা বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা। আমার নিকট যে প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ হয়েছে, আমি শুধু তার অনুসরণ করি। বল, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি এক হতে পারে? তোমরা কি বিবেচনা করবে না? আনাআম-৫০
আয়াত নং-০২
قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِى ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُۚ وَمَا يَشۡعُرُونَ أَيَّانَ يُبۡعَثُونَ (٦٥)
অর্থ: তাদেরকে বল, আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীতে ও আকাশে কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না৷ এবং তারা জানেনা কবে তাদেরকে উঠিয়ে নেয়া হবে। সূত্র: নামল-৬৫
তবে কখনও কখনও রাসূল (ﷺ) স্বপ্নযোগে কোন কোন নির্দেশনা দিয়েছেন। যেমন, আওলাদে রাসূল সৈয়দ আব্দুর রহমান জামি (রহ.) কে বাদশাহ কর্তৃক গ্রেফতার এবং পরে ছেড়ে দেওয়া এবং ইহুদি কর্তৃক বিশ্বনবির লাশ মোবারক চুরির ঘটনা যা স্বপ্নযোগে রাসূল (ﷺ) তৎকালীন বাদশাহ নূরউদ্দিনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমরা সেই ইতিহাস একটু তালাশ করলেই পেয়ে যাবো ইনশাল্লাহ।
সারকথা হলো, দূরের সালাম নবি (ﷺ) এর কাছে পৌছানো হয় আর রওজা পাশের সালাম সরাসরি শুনতে পান। আলহামদুলিল্লাহ! আমার পরিচিত একজন ব্যক্তি রওজা মোবারক জিয়ারতকালে সরাসরি রাসূল (ﷺ) এর সালামের জওয়াব শুনতে পেরেছেন। এছাড়া আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ, স্বপ্নে/মোরাকাবায় রাসূলের সাক্ষাত হতে পারে।
আর রাসূল (ﷺ) সরাসরি কাউকে সাহায্য করতে পারে না। এটা আল্লাহ তাআলার নিজামের খেলাফ। তবে স্বপ্নে/মোরাবাকায় কাউকে দিক-নির্দেশনা দিতে পারে। বিস্তারিত জানতে দেখুন- মাওলানা মহিউদ্দিন খান অনূদিত-স্বপ্নে রাসূল (ﷺ), মদিনা পাবলিকেশন্স, ঢাকা।
والله اعلم بالصواب