জিজ্ঞাসা-১৩০৯১:
আসসালামু আলাইকুম। আরবি ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেওয়ার বিধান কি
তারিখ:০৮/১০/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শামসুল হক ঢাকা থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, জমহুর ওলামায়ে কেরামের তথা চার মাযহাবের ফিকহদের মতে খুতবা আরবি ভাষায় হাওয়ায় বাঞ্ছনীয়।
অপর পক্ষে দুই একজন আলেমদের মতে অনারবি ভাষায় খুতবা দেওয়া জায়েজ। তাদের মধ্যে হলেন নিকটতম যুগের আরব বিশ্বের শায়েখ ইবনে বাজ রহ, শায়েখ উসাইমিন রহ. এবং বাংলাদেশের আহলে হাদিস দাবিদার ভাইগণ।
দুঃখ জনক হলেও সত্য, আহলে হাদিস ভাইয়েরা হানাফি মাযহাবের অনেক কিয়াস সংক্রান্ত মাসআলায় মানতে নারাজ কিন্তু এই মাসআলায় তারা নিজেরাই কিয়াস করে যেহেতু অনারবি ভাষায় খুতবা দেওয়ার কোনো নস নেই।
জমহুরের দলিল
উপমহাদেশের বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ.) তাঁর রচিত মুয়াত্তায়ে মালেকের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মুসাফফায় উল্লেখ করেন:
لما لا حظنا خطبة النبى صلى الله عليه وسلم وخلفائه رضى الله عنهم وهلم جرا فنجد فيها وجوذ اشياء، منها الحمد والشهادتان والصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم والامر بالتقوى وتلاوة آية والدعاء للسملمين والمسلمات وكون الخطبة عربية
অর্থ: রাসূলুল্লাহ (সা.), খুলাফায়ে রাশেদীন, তাবেঈন, তাবেতাবেঈন এবং পরবর্তী যুগের ফুকাহায়ে কেরাম ও উলামায়ে দ্বীনের খুতবাসমূহ লক্ষ করলে দেখা যায় যে তাঁদের খুতবায় নিম্নের বিষয়গুলো ছিল।
যথা :
আল্লাহ তাআলার হামদ, শাহাদাতাইন (অর্থাৎ তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করা) রাসূল (সা.)-এর প্রতি দরূদ, তাকওয়ার আদেশ, পবিত্র কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত, মুসলমানদের জন্য দু’আ। তাঁরা সকলেই আরবী ভাষায় খুতবা দিতেন। গোটা মুসলিম বিশ্বের বহু অঞ্চলের ভাষা আরবী নয়, তবুও সর্বত্র আরবী ভাষায়ই খুতবা দেওয়া হতো। (মুসাফফা, ১/১৫৪)
খুতবা নামাজের অংশ:
عن عمر بن الخطاب أنه قال: إنما جعلت الخطبة مكان الركعتين
অর্থ: আল্লামা আবু বকর ইবনে শাইবা (রহ.) উল্লেখ করেন, হযরত উমর (রা.) বলেন, জুমু’আর খুতবাকে দুই রাক’আত নামাযের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, হাদীস-৫৩২৪)
অন্যত্র হযরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে,
عن عمر بن الخطاب قال: كانت الجمعة اربعا فجعلت ركعتين من أجل الخطبة
অর্থ: হযরত উমর (রা.) বলেন, জুমু’আর নামায চার রাক’আত ছিল। এরপর খুতবার কারণে দুই রাক’আত করা হয়েছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, হাদীস-৫৩৩১)
নামাজ হলো আরবি ভাষায়, সুতরাং যা নামাজের স্থলাভিষিক্ত তা আরবি ভাষায় হওয়ায় যুক্তিযুক্ত।
পবিত্র কোরআনে খুতবাকে যিকর বলা হয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন.
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (৯)
অর্থ : হে মুমিনগণ, যখন জুমু’আর দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরীনগণ লিখেছেন, এখানে ‘যিকর’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ‘খুতবা’। এ ব্যাপারে নিম্নে কয়েকটি তাফসীরের উদ্ধৃতি পেশ করা হলো :
১। তাফসীরে রুহুল মাআনী, খ- ১৩, পৃষ্ঠা ৭০২-এ উল্লেখ আছে,
والمراد بذكر الله الخطبة الصلاة
অর্থ: আল্লাহর যিকর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, খুতবা ও নামায।
২। ইমাম রাযী (রহ.) আত-তাফসীরুল কাবীর গ্রন্থে লেখেন, (খ- ৯, পৃষ্ঠা ৩০)
الذكر هو الخطبة عند الأكثر من اهل التفسير
অর্থ : অধিকাংশ মুফাসসিরগণের নিকট যিকর দ্বারা খুতবা উদ্দেশ্য।
সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত একটি হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنِ اغْتَسَلَ يَوْمَ الجُمُعَةِ غُسْلَ الجَنَابَةِ ثُمَّ رَاحَ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَدَنَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّانِيَةِ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَقَرَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّالِثَةِ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ كَبْشًا أَقْرَنَ، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الرَّابِعَةِ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ دَجَاجَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الخَامِسَةِ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَيْضَةً، فَإِذَا خَرَجَ الإِمَامُ حَضَرَتِ المَلاَئِكَةُ يَسْتَمِعُونَ الذِّكْرَ
অর্থ : হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন জানাবাতের গোসল করে সর্বপ্রথম রওনা হলো, সে যেন একটি উট কোরবানী করল। দ্বিতীয় পর্যায়ে যে ব্যক্তি উপস্থিত হলো, সে যেন একটি গরু কোরবানী করলো। তৃতীয় নম্বরে যে উপস্থিত হলো, সে যেন একটি বকরি কোরবানী করল। চতুর্থ নম্বরে যে ব্যক্তি উপস্থিত হলো, সে যেন একটি মুরগি সদকা করল। পঞ্চম নম্বরে যে উপস্থিত হলো, সে যেন একটি ডিম সদকা করল। এরপর যখন ইমাম (খুতবার) জন্য বের হয়ে আসেন, ফেরেশতারা উপস্থিত হন, তাঁরা মন দিয়ে যিকর (খুতবা) শ্রবণ করেন।
(বুখারী শরীফ, ১/১২৭, হাদীস-৮৩২, মুসলিম শরীফ, হাদীস-১৪০৩, তিরমিযী শরীফ, হাদীস-৪৫৯, নাসায়ী শরীফ, হাদীস-১৩৭১, আবু দাউদ শরীফ, হাদীস-২৯৭)
ফুকাহায়ে কেরামও খুতবাকে যিকর বলেন।
খুতবাকে কোরআন ও হাদিসে জিকির বলে পরিচয় করা হয়েছে। জিকির আরবীতে হওয়াই উচিত।
সংক্ষেপে চার মাযহাবের অবস্থান তুলে ধরা হলো:
মালেকী মাযহাব
وذهب المالكية إلى أنه عند العجز عن الإتيان بها بالعربية لا تلزمهم الجمعة
অর্থ: আরবী ভাষায় জুমার খুতবা দিতে অক্ষম হলে তাদের উপর জুমার নামাজ পড়া আবশ্যক নয়। বরং যোহরের নামাজ পড়বে। -আল মাউসুআতুল ফিক্বহিয়্যাহ আল কুওয়াইতিয়্যাহ ১৯/১৮০
শাফেয়ী মাযহাব
لا تباع السَّلَفِ وَالْخَلَفِ وَلِأَنَّهَا ذِكْرٌ مَفْرُوضٌ وَيُشْتَرَطُ كَوْنُهَا عَرَبِيَّةً) فَاشْتَرَطَ فِيهِ ذَلِكَ كَتَكْبِيرَةِ الْإِحْرَامِ، فَإِنْ أَمْكَنَ تَعَلَّمُهَا خُوطِبَ بِهِ الْجَمِيعُ فَرْضَ كِفَايَةٍ وَإِنْ زَادُوا عَلَى الْأَرْبَعِينَ، فَإِنْ لَمْ يَفْعَلُوا عَصَوْا . وَلَا جُمُعَةَ لَهُمْ بَلْ يُصَلُّونَ الظَّهْرَ
অর্থাৎ, সালাফ এবং খালাফদের অনুসরণার্থে খুতবা আরবী ভাষায় হওয়া শর্ত। কেননা খুতবা নির্দিষ্ট যিকির তাই তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় খুতবাও আরবী হওয়া শর্ত। যদি আরবী ভাষায় খুতবা দিতে অক্ষম হয়, তাহলে তাদের জুমার নামাজ নেই। বরং যোহর পড়বে। -নিহায়াতুল মুহতাজ ৭/৮২ (শামেলা); আল মাউসুআতুল ফিকুহিয়্যাহ আল কুওয়াইতিয়্যাহ ১৯/১৮০
হাম্বলী মাযহাব
ولا يصح الخطبة بغير العربية مع القدرة عليها بالعربية (كقراءة) فإنها لا تجزئ بغير العربية وتصح الخطبة بغير العربية (مع العجز) عنها بالعربية لأن المقصود بها الوعظ والتذكير وحمد الله والصلاة علي رسول الله صلي الله عليه وسلم
অর্থ: আরবী ভাষায় সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও অন্য ভাষায় খুতবা প্রদান করা জায়েয নেই, যেমনিভাবে নামাযে অন্য ভাষায় কেরাত পড়া জায়েয নাই। তবে যদি আরবী ভাষায় অক্ষম হয়, তাহলে পারবে। এমতাবস্থায় অন্য ভাষায় খুতবা পাঠ করা জায়েয হবে এবং নামায আদায় সহীহ হবে। -ইনআমুল বারী ৪/১০৬-১০৭
অর্থ: আরবী ভাষায় সক্ষম হওয়া সত্বেও অন্য
ভাষায় খুতবা প্রদান করা জায়েয নেই, যেমনি
ভাবে নামাযে অন্য ভাষায় কেরাত পড়া জায়েয নাই। তবে যদি আরবী ভাষায় অক্ষম হয়, তাহলে অন্য ভাষায় খুতবা প্রদান সহীহ হবে। কেননা খুতবা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তাআলার প্রশংসা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ প্রেরণ, এবং নসিহত। কাশফুল কিনা ২/৩৬; ইনআমুল বারী, টীকা, ৪/১০৭
হানাফি মাযহাব
আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় খুতবা পড়া জায়েয নেই বরং মাকরূহে তাহরীমী। তবে যদি কোন ব্যাক্তি অন্য ভাষায় খুতবা দিয়ে দেয়, তাহলে জুমার শর্ত পূরণ হয়ে যাবে এবং নামাজও সহীহ হবে।
وصح شروعه مع كراهة التحريم بتسبيح وتهليل، كما صح لو شرع بغير عربية
-রদ্দুল মুহতার ১/৪৮৪
অতএব উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেলো ৪ মাযহাবের ইমামগণ এ ব্যাপারে একমত যে, খুতবা আরবী ভাষায় হওয়া আবশ্যক। শ্রোতাদের বুঝে আসুক বা না আসুক।
আমাদের প্রতি একটি আপত্তি ও তার জবাব
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) নামাযে ফারসী ভাষায় কেরাত পাঠকে বৈধ বলেছেন। অতএব, আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেওয়াও বৈধ হ
নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
অতএব উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেলো ৪ মাযহাবের ইমামগণ এ ব্যাপারে একমত যে, খুতবা আরবী ভাষায় হওয়া আবশ্যক। শ্রোতাদের বুঝে আসুক বা না আসুক।
আমাদের প্রতি একটি আপত্তি ও তার জবাব
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) নামাযে ফারসী ভাষায় কেরাত পাঠকে বৈধ বলেছেন। অতএব, আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেওয়াও বৈধ হবে।
জবাব নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর উক্ত মতামত থেকে তিনি পরবর্তীতে রুজু (মত প্রত্যাহার) করেছেন। সুতরাং তার এই বর্জিত মতামতটি দলিল হিসেবে পেশ করা বোকার পরিচয় দেওয়া। যেমন হেদায়া কিতাবে ১/১০২ উল্লেখ আছে,
ويروى رجوعه في اصل المسئلة إلى قولهما وعليه الاعتماد والخطبة والتشهد على هذا الاختلاف
২. ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর প্রথম মতামত অনুযায়ী খুতবা অনারবী ভাষায় দেওয়া জায়েয দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল মাকরূহে তাহরীমির সাথে জায়েয। -শামী ২/১৮৩; বাহরুর রায়েক ১/৫৩৫; তাতারখানিয়া ২/৭৪; সিআয়া ২/১৫৫
এ ছাড়া ফিকহে হানাফীর অধিকাংশ কিতাবেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, আবু হানীফা (রহ.) এর মতে অনারবী ভাষায় খুতবা জায়েয দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মাকরূহে তাহরীমির সাথে জায়েয।
৩ ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর পূর্ববর্তী বক্তব্যটির একটির ব্যাখ্যা হলো, অনারবী ভাষায় খুতবা দ্বারা যদি আল্লাহর যিকর আদায় হয়ে যায়, তাহলে জুমুআ সহীহ হবে।
আহলে হাদিসের দলিল/যুক্তি
তাদের সরাসরি কোন দলিল নেই। এটি একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। খুতবা শব্দের অর্থ হলো বক্তৃতা, লোকদেরকে নসিহত করা, সতর্ক করা। এখন যাদের মাতৃভাষা আরবি নয়। ইমামের বক্তব্য যদি না বোঝে তাহলে বক্তৃতার কোন অর্থ হলো না। প্রত্যেক নবী তার কওমকে তাদের ভাষায় দাওয়াত দিয়েছেন। দলিল-
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
“আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে নিজ সম্প্রদায়ের ভাষা-ভাষী করে পাঠিয়েছি। যাতে তিনি তাদেরকে (আল্লাহ্র বিধান) বর্ণনা করে দেন।” (সূরা ইবরাহীমঃ ৪)
জমহুরের জবাব: জমহুরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যাদের ভাষা আরবি নয়, তাদের অনারবি ভাষায় খুতবা দেওয়া সর্বযুগেই প্রয়োজন ছিল। তারপরেও সাহাবী, তাবি, যুগে যুগে সলফে সালেহীন আরবি ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেননি। দলিল-
এ বিষয়ে আল্লামা কাসানী র. বলেন-
وصح الاقتصار في الخطبة علي ذكرخالص لله تعالي نحو تسبيحة أو تحميدة أو تهليلة او تكبيرة مع الكراهة لترك السنة عند الامام وقالا: لابد من ذكر طويل يسمي خطبة واقله قدر التشهد. (حاشية الطحطاوي: ص৫১৩، وكذا في البدائع: ১/৫৯০)
এমন মনে করা ঠিক নয় যে, রাসূল (সা.) ও সাহাবীদের যুগে অনারবী ভাষায় খুতবা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। কারণ, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শেষ যামানায় দলে দলে লোক ইসলামে প্রবেশ করতে থাকে। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন,
وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا
অর্থ : ‘আর আপনি দেখবেন লোকেরা দলে দলে আল্লাহর উক্ত আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পেছনে বিভিন্ন ভাষার মানুষ নামায আদায় করত। খুতবা ছাড়া দ্বীনি শিক্ষার অন্য কোনো মাধ্যমও তেমন ছিল না। তারপরও রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্য ভাষায় খুতবা অনুবাদের ব্যবস্থা করেননি। তদ্রুপ সাহাবীগণের যুগে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সম্পর্কে বুখারী শরীফ ১/১৩ তে বর্ণিত আছে, তিনি নিজের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য দোভাষী ব্যবহার করতেন। তবুও তিনি স্থানীয় ভাষায় খুতবা দেওয়া বা খুতবার অনুবাদের ব্যবস্থা করেননি। খুতবাকে দুই রাক’আত নামাযের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। তাই নামাযে যেমন ক্বেরাত আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় আদায় করা যায় না, খুতবাও আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় দেওয়া যাবে না।
সারকথা হলো, রাসূলুল্লাহ (সা.), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাবেতাবেঈনের যামানা হতে আজ পর্যন্ত উম্মতের ধারাবাহিক আমল হলো আরবী ভাষায় খুতবা প্রদান করা। তাঁরা কখনো আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেননি। সুতরাং আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেওয়া বা আরবীতে খুতবা পাঠ করে নামাযের পূর্বে অন্য ভাষায় তার অনুবাদ করা বিদ’আত ও নাজায়েয।
হযরত ইরবাস বিন সারিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ يَرَى بَعْدِي اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
তোমাদের মাঝে আমার পর জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতভেদ দেখবে। তখন তোমাদের উপর আমার এবং আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত আঁকড়ে ধরবে। সেটিকে মাড়ির দাত দিয়ে কামড়ে রাখবে। আর সাবধান থাকবে নব উদ্ভাবিত ধর্মীয় বিষয় থেকে। কেননা ধর্ম বিষয়ে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৪৪}
والله اعلم بالصواب