*গুনাহে পতিত হওয়ার কারণসমূহ*
━━━━━━ • পর্ব - ০১ • ━━━━━━
গুনাহে নিপতিত করে এমন অনেক কারণ রয়েছে। যেগুলো সালাফ আলেমগণ তাদের রচনায় লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। উম্মাহকে সেগুলোর ব্যাপারে সচেতন করেছেন। এবং সেগুলো থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দিয়েছেন। নিচে পয়েন্ট আকারে প্রধান প্রধান কারণগুলো উল্লেখ করা হলো। যা পূর্ববর্তী আলেম ও দাঈদের বই পুস্তক ও রচনাবলী থেকে সংকলন করা হয়েছে।
০১। *প্রবৃত্তির অনুসরণ*
প্রবৃত্তির অনুসরণ বান্দাকে গুনাহ ও অবাধ্যতায় লিপ্ত করার সবচেয়ে বড় কারণের অন্যতম। নিজের খেয়ালখুশি মাফিক চলাকে প্রবৃত্তির অনুসরণ বলে।
*প্রবৃত্তির অনুসরণ নিষেধের ক্ষেত্রে আল্লাহর বাণী সমূহ...*
আল্লাহ তাআলার বাণী-
وَاصْبِرْ نَـفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدٰوةِ وَالْعَشِىِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهٗ وَلَا تَعْدُ عَيْنٰكَ عَنْهُمْ ۚ تُرِيْدُ زِيْنَةَ الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا ۚ وَ لَا تُطِعْ مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَهٗ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوٰٮهُ وَكَانَ اَمْرُهٗ فُرُطًا
আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না। (সূরা কাহফ, আয়াত ২৮)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
اَرَءَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰهَهٗ هَوٰٮهُ ؕ اَفَاَنْتَ تَكُوْنُ عَلَيْهِ وَكِيْلًا
আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তারা প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার জিম্মাদার-দায়িত্বশীল হবেন? (সূরা ফুরকান, আয়াত ৪৪)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরও বলেন-
فَاِنْ لَّمْ يَسْتَجِيْبُوْا لَكَ فَاعْلَمْ اَنَّمَا يَـتَّبِعُوْنَ اَهْوَآءَهُمْ ؕ وَمَنْ اَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوٰٮهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظّٰلِمِيْنَ
অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হিদায়াতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে? নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা জালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না। (সূরা কাসাস, আয়াত ৫০)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরও বলেন-
يٰدَاوٗدُ اِنَّا جَعَلْنٰكَ خَلِيْفَةً فِى الْاَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوٰى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌۢ بِمَا نَسُوْا يَوْمَ الْحِسَابِ
হে দাউদ, আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি। অতএব তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব করো এবং খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। কেননা, তারা হিসাব-দিবসকে ভুলে যায়। (সূরা ছোয়াদ, আয়াত ২৬)
এ প্রসঙ্গে কুরআনের অনেক আয়াত রয়েছে। বান্দার উচিত ও অবশ্য কর্তব্য হলো, এই সকল আয়াতগুলোকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা। যাতে করে নিজেদের খেয়াল খুশি তথা কু-প্রবৃত্তির অনুসরণের ভয়াবহতার ব্যাপারে এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করলে যেসব ধ্বংস, পথভ্রষ্টতা ও বিচ্যুতি হয়ে থাকে তা জানা যায়।
হাদীসের মাঝে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কু-প্রবৃত্তি হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন।
যেমন: হাদীসে এসেছে, যিয়াদ ইবনু ইলাক্বাহ (রহঃ) তাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআয় বলতেন-
اللهم إني أعوذ بك من منكرات الأخلاق والأعمال والأهواء والأدواء
হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে গর্হিত চরিত্র, গর্হিত কাজ ও কু-প্রবৃত্তি হতে আশ্রয় চাই।
এ ব্যাপারে আরও বিভিন্ন আছার বর্ণিত হয়েছে। আল্লামা ইবনুল জাওযী রহিমাহুল্লাহ যাম্মুল হাওয়া কিতাবে উল্লেখ করেছেন-
☞ মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: বাহাদুরি হলো শাহওয়াত পরিত্যাগ করা ও কু-প্রবৃত্তির অবাধ্য হওয়া।
☞ হযরত আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: কোন মানুষ যখন সকালে উপনীত হয় তখন তার প্রবৃত্তি ও আমল একত্রিত হয়। সুতরাং যদি তার আমল তার নফসের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তাহলে সেই দিন তার খারাপ, কিন্তু যদি অন্তরের কামনা-বাসনা তার আমলের অনুগামী হয় তাহলে সেই দিনটি হয় তার উত্তম দিন।
✦চলবে ইনশাআল্লাহ