আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৩২৮: শুধু আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা কি বিদআত?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৩২৮

আসসালামু আলাইকুম। মুহতারামআশা করি ভালো আছেন।  আমার জানার বিষয় হল শুধু আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা কি বিদআত?

দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম। তারিখ০৩/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি

 

 মাওলানা আখতার হোসেন লালমনিহাট থেকে-----

 

জবাব:  

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

হামদ-সানা ও দরুদের পর প্রথম কথা হলোশুধু আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা যাবে কিনা এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।  সম্মানিত চার ইমাম  এবং অধ্যাবদি তাদের অনুসারি লক্ষ লক্ষ ওলামা-ফোকাহাওলামায়ে মোতাকাদ্দিমিন-মুখায়াখ্খিরিন কেহই শুধু আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা  বিদআত বলিনি। অপরপক্ষে   ইবনে তাইমিয়া রহ., নিকটতম যুগের তার অনুসারি  শায়েখ আলবানি রহ. , শায়েখ উসায়মিন রহএবং বর্তমানে তাদের অনুসারীরা (আহলে হাদিসরা) এটাকে বিদআত বলে।


দ্বিতীয় কথা হলো,   বিদআত বলা হয়যার অস্তিত্ব কুরআন-সুন্নাহ ও খয়রুন করুনে পাওয়া যায় না্। সুতরাং যার অস্তিত্ব কুরআনে-সুন্নাহয় পাওয়া যায়,  তা কখনও বিদআত হতে পারে না। দলিল:

 

আয়াত নং-০১

قُلِ ادۡعُوا اللّٰہَ اَوِ ادۡعُوا الرَّحۡمٰنَ ؕ اَیًّا مَّا تَدۡعُوۡا فَلَہُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی ۚ وَلَا تَجۡہَرۡ بِصَلَاتِکَ وَلَا تُخَافِتۡ بِہَا وَابۡتَغِ بَیۡنَ ذٰلِکَ سَبِیۡلًا

অর্থঃ বলে দাওতোমরা আল্লাহকে ডাক বা রহমানকে ডাকযে নামেই তোমরা (আল্লাহকে) ডাক, (একই কথা। কেননা) সমস্ত সুন্দর নাম তো তাঁরই।  তুমি নিজের নামায বেশি উঁচু স্বরে পড়বে না এবং অতি নিচু স্বরেও নয়বরং উভয়ের মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বন করবে। সূরা ইসরা-১১০

 

তাফসিরএ আয়াত সম্পর্কে আল্লামা ইবনে কাসির রহবলেন,

 

يَقُول تَعَالَى قُلْ يَا مُحَمَّد لِهَؤُلَاءِ الْمُشْرِكِينَ الْمُنْكِرِينَ صِفَة الرَّحْمَة لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ الْمَانِعِينَ مِنْ تَسْمِيَته بِالرَّحْمَنِ اُدْعُوا اللَّه أَوْ اُدْعُوا الرَّحْمَن أَيًّا مَا تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى أَيْ لَا فَرْق بَيْن دُعَائِكُمْ لَهُ بِاسْمِ اللَّه أَوْ بِاسْمِ الرَّحْمَن فَإِنَّهُ ذُو الْأَسْمَاء الْحُسْنَى كَمَا قَالَ تَعَالَى " َ

তাফসীরআল্লাহ তাআলা বলেনহে মুহাম্মাদ ! আপনি ঐ সকল মুশরিকদেরকে বলে দির যারা আল্লাহর রহমান নামকে অস্বীকার করে

তোমরা চাও আল্লাহ বলে ডাক কিংবা রহমান বরে ডাক এই দুই নামে কোন পার্থক্য নেই অতত্রব যেই নামে ডাক ডাকিতে পার  তাফসীরে ইবনে কাসির-৬খন্ড,৩৯২ পৃষ্ঠাঅধ্যাপক মাওলানা আখতার ফারুক অনূদিতইসলামিক ফাউন্ডেশন

 

আয়াত নং-০২

فَذَكِّرْ إِنْ نَفَعَتِ الذِّكْرَى (9) سَيَذَّكَّرُ مَنْ يَخْشَى

অনুবাদ অনুবাদ সফলকাম তারাই যারা আত্মশুদ্ধি অর্জন করবে,আল্লাহর নামে যিকির করবে,এবং নামাজ আদায় করবে।  সূরা আলা--১০

 

তাফসির এখানে আল্লাহ তায়ালা কিন্তু وذكر ربك বলেননি,বরং বলেছেন৷ وذكر اسم ربك এর দ্বারা এই দিকে ইশারা যে এখানে আল্লাহ শব্দ বলে যিকির করাও উদ্দেশ্য। সূত্রমাআরিফুল কুরআন ৮ খণ্ড৫৮৪পৃ.

 

আয়াত নং-০৩

وَاذْكُرْ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ إِلَيْهِ تَبْتِيلاً (8) رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ لا إِلَهَ إِلاَّ هُوَ فَاتَّخِذْهُ وَكِيلاً (9)

অর্থকিন্তু (দিন হোক বা রাত) সবসময়ই তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করো এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি নিবেদিত থাকো।  সূরা মুযাজ্জিম্মিল-০৮

 

তাফসির:

واذكر -أيها النبياسم ربكفادعه بهوانقطع إليه انقطاعًا تامًا في عبادتكوتوكل عليههو مالك المشرق والمغرب لا معبود بحق إلا هو, فاعتمد عليهوفوِّض أمورك إليه.

التفسير الميسر الصفحة رقم 574 من القرآن الكريم

অর্থ:  হে নবি আপনার রবের নামে জিকির করুন অর্থাৎ আল্লাহ দ্বারা/বলে ডাক সূত্রতাফসিরে মায়সির-৫৭৪ পৃষ্ঠা

 

হাদিস নং-০১

عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: "لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِاللهُ، اللهُ".  
صحيح مسلم (1/ 131) (148)، إكمال المعلم (1/459)، شرح النووي على مسلم (2/178)، تحفة الأحوذي (6/ 375)، البحر المحيط الثجاج (4/163).

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামত তখনই সংঘটিত হবেযখন জমিনের মধ্যে আল্লাহ’ ’আল্লাহ’ বলার মতো কেউ থাকবে না। অপর এক বর্ণনায় আছে- এমন কোন লোকের ওপরে কিয়ামত সংঘটিত হবে নাযে আল্লাহ’ ’আল্লাহ’ বলেছে। তাখরিজমুসলিম-১৪৮ইকমালুল মলিম-/৪৫৯


ব্যাখ্যাএ হাদিসটির দুটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়প্রথমত একদল আলেম বলেনএর দ্বারা উদ্দেশ্য হলোلا تقوم الساعة حتى لا يقال لا إله إلا الله অর্থাৎ কিয়ামত হবে না লা ইলাহা বলার মত কেউ থাকা পর‌্যন্ত অর্থাৎ একজন ঈমানদার থাকা পর‌্যন্ত কিয়ামত হবে না।

 

দ্বিতীয়ত আরেকদল মুহাদ্দিসগণ বলেনএর উদ্দেশ্য হলো লফজি জিকির। দলিল:

 

ব্যাখ্যা নং-০১

الله الله فيها ذكر للتاكيد و قيل في تكرره عبارة تكثير

অর্থাৎ এখানে আল্লাহ আল্লাহ দ্বারা জিকিরে তাকিদ বুঝানো হয়েছে। এবং কেহ কেহ বলেনএখানে আল্লাহ শব্দের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে অধিক এর কারণে অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার নামের জিকিরের কারণে। মিশকাতুল মাসাবিহ-৪০ পৃ১০ নং হাশিয়া

 

ব্যাখ্যা নং-০২

أخبر الرسول صلى الله عليه وسلم أن الساعة لن تقوم حتى لا يكون في الأرض من يذكر اسم الله و يعبده،

অর্থাৎ আল্লাহর নামের জিকির ও ইবাদত  করনেওয়ালা থাকা পর‌্যন্ত কিয়ামত হবে না। সূত্রমাওসুআতুল আহাদিসুল নবুওয়া

 

ব্যাখ্যা নং-০৩

ومعنى الحديث –كما هو جليأنه لا يبقى على الأرض من يذكر اللهويوضح ذلك ما جاء في صحيح مسلم من حديث النواس بن سمعان الطويل في ذكر الدجال وعلامات الساعة وفيه:... فبينما هم كذلك إذ بعث الله ريحا طيبة فتأخذهم تحت آباطهم فتقبض روح كل مؤمن وكل مسلم، ويبقى شرار الناس يتهارجون فيها تهارج الحمر فعليهم تقوم الساعة. رقم الفتوى: 137365

অর্থাৎ  একজন আল্লাহ আল্লাহ মুখে বললেওয়ালা থাকা পর‌্যন্ত কিয়ামত হবে না।  সূত্র: aluah.net ফাতওয়া নং-১৩৭৩৬৫

 

ব্যাখ্যা নং-০৪

الحديث فيه فضل الله تعالى على المؤمنين حيث أكرمهم بقبض أرواحهم بريح اليمن، وعدم قيام الساعة عليهم؛ لأنها تقوم على شرار الخلق الذين لا يقولون الله الله. مستلة من إبهاج المسلم بشرح صحيح مسلم (كتاب الإيمان(

অর্থাৎ খারাপ লোক/নিকৃষ্ট সৃষ্টির উপর কিয়ামত সংঘটিত হবেযারা বলবে না আল্লাহ আল্লাহ। সূত্রইবহাজুল মুসলিম বিশারহি সহিহ মসলিমকিতাবুল ঈমান অধ্যায়

 

ব্যাখ্যা: নং-০৫

يقول النووي رحمه الله في "شرح مسلم" (2/178) :

" ( يقول الله الله ) : هو برفع اسم الله تعالى ، وقد يغلط فيه بعض الناس فلا يرفعه " انتهى

ويقول الطيبي كما في "تحفة الأحوذي" (6/375) :

معنى ( حتى لا يقال ) حتى لا يذكر اسم الله ولا يعبد "

অর্থাৎ কেহই আল্লাহর নাম নিবে না এবং ইবাদত করবে না। সূত্র: শারহুল মুসলিম-২/১৭৮ ইমাম নববি রহ.

 

হাদিস নং-০২ 

عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ عُمَيْسٍ رضي الله عنها، قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا أُعَلِّمُكِ كَلِمَاتٍ تَقُولِينَهُنَّ عِنْدَ الْكَرْبِ أَوْ فِي الْكَرْبِ؟ أَللَّهُ أَللَّهُ رَبِّي لَا أُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا».

আসমা বিনতে উমাইসের সূত্রেআল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারেনতিনি বলেন: আল্লাহর রসূলআল্লাহর দোয়া ও সালামআমাকে বলেছেন: "আপনি আমার সম্পর্কে যা জানেন তা কি আমি আপনাকে শেখাব নাআল্লাহআল্লাহআমার প্রভুআমি তার সাথে কাউকে শরীক করি না। তাকরিজআবু দাউদ-১৫২৫ আল-নাসাঈ আল-সুনান আল-কুবরা-১০৪০৮ইবনে মাজাহ-৩৮৮২আহমদ-২৭০৮২

 

ব্যাখ্যাالتي علَّمها النبيُّ ﷺ أن تقول: الله ربي تكررت لفظة الجلالة مرتين، الله، الله ربي، فلفظ الجلالة (الله) الأول مُبتدأ، والثاني تأكيدٌ لفظي له.

 

وهذا التَّكرار للفظ الجلالة فيه إشارة إلى عِظم هذا الاسم الكريم، وما تضمّنه من صفة الإلهية، وكذلك أيضًا الاستلذاذ بذكره -تبارك وتعالى-، واستحضار لعظمته، والتَّأكيد لوحدانيَّته، فهذا الاسم عرفنا في الكلام

 

এগুলি বলুন এবং এগুলি এমন শব্দ যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শিখিয়েছিলেন: আল্লাহ আমার প্রভু।  আল্লাহ শব্দটি দুবার পুনরাবৃত্তি হয়। আল্লাহআল্লাহ আমার প্রভু 

 

"আল্লাহ তাআলার মহামান্বিত" শব্দটির এই পুনরাবৃত্তিটি এই মহৎ নামের মহত্ত্বের একটি ইঙ্গিতএবং এতে যে স্বর্গীয় গুণ রয়েছেসেইসাথে তাঁকে - ধন্য ও সর্বশক্তিমান - এবং তাঁর মহত্ত্বকে আহ্বান করা এবং তাঁর একত্বের উপর জোর দেওয়া আনন্দ। তিনি তাকে মৌখিকভাবে উল্লেখ করেন।  সূত্র: -শারহুল কিতাব মাআনিল আজকার হিসনুল মুসলিম-২১৬

 

সারকথা হলোশুধু আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা যাবে এমন একটি নসও নেই নিষেধাজ্ঞার কোন দলিল নেই। আর   পবিত্র কুরআন সুন্নাহর সরাসরি নস থাকতেএটাকে বিদআত বলা ঠিক হবে না। একই আয়াত/হাদিসের একাধিক ব্যাখ্যা থাকলে (যা সবই সঠিকউম্মত যে একটি আমল করতে পারেআমলকারীকে বিদআত বলার অবকাশ নেই।


দেখুনএকজন আল্লাহ বলনেওয়ালা থাকতে কিয়ামত হবে না-- এটা দ্বারা ঈমান মাকসাদ একমাত্র ব্যাখ্যা নয় আমি উপরে উল্লেখ করেছি যে মুহাদ্দিসদের এক জামাত এ দ্বারা লফজি জিকির   উদ্দেশ্য নিয়েছেন।

 

ড় আফসোসের বিষয় হলোকিছু ভাইয়েরা যে, এ  আমলের বিষয়ে খয়রুন কুরুনের উপামা দিচ্ছেন। কিন্তু নিজের মতের বিরুদ্ধে গেলে তখন বলে হাদিস থাকতে সাহাবির আমল মানা যাবে না। যেমন ২০ রাকাত তারাবির, জামাত শুরু হলে ফজরের সুন্নাত ইত্যাদি বিষয়ে পল্টি দেয়। তখন এই উসূল মনে থাকে না।  আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ছহিহ পথে চলার তাওফিক দান করুন।

 

 

والله اعلم بالصواب