শরীরের সদকা করছেন তো?
=====================
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, মানুষের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য সদকা রয়েছে। এটি কেবল দান বা অর্থসম্পর্কিত নয়, বরং বিভিন্ন সৎ কাজও সদকার অন্তর্ভুক্ত। নীচে শরীরের সদকার কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো:
১. সালাম দেওয়া:
সালাম বিনিময় করা সদকার একটি রূপ। এটি সমাজে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব তৈরি করে।
রেফারেন্স: (সহিহ বুখারি: 2989)
২. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে বারণ করা:
অন্যকে ভালো কাজে উৎসাহিত করা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করাও সদকা।
রেফারেন্স: (সহিহ মুসলিম: 1009)
৩. কোনো কষ্টদায়ক জিনিস পথ থেকে সরিয়ে ফেলা:
রাস্তা থেকে কোনো কাঁটা, পাথর বা অন্য কোনো বিপদজনক বস্তু সরিয়ে দিলে তা সদকা হিসেবে গণ্য হয়।
রেফারেন্স: (সহিহ মুসলিম: 1009)
৪. ভালো কথা বলা:
মিষ্টি কথা বা কারও প্রতি সদয় হওয়া, ভালো পরামর্শ দেওয়া, এবং কাউকে উৎসাহিত করা — এসব কাজও সদকা।
রেফারেন্স: (সহিহ বুখারি: 2989)
৫. মুসকান বা হাসি:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "তোমার ভাইয়ের প্রতি হাসি হলো সদকা।"
রেফারেন্স: (তিরমিজি: 1956)
৬. কেউকে পথ দেখানো:
যদি কেউ পথ হারিয়ে ফেলে বা দিকনির্দেশনা চায়, তাকে পথ দেখানোও সদকা।
রেফারেন্স: (তিরমিজি: 1956)
৭. পানির ব্যবস্থা করা:
কাউকে পানি পান করানো বা পানি পাওয়ার ব্যবস্থা করাও সদকার মধ্যে গণ্য।
রেফারেন্স: (আবু দাউদ: 1677)
৮. নিজের জন্য এবং পরিবারের জন্য খরচ করা:
আপনি যদি আপনার পরিবারের জন্য খরচ করেন, তা-ও সদকা হিসেবে গণ্য হবে।
রেফারেন্স: (সহিহ বুখারি: 4006)
৯. নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা:
খারাপ অবস্থায় ধৈর্য ধারণ করা এবং নিজের আবেগ বা রাগ নিয়ন্ত্রণ করাও সদকা।
রেফারেন্স: (তিরমিজি: 2024)
এই কাজগুলো সহজে করা যায় এবং এগুলোর প্রতিটি মানুষের দেহের সদকার অন্তর্ভুক্ত।এসবের বিপরীতে ফজর নামাজের পর সূর্য উঠা পর্যন্ত জিকির আজকারে সময় দিয়ে পরবর্তীতে দুই রাকআত সালাতুল এশরাক পড়লেও শরীরের সমস্ত জোড়ার সদকা আদায় হয়ে যায়।
অনেকের প্রশ্ন এশরাক ও দুহা'র নামাজ কি একই? তাদের জন্য বলা যেতে পারে
হ্যাঁ, এশরাকের নামাজ এবং সালাতুত দুহা (দুহার নামাজ) মূলত একই ধরনের নামাজ, তবে এর সময়ের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন নামে পরিচিত হয়।
১. এশরাকের নামাজ:
এশরাকের নামাজ সূর্যোদয়ের পর কিছুটা সময় (প্রায় ১৫-২০ মিনিট) অপেক্ষা করে আদায় করা হয়। এটি নফল নামাজ এবং দুটি বা চার রাকাত পড়া যায়।
এশরাকের নামাজের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা, এবং এই নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে।
২. সালাতুত দুহা (দুহার নামাজ):
দুহার নামাজ দিনের প্রায় মধ্যভাগের কাছাকাছি সময়ে (সূর্যোদয়ের প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর থেকে শুরু করে জোহরের আজানের আগে পর্যন্ত) আদায় করা হয়। এটি ২, ৪, ৬ বা ৮ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়।
এই নামাজেরও অনেক ফজিলত রয়েছে এবং এটাকে "আওয়াবিনদের নামাজ" (আল্লাহর দিকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের নামাজ) বলা হয়।
মূল পার্থক্য:
এশরাক: সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পর (প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর)।
সালাতুত দুহা: সূর্যোদয়ের ১-১.৫ ঘণ্টা পর থেকে জোহরের সময়ের আগ পর্যন্ত।
ফজিলত:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
"মানুষের দেহের ৩৬০টি অস্থির প্রত্যেকটির উপর সদকা রয়েছে। এবং দুহা সময়ে ২ রাকাত নামাজ পড়া সমস্ত অস্থির জন্য সদকা হিসেবে পরিগণিত হয়।"
— (সহিহ মুসলিম: 720)
তাহলে, এশরাক এবং সালাতুত দুহা একই ধরনের নামাজ, তবে সময়ের ভিত্তিতে তাদের ভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে।