দৃষ্টিসংযম!
-
সুলাইমান বিন ইয়াসার রহ.। বিশিষ্ট তাবেয়ী। উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা.-এর আযাদকৃত দাস। মদীনার সাতজন বিশিষ্ট ফকীহের একজন। তিনি দেখতে শুনতে ছিলেন অত্যন্ত সুন্দর। তাকওয়া পরহেযগারীতে তুলনারহিত! হবেন না কেন, নবী পরিবারের আলোবাতাস গায়ে মেখেছেন যে!
-
একবার সফরে বের হলেন। একজন সাথীকে নিয়ে। খাবারের প্রয়োজন দেখা দিল। সাথী বাজারে গেলেন খাবার আনতে। সুলাইমান এক জায়গায় বসে অপেক্ষা করছেন।
-
অদূরে উঁচু টিলার ওপরে এক বেদুইন যুবতী বসা ছিল। তার চোখ পড়লো সুলাইমানের ওপর। এত সুন্দর পুরুষ সে তার জীবনে দেখেনি। বিস্ময়ে তার দুই চোখ স্থির হয়ে গেলো। বোরকা-নেকাব পড়া থাকলেও, সে নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না। কিসের যেন এক মোহিনী টানে এদিকে রওয়ানা দিল। টিলা থেকে নামতে গিয়ে হোঁচট খেয়েও তার সম্বিত ফিরল না। ঘোর কাটল না।
-
সামনে এসে দাঁড়াল। নেকাব উঠিয়ে ফেলল। বেরিয়ে এল পূর্ণচন্দ্রের মতো অনিন্দ্য সুন্দর এক মুখচ্ছবি!
-আমাকে কিছু দিন!
সুলাইমান একবার তাকিয়েই দৃষ্টি অবনত করে ফেললেন। তিনি মনে করেছেন মেয়েটা কিছু চাইতে এসেছে। ক্ষুধার্ত। তিনি উঠে গিয়ে ব্যাগ খুলে সামান্য খাবার ছিল, সেটা বাড়িয়ে দিলেন।
-আমি এই খাবার দিয়ে কী করবো!
-তাহলে কী চাও?
-একজন পুরুষের কাছে একজন নারী কী চাইতে পারে?
সুলাইমানের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। ভয়ে কেঁপে উঠে বললেন:
-তোমাকে এখানে খোদ শয়তান পাঠিয়েছে।
সুলাইমান দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললেন। বসে পড়ে মাথাকে দু’হাঁটুর মধ্যে গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিলেন।
-
মেয়েটা এহেন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি দেখে, নেকাব নামিয়ে ফেলল। নিজের তাঁবুতে ফিরে গেলো। কিছুক্ষণ পর সাথী বাজার থেকে ফিরল। বাজার সদাই করে। খাবার-দাবার নিয়ে। সে দেখলো সুলাইমানের চোখে কান্নার ছাপ:
-তুমি কেঁদেছ? কিন্তু কেন?
-না তেমন কিছু নয়।
-বড় কিছু না হয়ে যায় না। আমি তোমাকে সেই ছেলেবেলা থেকেই চিনি। বড়সড় কিছু না হলে তুমি কাঁদার পাত্র নও!
-
সঙ্গীর পীড়াপীড়িতে সুলাইমান ঘটনা খুলে বলতে বাধ্য হলেন। পুরো ঘটনা শুনে সাথী হাতের ব্যগ-থলে রেখে নিজেই কাঁদতে শুরু করে দিল:
-অবাক কান্ড! তুমি কেন কাঁদছ?
-কাঁদব না! তোমার চেয়েও আমার বেশি কাঁদা প্রয়োজন।
-কেন?
-আমি আজ তোমার স্থানে থাকলে, সে মেয়ের প্রস্তাব এড়াতে পারতাম না। নিজেকে ধরে রাখতে পারতাম না। ঠিকই গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়তাম!
-
আবার সফর শুরু হলো। মক্কায় পৌঁছেন দু’জনে। তাওয়াফ-সাঈ শেষ হলো। হাজরে আসওয়াদের কাছে বিশ্রাম করতে বসলেন। একটু তন্দ্রামতো এলো। সে অবস্থাতেই স্বপ্নে দেখলেন, একজন অতুলনীয় সুন্দর মানুষ সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন । অপার্থিব একটা সুবাস তার শরীর থেকে ভেসে আসছে:
-আপনি কে?
-আমি ইউসুফ বিন ইয়া‘কুব!
-ওহ! যুলায়খার সাথে সে ঘটনায় আপনি বিস্ময়কার তাকওয়ার পরিচয় দিয়েছেন!
-তোমার আর সেই বেদুইন যুবতীর ঘটনাও কিন্তু কম বিস্ময়কর নয়!
© উস্তায আতিক উল্লাহ হাফিঃ | বই: কোচড় ভরা মান্না