আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৩২৩: যানবাহন বা বাসে নামাজ আদায় করার বিধান

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৩২৩

আসসালামুয়ালাইকুম ভাই আশা করছি আল্লাহ পাক ভালো রেখেছেন। আমি ও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। পর জানতে চাই বাসে বা যানবাহনে চলাচলের সময় নামাজ আদায়ের দালিলিক প্রমাণ সহ সিদ্ধান্ত। গতকাল আমি বলেছিলাম কেবলামুখি হয়ে নামাজের নিয়ত করা র পর গাড়ি যেকোন দিকে যাক নামাজ হবে। এই বিষয়টি নিয়ে মতানৈক্য দেখা যাচ্ছে। যদি সম্ভব হয় আজকে জানতে চাই। তারিখ৩০/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি

 

জনৈক মাওলানা  নাম প্রকাশে অননিচ্ছুক থেকে-----

 

জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, রাসূল () জামানায় বর্তমান যুগের বাস-ট্রেন-বিমান ছিল না। আর যথাসময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনের উপর ফরজ। তবে রাসূল () উটের উপর সালাত আদায় করেছেন এবং নৌকা-জাহাজে নামাজ পড়ার অনুমতি দিয়েছেন। হজরতে ফোকাহায়ে কেরামগণ উঠের উপর কিয়াস করে আধুনিক যুগের যানবাহনের উপর নামাজ আদায় করা জায়েজ বলেছেন। দলিল:

 

কুরআন থেকে দলিল:

Surah Al-Baqara, Verse 115:

وَلِلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

পূর্ব ও পশ্চিম আল্লারই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ। সূরা বাকারা-১১৫


قال ابنُ عمر وطائفةٌنزلت هذه الآيةُ في الصَّلاةِ على الراحلةِ  ي الصلاة على الراحلة قولٌ حسن أيضًا تُعضِّده السنَّة في ذلك) ((التمهيد)) (17/73).

অর্থাৎ হজরত ওমর (রা.) এই আয়াতটি আরোহন অবস্থায় নামাজ আদায় করার ব্যাপারে নাজিল হয়েছে। সূত্রআততামহিদ-১৭/৭৩

 

হাদিস নং-০১

 عن ابنِ عُمرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهما، قال((كان رسولُ الله يُصلِّي وهو مُقبلٌ من مكَّةَ إلى المدينةِ على راحلتِه حيث كان وجهُه؛  قال: وفيه نزلتفَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ [البقرة: 115)

رواه مسلم (700)

অর্থইবনে উমর (রা.) এর সূত্রেআল্লাহ তাদের উভয়ের প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারেনতিনি বলেন: (( আল্লাহর রসূল () মক্কা থেকে মদিনায় আসার সময় তাঁর উটে চড়ে সালাত আদায় করতেনযেখানে তাঁর মুখ ছিল;  তিনি বললেনঃ আর তাতে অবতীর্ণ হয়েছেঃ তারা যেদিকেই মুখ ফিরিয়ে নেয়সেখানেই আল্লাহর চেহারা (আল-  বাকারাঃ ১১৫) তাখরিজমুসলিম-৭০০

 

 

হাদিস নং-

عن عامرِ بنِ رَبيعةَ رَضِيَ اللهُ عَنْه قال((رأيتُ رسولِ اللهِ يُصلِّي على راحلتِه حيث توجَّهتْ به واه البخاري (1093) واللفظ له، ومسلم (701) بمعناه. 


আমের বিন রাবিয়াহ রা. থেকে বর্ণিততিনি বলেন: (আমি রাসূলুল্লাহ ()কে তাঁর উটের উপর নামায পড়তে দেখেছিযখন এটি তাঁর দিকে অগ্রসর হয়েছিল। তাখরিজ: বুখারি-১০৯৩

 

হাদিস নং-

ن ابنِ عُمرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهما قال(سُئِل النبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم عن الصَّلاة في السَّفينة؟ فقال: صَلِّ فيها قائمًا إلَّا أن تخافَ الغرقَ رواه الحاكم (1/409)، والبيهقي (3/155) (5698). حسَّنه البيهقيُّ، وصحَّحه الألبانيُّ على شرْط مسلم في ((أصل صفة الصلاة)) (1/101).  ))

ইবনে উমর রা. থেকেযিনি বলেছেন: ((নবী () কে একটি জাহাজে নামায পড়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলতিনি বললেন: নামায পড়। তার উপর দাঁড়ানো যদি না আপনি ডুবে যাওয়ার ভয় পান । তাখরিজ: মুস্তাদরাকে হাকেম-/৪০৯

 

 

ওলামাদের ইজমা:  

امن الإجماع
نقَل الإجماعَ على ذلك: الترمذيُّ، وابنُ عبد البرِّ، وابنُ قُدامةَ، والنوويُّ، وابنُ تَيميَّة، والعينيُّ، والشوكانيُّ

قال ابنُ قُدامة: (لا نعلمُ خلافًا بين أهل العِلم في إباحة التطوُّع على الراحلة في السَّفر الطويل. قال الترمذي: هذا عند عامَّة أهل العلم) ((المغني)) (1/315) ((الاستذكار)) (2/255).

অর্থাৎ ইমাম তিরমিজি, ইবনে আব্দিল বার, নববি. কুদামা, তাইমিয়া, শাওকানি রহ. প্রমুখ ইজমা বর্ণনা করেছেন।  

আল্লামা ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন, আমরা জানি না এ বিষয়ে খেলাফ করেছেন আহলে এলেমদের মধ্যে (ওলামা-ফোকাহা কেহও এর বিরোধিতা করেননি)

দীর্ঘ সফরে বাহনে সালাত আদায় করা। সূত্র: কিতাবুল মুগনি-১/৩১৫; আল-ইসতিজকার-২/২৫৫


দ্বিতীয় কথা হলো, আপনার বক্তব্যটি সঠিক নয়। কেননা কিবলা দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা ফরজ। দলিল:

আল্লাহ তাআলা বলেন,  

 

قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ ۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا ۚ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ ۗ وَإِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ [٢:١٤٤]

অর্থ: নিশ্চয়ই আমি আপনব আক্কাতে জানব। তাইঅবশ্যই আমি আপনাকে কেবলার দিকে ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদ-হারামের দিকে এগিয়ে যান এবং তোমরা যেখানে থাকসে দিকে (কাবার দিকে) মুখ কর। সূরা বাকারা-১৪৪

 

গাড়িতে/যানবাহনে সালাত আদায়ের ব্যাপারে ফোকাহায়ে কেরামের মতামত হলো, প্রথমে দেখতে হবে গন্তব্য স্থলে পৌঁছে নামাজের ওয়াক্ত  থাকে কিনা, যদি থাকে তাহলে গাড়িতে নামাজ পড়বে না। আর না থাকলে গাড়িতে নামাজ পড়বে।

 

সেক্ষেত্রে কিবলামুখি হতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। যদি গাড়ি কিবলামুখ থেকে অন্যদিকে ঘুরে যায় তবে নামাযে থাকা অবস্থায় কিবলামুখি ঘুরে যাবে। যদি সম্ভব না হয়তাহলে যেদিকে মুখ হয়সেদিকে ফিরেই নামায শেষ করবে। কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্বেও কিবলামুখি হয়ে নামায আদায় করতে না পারলে এই নামায পরে কাযা করতে হবে। কিবলামুখি ফিরে নামায আদায় করতে পারলে পরে তা আদায় করার কোন প্রয়োজন নেই। দলিল:

 

فى الفتاوى الهندية- ولو ترك تحويل وجهة الى القبلة وهو قادر عليه لا يجزيه (الفتاوى الهندية –كتاب الصلاة ،الباب الخمس العشر فى صلاة المسافر-1/144)

অর্থাৎ যদি কিবলার দিক হয়ে নামাজ পড়া সম্ভবপর হওয়া সত্ত্বেও কিবলার দিক না হয়তাহলে নামাজ হবেনা। সূত্র:  ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি- ১খণ্ড; ১৪৪ পৃ.

 

শেষ কথা হলো, যদি গাড়িতে পড়তেই তাহলে  কিবলা নির্ধারণের জন্য কম্পাস, GPS ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারেযদি নামাজরত অবস্থায় কিবলা ঘুরে যাচ্ছে বলে বুঝা যায়তাহলে ওই দিকে সীনা ঘুরিয়ে নিতে হবে। আর সর্বঅবস্থায় ওলামায়ে কেরাম সতর্কতামূলক পরবর্তীতে এই নামাজ পুনরায় পড়ে নেওয়া উত্তম হবে বলে পরামর্শ দেন

 

والله اعلم بالصواب