জিজ্ঞাসা-১৩১০৬:
আসসালামু আলাইকুম। কোন ইমাম যদি কমিটির লোকজনকে বেশি বেশি তোষামোদ করে এবং আনুগত্যের আতিশয্যে গলগলায়মান (!) থাকে,ঐ ইমামের পেছনে ইকতেদাহ করার বিধান জানতে চাই। ধন্যবাদ শায়েখ।
তারিখ:২২/১০/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা নূরে আলম সিদ্দিকী হাফি নাটোর থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ইসলামে এক মিথ্যা ও অতিরিক্ত প্রশংসা করতে নিষেধ করেছে অপর দিকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার শিক্ষা দিয়েছে। যেমন,
অতিরঞ্জিত তোষামোদ বা প্রশংসার নিন্দা:
Surah Aal-e-Imran, Verse 188:
لَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَفْرَحُونَ بِمَا أَتَوا وَّيُحِبُّونَ أَن يُحْمَدُوا بِمَا لَمْ يَفْعَلُوا فَلَا تَحْسَبَنَّهُم بِمَفَازَةٍ مِّنَ الْعَذَابِ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
তুমি মনে করো না, যারা নিজেদের কৃতকর্মের উপর আনন্দিত হয় এবং না করা বিষয়ের জন্য প্রশংসা কামনা করে, তারা আমার নিকট থেকে অব্যাহতি লাভ করেছে। বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। সূরা ইমরান-১৮৮
2663 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ صَبَّاحٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ زَكَرِيَّاءَ، حَدَّثَنَا بُرَيْدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا يُثْنِي عَلَى رَجُلٍ وَيُطْرِيهِ فِي مَدْحِهِ، فَقَالَ: «أَهْلَكْتُمْ - أَوْ قَطَعْتُمْ - ظَهَرَ الرَّجُلِ»
২৪৮৭। মুহাম্মাদ ইবনে সাব্বাহ (রাহঃ) .... আবু মুসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) এক ব্যক্তিকে অপর এক ব্যক্তির প্রশংসা করতে শুনে বললেন, তোমরা তাকে ধ্বংস করে দিলে কিংবা (রাবীর সন্দেহ) বলেছেন, তোমরা লোকটির মেরুদন্ড ভেঙ্গে ফেললে।
Narrated Abu Musa Al-Ash`ari:
The Prophet (ﷺ) heard someone praising another and exaggerating in his praise. The Prophet (ﷺ) said, "You have ruined or cut the man’s back (by praising him so much).
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৮৭ (আন্তর্জাতিক নং ২৬৬৩)
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার নির্দেশ:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: لاَ يَشْكُرُ اللَّهَ مَنْ لاَ يَشْكُرُ النَّاسَ.
অর্থাৎ যে মানুষের শুকরিয়া আদায় করল না, বস্তুত সে আল্লাহ শুকরিয়াও আদায় করলো না। তাখরিজ: আদাবুল মুফরাদ -২১৮
وَعَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اَللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اَللَّهِ - صلى الله عليه وسلم -{ "مَنْ صُنِعَ إِلَيْهِ مَعْرُوفٌ, فَقَالَ لِفَاعِلِهِ: جَزَاكِ اَللَّهُ خَيْراً. فَقَدْ أَبْلَغَ فِي اَلثَّنَاءِ" } أَخْرَجَهُ اَلتِّرْمِذِيُّ, وَصَحَّحَهُ اِبْنُ حِبَّانَ
অর্থ: হযরত উসামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ বলেন, তোমার প্রতি যদি কেউ কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তখন যদি তুমি তাকে জাযাকাল্লাহ খাইরান (আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন) বল তাহলেই তুমি তার যথাযোগ্য প্রশংসা করলে। তাখরিজ: জামে তিরমিযী-২০৩৫; সহীহ ইবনে হিববান-৩৪১৩
দ্বিতীয় কথা হলো, উক্ত ইমাম যদি সত্য ও বাস্তব প্রশংসা বা তোষামদ করে তাহলে কোন অসুবিধা নেই । কিন্তু মিথ্যা- বানোয়াট-অতিরিক্ত প্রশংসা করে, তাহলে তিনি ফাসেক। আর ফাসেকের পিছনে ইকতেদা করা মাকরুহ তাহরিমি। দলিল-
وكره إمامة الفاسق العالم لعدم اهتمامه بالدين فتجب إهانته شرعا، فلا يعظم بتقديمه للإمامة (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح، كتاب الصلاة، فصل فى بيان الأحق بالإمامة-303، رد المحتار، زكريا-2/298، كرتاشى-1/560)
অর্থাৎ কোন ফাসিক ব্যক্তি আলিম হওয়ার পরও তার ইমামতিতে সালাত আদায় করা মাকরূহ। কারণ সে ধর্মীয় বিষয়াদিকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেনা। তাই শরয়ী বিধানের আলোকে তাকেও অপমানিত করা হবে। সুতরাং ইমামতির জন্য আগ বাড়িয়ে দিয়ে তাকে সম্মানিত করা যাবেনা। ( হাশিয়াতুত তাহতাওয়ী আলা মারাকীল ফালাহ, কিতাবুস সালাত, ইমামতির ক্ষেত্রে অধিকতর উপযোগী ব্যক্তি সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ- ৩০৩, রদ্দুল মুহতার- ( জাকারিয়া ২/২৯৮), (করাচি- ১/৫৬০)
সারকথা হলো, কৃতজ্ঞতাবোধ প্রশংসনীয়, তোষামোদ নিন্দনীয়। উক্ত ইমাম কোন কোয়ালিটির সেই বুঝে আমল করা যেতে পারে।
والله اعلم بالصواب