আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩০৯৪: সোশ্যাল মিডিয়ায় মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা জায়েয হবে কি

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩০৯৪: 

আসসালামু আলাইকুম।

ফেসবুক বা মিডিয়াতে মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা কতটুকু জায়েজ হবে। সাধারণভাবে কাউকে স্মরণ করা যেতে পারে কিন্তু কোন দিবস উল্লেখ করে কারো মৃত্যু দিবসে মেসেজ দিয়ে সবাইকে জানানো কি ঠিক হবে।

তারিখ:১৪/১০/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  ইহসানুল করিম রাজশাহী থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, ফোকাহায়ে কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো, মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা জায়েয, জাহিলি যুগের মত মৃত ব্যক্তির গর্ব-খ্যাতি উল্লেখ করা ছাড়া। দলিল- 

1247 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، أَخْبَرَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ الشَّيْبَانِيِّ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: مَاتَ إِنْسَانٌ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُودُهُ، فَمَاتَ بِاللَّيْلِ، فَدَفَنُوهُ لَيْلًا، فَلَمَّا أَصْبَحَ أَخْبَرُوهُ، فَقَالَ: «مَا مَنَعَكُمْ أَنْ تُعْلِمُونِي؟» قَالُوا: كَانَ اللَّيْلُ فَكَرِهْنَا، وَكَانَتْ ظُلْمَةٌ أَنْ نَشُقَّ عَلَيْكَ فَأَتَى قَبْرَهُ فَصَلَّى عَلَيْهِ


৭৮৮. জানাযার সংবাদ দেওয়া। 

আবু রাফি’ (রাহঃ) সূত্রে আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) বললেনঃ তোমরা আমাকে কেন খবর দিলে না?

১১৭৫। মুহাম্মাদ (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মারা গেল। যার অসুস্থতার সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার খোঁজখবর নিতেন। তাঁর মৃত্যু হয় এবং রাতেই লোকেরা তাঁকে দাফন করেন। সকাল হলে তাঁরা (এ বিষয়ে) নবী (ﷺ) কে অবহিত করেন। তিনি বললেনঃ আমাকে সংবাদ দিতে তোমাদের কিসে বাধা দিল? তারা বলল, তখন ছিল রাত এবং ঘোর অন্ধকার। তাই আপনাকে কষ্ট দেওয়া আমরা পছন্দ করিনি। তিনি ঐ ব্যক্তির কবরের কাছে গেলেন এবং তাঁর উপর জানাযার নামায আদায় করলেন।

—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭৫ (আন্তর্জাতিক নং ১২৪৭)

وقد سبق نقل كلام أهل العلم الدالة على ذلك في جواب السؤال : (60008) .

قال الكاساني : " وَلَا بَأْسَ بِإِعْلَامِ النَّاسِ بِمَوْتِهِ مِنْ أَقْرِبَائِهِ وَأَصْدِقَائِهِ وَجِيرَانِهِ لِيُؤَدُّوا حَقَّهُ بِالصَّلَاةِ عَلَيْهِ ، وَالدُّعَاءِ وَالتَّشْيِيعِ ، .. وَلِأَنَّ فِي الْإِعْلَامِ تَحْرِيضًا عَلَى الطَّاعَةِ ، وَحَثًّا عَلَى الِاسْتِعْدَادِ لَهَا ، فَيَكُونُ مِنْ بَابِ الْإِعَانَةِ عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى ، وَالتَّسَبُّبِ إلَى الْخَيْرِ ، وَالدَّلَالَةِ عَلَيْهِ".

انتهى من "بدائع الصنائع" (3/207).

কাসানি বলেন: "মৃতব্যক্তির মৃত্যু সংবাদ তার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদেরকে জ্ঞাপন করতে কোন আপত্তি নেই; যাতে করে তারা জানাযার নামায পড়া, দোয়া করা ও দাফনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে মৃতব্যক্তির হক আদায় করতে পারে। আর যেহেতু সংবাদ দেয়ার মধ্যে নেক কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রস্তুতি নেয়ার প্রতি উৎসাহিত করণ রয়েছে। তাই এটি নেকী ও তাকওয়ার কাজে সহযোগিতা করার মধ্যে পড়বে এবং ভাল কাজের মাধ্যম হওয়া ও সন্ধান দেয়ার পর্যায়ভুক্ত হবে।"[বাদায়িউস সানায়ি (৩/২০৭)]


وجاء في "فتاوى اللجنة الدائمة" (8/402) : " يجوز دعاء أقارب الميت وأصحابه وجيرانه إذا توفي من أجل أن يصلوا عليه ، ويدعوا له ، ويتبعوا جنازته ، ويساعدوا على دفنه ؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم أخبر أصحابه لما توفي النجاشي رحمه الله بموته ليصلوا عليه " انتهى .


ثانياً :

لا بأس بالإعلان والإخبار عن وفاة الإنسان من خلال وسائل التواصل الاجتماعي كالفيس بوك وتويتر والواتس آب وغيرها ، أو من خلال البريد الإلكتروني ورسائل الجوال ، إذا كان المقصود من ذلك إعلام الناس لشهود صلاة الجنازة ، أو الدعاء للميت والاستغفار له ، أو لتعزية أهله به ؛ لأن ذلك وسيلة لتلك الصالحات.

وقد سئل الشيخ عبد العزيز بن باز رحمه الله عن الإعلان في الصحف عن الأموات ؟

فقال: " لا نعلم فيه شيئًا، من باب الخبر".

انتهى من "مسائل الإمام ابن باز" لابن مانع (ص: 108) .

وقال الشيخ ابن عثيمين:" وأما الإعلان عن موت الميت : فإن كان لمصلحة مثل أن يكون الميت واسع المعاملة مع الناس بين أخذ وإعطاء ، وأعلن موته لعل أحداً يكون له حق عليه فيقضى أو نحو ذلك : فلا بأس" انتهى من "مجموع فتاوى ورسائل العثيمين" (17/461).

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যেমন- ফেইসবুক, টুইটার ও ওয়াটসআপ ইত্যাদিতে কিংবা ইমেইলে ও মোবাইল মেসেজে কারো মৃত্যু সংবাদ প্রচার করতে কোন আপত্তি নেই; যদি এর উদ্দেশ্য হয় যাতে করে মানুষ জানাযার নামাযে উপস্থিত হতে পারে, মৃতব্যক্তির জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করতে পারে কিংবা মৃতের পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানাতে পারে। কেননা এ অবহিতকরণ এ সমস্ত নেক কাজের মাধ্যম।


শাইখ বিন বায (রহঃ)কে পত্র-পত্রিকায় মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: "খবর হিসেবে জানানোর ক্ষেত্রে আমরা কোন আপত্তিকর কিছু জানি না।"[মাসায়িলুল ইমাম বিন বায (পৃষ্ঠা-১০৮)]


শাইখ উছাইমীন বলেন: "পক্ষান্তরে, মৃতব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ জ্ঞাপন করা: যদি কোন কল্যাণের কারণে হয়; যেমন- মৃতব্যক্তির সাথে মানুষের আদান-প্রদানের ব্যাপক লেনদেন থাকে এবং তার মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা হলে তার কাছে কারো পাওনা থাকলে তার পাওনা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া যাবে কিংবা এ ধরণের কিছু: তাহলে তাতে কোন আপত্তি নেই।"[মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলি উছাইমীন (১৭/৪৬১)]


দ্বিতীয় কথা হলো, জন্মদিবস ও ওয়াফাতদিবস পালন করাটাও শরীয়তের কোনো দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। তাই মৃত্যু দিবসে মেসেজ দিয়ে সবাইকে জানানো কি ঠিক হবে না।



সারকথা হলো,  মৃত্যু সংবাদ সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার করা যায়, তবে সতর্ক হলো মৃত্যু ব্যক্তির ছবি সাথে যেন সংযুক্ত না থাকে। মিশরে একজন আলেম ব্যতীত পৃথিবীর কোন আলেমের মতে বিনা প্রয়োজনে ছবি তোলা প্রচার করা হারাম। 

ইবরাহিম হালাবি (রহ.) বলেন, বিশুদ্ধ মত হলো, মৃতব্যক্তির গর্ব-খ্যাতির উল্লেখ করা ছাড়া সাধারণভাবে অলিতে-গলিতে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা দোষণীয় নয়। কেননা জাহেলি যুগের প্রচার তো হলো, বিলাপ-আর্তনাদের সঙ্গে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা। (শরহুল মুনয়া, পৃষ্ঠা : ৬০৩)


  والله اعلم بالصواب