আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

আদব-০৩: দু‘আ কবুলের জন্য পাঁচটি বিশেষ করণীয়

No Comments

 



💌 দু‘আ কবুলের জন্য পাঁচটি বিশেষ করণীয় এবং দু‘আ করার আদব ও নিয়ম-কানুন, যেগুলো সবারই জেনে রাখা দরকার:


*● দু‘আ কবুলে সহায়ক ৫ টি কাজ:*


*১) আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করার মাধ্যমে দু‘আ শুরু করা, এরপর রাসুলের উপর দরুদ পাঠ করা এবং একইভাবে দু‘আ শেষ করা।*


একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে নামাজে দু‘আ করতে শুনলেন। সে আল্লাহর প্রশংসাও করলো না, নবিজির উপর দরুদও পড়লো না। তখন নবিজি তাকে বললেন, ‘‘হে মুসল্লি! তুমি খুব তাড়াহুড়া করে ফেললে!’’ তারপর নবিজি তাদের শিক্ষা দিলেন (কীভাবে দু‘আ করতে হয়)। তখন তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে নামাজ আদায় করলো এবং আল্লাহর গুণ (মাহাত্ম্য) বর্ণনা করলো, তাঁর প্রশংসা করলো এবং রাসুলের উপর দরুদ পাঠ করলো। তখন নবিজি (তাকে) বললেন, ‘‘তুমি দু‘আ কর, কবুল করা হবে; (আল্লাহর কাছে) চাও, তোমাকে দেওয়া হবে।’’ [ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ১২৮৪; হাদিসটি সহিহ]


বিশেষ করে, রাসুলের উপর দরুদ পাঠ করা দু‘আ কবুলে অন্যতম সহায়ক।


আলি (রা.) বলেন, ‘‘সকল দু‘আ পর্দার আড়ালে থাকবে, যতক্ষণ না নবির উপর সালাত পাঠ করবে।’’ [ইমাম তাবারানি, মু‘জামুল আওসাত্ব: ৭২১; শায়খ আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ২০৩৫; বর্ণনাটি হাসান]


এজন্য আলিমগণ দু‘আ করার আগে দরুদ পাঠ করার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তবে, এটি ‘মুস্তাহাব’ আমল, বাধ্যতামূলক নয়।


*২) উসিলা দিয়ে দু‘আ করা।* বিশেষত নেক আমল ও ইসমে আযমের উসিলা দেওয়া। 


একবার তিন ব্যক্তি একটি গুহায় আটকা পড়েছিলো। একটি বিশাল পাথর গুহার মুখে এসে আটকে যায়। এমন কঠিন অবস্থায় তিনজনই তাদের বিশেষ একটি করে নেক আমলের উসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছিলো, আল্লাহ তাদের দু‘আ কবুল করে পাথরটি একটু একটু করে পুরোটাই সরিয়ে দিয়েছিলেন। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ২২১৫]


এক ব্যক্তি ইসমে আযম দিয়ে দু‘আ করেছিলেন। তখন নবিজি বলেছিলেন, এই নামে দু‘আ করলে কবুল হয়। [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৯৫; হাদিসটি সহিহ]


*৩) স্বাচ্ছন্দ্য ও প্রাচুর্যের সময় বেশি দু‘আ করা।*


রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,


"যে ব্যক্তি কামনা করে যে, *বিপদ-কাঠিন্যের সময়ে আল্লাহ তার (দু‘আয়) সাড়া দিন,* সে যেন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময়গুলোতে বেশি বেশি দু‘আ করে।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৩৮২; হাদিসটি হাসান]


*৪) দু‘আ কবুলের পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দু‘আ করা এবং অমনোযোগী না হওয়া।*


রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,


"তোমরা দু‘আ কবুলের দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে দু'আ করো। কোনো বান্দা অমনোযোগী অন্তরে দু‘আ করলে, আল্লাহ তার দু‘আ কবুল করেন না।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৪৭৯; হাদিসটি হাসান]


রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,


"তোমাদের মধ্যে কেউ যখন দু‘আ করে তখন সে যেন না বলে, ‘হে আল্লাহ! আপনি চাইলে আমাকে মাফ করুন।’ বরং সে যেন দৃঢ়তার সাথে, পরম আগ্রহভরে দু‘আ করে। *কেননা, তাকে কোনো কিছু দেওয়া আল্লাহর নিকট বড় কোনো বিষয় নয়।’’* [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৬৭০৫]


*৫) হাত উঠিয়ে দু‘আ করা।*


রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের রব্ব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। বান্দা যখন তাঁর নিকট দুই হাত তুলে, তিনি তা শূন্য অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৮৮; হাদিসটি সহিহ]


বিঃদ্রঃ দু‘আর সময় হাত দুটোর মাঝে ফাঁকা না রাখাই ভালো। [শায়খ ইবনু উসাইমিন, শারহুল মুমতি’: ৪/২৫]


● *দু‘আ করার পাঁচটি বিশেষ আদব:*


১) কুরআন বা হাদিসে বর্ণিত দু‘আ দিয়ে দু‘আ করা উত্তম। এগুলোতে বরকত বেশি থাকে। কারণ নবিজি নিজে যে দু‘আ উম্মতের জন্য রেখে গেছেন, সেগুলোর চেয়ে উত্তম দু‘আ আমরা কখনই করতে পারবো না। 


একজন সাহাবিকে নবিজি ঘুমানোর সময় পড়ার জন্য একটি বড় দু‘আ শিক্ষা দেন। সেই সাহাবি নবিজিকে পুরো দু‘আটা আবার মুখস্থ শুনান। কেবল একটি জায়গায় সামান্য নিজের মতো করে বলেছিলেন। নবিজির শেখানো দু‘আতে ছিলো এই বাক্যটি ‘‘যে নবিকে আপনি প্রেরণ করেছেন, তাঁর উপর ঈমান আনলাম’’, সেই সাহাবি এই বাক্যটি না বলে বললেন, ‘‘যে রাসুলকে আপনি প্রেরণ করেছেন, তাঁর উপর ঈমান আনলাম।’’ তখন নবিজি এটিকে নাকচ করে দেন এবং তাঁর শেখানো পদ্ধতিতে দু‘আটি হুবহু পড়তে বলেন। [পুরো হাদিসসহ দু‘আটি বিস্তারিত পাবেন সহিহ বুখারির ২৪৭ ও ৬৩১১ নং হাদিসে]


এ থেকে হাদিসে বর্ণিত দু‘আর গুরুত্ব বুঝা যায় আবার পরিপূর্ণ ফায়দা অর্জন করতে হাদিসের দু‘আ হুবহু পড়া উচিত। তবে, অবশ্যই নিজের মনের মতো করে নিজের ভাষায় দু‘আ করা যায়। সাহাবিগণও করেছেন। 


২) আল্লাহর প্রভুত্ব, মহত্ত্ব, বড়ত্ব, অমুখাপেক্ষিতা, তাঁর সার্বভৌমত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলো দু‘আর মধ্যে বারবার স্মরণ করা এবং বলতে থাকা। এটি দু‘আ কবুলের গুরুত্বপূর্ণ উপায়। [ইমাম ইবনু রজব, জামি‘উল উলুম ওয়াল হিকাম]