আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩১০৩: ইমামের কিরাত অশুদ্ধ হলে, একাকী নামায আদায় করা যাবে কি। Emaner qirat oshuddthuhole jamat tag kora

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩১০৩: 

আসসালামু আলাইকুম। 

শায়েখের কাছে আমার জানার বিষয় হল অশুদ্ধ তেলাওয়াতকারী ঈমামের পেছনে নামাজ হবে কিনা?

অশুদ্ধ তেলাওয়াতকারী ঈমামের পেছনে ছাড়া অন্য সুযোগ না থাকলে তখন কি একাকী নামাজ পড়া যাবে?

বিস্তারিত দলীল সহ জানালে উপকৃত হই।

তারিখ:০২/১০/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা   থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, অশুদ্ধ তেলাওয়াত দুই প্রকার।

১. লাহনে জালি অর্থ মারাত্নক ভুল। এইসব ভুলগুলোক লাহনে জালি বা মারাত্নক ভুল বলা হয়। এধরণের ভুল পড়া হলে অর্থের পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার ফলে পড়া ও নামাজ উভটায় নষ্ট হয়ে বড় গুনাহ হয়। যেমন -

وهو خطأ يطرأ على الألفاظ فيخل بمعاني القرآن إخلالا ظاهرا. وسمي جلياً لوضوحه وظهوره للقراء والمستمعين. وعلى هذا فإن هذا النوع من اللحن لايجوز شرعا.

এটি এমন একটি ত্রুটি/ভুল যা শব্দের মধ্যে ঘটে এবং স্পষ্টভাবে কুরআনের অর্থকে ব্যাহত/পরিবর্তন করে। পাঠক ও শ্রোতাদের কাছে স্বচ্ছতা ও স্বচ্ছতার কারণে একে জলি/স্পষ্ট বলা হয়। তাই এ ধরনের লাহনে জলি ইসলামি বিধান অনুযায়ী জায়েজ নয়।

২. লাহনে খফি বা ছোট ভুল। এইসব নিয়ম না মেনে পড়লে অর্থের কোন পরিবর্তন না হওয়ায় নামাজ নষ্ট হয়না এবং পড়ারও কোন ক্ষতি হয়না। তবে এরুপ পড়া মাকরুহ। যেমন,

وهو خطأ يطرأ على قواعد التجويد وكمال النطق دون الإخلال بالمعنى أو الإعراب. وسمي خفيا لأنه يخفى على عامة الناس ولا يدركه إلا القراء.

এটি একটি ভুল/ত্রুটি যা অর্থ বা কাওয়ায়েদে তাজবিদ পূর্ণ না করেই স্বর এবং নিখুঁত উচ্চারণের নিয়মে ঘটে। এটিকে লুকানো/ছোট বলা হয় কারণ এটি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লুকানো এবং শুধুমাত্র পাঠকরাই এটি জানেন।  সূত্র: আহকামুত তাজবিদ-১৩ পৃষ্ঠা 

তাই বাস্তবিক যদি লাহনে জলি হয় তাহলে নামাজ হবে না।


দ্বিতীয় কথা হলো, অশুদ্ধ তেলাওয়াতকারী ইমাম হলে, অন্য জামাআতে নামাজ আদায় করতে হবে, যদি অন্য সুযোগ না থাকে; তাহলে একাকী নামায আদায় করতে হবে।


কেননা জামাতে নামাজ আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আর কিরাত শুদ্ধ হওয়া ফরজ। তাই এ ক্ষেত্রে ফরজ প্রাধান্য পাবে। দলিল- 


سئل علماء اللجنة الدائمة عن الصلاة خلف إمام لا يحسن القراءة ، وهل الأفضل الانفرادر، أم الصلاة خلفه ؟

فأجابوا : " إذا أردت أن تصلي فإنك تتحرى الصلاة خلف إمام يحسن القراءة ، وإذا علمت عن إمام أنه لا يحسن القراءة بمعنى أنه يلحن في الفاتحة لحنا يغير المعنى مثل قوله (إياك نعبد) بكسر الكاف و(أنعمت) بالضم أو الكسر فلا يجوز أن تصلي خلفه ، والواجب تنبيهه فإن أجاب فالحمد لله ، وإلا وجب عليك أن تبلغ عنه الجهة المختصة لإبداله بإمام أصلح منه " انتهى من "فتاوى اللجنة الدائمة" (7 /348).

'আল লাজনাতুত দা-ইমা'র আলেমগণের কাছে একবার জানতে চাওয়া হলো যে, বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াতে সক্ষম নয়, এমন ইমামের ইক্তিদায় সালাত আদায় করা উত্তম, নাকি একাকি সালাত আদায় করা উত্তম?

তখন তাঁরা এই বলে মাসআলাটির সমাধান দিয়েছিলেন যে, সালাত আদায়ের সময় মুসল্লীর কর্তব্য হলো এমন ইমামকেই খুঁজে বের করা, যিনি বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াতে সক্ষম। তবে যদি  শুধুমাত্র এমন একজন ইমামেরই সন্ধান মিলে, যার সূরা ফাতিহার তিলাওয়াতও বিশুদ্ধ নয়, বরং তার তিলাওয়াতে রয়েছে "লাহন" তথা উচ্চারণগত এমন গুরুতর ত্রুটি, যা কুরআনের মূল অর্থের পর্যন্ত বিকৃতি ঘটিয়ে ফেলে, (যেমন "ইয়্যাকা" এর স্থলে "ইয়্যাকি" পাঠ করা, কিংবা " আনআমতা" এর স্থলে "আনআমতি"/ "আনআমতু" বলা, ইত্যাদি) এমতাবস্থায় সেই ইমামের পিছনে সালাত আদায় করা যায়েজ নয়। এক্ষেত্রে মুসল্লীর কর্তব্য হলো, ইমাম সাহেবকে তার ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে তাঁকে সতর্ক করা। ইমাম যদি মুসল্লীর কথা আমলে নিয়ে নিজের পঠনগত ভুলগুলো শুধরে নেয়, তাহলে তো বেশ ভাল,  আলহামদুলিল্লাহ। পক্ষান্তরে সে যদি মুসল্লীর কথায় সামান্য প্রকার কর্ণপাত না করে এবং তার মাঝে কোন প্রকার পরিবর্তনের লেশমাত্রাও পরিলক্ষিত না হলে মুসল্লীর কর্তব্য হলো, যথাযথ কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে অবগত করা, যাতে করে তারা এই ইমামকে পরিবর্তন করে তার চাইতে যোগ্যতম কোন আস্থাভাজন ব্যক্তিকে ইমামতির এই দায়িত্বে নিয়োগ দিতে পারে। ( ফাতাওয়া আল-লাজনাতুত দা-ইমাহ- ৩৪৮/৭)

সারকথা হলো,  শুদ্ধ তিলাওয়াতকারী যদি কোনো নামাজের জামাতে অংশ নিয়ে দেখে ইমামের তিলাওয়াত গুরুতর অশুদ্ধ, তাহলে ওই জামাত ছেড়ে দেবে এবং অন্য কোনো জামাতে বা একা নামাজ আদায় করবে। আর ফিতনার আশঙ্কা থাকলে, মুফতি সাহেবকে বিস্তারিত বলে, সে অনুযায়ী আমল করতে হবে।


 আর প্রশ্নোক্ত ইমামের পিছনে আপনার নামায পড়া-না পড়ার সিদ্ধান্ত নিজ থেকে না নিয়ে কোনো বিজ্ঞ আলেমকে ইমামের কিরাত শুনিয়ে তার থেকে পরামর্শ নেওয়া কর্তব্য।

  والله اعلم بالصواب