আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩১০৫: তিনের অধিক বা ১০০ তালাক দিলে কয় তালাক পতিত হবে, tin talak

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩১০৫: 

আসসালামু আলাইকুম। 

মুহতারাম, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বলে আমি তোকে ১০০ তালাক দিলাম, তার বিধান কি হবে? দলিল আদিল্লাহসহ  জানালে উপকৃত হব।

তারিখ:২২/১০/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  শাহীদুর রহমান জামালপুর থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, তিনের ওপর যেহেতু তালাক নেই, তাই তিন তালাকের উপরে যত তালাকে দিক না কেন তিন তালাকই পতিত হবে।  তিন তালাক দিলে হিল্লা বিয়ে ছাড়া প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।


আর এ বিষয়ে হজরতে সাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়ীগণ, মুজতাহিদ ৪ ইমামগণ ও জমহুর ফোকাহা-ওলামা, এবং সৌদি সরকার মক্কা-মদীনাসহ সে দেশের বড় বড় উলামাদের নিয়ে গঠিত কমিটিকে এ মাসআলার তাহকীক পেশ করার নির্দেশ দেয়। তারা দীর্ঘ আলোচনা-পর্যালোচনার পর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, একসাথে বা এক মাজলিসে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হবে। এ বিষয়ে পূর্ণ ইসলামের ইতিহাসে কোন ‎গ্রহণযোগ্য আলেম দ্বিমত পোষণ করেননি। কেবল মাত্র আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা রহঃ ও ‎তার শিষ্য আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম রহঃ ব্যতিত। কিন্তু সকল উম্মতের বিপরীত এই দুই জনের বিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে ‎না।


কুরআন থেকে দলীল:


আয়াত নং-০১

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]

তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কতৃ নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। সূরা বাকারা-২৩০


আয়াত নং-০২

یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ اِذَا طَلَّقۡتُمُ النِّسَآءَ فَطَلِّقُوۡهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَ اَحۡصُوا الۡعِدَّۃَ ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ رَبَّکُمۡ ۚ لَا تُخۡرِجُوۡهُنَّ مِنۡۢ بُیُوۡتِهِنَّ وَ لَا یَخۡرُجۡنَ اِلَّاۤ اَنۡ یَّاۡتِیۡنَ بِفَاحِشَۃٍ مُّبَیِّنَۃٍ ؕ وَ تِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰهِ ؕ وَ مَنۡ یَّتَعَدَّ حُدُوۡدَ اللّٰهِ فَقَدۡ ظَلَمَ نَفۡسَهٗ ؕ لَا تَدۡرِیۡ لَعَلَّ اللّٰهَ یُحۡدِثُ بَعۡدَ ذٰلِکَ اَمۡرًا-------

 অর্থ: ‘হে নবী! বলে দিন, যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ইচ্ছা করো, তখন তাদের ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিও…। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য পথ বের করে দিবেন’ সূরা তালাক: ১-২

এ আয়াত প্রমাণ করে যে, ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য না রেখে তালাক দিলেও তালাক হয়ে যাবে। কেননা যদি তালাক না হয়, তাহলে সে নিজের উপর জুলুমকারীও হবে না এবং স্ত্রীকে ফেরত নেয়ার পথও বন্ধ হবে না; যেদিকে এ আয়াত ইশারা করছে, “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য পথ বের করে দিবেন”।


হাদিস থেকে দলীল:

হাদিস নং-০১

وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك

হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে ‎তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,‎তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। ‎কারণ,রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। ‎যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। তাখরিজ: সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩


হাদিস নং-০২

نا علي بن محمد بن عبيد الحافظ نا محمد بن شاذان الجوهري نا معلى بن منصور نا شعيب بن رزيق أن عطاء الخراساني حدثهم عن الحسن قال نا عبد الله بن عمر أنه طلق امرأته تطليقة وهي حائض ثم أراد أن يتبعها بتطليقتين أخراوين عندgoog_302898722القرئين فبلغ ذلك رسول الله صلى الله عليه و سلم فقال : يا بن عمر ما هكذا أمرك الله إنك قد أخطأت السنة والسنة أن تستقبل الطهر فيطلق لكل قروء قال فأمرني رسول الله صلى الله عليه و سلم فراجعتها ثم قال إذا هي طهرت فطلق عند ذلك أو أمسك فقلت يا رسول الله رأيت لو أني طلقتها ثلاثا أكان يحل لي أن أراجعها قال لا كانت تبين منك وتكون معصية


অর্থ: হযরত হাসান রাঃ বলেন,হযরত ইবনে উমর রাঃ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি আপন স্ত্রীকে ‎হায়য অবস্থায় এক তালাক দিয়েছিলেন, অতঃপর ইচ্ছা করলেন যে, দুই তুহুরে [হায়য থেকে ‎পবিত্র অবস্থায়] অবশিষ্ট দুই তালাক দিয়ে দিবেন। হুজুর (ﷺ) এই ‎বিষয়ে অবগত হওয়ার পর বলেন-ইবনে ওমর! এভাবে আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাকে হুকুম ‎‎দেননি। তুমি সুন্নাতের বিপরীত কাজ করেছ [হায়য অবস্থায় তালাক দিয়েছ]।


তালাকের ‎শরিয়ত সমর্থিত পদ্ধতি হল,‘তুহুর’ পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। প্রত্যেক ‘তুহুরে’ এক ‎তালাক দেয়া। তার পর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ‘রুজু’ করার নির্দেশ ‎দিলেন। এ জন্য আমি ‘রুজু’ করে নিয়েছি। অতঃপর তিনি বললেন,সে পবিত্র হওয়ার পর ‎‎তোমার এখতিয়ার থাকবে। চাইলে তুমি তালাকও দিতে পারবে,বা তাকে নিজের কাছে রাখতে পারবে।

হযরত ইবনে উমর রাঃ বলেন-তারপর আমি রসূল (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করলাম-ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি যদি তিন তালাক দেই তখনও কি ‎‘রুজু’ করার অধিকার থাকবে? হুজুর (ﷺ) বলেন- না। তখন স্ত্রী ‎‎তোমার কাছ থেকে পৃথক হয়ে যাবে। এবং তোমার এই কাজ (এক সাথে তিন তালাক ‎‎দেয়া) গুনাহের কাজ সাব্যস্ত হবে। তাখরিজ: সুনানে দারা কুতনী-৮৪, যাদুল মাআদ-২/২৫৭, সুনানে বায়হাকী কুবরা-১৪৭৩২



সারকথা হলো,  



  والله اعلم بالصواب