জিজ্ঞাসা-১২৩০৭
আসসালামু আলাইকুম।
বাধাই মাল যেমন পাট, পিয়াজ ইত্যাদির ব্যাবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা দরকার। কতদিন তা রাখা যায়? তারিখ: ১৫/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাভার থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সাধারণত গ্রাম-গঞ্জের মানুষ যখন নতুন ফসল কাটা হয়, তখন ফসলের দাম কম থাকে, তাই কম দামে ক্রয় করে গুদামজাত করে রাখে। আর যখন বাজারে বেশি দাম হয় তখন বিক্রি করে। খাদ্যদ্রব্য-পণ্য সামগ্রীর গুদামজাতকরণ এ পদ্ধতি কি জায়েজ?
এর জবাব হলো, অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে খাদ্য-শস্য বা সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্য অধিক পরিমাণে আটকে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা শরীয়তে নিষিদ্ধ। দলিল:
مَنِ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ
الراوي : معمر بن أبي معمر |المصدر : صحيح الترغيب | الصفحة أو الرقم : 1781 | خلاصة حكم المحدث : صحيح | التخريج : أخرجه مسلم (1605)
অর্থ: রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি (প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী) আটকে রাখে সে গুনাহগার। তাখরিজ: মুসলিম-১৬০৫; সহিহ তারগিব-১৭৮১
আর যদি খাদ্য ও পণ্য সামগ্রী জমা করে রাখার বিষয়টি স্বাভাবিক পর্যায়ের হয়, মানুষের ক্ষতি ও অনটনের আশঙ্কা না থাকে এবং বাজারে ঐ পণ্যের সঙ্কট দেখা না দেয় তাহলে এ জাতীয় সাধারণ গুদামজাত করা নাজায়েয নয়। যেমন ফকিহদের মতামত-
ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন,اَلْحُكْرَةُ فِي كُلِّ شَيْءٍ فِي السُّوقِ مِنَ الطَّعَامِ وَالْكَتَّانِ وَالزَّيْتِ وَجَمِيعِ الْأَشْيَاءِ وَالصُّوفِ وَكُلِّ مَا يَضُرُّ بِالسُّوقِ... فَلَا بَأْسَ بِذَلِكَ إذَا كَانَ لَا يَضُرُّ بِالسُّوقِ.
‘অর্থাৎ বাজারে প্রত্যেকটা জিনিসে মজুদদারী হয়। যেমন খাদ্যদ্রব্য, লিনেন বস্ত্র, তেল, পশম এবং অন্য সকল জিনিসে, যার মজুদ বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ... তবে বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত না করলে এতে কোন সমস্যা নেই’। সূত্র: আল-মুদাওয়ানাহ ৩/৩১৩
ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) বলেন,كُلُّ مَا أَضَرَّ بِالْعَامَّةِ حَبْسُهُ فَهُوَ احْتِكَارٌ وَإِنْ كَانَ ذَهَبًا أَوْ فِضَّةً أَوْ ثَوْبًا- ‘যে কোন জিনিস মজুদ করলে যদি জনসাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সেটাই মজুদদারী হিসাবে গণ্য হবে। যদিও মজুদকৃত বস্ত্ত স্বর্ণ, রৌপ্য বা কাপড় হয়’। সূত্র: আল-হেদায়া ৪ খণ্ড, ৪৭০পৃ.
সারকথা হলো, মজুদদারী নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ যেহেতু মুসলমানদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করা, সেহেতু তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হ’লে মজুদদারী হারাম হবে না। সুতরাং আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত পাট, পিয়াজ ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য মূল্য বেশি হলে বিক্রয় করলে ( ৪-৬ মাস বা তার বেশি গুদামজাত করে রাখলে) আমাদের বর্তমান স্বাভাবিক বাজারে নাজায়েজ হবে না। সূত্র: নায়লুল আওতার ৩/৬০৪, ‘মজুদদারী’ অনুচ্ছেদ; আলজামেউস সাগীর পৃ.৪৮১
والله اعلم بالصواب