জিজ্ঞাসা-১৩০৯৭:
আসসালামু আলাইকুম।
সম্মানিত মুফতি সাহেব!
ঈমান ভঙ্গের কারনসমূহ রেফারেন্স /হাওয়ালা সহ উল্লেখ করলে কৃতজ্ঞ থাকব।
তারিখ:১৭/১০/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা সাজ্জাদ হোসেন হাফি চট্টগ্রাম থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, অজু/ওযু যেমন ভঙ্গ বা নষ্ট হয়; ঠিক তেমনি কিছু কাজ ও কর্ম করলে ঈমানও ভঙ্গ তথা নষ্ট হয়ে যায়।
দ্বিতীয় কথা হলো, ঈমান ভঙ্গের কারণগুলো মূলত ৩ প্রকার। বিশ্বাসগত, কর্মগত এবং উক্তিগত। আলিমগণ এ ব্যাপারে অনেক বিশদ আলোচনা করেছেন। নিম্নে সেগুলোকে দশটি পয়েন্টে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
এক. আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা-
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে অংশীদার করা ক্ষমা করেন না। তা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন; এবং যে কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে সে এক মহাপাপ করে।’ [সুরা নিসা ৪ : ৪৮]
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ وَقَالَ الْمَسِيحُ يَابَنِي إِسْرَائِيلَ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَا
‘কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করলে অবশ্যই আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। আর জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’ [সুরা মায়িদা, ৫ : ৭২]
দুই. আল্লাহ এবং বান্দার মধ্যে কাউকে মধ্যস্থতাকারী বানানো-
وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
‘তারা আল্লাহকে ব্যতীত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বল, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিচ্ছ, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে শরিক করে তা হতে তিনি ঊর্ধ্বে।’ [সুরা ইউনুস, ১০ : ১৮]
أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ
‘জেনে রাখ, অবিমিশ্র আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরুপে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা তো এদের পূজা এজন্যই করি যে, ইহারা আমাদের আল্লাহর সান্নিধ্যে নিয়ে যাবে।’ তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে আল্লাহ তার ফয়সালা করে দিবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফির আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ [সুরা যুমার, ৩৯ : ৩]
তিন. মুশরিক-কাফিরদের কাফির মনে না করা।
এমন কাফির, যার কুফরির ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ একমত। সেটা আসলি কাফির হতে পারে—যেমন ইহুদি, খৃস্টান ও হিন্দু সম্প্রদায়, আবার মুরতাদ, যিনদিকও হতে পারে, যেমন প্রকাশ্যে আল্লাহ, রাসুল বা দীনের কোনো অকাট্য ব্যাপার নিয়ে কটূক্তিকারী, যাদের কুফরির ব্যাপারে হকপন্থি আলিমগণ একমত।
চার. নবি (সা.)’র ফয়সালার তুলনায় অন্য কারও ফয়সালাকে উত্তম মনে করা।
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا
‘আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা দাবি করে যে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে, আমরা তার ওপর ঈমান এনেছি। তারা বিচার-ফয়সালা নিয়ে যেতে চায় তাগুতের কাছে, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা তাকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদের প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। [সুরা নিসা, ৪ : ৬০]
পাঁচ. মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনীত কোনো বিধানকে অপছন্দ করা।
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
‘অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক বলে মনে না করে। এরপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।’ [সুরা নিসা, ৪ : ৬৫]
ছয়. দীনের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা।
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ (65) لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ
“তুমি তাদের প্রশ্ন করলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, ‘আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও ক্রীড়া-কৌতুক করছিলাম।’ বলো, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসুলকে বিদ্রুপ করছিলে?’ তোমরা অযুহাত দেয়ার চেষ্টা করো না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফরি করেছ।” [সুরা তাওবা, ৯ : ৬৫-৬৬]
সাত. জাদু করা
وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ
‘সুলাইমান কুফরি করেনি, কুফরি তো করেছিল শয়তানরাই। তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত…।’ [সুরা বাকারা, ২ : ১০২]
আট. মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সমর্থন ও সহযোগিতা করা। দলিল-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
‘হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভাইও যদি ঈমানের বিপরীতে কুফরিকে বেছে নেয়, তবে তাদের অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদের অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করে, তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।’ [সুরা তাওবা, ৯ : ২৩]
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদি ও খৃস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ [সুরা মায়িদা, ৫ : ৫১]
নয়. কাউকে দীন-শরিয়তের ঊর্ধ্বে মনে করা।
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِإِثْمٍ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ [সুরা মায়িদা, ৫ : ৩]
দশ: দীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া।
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ مُنْتَقِمُونَ
‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি দ্বারা উপদিষ্ট হয়েও তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার অপেক্ষা অধিক অপরাধী আর কে? আমি অবশ্যই অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে থাকি।’ [সুরা সাজদা, ৩২ : ২২]
তথ্য সহায়তায়: মুফতি আমির হোসাইন হাফি. এর প্রবন্ধ থেকে।
সারকথা হলো, আরও কিছু কারণে ঈমান ভঙ্গ হয় ইনশাল্লাহ পরবর্তীতে বিস্তারিত এর সাথে সংযোজন করার ইচ্ছা আছে।
والله اعلم بالصواب