আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৩৯৭: ইবলিশ ৭০ লক্ষ বছর আল্লাহর ইবাদত করেছে, এর কোন দলিল আছে কি

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৩৯৭:

আসসালামু আলাইকুম। জানতে চাইইবলিশ ৭০ লক্ষ বছর আল্লাহর ইবাদত করেছেএটার তথ্য কোথায় আছেএটা কি সহিহতারিখ২৫/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি

মাওলানা সাইফুল ইসলাম ভোলা থেকে।

 

জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলোশয়তান মারদুদ (অভিশাপ্তহওয়ার আগে হাজার/লক্ষ বছর ইবাদত করেছেনএ রকম কোন বর্ণনা নির্ভরযোগ্য কিতাবে নেই। তবে ইসরাঈলি বর্ণনা এবং শিয়াদের কিতাবে পাওয়া। যেমন,

العلل: عن أبيه عن سعد بن عبد الله عن أحمد بن محمد بن عيسى عن علي بن حسان عن علي بن عطية قال: قال أبو عبد الله عليه السلام: إن إبليس عبد الله في السماء سبعة آلاف سنة في ركعتين فأعطاه الله ما أعطاه ثوابا له بعبادته (2).

85 - ومنه بالاسناد المذكور (3) قال: قلت لأبي عبد الله عليه السلام: حدثني كيف قال الله عز وجل لإبليس: (4) " فإنك من المنظرين * إلى يوم الوقت ا goلمعلوم " قال:

لشئ كان تقدم شكره عليه، قلت: وما هو؟ قال: ركعتان ركعهما في السماء في ألفي سنة أو

অর্থাৎ  আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন ঈসার থেকেতিনি আলী বিন হাসানের থেকেআলী বিন আতিয়ার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ আবু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেনঃ শয়তান জান্নাতে সাত হাজার বছর ধরে দুই রাকাতে আল্লাহর ইবাদত করেছেতাই আল্লাহ তাকে তার ইবাদতের পুরস্কার হিসেবে যা দিয়েছেন তা দিয়েছিলেন

এবং এটি থেকে বর্ণনাকারীদের উপরোল্লিখিত সনদসহ তিনি বলেন: আমি আবি আবদুল্লাহ ()কে বলেছিলাম: আমাকে বলুন কিভাবে সর্বশক্তিমান আল্লাহ ইবলিসকে বলেছিলেন: “তোমকে সময় দেওয়া হলো, কিয়ামত দিবস পর‌্যন্ত” তিনি বললেন: এমন কিছুর জন্য যার জন্য তিনি তাকে শুকরিয়া জানিয়েছেনআমি বললাম: আর এটা কীতিনি বললেন: দুই একক নামায যা তারা আসমানে দুই হাজার বছরে বা  চার হাজার বছরে করেছিল।

 এবং অন্য বর্ণনায়: তিনি জান্নাতে দুই রাকাতে সাত হাজার বছর ধরে আল্লাহর উপাসনা করেছিলেন তা আল্লাহ তাকে তার ইবাদতের পুরস্কার হিসাবে যা দিয়েছিলেন তা দিয়েছিলেন। সূত্রবাহারুল আনওয়ার- ২য় খণ্ড, ৫২৬ পৃ. (শিয়াদের কিতাব)

 

দ্বিতীয় কথা হলো, ইবলিসের ইবাদত সম্পর্কে সু্ন্নি ওলামায়ে কেরামগণ স্বীকার করেছেন, তবে তার সময়/দিন/বছর উল্লেখ করেননি। যেমন,

 

বিখ্যাত মুফাস্সির, ইতিহাসবেত্তা আল্লামা ইবনে কাসির রহ. বলন,

وكان إبليس مجتهدًا في عبادته كثيرًا حتّى إنّه فاق الملائكة في العبادة، ولم يكن اسمه إبليس بل كان اسمه عزازيل، ولكن حين عصا ربّه واستكبر مُسِخَ وصار اسمه إبليس، وبدأت قصة إبليس

অর্থাৎ শয়তান তার ইবাদতে এতটাই তৎপর ছিল যে সে ইবাদতে ফেরেশতাদেরকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল এবং তার নাম শয়তান নয়তার নাম ছিল আজাজেলকিন্তু যখন সে তার পালনকর্তার অবাধ্য হয়েছিল এবং অহংকার করেছিল তখন সে পাগল হয়ে যায় এবং তার নাম হয় শয়তান----। সূত্র: আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৫৫

 

শায়েখ আরব জাহানের বিখ্যাত আলেম  ইবনে বাজ এবং শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহ. ইবলিশের ইবাদতের কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু সময়/দিন উল্লেখ করেননি। যেমন,

ولكن جماعة من المحققين يرجحون أن الجن غير الملائكة، وأنه كان مع الملائكة يصلي معهم، ويتعبد معهم، فعمه الأمر، فلما أبى، وفسق، وتكب


ولهذا اختار هذا شيخ الإسلام ابن تيمية، وجماعة، وقالوا: إنه من الجن، وهو أبوهم، خلقه الله من مارج من نار، وليس من الملائكة، ولكنه كان معهم في السماء، كان يتعبد، فلما استكبر؛ طرد ولعن -نسأل الله العافية-.

অর্থাৎ ইবলিশ ফিরিশতাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না বা ফিরিশতা জাতিন নয়। সে ছিল জিন জাতির। ফিরিশতাদের সাথে আসমানে থাকতো। তাদের সঙ্গে ইবাদত করতো। সূত্র: শায়েখ ইবনে বাজের ওয়েবসাইট থেকে

 

সারকথা কথা হলো, ইবলিশ অভিশপ্ত হওয়ার আগে নেককার ছিল, যা ইশারাতুন নস দ্বারা প্রমাণিত, আমাদের ওয়ামায়ে দ্বীন নিজ নিজ কিতাবে তা উলে্লখ করেছেন। আর ইবাদতের সময়/দিন/বছর  তাফসিরে কুরতুবিসহ অন্যান্য তাফসির গ্রন্থে পাওয়া যায়, তা ইসরাঈলি বর্ণনা এবং শিয়াদের কিতাবে পাওয়া যায়। সুতরাং এ বিষয়ে কুরআন-হাদিসের বর্ণনায় যথেষ্ট। যেমন আল্লামা  ইবনে কাসির রহ. বলেন,

 

وَقَدْ رُوِيَ فِي هَذَا آثَارٌ كَثِيرَةٌ عَنِ السّلَفِ، وَغَالِبُهَا مِنَ الْإِسْرَائِيلِيّاتِ الّتِي تُنْقَلُ لِيُنْظَرَ فِيهَا، وَاللهُ أَعْلَمُ بِحَالِ كَثِيرٍ مِنْهَا، وَمِنْهَا مَا قَدْ يُقْطَعُ بِكَذِبِهِ لِمُخَالَفَتِهِ لِلْحَقِّ الّذِي بِأَيْدِينَا، وَفِي الْقُرْآنِ غُنْيَةٌ عَنْ كُلِّ مَا عَدَاهُ مِنَ الْأَخْبَارِ الْمُتَقَدِّمَةِ لِأَنّهَا لَا تَكَادُ تَخْلُو مِنْ تَبْدِيلٍ وَزِيَادَةٍ وَنُقْصَانٍ، وَقَدْ وُضِعَ فِيهَا أَشْيَاءٌ كَثِيرَةٌ...

অর্থাৎইবলিস বিষয়ে বেশ কিছু বক্তব্য উল্লেখিত হয়েছে। এর অধিকাংশই ইসরাঈলী বর্ণনা। এগুলোরসত্যাসত্য বিষয়ে আল্লাহই ভালো জানেন। এগুলোর মধ্যে কিছু তো এমন রয়েছেযেগুলো মিথ্যা হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়কারণ তা প্রমাণিত বিষয়ের বিপরীত। এসকল বিষয়ে কুরআনের বর্ণনা-ই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এসব ইসরাঈলী বর্ণনার দিকে যাওয়ার আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণএগুলোর কোনোটা বিকৃতকোনোটাতে বাড়ানো-কমানো হয়েছে। আবার তাতে অনেক বানোয়াট কথাও রয়েছে...। সূত্র:  তাফসীরে ইবনে কাসীরসূরা কাহফের ৫০ নং আয়াতের তাফসীর;  আলামুল জিন্নি ওয়াশ শায়াতীনড. উমার সুলাইমান আলআশকারপৃ. ১৭-১৮

 

والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক