জিজ্ঞাসা-১২৩৯৯:
আস্সালামু আলাইকুম, আমি টাখনু ঢেকে মোজা পরিধান প্রসঙ্গে জানতে চাই। তারিখ: ২৬/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আনোয়ারুল আম্বিয়া যশোর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আলহামদুল্লিাহ টাখনু ঢেকে রাখার বিষয়ে আল-বুরহানে জিজ্ঞাসা-১২৩১০ শিরোনামে আলোচিত হয়েছে। রাসূল (ﷺ) মোজা পরিধান করেছেন। দলিল:
وَعَنْ عَلِيٍّ - رضى الله عنه - قَالَ: { لَوْ كَانَ اَلدِّينُ بِالرَّأْيِ لَكَانَ أَسْفَلُ اَلْخُفِّ أَوْلَى بِالْمَسْحِ مِنْ أَعْلَاهُ, وَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اَللَّهِ - صلى الله عليه وسلم -يَمْسَحُ عَلَى ظَاهِرِ خُفَّيْهِ } أَخْرَجَهُ أَبُو دَاوُدَ بِإِسْنَادٍ حَسَن ٍ 1 .
অর্থ: আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, যদি দীন যুক্তি দ্বারা হতো তাহলে মোজার নীচের অংশ মাসেহ করা উত্তম হতো উপরের অংশ থেকে। অথচ, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে দেখেছি, তিনি তার মোজার উপরিভাগের ওপর মাসেহ করেন”। তাখরিজ: ১৬২
দ্বিতীয় কথা হলো, মোজা পরিহিত অবস্থায় টাখনু ঢাকা যাবে না। এই মর্মে কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে ইহরাম অবস্থায় শুধু পুরুষদের জন্য মোজা পরিধান করা নিষেধ। মহিলাদের জন্য জায়েজ। দলিল:
হাদিস নং-০১
عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَجُلاً قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا يَلْبَسُ الْمُحْرِمُ مِنْ الثِّيَابِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ تَلْبَسُوا الْقُمُصَ وَلاَ الْعَمَائِمَ وَلاَ السَّرَاوِيلاَتِ وَلاَ الْبَرَانِسَ وَلاَ الْخِفَافَ إِلاَّ أَحَدٌ لاَ يَجِدُ النَّعْلَيْنِ فَلْيَلْبَسْ خُفَّيْنِ وَلْيَقْطَعْهُمَا أَسْفَلَ مِنْ
অর্থ: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, মুহরিম (ইহরাম পরিহিত) কী কী কাপড় পরতে পারবে? তখন তিনি বলেন, জামা-পাগড়ি, পাজামা, টুপি ও মোজা পরবে না। তবে জুতা না থাকলে চামড়ার মোজা গিরার নিচ পর্যন্ত কেটে পরতে পারবে। তোমরা এমন কোনো কাপড় পরিধান করো না যাতে ‘জাফরান’ বা ‘ওয়ারছ’ লেগেছে। তাখরিজ: মুসলিম- ৩৭২
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, অন্য মোজা দ্বারা টাখনু ঢাকলে সমস্যা নেই।
হাদিস নং-০২
دَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ، قَالَ ذَكَرْتُ لاِبْنِ شِهَابٍ فَقَالَ حَدَّثَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ، - يَعْنِي ابْنَ عُمَرَ - كَانَ يَصْنَعُ ذَلِكَ - يَعْنِي يَقْطَعُ الْخُفَّيْنِ لِلْمَرْأَةِ الْمُحْرِمَةِ - ثُمَّ حَدَّثَتْهُ صَفِيَّةُ بِنْتُ أَبِي عُبَيْدٍ أَنَّ عَائِشَةَ حَدَّثَتْهَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ كَانَ رَخَّصَ لِلنِّسَاءِ فِي الْخُفَّيْنِ فَتَرَكَ ذَلِكَ .
. কুতায়বা ইবনে সাঈদ (রাহঃ) .... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) মুহরিম স্ত্রীলোকদের (লম্বা) মোজা কেটে দিতেন। অতঃপর তাঁর স্ত্রী সাফিয়্যা বিনতে আবু উবাইদ তাঁর নিকট বর্ণনা করেন যে, আয়েশা (রাযিঃ) তাঁকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মুহরিম স্ত্রীলোকদের মোজা পরিধানের অনুমতি প্রদান করেছেন (লম্বা অংশ কর্তন ব্যতীত)। ফলে তিনি (ইবনে উমর) তা কর্তন করা থেকে বিরত থাকেন। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ- ১৮৩১
তৃতীয় কথা হলো, মোজার ওপর মাসেহ করার শর্ত ওজুর জাগয়া মোজা দ্বারা ঢেকে রাখতে হবে অর্থাৎ ওজুতে টাখনুসহ ধোয়া ফরজ। যেমন,
اتفقت المذاهب الأربعة على أن من شروط المسح على الخفين، أن يكون ساتراً لمحل فرض الغسل - الكعبان مع القدم - فإن لم يستر الكعبين لم يصح المسح عليهما، قياساً على الوضوء؛ ولأن ما ظهر فرضه الغسل ، وما ستر فرضه المسح ، ولا يمكن أن يجمع بين البدل والمبدل منه في عضو واحد.
ينظر شرح "مختصر خليل" للخرشي (/179) وحاشية قليوبي وعميرة(1/68) و"الموسوعة الفقهية" (37/264)
অর্থাৎ সম্মানিত চার ইমাম এ বিষয়ে একমত যে, মোজার ওপর মাসেহ করারশর্ত হলো, যতটুকু জাগয়া ধৌত করা ফরজ ততটুকু ঢেকে রাখা জরুরি। টাখনুসহ ঢেকে রাখতে হবে। যদি টাখনু খোলা থাকে তাহলে মাসেহ সহিহ হবে। সূত্র: আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়াহ-৩৭/২৬৪
সুতরাং প্রমাণিত হলো মোজা দ্বারা টাখনু ঢাকা সমস্যা নেই।
প্রশ্ন: ক। যেসব হাদিসে টাখনু নিচে কাপড় পরিধান করার ব্যাপারে কঠোর ধমক এসেছে, তার ব্যাখ্যা কি?
উত্তর: ক। যেমন হাদিস শরিফে এসেছে-
أَبِي،هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِفَفِي النَّارِ"-رواه البخارى
অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরবে সে জাহান্নামি। বুখারি-৫৭৮৭, কিতাবুল লিবাস; মুসলিম-২০৮৭; আদু দাউদ-৬৩৮; নাসায়ি-৫৩৩০; মুয়াত্তা মালেক-২৬৫৫
ব্যাখ্যা: হজরত মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরি রহ. বলেন-হাদিসে ইযার শব্দের দ্বারা ঐ সকল পোশাক উদ্দেশ্য যা ওপর থেকে নিচের দিকে আসে। যেমন-লুঙ্গি, পায়জামা, কোর্তা, পাগড়ি, আবা, অ্যারাবিয়ান জুব্বা ইত্যাদি। পক্ষান্তরে যে পোশাক নিচ থেকে ওপরের দিকে আসে এমন পোশাক দ্বারা টাখনু ঢাকলে কোন গোনাহ হবে না। যেমন মোজা, জোতা ইত্যাদি। সূত্র: বযলুল মাজহুদ শরহে আবু দাউদ; মুসলিম জীবনে সাফল্যে চল্লিশ হাদিস-১৫৩ পৃষ্ঠা
সারকথা হলো, হজ-ওমরার সময় ব্যতিত পুরুষের জন্য মোজা দ্বারা টাখনু ঢেকে রাখা সমস্যা নেই। যারা বলে, তাদের কথা সঠিক নয়। টাখনু ঢেকে রাখার সূত্র হলো যা উপর থেকে নিচে ঝুলে পড়ে, নিচের দিক থেকে যা পরিধান করা তা এর আওতায় পড়বে না, যেমন, মোজা ও জোতা। দেখুন হাদিসের ভাষা হলো যা ঝুলিয়ে পড়া হয়। ( একথা সত্য যে, নিচ থেকে কোন কিছু ঝুলানো যায় না)
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন,
«الْإِسْبَالُ فِي الْإِزَارِ، وَالْقَمِيصِ، وَالْعِمَامَةِ، مَنْ جَرَّ مِنْهَا شَيْئًا خُيَلَاءَ، لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
‘লুঙ্গি, জামা ও পাগড়ীতে ইসবাল (ঝুলিয়ে পরা) রয়েছে। এগুলো থেকে যেকোনো একটিকে কোনো ব্যক্তি অহংকার বশে টেনে-ছেঁচড়ে নিয়ে বেড়ালে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার প্রতি সদয় দৃষ্টি দিবেন না”।
- والله اعلم بالصواب