আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

প্রচলিত ভুল-০৩: নবজাতককে কেন্দ্র করে যে সব ভুলভ্রান্তি ঘটে থাকে: পর্ব-২

No Comments

 


✅নবজাতককে কেন্দ্র করে যে সব ভুলভ্রান্তি ঘটে থাকে: পর্ব ২


🟢পুরুষের সহযোগিতা নেওয়া


কেউ কেউ সন্তান জন্মগ্রহণের সময় কিংবা ক্ষেত্রে পুরুষ ডাক্তার বা পুরুষ সহযোগী থাকাকে আপত্তিকর মনে করে না। অথচ মহিলা ডাক্তার, মহিলা সহযোগী ও ধাত্রীর ব্যবস্থা করা সম্ভব হলে এ কাজে পুরুষের সরাসরি সাহায্য নেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েজ। হাঁ স্বামী একা সহযোগিতা করতে পারে। এ ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ নয়। এটি শরীয়তবিরোধী হওয়া ছাড়া ও মানবীয় রুচিরও পরিপন্থী। আজকাল আধুনিক হাসপাতালগুলোতে সিজারের জন্য মহিলা ডাক্তারের পাশাপাশি পুরুষ ডাক্তারও থাকে। কখনো বা ডাক্তার মহিলা থাকলে সহযোগী থাকে পুরুষ। তাই ভর্তি করার পূর্বেই পূর্ণ মহিলা সার্ভিস আছে কি না এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। -আলবাহরুর রায়েক ৮/১৯২; তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৮৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৭


🟢বাচ্চার নাভি, সংযুক্ত নাড়ি ও অন্যান্য কর্তিত অংশ নিয়ে বিভ্রান্তি


এসব কর্তিত অংশের এলাকাভেদে একেক ধরনের প্রচলন রয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় এমনও প্রচলন রয়েছে যে, ওই সব কর্তিত অংশ একটা নির্ধারিত সময় উনুনের উপর ঝুলিয়ে রাখা হয়। এরপর তা পুকুর বা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এগুলো সবই ভুল। মানুষের শরীরের কর্তিত সবকিছুই মাটির নিচে পুঁতে দেওয়াই নিয়ম।


উনুনের উপর ঝুলিয়ে রাখা ঠিক নয়। এতে সন্তানের নাভি শুকায় বলে ধারণা করা হয়, কিন্তু বাস্তবতার সাথে এর কোনোই মিল নেই। -আল মুহীতুল বুরহানী ৩/১০৬; শরহুল মুহাযযাব ৫/২১৩; ফাতহুল কাদীর ২/৭৬


🟢সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার স্থান ৪০ দিন নাপাক থাকে?


অনেকের ধারণা, যে ঘর বা স্থানে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় সেটা ৪০ দিন পর্যন্ত নাপাক থাকে। এসময় সেখানে নামায, কুরআন তিলাওয়াত কিছুই জায়েয নয়। এধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ঘরের কোনো স্থানে নাপাকি লাগলে পূর্ণ ঘরই নাপাক হয়ে যায় না। এমনিভাবে যেখানে নাপাকি লেগেছে নিয়ম অনুযায়ী ধুয়ে মুছে নিলে ওই স্থানও পবিত্র হয়ে যায়। পবিত্র করার পর সেখানে নামায আদায় করা, কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা সবই জায়েয।


🟢৪০ দিন পর্যন্ত বাচ্চার মা অস্পৃশ্য থাকে?


কোথাও কোথাও এ প্রচলন রয়েছে যে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত বাচ্চার মাকে রান্না-বান্না বা অন্য কোনো কাজেরই যোগ্য মনে করা হয় না। তার স্পর্শ লাগলেই সবকিছু নাপাক হয়ে যাবে ধারণা করা হয়; এটিও ভুল। জাহেলী যুগের ধারণা। চল্লিশ দিন পর্যন্ত বাচ্চার মার স্রাব চালু থাকলেও তার ব্যবহৃত থালাবাসন, পেয়ালা কিংবা তার হাতের স্পর্শ লাগা কোনো কিছুই নাপাক হয় না। স্বাভাবিক অবস্থার মতোই তার হাতের রান্না-বান্না খাওয়া বৈধ। তার ব্যবহৃত বাসনকোসন অন্যরাও ব্যবহার করতে পারবে। -আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৯


🟢সন্তান প্রসবের পর চল্লিশ দিন নামায রোযা না করা


নেফাসের সর্বোচ্চ মেয়াদ চল্লিশ দিন। সবচেয়ে কম সময়ের কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই। এমনকি দু-চার ঘণ্টা বা এক দুই দিনও হতে পারে। কিন্তু কোনো কোনো মহিলা মনে করে যে, স্রাব চালু না থাকলেও সন্তান প্রসবের পর চল্লিশ দিন নামায রোযা করা যায় না। এটি ভুল ধারণা। এ সময় স্রাবে অনিয়ম দেখা দিলে বিজ্ঞ মুফতী সাহেব থেকে মাসআলা জেনে নিতে হবে। মাসআলা না জেনে নিজ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া জায়েয হবে না। -আলবাহরুর রায়েক ১/২১৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩১


🟢ধাত্রীকে মায়ের মতো  মাহরাম মনে করা


ধাত্রীকে মায়ের মতো মনে করার বহুল প্রচলন রয়েছে। ভূমিষ্ঠ সন্তানটি কন্যা হলে পরবর্তীতে এ মেয়ের স্বামী স্ত্রীর ধাত্রীর সাথে পর্দা করে না। আবার কোনো কোনো মেয়ে বড় হয়ে তার ধাত্রীর স্বামীর সাথে পর্দা করে না। অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে ধাত্রী পূর্বের মতোই গায়রে মাহরাম। শিশুটি ছেলে হলে যেমন বড় হওয়ার পর ধাত্রীর সাথে তার দেখা-সাক্ষাত সম্পূর্ণ নাজায়েয, তেমনি শিশুটি মেয়ে হলে বড় হওয়ার পর ধাত্রীর স্বামীর সাথে তার দেখা-সাক্ষাত এবং বিয়ের পর তার স্বামীর সাথে ধাত্রীর সাক্ষাতও হারাম।


শরীয়তে কেবল নিজের জননী, দুধমা, শাশুড়ি ও পিতার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা সাক্ষাত জায়েয। এছাড়া অন্য কোনো মহিলাকে মা ডাকলেও তার সাথে দেখা-সাক্ষাত বৈধ নয়। -সূরা নিসা ৩০


(পুরুষদের সহযোগিতা না নেয়ার বিষয়ে একটা পারিবারিক ঘটনা জানিয়ে রাখি। আমাদের পরিবারের এক আত্নীয়ার প্রথম সন্তান সিজারে হয়, এবং পরের সন্তান গুলো নরমাল ডেলিভারিতে হয়েছে। উনি এ বিষয়ে আমার বোনকে বলেছিলেন, উনি অনেক বেশি দুআ ও আমল করেছিলেন যাতে আল্লাহ নরমাল ডেলিভারি ও মহিলা ধাত্রীর ব্যবস্থা করে দেন। কখনো উনার থেকে দুআ ও আমল গুলো জেনে লিখব ইন শা আল্লাহ। আপাতত এ পরিস্থিতে থাকলে স্বামীকে সচেতন করা ও সাধারণ ভাবে আল্লাহর কাছে অনেক দুআ করবেন ইন শা আল্লাহ, যাতে আল্লাহ সুব্যবস্থা করেন ইন শা আল্লাহ )