✅বরকতময় জীবন লাভের উপায়: পর্ব ২ (শেষ পর্ব)
৩. ব্যবসা-বাণিজ্যে বরকত অর্জনের পন্থা
ব্যবসা-বাণিজ্যে বরকত হয় সততার দ্বারা। একজন ব্যবসায়ী মিথ্যা বলে অচল মাল চালিয়ে দিলে বা মালের গুণগত মান সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাময়িকভাবে বেশি লাভ করতে সক্ষম হলেও পরবর্তীতে ক্রেতা সঠিক তথ্য অবগত হওয়ার পর উক্ত ব্যবসায়ীকে বর্জন করে। ফলে উক্ত ব্যবসায়ী উক্ত ক্রেতা থেকে ভবিষ্যতে আরও বহু দিনে যেসব লাভ অর্জন করতে সক্ষম হত তা থেকে বঞ্চিত হয়। এভাবে সততা বর্জনের কারণে সে বঞ্চিত হয়। এটাই হল তার বরকত মোচন। ক্রেতাও অসততার ফলে বরকত থেকে বঞ্চিত হয়। বোখারী শরীফে হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রা. কতৃর্ক বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “তারা (ক্রেতা ও বিক্রেতা) উভয়ে যদি সত্য বলে এবং দোষত্রুটি পরিষ্কার করে ব্যক্ত করে তাহলে তাদের ক্রয়বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি মিথ্যা বলে এবং গোপন করে তাহলে তাদের ক্রয় বিক্রয়ের বরকত মোচন হয়ে যাবে।” -সহীহ বুখারী, হাদীস ২০৭৯
৪. খাদ্য-খাবারে বরকত অর্জনের পন্থা
খাদ্য-খাবারে বরকত অর্জন করার জন্য খাবার শুরু করার পূর্বের্ আল্লাহর নাম নিয়ে ও আল্লাহ কর্তৃক বরকত দানের বিষয়ে দুআ করে খাবার শুরু করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। খাবার সামনে আসলেও এরূপ দুআ রয়েছে। খাবার শুরু করার সময়ও এরূপ দুআ রয়েছে।
খাবার সামনে আসলে “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফীমা রাযাক্বতানা ওয়াক্বিনা আযাবান্নার” দুআটি পাঠ করা সুন্নত। এ দুআটির অর্থ হল, হে আল্লাহ, তুমি আমাদের যে রিযিক দান করেছ, তাতে বরকত দাও। এবং জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদেরকে রক্ষা কর। -কিতাবুল আযকার, হাদীস ৬৫০
খাদ্য-খাবার শুরু করার পূর্বে “বিসমিল্লাহি ওয়া বারাকাতিল্লাহ” দুআটি পাঠ করা সুন্নত। এ দুআটির অর্থ হল, আল্লাহর নামে আল্লাহর বরকতের সাথে খাওয়া শুরু করছি।
খাদ্য-খাবারে আরও বরকত হয় একত্রে খাওয়ার দ্বারা। হযরত ওয়াহশী ইবনে হারব্ রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কতিপয় সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরা খানা খাই কিন্তু তাতে তৃপ্তি হয় না যে? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা সম্ভবত ভিন্ন ভিন্নভাবে খানা খাও? তারা বললেন, জী। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা একত্রে মিলে খানা খাও এবং আল্লাহর নাম নিয়ে খানা খাও। তাতে তোমাদের খাবারে বরকত দান করা হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৭৬৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩২৮৬
খাদ্য-খাবারে আরও বরকত হয় পড়ে যাওয়া খাদ্যের টুকরা উঠিয়ে (প্রয়োজনে ধুয়ে) খেলে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফায়দা বয়ান করে বলেছেন, “তোমাদের জানা নেই, তোমাদের খাদ্যের কোন অংশে বরকত রয়ে গেছে।” সেমতে হতে পারে, যে অংশ পড়ে গেছে তার মধ্যেই বরকত রয়ে গেছে। অতএব সেটা তুলে খেয়ে নাও।
৫. রিযিকে বরকত অর্জনের পন্থা:
রিযিকে বরকত হয় আত্মীয়-স্বজনের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখার দ্বারা। হযরত আনাস রা. কতৃর্ক বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজ জীবিকার বৃদ্ধি ও দীর্ঘায়ু কামনা করে, সে যেন আত্মীয়-স্বজনের সাথে উত্তম ব্যবহার করে।” -সহীহ বুখারী, হাদীস ২০৬৭ সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৫৭
উল্লেখ্য, রিযিক দ্বারা শুধু খাদ্য-খাবার উদ্দেশ্য নয়; বরং মানুষ জীবনে খাদ্য-খাবার, ধন-সম্পদ, পোশাক-পরিচ্ছদ, জ্ঞান-বুদ্ধি, শান্তি-নিরাপত্তা যা কিছুই ভোগ করে সবই রিযিকের অন্তর্ভুক্ত।
৬. বিবাহশাদীতে বরকত অর্জনের পন্থা
বিবাহশাদীতে বরকত হয় অতিরিক্ত ব্যয় বর্জন করার দ্বারা। শুআবুল ঈমান গ্রন্থে হযরত আয়েশা রা. কর্তৃক বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয় সে বিবাহ বেশি বরকতময় যে বিবাহে ব্যয় কম।” -শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৬১৪৬
সম্প্রতি বিবাহশাদীতে বিপুল পরিমাণ সম্পদের অপচয় হয়। সেইসাথে গান-বাদ্য, ভিডিও বেপর্দিগী ইত্যাদি বিভিন্ন রকম পাপ কাজ করা হয়। এসব কারণে বিবাহশাদীর বরকত নষ্ট হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে দাম্পত্য জীবনে সুখশান্তি ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়া এই বরকতহীনতারই বহিঃপ্রকাশ।
এভাবে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কীভাবে বরকত আসে তা শরীয়তে খুব সুন্দরভাবে নির্দেশিত হয়েছে। এ সবগুলোর মূল কথা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুসরণ। এর মাধ্যমেই জীবনের সকল ক্ষেত্রে বরকত আসে।