জিজ্ঞাসা-১২৪০০:
Muhtaram,
Assalamualaikum. একজন ধার্মিক স্বল্পশিক্ষিত যুবক আমাকে বলেছেন, "তিনি অজ্ঞতাবশতঃ ফরজ রোজারত অবস্থায় বেহিসাব আপন বিবির সাথে রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হয়েছেন। একদিন এক বয়ানে এটা হারাম জেনে তিনি অনুতপ্ত এবং আল্লাহ তায়ালার আজাবের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত। বেশুমার এই রোজার কাজা তিনি কিভাবে আদায় করবেন? পেশায় তিনি নিম্নবিত্ত কৃষক। বেশি কাজা রোজা আদায় করতে গেলে তার সংসার অচল হবে আর কাফফারা আদায়ের আর্থিক সংগতি নেই। সহজ সমাধান জানাবেন প্লিজ মুফতি মহোদয়। তারিখ: ২৭/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা নূরুল আমীন, জলঢাকা, নীলফামারী থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নে অজ্ঞতাবশতঃ বিষয়টি পরিস্কার নয়। অজ্ঞতাবশতঃ দুটি অর্থ হতে পারে, একটি হলো রোজার কথা ভুলে গিয়েছিল আর দ্বিতীয় অর্থ হলো, রোজাবস্থায় সহবাসের বিধান জানা ছিল না।
যদি প্রথম অর্থ ধরা হয় অর্থাৎ তিনি রোজা রাখার কথা ভুলে গিয়েছিল, তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হয়নি। (সুতরাং কাজা-কাফফারা কিছু্ই লাগবে না) তবে রোজার কথা মনে পড়ার সাথে সাথেই পৃথক হতে হবে, নাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাজা-কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।
আর যদি দ্বিতীয় অর্থ হয় অর্থাৎ রোজাবস্থায় সহবাসের বিধান জানা না থাকে, তাহলে
ফিকহি হানাফি ও মালিকির মতে, রোজা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে কাজা ও কাফফরা দুটি ওয়াজিব হয়।
ইমামদ্বয়ের দলিল:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ فَقَالَ: هَلَكْتُ، قَالَ: «وَمَا أَهْلَكَكَ؟» قَالَ: وَقَعْتُ عَلَى امْرَأَتِي فِي رَمَضَانَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَعْتِقْ رَقَبَةً» قَالَ: لَا أَجِدُ، قَالَ: «صُمْ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ» قَالَ: لَا أُطِيقُ، قَالَ: «أَطْعِمْ سِتِّينَ مِسْكِينًا
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। রাসূল (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাকে কে ধ্বংস করেছে? সাহাবী বললেন, রমজানে আমি আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে ফেলেছি। রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন, তাহলে এর বদলে একটি গোলাম আযাদ কর। সাহাবী বললেন, আমি এতে সক্ষম নই। নবীজী (ﷺ) বললেন, তাহলে লাগাতার দুই মাস রোযা রাখ। সাহাবী বললেন, আমি এতেও সক্ষম নই। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, তাহলে তুমি ৬০ জন মিসকিনকে খানা খাওয়াও। তাখরিজ: সুনানে ইবনে মাজাহ-১৬৭১, মুসনাদে আহমাদ-৬৯৪৪, মুসনাদুল বাজ্জার-১১০৭, সহীহ ইবনে খুজাইমা-১৯৪৯, সহীহ ইবনে হিব্বান-৩৫২৭
দ্বিতীয় কথা হলো, কাফফারা বিষয়টি শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত। যা কম-বেশি করার সুযোগ নেই। তবে কোন ব্যক্তি যদি প্রকৃত অক্ষম হয়, তা মাফ যোগ্য। দলিল:
আয়াত নং-০১
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا
আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না। সূরা বাকারা-২৮৬
আয়াত নং-০২
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَأَنفِقُوا خَيْرًا لِّأَنفُسِكُمْ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শুন, আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। যারা মনের কার্পন্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। সূরা তাগাবুন-১৬
হাদিস নং-০১
اب إِذَا جَامَعَ فِي رَمَضَانَ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَىْءٌ فَتُصُدِّقَ عَلَيْهِ فَلْيُكَفِّرْ
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ أَخْبَرَنِي حُمَيْدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ، فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلَكْتُ. قَالَ " مَا لَكَ ". قَالَ وَقَعْتُ عَلَى امْرَأَتِي وَأَنَا صَائِمٌ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " هَلْ تَجِدُ رَقَبَةً تُعْتِقُهَا ". قَالَ لاَ. قَالَ " فَهَلْ تَسْتَطِيعُ أَنْ تَصُومَ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ ". قَالَ لاَ. فَقَالَ " فَهَلْ تَجِدُ إِطْعَامَ سِتِّينَ مِسْكِينًا ". قَالَ لاَ. قَالَ فَمَكَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم، فَبَيْنَا نَحْنُ عَلَى ذَلِكَ أُتِيَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِعَرَقٍ فِيهَا تَمْرٌ ـ وَالْعَرَقُ الْمِكْتَلُ ـ قَالَ " أَيْنَ السَّائِلُ ". فَقَالَ أَنَا. قَالَ " خُذْهَا فَتَصَدَّقْ بِهِ ". فَقَالَ الرَّجُلُ أَعَلَى أَفْقَرَ مِنِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ فَوَاللَّهِ مَا بَيْنَ لاَبَتَيْهَا ـ يُرِيدُ الْحَرَّتَيْنِ ـ أَهْلُ بَيْتٍ أَفْقَرُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي، فَضَحِكَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم حَتَّى بَدَتْ أَنْيَابُهُ ثُمَّ قَالَ " أَطْعِمْهُ أَهْلَكَ ".
বাব: যদি রমযানে স্ত্রী সঙ্গম করে এবং তার নিকট কিছু না থাকে এবং তাকে সাদ্কা দেওয়া হয়, তা হলে সে যেন তা কাফফারা স্বরূপ দিয়ে দেয়
অর্থ: আবুল ইয়ামান (রাহঃ) ... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট বসাছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমি সায়িম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আযাদ করার মত কোন ক্রীতদাস তুমি পাবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি একাধারে দু’মাস রোযা পালন করতে পারবে? সে বলল, না। এরপর তিনি বললেনঃ ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না।
রাবী বলেন, তখন নবী (ﷺ) থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নবী (ﷺ) এর কাছে এক ‘আরাক পেশ করা হল যাতে খেজুর ছিল। ‘আরাক হল ঝুড়ি। নবী (ﷺ) বললেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি। তিনি বললেনঃ এগুলো নিয়ে সাদ্কা করে দাও। তখন লোকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার চাইতেও বেশী অভাবগ্রস্থকে সাদ্কা করব? আল্লাহর শপথ, মদীনার উভয় লাবা অর্থাৎ উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চাইতে অভাবগ্রস্থ কেউ নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত (আনইয়াব) দেখা গেল। এরপর তিনি বললেন এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও। তাখরিজ: বুখারি-১৮৩৬; মুসলিম-১১১১
সারকথা হলো, উপরোক্ত আয়াতদ্বয় ও হাদিস শরিফ থেকে ইশারাতুন নস দ্বারা বুঝা যায়, আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত ব্যক্তিটি খাঁটি তওবা করলে, মাফ পেয়ে যাবে। তবে জীবনে কখনো কাফফারা আদায় করার সুযোগ আসলে তা আদায় করতে হবে।
والله اعلم بالصواب